What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made কাঠ গোলাপের সাদার মায়ায় (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by russel225 to join our community. Please click here to register.

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
দুপুরে গোসল সেরে ভেজা কাপড়গুলো বারান্দায় মেলে দেয়ার সময় আড়চোখে খেয়াল করলাম,সামনের বিল্ডিংয়ের ছয়তলায় ব্যাচেলর ফ্ল্যাটের একটা ছেলে একটু পর পর এদিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। খানিকটা অস্বস্তি হচ্ছিলো বিধায় তাড়াহুড়ো করে কাপড় মেলে দিয়ে ঘরের ভেতর চলে এলাম। দুটো বিল্ডিং সামনাসামনি হওয়ার কারণে বারান্দাগুলোও মুখোমুখি। আমরা থাকি চারতলায়,তাই ওই ব্যাচেলর ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে আমাদের বারান্দা টা অনায়াসেই দেখা যায়। এমনকি আমার ঘরের একটা জানালা বারান্দার সাথে লাগোয়া বলে আমার ঘরের কিছু অংশও দেখা যায় হয়তো। ঘরে এসে জানালার বাইরে চোখ যেতেই দেখলাম,ছেলেটা এখনো এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি পর্দা টা ভাল করে টেনে দিলাম। এর মধ্যে পাখি এসে বললো,

- আপা,খালাম্মা ভাত খাইতে যাইতে বলছে আপনারে।

টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে উত্তর দিলাম,
- তুই যা,আমি আসছি।

- আচ্ছা।

পাখি চলে যেতে নিলে ওকে পিছু ডাকলাম আমি,
- পাখি দাঁড়া,টাওয়াল টা বারান্দায় মেলে দিয়ে আয় তো।

ভেজা টাওয়াল টা হাত বাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল পাখি।

পাখি হচ্ছে আমাদের চার সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। দু'বছর আগে ঘরের কাজে মা'কে সাহায্য করার জন্য গ্রামে চিরুনি অভিযান চালিয়ে পাখি কে আমাদের বাসায় নিয়ে আসেন ছোট মামা। চিরুনি অভিযান বলার কারণ হচ্ছে গ্রামে এখন কোনো গরীব মানুষ নেই বললেই চলে। কেউ এখন আর আগের মত বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য শহরে আসতে ইচ্ছুক না। বাসাবাড়ির কাজের চেয়ে গার্মেন্টসের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। পাখি কিন্তু অভাবের তাড়নায় আমাদের বাসায় কাজ করতে আসে নি। আম্মুর এক দুঃসম্পর্কের খালাতো বোনের মেয়ে পাখি। সেই খালাতো বোন স্বামী মারা যাওয়ার পর আরেকটা বিয়ে করে। তার নতুন স্বামী পাখির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই সে পাখি কে আমাদের বাসায় দিয়ে দিয়েছে। আব্বু ওকে খুব আদর করেন। বাড়িতে কোনো মেহমান এলে আব্বু ওকে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

বিকেলবেলা কফির মগ আর একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। বই পড়া শুরু করার আগে উপরে তাকিয়ে দেখে নিলাম, ব্যাচেলর বারান্দায় ওই ছেলেটা আছে কি না, না নেই। তারপর আরাম করে চেয়ারে বসে গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে বই পড়া শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর আনমনে উপরের দিকে তাকাতেই ওই ছেলেটির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। কিন্তু পাত্তা দিতে চাইলাম না। আমি আমার মত করে বই পড়ছি। তবে আমার অবচেতন মন বারবার শুধু সেদিকেই মনোযোগ দিচ্ছে। খানিক বাদে বিরক্ত হয়ে উঠে চলে এলাম।

মেজাজ ঠাণ্ডা করার জন্য ঘরের মধ্যে পায়চারী করছিলাম,এমন সময় মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। ইরফান কল করেছে। রিসিভ করলাম আমি,

- হ্যালো।

- একটু ছাদে আসবে,সিঁথি?

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলাম,
- এই অসময়ে ছাদে কেন?

- অসময় কোথায়! সন্ধ্যে নামবে কিছুক্ষণের মধ্যে,গোধূলী লগ্ন। তোমাকে দেখার জন্য এর চেয়ে ভাল সময় আর হতেই পারে না।

দাঁত কটমট করে আবার জিজ্ঞেস করলাম,
- তুমি ছাদে এসেছো?

