নতুন বিয়ে হয়ে আসার পর আমার কাজই হলো শাশুড়ি মা এর পিছনে ঘুরে বেড়ানো। মা'কে আমার অসম্ভব পছন্দ। ৪ বছর বয়সে মা হারিয়েছি। মা কি জানি না। ছয়মাস না যেতেই বাবা ঘরে নতুন মা আনেন।
শাশুড়ি মা খুবই বিরক্ত আমার উপর। নয়া নয়া বিয়া হইছে মাইয়্যা তুমি আমার পিছপিছ ঘুরে বেড়াও কেন! তুমি থাকবা আমার পোলার লগে।
আপনার পোলা সারাদিন ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে থাকে মা। ওর সাথে কি গল্প করব! হারমজাদার ল্যাপটপটা ভাইঙ্গা দেও। একদম বাপের লাহান হইছে। শোন সেজু! মা আমি সেজু না সেঁজুতি। ওই হইল আর কি। শোন মাইয়া তোর শশুর ও এমন ছিলো। আমার যেইদিন বিয়া হয় আকাশে বিশাল চাঁদ। চাঁদের আলো উপচায়া পড়তাছে উঠানে।তখন আমরা থাকতাম এক মফস্বল শহরে। তোর শশুরে কইলাম বাইরে কি সুন্দর জোছনার আলো, চলেন আমরা উঠানে মাদুর পাইতা বসি। আমি একটুখানি গানও জানি, আপনি আমার কোলে মাথা রাইখা শুইয়া থাকবেন, আমি আপনার চুলে বিলি দিমু; আর এই চাঁদের আলোয় গান শুনামু। তোর শশুর আমার দিকে চোখ বড় করে তাকাইয়া কয় এই পাগল ব্যাটি কি কয়! আমর কি কুত্তা কামড়াইছে নি! এই হইল বউ আমার প্রথম রাতের গল্প।
আর একদিনের গল্প কইরে বউ। নতুন বিয়া হইছে স্বামীর লগে ঘুড়তে মন চায়। তোর শশুর কোথাও নিতে চায়না। আমার শাশুড়ি আছিলো খুব ভাল মানুষ। আমারে অনেক আদর করত। তারে যাইয়া কইলাম আমি আপনার পোলার লগে সিনেমা দেখতে যামু, আপনি একটু কইয়া দেন মা!
আমার শাশুড়ি তোমার শশুররে গালি দিয়া কইলো, গোলামের ঘরের গোলাম আইজই তুই বউরে লইয়া বেড়াইতে যাবি, বউ যেখানে যাইতে চায়। তোর শশুর মা'র কথা ফেলতে পারে নাই। আমি দুপুরে ভাত খাইয়াই সাজগোজ শুরু কইরা দেই। নতুন একটা শাড়ী পিন্দি, চোখে কাজল দেই, চুলে তেল দিয়া খোপা করি।ঠোঁটে লিপষ্টিকও লাগাই। সাইজা তোর শশুরের সামনে দাঁড়াই। কইলাম দেখেন-ত কেমন লাগতাছে! তোর শশুর দুই ভুরু জোরা লাগাইয়া কয় এই পাগল ব্যাটি যাইতাছি সিনেমা দেখতে আর তুমি নায়িকা সাইজা কই যাও! সব সাজন মুছো। আমার চোখ ছলছল হইয়া গেল। আমার শাশুড়ি শুনতে পাইয়া আচ্ছা মতন তোর শশুরে ধুনাইল...
বের হইলাম জামাইর লগে রিক্সা কইরা। মাথায় বড় একটা ঘোমটা।ঘোমটার কারণে আশেপাশে কিছুই দেখতে পারিনা। তোর শশুররে কইলাম মাথার ঘোমটা ফেলামু আমি। আর তোর শশুরের হাতটা ধরে বসলাম। সে কয় কি এই পাগল ব্যাটি হাত সরাও। সবাই দেখব। তো আমি আরো শক্ত কইরা হাত ধরি। দেখুক আমি কি অন্য ব্যাটার হাত ধরছিনি! শশুর-তো আৎকে উঠে কি কয় এই পাগল ব্যাটি!