- হুম। আসো না তাড়াতাড়ি প্লিজ। একা একা আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো!

- আমাকে না বলে এসেছো কেন? থাকো তুমি,একাই দাঁড়িয়ে থাকো। আসবো না আমি।

ঠুস করে লাইন টা কেটে দিয়ে আম্মুর ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। উঁকি দিয়ে দেখলাম,আম্মু বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। একটু পর মাগরিবের আযান দিলে ওযু করে আম্মু নামাজে বসে যাবেন। তার মানে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আমার খোঁজ করবেন না আম্মু। পাখি ঘুমোচ্ছিলো,ওকে ঘুম থেকে তুলে পাহাড়ায় রেখে তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে চলে গেলাম।

ইরফান গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে হাঁপাতে দেখে মুচকি হেসে শার্টের পকেট থেকে একটা বেলী ফুলের মালা এগিয়ে দিয়ে বললো,

- আমি জানতাম তুমি আসবে। নাও ধরো,এটা তোমার জন্যে।

চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড দম নিয়ে ইরফানের একটা হাত ধরে ছাদের একপাশে আড়ালে টেনে নিয়ে আসলাম ওকে। এই সময়ে এদিকটায় আসবে না কেউ।

- এরকম পাগলামি করতে না করেছি না কতদিন?

ইরফান আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে তার কাছে টেনে নেয়,

- রেগে গেলে তোমার সৌন্দর্য্য আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

ইরফানের রহস্যময় চাহনি দেখে আমার রাগ টা লজ্জায় পরিণত হল। কিন্তু ইরফান কে তা বুঝতে না দিয়ে ফিসফিস করে বললাম,

- ছাড়ো,কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

- এখন এখানে কেউ আসবে না বলেই তুমি আমাকে এই নিরাপদ জায়গায় নিয়ে এসেছো। কি মনে করেছো, আমি কিছু বুঝি না?

ইরফান তার আরেক হাত দিয়ে আমার কানের পাশে চুল গুঁজে দিচ্ছে। আবেশে দু'চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। দুজনের মাঝের অবশিষ্ট দূরত্বটুকু ইরফান ঘুচিয়ে দিলো আমাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে। তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছিলো আমার মুখের উপর। বেলীফুলের মালাটা আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে আলতো করে আমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো ইরফান। দূরের মসজিদ থেকে আজানের সুর ভেসে আসলে দু'জন দুদিকে ছিটকে সরে গেলাম। ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে ইশারায় ইরফান কে চলে যেতে বলে আমিও নিচে নেমে গেলাম।

বাসায় ঢুকে পাখিকে আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করলে পাখি বললো "খালাম্মা ওযু করতেছেন"। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি।

ইরফান হচ্ছে আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধু। আগে প্রায়ই বিকেলবেলা বাড়িওয়ালার ছেলে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছাদে আড্ডা দিতো।যেদিন আমার ফ্রেন্ডরা বাসায় আসতো সেদিন ওদের নিয়ে ঘুড়ি উড়াতে ছাদে চলে যেতাম আমি। ছোটবেলা থেকে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতি তীব্র আকর্ষণ আমার। মাত্রাতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ার কারণে খুব সহজেই ইরফানের চোখে পড়ে গেলাম। তখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম আর ইরফান বিবিএ ফাইনাল ইয়ারে। তিনমাস পর বাড়িওয়ালার ছেলে দেশের বাইরে চলে গেলে ইরফানের এ বাড়িতে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তারপর হঠাৎ একদিন আমার কলেজের সামনে গিয়ে হাজির হয় ইরফান। সেদিন রিক্সায় বসে আমার বাম হাত টা ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে ইরফান আমাকে বলেছিলো,

- সারাজীবন এভাবে তোমার হাতটা ধরে রাখতে চাই। কি,দিবে তো?

আমাদের প্রণয়ের শুরু তারপর থেকেই। ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার এই মানুষটার মধ্যে আমি এমন কিছু পেয়েছিলাম যা আমাকে তার কাছে ধরা দিতে বাধ্য করেছিলো। তার ব্যক্তিত্ব,দায়িত্ববোধ,ছোট ছোট আবেগ,রাগ,অভিমান সবকিছু আমায় মারাত্মকভাবে আকর্ষণ করতো। সে হয়তো আমার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলো,কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম তার হাসিতে। আর সে যখন আমার দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকায়,তখন আবার নতুন করে আমি তার প্রেমে পড়ি।

ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন পরই আম্মুর কাছে ধরা পড়ে যাই। একদিন আমাদের পাশের বাসার এক আন্টি ইরফানের সাথে আমাকে এক রিক্সায় দেখে। তারপর এ খবর আম্মুর কাছে পৌঁছে যায়। প্রথমে বকাঝকা করলেও ইরফানের সম্বন্ধে সবকিছু জেনে আর ওর ফ্যামিলির খোঁজখবর নিয়ে আম্মু-আব্বু দুজনই আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নেন। কিন্তু আব্বু শর্ত জুড়ে দেন,ইরফান যেন তার ফ্যামিলি কে জানিয়ে রাখে এখনি। ইরফান শর্ত মেনে নিয়ে ফ্যামিলি কে আমার কথা জানালে দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নেয়,ইরফান এম.বি.এ কমপ্লিট করে জবে ঢোকার সাথে সাথে আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হবে।বাবা-মা কে জানিয়ে প্রেম করছি ঠিক আছে তাই বলে এভাবে হুটহাট যখন তখন দেখা-সাক্ষাৎ এর ব্যাপারটা ও যদি বাবা-মা'র কানে পৌঁছে যায়,তাহলে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতি তে পড়তে হবে। তাই ইরফান কে বারবার মানা করেছি,যেন যখন তখন ছাদে চলে না আসে কিন্তু কে শোনে কার কথা!

পরদিন ভার্সিটি থেকে সোজা ধানমণ্ডি চলে গেলাম ইরফানের বেস্টফ্রেন্ড তিথি আপুর ফ্ল্যাটে। তিথি আপুরা চারজন ফ্রেন্ড মিলে এই ফ্ল্যাট টা শেয়ার করে থাকে। সেদিন তিথি আপুর জন্মদিন ছিল। তিথি আপু আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আগে থেকেই দাওয়াত দিয়ে রেখেছিলো। ওদের সব ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ডের মধ্যে আমিই সবচেয়ে জুনিয়র। তাই ইরফানের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই আমাকে খুব আদর করে। বিশেষ করে তিথি আপু। ইরফানের ঘুম থেকে উঠতে দেরী হওয়ায় আমি ওর আগে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তিথি আপুর বয়ফ্রেন্ড সোয়েব ভাইয়্যা আর ইরফান একসাথে এলো। সোয়েব ভাইয়্যা,তিথি আপু আর ইরফান তিনজন বেস্টফ্রেন্ড। কেক কাটার পর সবাই যে যার মত করে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সোয়েব ভাইয়্যা একটা রুমে ঢুকে গেল তিথি আপুকে নিয়ে। বাকিরা ড্রয়িংরুমে হৈ-হুল্লোড় করছিলো। সবার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে ইরফান চুপি চুপি আমার হাত ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে গেল আমাকে। তারপর দরজা লাগিয়ে দিলো। আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তখন। ইরফান আমার মুখ দেখেই বুঝে গিয়েছিলো আমার মনের ভিতর কি চলছে। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তার দু'হাত দিয়ে আমার মুখটা আঁজলা ভরে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

- ভয় পাচ্ছো তুমি?

আচমকা এমন প্রশ্নে হতবিহবল হয়ে মাথা নেড়ে "না" বললাম।

ইরফান এবার আমার দু'হাত ধরে বিছানায় নিয়ে বসালো আমাকে,পাশে সে ও বসলো। আমি তখনো বুঝে উঠতে পারছি না ইরফান আসলে কি করতে চাচ্ছে। আড়চোখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম,ঘরটা কেমন যেন নিস্তব্ধ। জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আবছা আলো লুকোচুরি খেলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে,সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটেছে। নীরবতা ভেঙে ইরফান প্রশ্ন করলো,

- আজ এত সুন্দর লাগছে কেন তোমাকে? আমি যে চোখ সরাতে পারছি না। সাদা রঙে তোমাকে অদ্ভুত পবিত্র দেখাচ্ছে,সিঁথি।

আমি মনে মনে ভাবতে শুরু করলাম,আজ তো আমি কোনো ভারী সাজ দিই নি। সকালে এমনিতেই ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছিলো। তাই তাড়াহুড়ো করে সামনে যা পেয়েছি পরে নিয়েছি। সোনালী সুতোর হালকা কাজের মধ্যে সাদা সেলোয়ার কামিজ টা হাতের কাছেই ছিল। আর এখানে আসবো বলে কানে ঝুমকো আর ঠোঁটে হালকা ন্যুড লিপস্টিক পরেছিলাম। ব্যস্,এইটুকুই। কিন্তু ইরফান এভাবে মিথ্যে কথাগুলো কেন বলছে! ও কি আমাকে কনভিন্স করতে চাইছে? ওর কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে অথচ আমি দরদর করে ঘামছি।

চমকে উঠলাম ইরফানের হাতের স্পর্শে। ও এখনো গভীর মনোযোগ দিয়ে আমাকে দেখছে।

- আজ তোমার কাছে একটা আবদার করবো,রাখবে?

আমি যেন এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। ইরফানের প্রশ্ন শুনে আমার খুব কান্না পাচ্ছে। এতদিনের চেনা মানুষ টা কে কেমন যেন খুব অচেনা মনে হচ্ছে আজ। ইরফানের কণ্ঠস্বরে কামনা স্পষ্ট। নিজেকে সংবরণ করে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

- কি আবদার?

- আজ সারাটাদিন এভাবে আমার সামনে বসে থাকবে তুমি। আর আমি শুধু দু'চোখ ভরে তোমায় দেখে দেখে তৃপ্তির ঢোক গিলবো। ভয় পেও না,আমি আর কিচ্ছু চাইবো না তোমার কাছে।

মুহূর্তেই আমি যেন আমার ভাবনার জগত থেকে ছিটকে পড়লাম। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

- মানে? কি বলছো এসব? বাইরে সবাই অপেক্ষা করবে আমাদের জন্যে। আর এতক্ষণ ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকলে কি ভাববে ওরা?

- উঁহু,ওদের ভাবনা ওদের কাছে। আমরা তো জানি আমরা কি করছি। আচ্ছা ঠিক আছে,আমি গিয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি। সাথে এ ও বলে আসছি,কেউ যেন আমাদের বিরক্ত না করে।

ইরফান দরজা খুলে ড্রয়িংরুমে চলে গেল। ইতিমধ্যে আমার চিবুক বেয়ে টপটপ করে দু'তিন ফোঁটা পানি ঝড়ে পড়লো। না,এটা কোনো ঠকে যাওয়ার অশ্রু না,এ অশ্রু বিশ্বাস করে জিতে যাওয়ার অশ্রু।

ইরফান সত্যিই আমাকে তার সামনে বসিয়ে রেখে আমাকে শুধু দেখে গিয়েছে সারাদিন। আঙুলে আঙুল পর্যন্ত ছোঁয়ায় নি। আর আমি বারবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলাম,তবে এতটুকুও অস্বস্তি লাগে নি। বসে থাকতে থাকতে এক সময় আমি ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙার পর দেখি,আমার এক পাশে তিথি আপু আর তার রুমমেট বসে গল্প করছে। আরেক পাশে ইরফান আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ইরফানের এই পাগলামি ওর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আরো বাড়িয়ে দিলো। মানুষটা কে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করলাম।

বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। আম্মু কে বলে গিয়েছিলাম,তিথি আপুর বাসায় যাবো। তাই দেরী দেখে আম্মু কিছু বলেন নি।

দু'দিন পর পাখি কে ছোট খালামণির বাসায় পাঠিয়ে দিলো আম্মু। খালামণি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার দু'বছরের ছোট বাচ্চাটা কে দেখাশোনা করার জন্য কেউ নেই। তাই পাখিকে কিছুদিনের জন্য পাঠাতে বলেছেন। পাখি চলে যাওয়ায় বাসার সব কাজে আম্মুকে সাহায্য করতে হচ্ছে আমার। আম্মুর কোমরে বাতের ব্যথার সমস্যা আছে। তাই দু'এক বেলা রান্নার কাজ টা আমিই করে নিচ্ছি। বাসার কাজের ব্যস্ততার জন্য ইরফানের সাথে আগের মত দেখা করতে পারছি না। এ জন্য সাহেব বেশ অভিমান করে আছেন।

এদিকে ব্যাচেলর ফ্ল্যাটের ওই ছেলেটা আমাকে রাস্তাঘাটে ফলো করা শুরু করে দিয়েছে। বাসা থেকে বের হলেই ছেলেটার ছায়া দেখতে পারছি। একবার ভেবেছিলাম,বাবা কে বিষয় টা জানাবো। কিন্তু পরক্ষণেই মত পাল্টালাম। কারণ ছেলেটা শুধু আমাকে ফলো করে যাচ্ছে,বিরক্ত বা উত্যক্ত তো করছে না। তাছাড়া ছেলেটা কে দেখে বখাটেও মনে হয় না। যথেষ্ট ভদ্র এবং মার্জিত চলাফেরা তার। তখন এর একটাই সমাধান খুঁজে পেলাম,এড়িয়ে যাওয়া।

নয়দিন পর ছোট খালামণি সুস্থ হয়ে গেলে পাখি কে বাসায় পাঠিয়ে দেন তিনি। বাসায় আসার পর পাখি কে কেমন যেন বিষণ্ণ দেখাতো। ওর মধ্যে উদাসীনতা খুঁজে পেতাম আমি। কাজকর্মে আগের মত মনোযোগ নেই তার। আমি ধরে নিয়েছিলাম,হয়তো খালামণির বাসায় ও কোনো কষ্ট পেয়েছে। পাখি খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে,তাই মুখ ফুটে কিছু বলছে না। বাসায় ওর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলা যাবে না। আম্মু দেখে ফেলবেন। তাই খোলাখুলি কথা বলার জন্য বিকেলবেলা পাখি কে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। আম্মু কে বলে গেলাম,ছাদে ঘুড়ি উড়াতে যাচ্ছি।

ঘুড়ি আর নাটাই ছাদের এক পাশে রেখে কার্ণিশ ঘেষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি পাখি আর আমি। আমি পাখির দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলাম,

- পাখি,খালামণির বাসায় তোকে কেউ কিছু বলেছে?

পাখি খুব স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলো,
- না তো আপা। ওইখানে তো সবাই আমারে খুব আদর করছে।

- তাহলে? তোর মন খারাপ কেন?

পাখি মাথা নিচু করে রইলো। আমি আবার জানতে চাইলাম,
- বল্, কি হয়েছে? চুপ করে থাকিস না। তুই কি ভয় পাচ্ছিস কিছু বলতে?

পাখি নিচু স্বরে শুধু "না" বললো। আমি আরো কিছু বলতে যাব,এমন সময় ইরফানের কল আসলে আমি পেছন ঘুরে ইরফানের সাথে কথা বলা শুরু করলাম সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে। হঠাৎ করে ব্যাচেলর ফ্ল্যাটের ওই ছেলেটা কে ছাদে দেখে আঁৎকে উঠলাম আমি। ভয় পেয়ে ফোনের লাইন কেটে দিলাম। ছেলেটা আমার দিকে যত এগিয়ে আসছে,ততই আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি,সরাসরি ছাদে চলে এলো! আমাকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটি আমার পাশ কাটিয়ে পাখির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পাখি কে খুব আতংকিত দেখাচ্ছে। ছেলেটি রাগান্বিত হয়ে পাখি কে জিজ্ঞেস করলো,

- কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? জানো,তোমার খোঁজ নেয়ার জন্য তোমার বড় বোনের পিছু নিয়েছিলাম আমি? দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম তোমাকে দেখতে না পেয়ে। আর কখনো এমন করবে না, না বলে উধাও হয়ে যেও না প্লিজ।

পাখি তখনো নিশ্চুপ,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটি এবার আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো,

- আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ,আপনার বোনকেও বকবেন না। ওর কোনো দোষ নেই। আমি আসলে সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি তাই বলছি,প্রথম দেখাতেই আপনার বোন কে আমি ভালবেসে ফেলেছি। যদিও ওর মতামত জানার সুযোগ এখনো হয় নি আমার। কারণ ওর সাথে আমার আজ পর্যন্ত কোনো কথা হয় নি। এতদিন শুধু ওকে দেখে গিয়েছি। ও বারান্দায় কখন আসবে,সারাক্ষণ সেই অপেক্ষায় থেকেছি। আমি জানি না,আপনার বোন আমার অনুভূতিগুলো কতটুকু বুঝতে পেরেছে। তবে আমার সাথে চোখাচোখি হলে ও যে মিষ্টি হাসি টা দেয়,ওটাই আমাকে আরো আস্কারা দিয়েছে। ও হ্যাঁ,আমার সম্পর্কে তো কিছুই বলি নি। আমি জগন্নাথে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ইকোনোমিক্স নিয়ে পড়ছি। আমার বাবা-মা গ্রামে থাকেন। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে জবে ঢুকেই আপনাদের বাসায় আমি আমার ফ্যামিলির মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাবো,যদি আপনারা রাজি থাকেন।

গড়গড় করে কথাগুলো বলে আবার পাখির দিকে ফিরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল ছেলেটি। আমি কোনো কথাই বলতে পারলাম না। আমার বিস্ময়ের ঘোর তখনো কাটে নি যে! পাখি ভয়ে ভয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি বললাম,

- এসব কি পাখি? এই তাহলে তোর মন খারাপের কারণ?

পাখি এবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো,
- আমি সত্যি ই উনারে চিনি না। শুধু উপরের বারান্দায় দাঁড়াইয়া থাকতে দেখতাম মাঝে মাঝে। আর কোনো কিছু আনতে দোকানে গেলে উনারে গেটের সামনে পাইতাম।

- আমাকে বলিস নি কেন?

- আমি নিজেই তো কিছু বুঝতে পারতেছিলাম না। কি বলবো আপনারে!

- ও,না বুঝেই ওই ছেলের জন্য মন খারাপ করা শুরু করে দিয়েছিলি?

পাখি আর কোনো উত্তর দিলো না। কড়া করে নিষেধ করে দিলাম,এই ব্যাপার টা যেন আর সামনে না আগায়। আম্মু জানতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। পাখিও আমার কথা মেনে নিলো।

সেদিন প্রথমবারের মত পাখি কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম আমি। ১৭ বছর বয়সী মেয়েটার চোখ দুটো তে অদ্ভুত এক মায়া আছে,যা যে কোনো ছেলে কে ঘায়েল করে দিতে সক্ষম। আর ৫ ফিট ২ ইঞ্চি শ্যাম বর্ণের ছিমছাম গড়নের শরীরটায় কোনো মেদ নেই,ঘন কালো দীঘল লম্বা চুল,মসৃণ ত্বক,ফিনফিনে পাতলা ঠোঁট। পাখি কে রুপবতী বলা না গেলেও,মায়াবতী বলা যায়। ছেলেটা বারবার ওকে আমার ছোট বোন বলছিলো। তার মানে সে এখনো জানে না পাখির আসল পরিচয়। অবশ্য বুঝতে পারারও কথা না। কারণ পাখি কে আমরা কখনো কাজের মেয়ের চোখে দেখি না। ওর বেশভূষা দেখে প্রথম দেখায় কেউ ই আন্দাজ করতে পারবে না যে ও এই বাসায় কাজ করে। কিন্তু ছেলেটা এখন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। পাখির আসল পরিচয় জানলে এই ঘোর কেটে যাবে,এটাই ভেবেছিলাম আমি।

এভাবে কেটে গেল কিছুদিন। একদিন ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে দেখি,আম্মু পাখির সাথে খুব চেঁচামেচি করছেন। কাহিনী বুঝতে না পেরে আম্মু কে জিজ্ঞেস করলাম "কি হয়েছে"। প্রতিউত্তরে আম্মু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলেন,

- তুই আর তোর বাপ আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছিস ওকে। বজ্জাত মেয়ের কত বড় দুঃসাহস,সামনের বিল্ডিংয়ের ছেলের সাথে লাইন মারে। পাশের বাসার ভাবী ছাদে গিয়ে দেখেছে,ওই ছেলে ওর হাতে চিঠি গুঁজে দিচ্ছে।

- পাখি ছাদে গিয়েছিলো কেন?

- তোষক টা ছাদে রোদে দিয়েছিলাম আজ। ওটাই আনতে পাঠিয়েছিলাম।

পাখি কে নিজের ঘরে এনে ধমক দিলাম,
- কি রে, না করেছিলাম না? কথা শুনিস নি কেন?

পাখি কাঁদতে কাঁদতে অসহায়ের মত বললো,
- আমি জানতাম না উনি ছাদে চইলা আসবে।

সন্ধ্যের পর আব্বু অফিস থেকে ফিরে সব শোনার পর সিদ্ধান্ত নিলেন,পাখি কে আর এখানে রাখবেন না। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে বাঁধ সাধলাম আমি। বললাম,

- শুনো আব্বু, ওই ছেলে পাখির আসল পরিচয় জানে না এখনো। পাখি কে আমার ছোট বোন ভেবেছে ও। ওকে ডেকে এনে পাখির আসল পরিচয় জানিয়ে দাও। ছেলে এমনিতেই কেটে পড়বে। তাছাড়া পাখি কে এখন আবার গ্রামে ফেরত পাঠালে ওর সৎ বাবার অত্যাচার সহ্য করতে হবে ওকে।

সেদিনের ছাদের ঘটনাটাও আব্বু আম্মু কে খুলে বললাম। আম্মু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন,সেদিনই কেন তাকে জানালাম না ব্যাপার টা সেজন্য।

আব্বু ছেলেটা কে বাসায় ডেকে আনলেন। ছেলেটার নাম "কবির"। আব্বু কবির কে পাখির ব্যাপারে সব জানানোর পরও কবির তার সিদ্ধান্তে অটল রইলো। আব্বুকে উল্টো বুঝিয়ে দিলো,

- দেখুন আংকেল,এটা শুধু একটা ভুল বুঝাবুঝি মাত্র। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।

- সমস্যা আছে বাবা কিন্তু তুমি বুঝতে পারছো না। বড্ড ছেলেমানুষি করছো। পাখি তোমার সোসাইটির সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না। সামাজিকতা রক্ষা করতে পারবে না। গ্রামের স্কুলে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে ও। এখানে এসে ও শহরের পরিবেশ চিনেছে। তাছাড়া তোমার পরিবারও ওকে মেনে নিবে না।

- ওকে মানিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আমার আংকেল। সামাজিকতা শেখানো,পড়াশুনা করানো এসব দায়িত্বও আমার। আপনারা এসব নিয়ে ভাববেন না। আর আমার বাবা-মা আমার পছন্দ কে অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। আপনার কাছ থেকে আমি তিনটা বছর সময় নিয়ে নিচ্ছি। তিন বছর পর আমি বাবা-মা'র মাধ্যমে আপনাদের কাছে প্রস্তাব পাঠাবো। বিয়ের পর ঠিকই আমি পাখি কে আমার যোগ্য করে তুলবো। আর আপনারা ওকে গ্রামে ওর সৎ বাবার সংসারে পাঠাবেন না প্লিজ। আপনাদের নিশ্চিন্ত রাখতে আমি কাল ই এখান থেকে চলে যাব।

কবির চলে যাওয়ার পর আম্মু আব্বু কে বললেন,

- তুমি এই ছেলে কে বিশ্বাস করে নিলে! আধপাগল,বাউণ্ডুলে ছেলে একটা,এত আবেগে দুনিয়া চলে নাকি! পাখি কে তুমি কাল ই গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করো।

আব্বু আম্মু কে থামিয়ে দিলেন,
- আহ্,অস্থির হইয়ো না। দেখি না কি হয়। ছেলেটি কে আমার মোটেও বাউণ্ডুলে মনে হয় নি।

পাখি আমার ঘরে মেঝেতে ফ্লোরিং করে ঘুমায়। সেদিন সারারাত পাখি ঘুমোয় নি। মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলে জানালা বয়ে আসা চাঁদের আলো তে দেখতে পেলাম, জানালার কাছে বসে কবিরের বারান্দার দিকে চেয়ে থেকে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছে পাখি। আর কবির বারান্দায় বসে একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে আমার ভেতর টা কেমন যেন করে উঠলো।

কবির ঠিকই পরেরদিন এখান থেকে চলে গেল। তারপর আর কোনো সমস্যা হয় নি। তবে মাঝে মাঝে গভীর রাতে পাখির ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতাম। বেশ কিছুদিন পর পাখির মা পাখির বিয়ের কথা ভেবে ওকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য জোর করতো আব্বু-আম্মু কে। কিন্তু পাখি রাজি হত না। সে হয়তো তখনো মনে মনে কবিরের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছিলো।

দেখতে দেখতে কেটে গেল দু'টো বছর। ইরফানের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা এর মধ্যে আরো বেড়ে গেল। লিপকিস,জড়িয়ে ধরা এসব আমাদের কাছে এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। আমার মধ্যে এখন আর আগের মত জড়তা কাজ করে না। আমি তো জানি এ মানুষ টা সারাজীবনের জন্য আমার,তাহলে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হবো না তো কার সাথে হবো! প্রচণ্ড ভালবাসি যে ওকে! ইরফান একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে জয়েন করার পরপর ই আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হল। কিন্তু ইরফানের মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম আমি। সে আর আগের মত আমাকে সময় দেয় না। আগের মত আমার প্রতি তার টান আমি অনুভব করতে পারি না। প্রথমে ভাবতাম হয়তো নতুন জবে জয়েন করেছে,ব্যস্ততা বেড়েছে তাই আমার কাছে এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু মন কে শান্ত করতে পারতাম না। চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষ টি কে বদলে যেতে দেখলাম। একদিন জানতে পারলাম,ইরফান তার সুন্দরী অফিস কলিগের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। রেস্টুরেন্টে প্রায়ই তাদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। ইরফান কে প্রশ্ন করলে,সে ও সবকিছু স্বীকার নিলো। আর জানিয়ে দিলো, আমার সাথে তার আর জমছে না। সে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চায়। ইরফানের বাবা-মা ছেলের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়েটা ভেঙে দিলো। দরজা বন্ধ করে চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম আমি তখন,যে কান্নায় ঘরের চার দেয়াল কেঁপে উঠেছিলো। পাঁচ বছরের সম্পর্কটা কে এত তাড়াতাড়ি কবর দিয়ে দেয়া সহজ ছিল না আমার জন্যে। নিজেকে স্বাভাবিক করতে,মানসিকভাবে শক্ত হতে অনেক সময় লেগেছিলো আমার। বাবা-মা পাশে না থাকলে আমি হয়তো এতদিনে শেষ ই হয়ে যেতাম।

একদিন বাসায় হঠাৎ অচেনা অতিথি এলেন তিন জন। পরিচয় দিলেন,কবিরের বাবা-মা আর চাচা হিসেবে। আমরা প্রথমে চিনতে পারি নি। কারণ এতদিনে আমরা কবিরের কথা ভুলেই বসেছিলাম। তারা কবিরের জন্য পাখি কে চাইলেন আব্বুর কাছে। কবির এখন ভাল একটা চাকরী করছে। আব্বু তারপর পাখির মায়ের সাথে কথা বলে পাকা কথা দিয়ে দিলেন কবিরের বাবা-মা কে।

ধূমধাম করে বিয়ের আয়োজন করলেন আব্বু। বিয়ের দিন পাখির চোখেমুখে যে উচ্ছলতা ছিল,তা জাগতিক সকল সুখকে হার মানাবে। আর কবিরের হাসি তে ছিল ভালবাসার মানুষ টি কে হাসিল করার তৃপ্তি। পাশাপাশি দু'জন কে বেশ মানাচ্ছিলো।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে আমি ওদের দেখছিলাম আর ভাবছিলাম,এত রূপ আর শরীরী স্পর্শ দিয়েও আমি আমার ভালবাসার মানুষ টি কে ধরে রাখতে পারলাম না। অথচ পাখি আর কবির তো কোনোদিন একজন আরেকজনের হাত পর্যন্ত ধরে নি। তারপরও তারা শুধু তাদের ভালোবাসা আর বিশ্বাসের জোরে আজ এক হয়ে গেল। ওরা প্রমাণ করে দিলো,শুধু একসাথে কাটানো কিছু মুহূর্ত,ছোট ছোট আবেগ আর শারীরিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ভালবাসা কে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। ভালবাসার পরিধি এরচেয়েও বৃহত্তর। আসলে বিলাসিতার ভর যখন প্রয়োজনীয়তা থেকে বেশি হয়ে যায় তখন আর ভালোবাসা বলে কিছু থাকে না। আর বিশ্বাস তো নিঃসন্দেহে মরীচিকা,পেয়েছি পেয়েছি মনে হয় আদৌ পাওয়া হয়ে উঠে কিনা সন্দেহ আছে। তবে পাখির ক্ষেত্রে,ভালোবাসা থেকেও বোধ হয় ভাগ্যদেবীর প্রসন্নতার প্রভাব খানিকটা বেশি ছিল। এতটা চাওয়া,আকুলতা,আকাঙ্ক্ষা ফেরানোর দুঃসাহসিকতা দেখানোর ক্ষমতা হয়তো ভাগ্যদেবীর ছিল না। দিনশেষে রঙিন চকচকে ভালবাসা টা হেরে গেল,আর জিতে গেল এক সাদামাটা ভালবাসা।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top