যথারীতি সিনেমাহলে গেলাম। আমারে একখানে দাঁড় করায়া রাইখা সিনেমার টিকিট কাটতে লাগল। দেখি কত রঙ ঢংগের মাইয়া! ও একা টিকিট কাটতাছে। কেউ আবার ডানাকাটা ব্লাউজ পইরা আছে। আমি ঘোমটার ফাঁক দিয়া দেখি মিনসেটা মানে তোর শশুর ওই ব্যাটি গুলোর দিকে তাকায় রইছে।
বাড়িতে ঢুইকাই আমি মিনসেরে দিলাম গালি। হা কইরা তো ডানাকাটা ব্যাটি গুলার দিকে তাকায় আছিলেন! কি দেখলেন! আমিও এমন ডানাকাটা ব্লাউজ পিনমু।
হায় হায়! এই ব্যাটির মনে হয় সত্যি মাথাটা পুরাই গেছে! যাইয়া আমার শাশুড়িরে নালিশ করে। শাশুড়ীর হকুম বউ একটা আবদার করছে তুই দিবি না কেন?
আমি নিজেও জানিনা বউ কবে তোর শশুর আমার ব্লাউজ নিয়া, সত্যি ওই মাপের একটা ডানাকাটা ব্লাউজ বানায় আনছে। আইনা আমার আলমারিতে রাইখা দিছে। ব্লাউজটা কোনদিন আমি পরিনাই রে মা। কেমন জানি লজ্জা লাগে।
আবার মনটাও ভাল লাগে তোমার শশুর আমারে না জানাইয়া ব্লাউজের মাপ দিয়া বানায় আনছে।
আমার পোলাওটা হইছে বাপের মতন বলদ। বউ কি চায় বুঝেনা। নতুন বউ ঘরে। ও যাদুর বাক্স লইয়া পইড়া আছে। আরে ব্যাটা এই সময়গুলা কি আর পাবি! এহন একটু আমদ ফূর্তি কর।
আমার শশুরবাড়ী আরিজিনাল নারায়ণগঞ্জ চাষারায়। সেখানেই আমার বরের জন্ম।
আমার বরের নাম ইমরান আলী ভূইয়া। আমার শশুরের নাম আমজাদ আলী ভূঁইয়া। আমার বরের স্কুল জীবন কেটেছে নারায়ণগঞ্জে। আমার শশুরের ছিলো রঙের ব্যবসা।
আমার দাদী-শাশুড়ি মারা যাবার পর আমার শশুর মশাই ঢাকার জিগতলায় এসে একটা জায়গা কিনে। প্রথমে একতলা করে ঢাকায় চলে আসে। এখন সেই বাড়ি ৬ তলা। পাঁচকাঠার উপর। তিনটা করে ইউনিট। আমাদেরটা ছাড়া। আমরা তিন তলায় থাকি। বাকি সবগুলোর ভাড়াতে শশুর মশাই বেশ ভালই চলে। আমাদের বাড়ি নাম ভূঁইয়া বাড়ি।
আমার একটা দেবর আছে সবেমাত্র বুয়েটে ভর্তি হলো। ওর নাম ইরফান আলী ভূঁইয়া।
আমার বর ইমরান একটা প্রাইভেট ব্যাংকের কাজ করে।
এই বাসায় তিনটা পুরুষ, তিনজনই বেশী চুপচাপ। প্রানবন্ত এবং চমৎকার একজন মানুষই, তা হলেন আমার শাশুড়ি মা।
মরিয়ম হলো আমার শাশুড়ি মায়ের নাম। আমার শশুর ম্যারি বলে ডাকেন। আমার শাশুড়ি আমার শশুরের ডাকটা খুব আনন্দ ভরে উপভোগ করেন।
সেইদিন ছিল ছুটির দিন, সবাই আমরা একসাথে দুপুরে খেতে বসেছি। আমার শাশুড়ি মা ইমরানের দিকে তাকিয়ে বলে, কিরে তুই সারাদিন ওই যাদুর বাক্স লইয়া কি টিপস? আমার সেজুমা থেকে কি ওই ছাতা সুন্দর নি!
শোন আমি তগো দুজনের হানিমুন নাকি কি যেনো কয়, সেইটার টাকা দিমু। কোন জায়গায় যাবি বউরে লইয়া! বলদা পোলা একটু ঘুইরা আয়। যখনেরটার তখনই সময় রে! সময় গেলে আর পাবিনারে বলদ পোলা আমার।
ইমরান এক সপ্তাহের ছুটি নিলো। আমরা বেড়িয়ে এলাম মালয়েশিয়া। এই প্রথম আমার দেশের বাইরে যাওয়া। সেখানে প্রতিটা সময় মিস করেছি আমার শশুরবাড়ীর লোকদের। বিশেষ করে আমার শাশুড়ী মা'কে।
দেখতে দেখতে বিয়ের একবছর কেটে গেলো। আমার শরীরে নতুন অস্তিত্ব টের পাচ্ছি। আমি নামাজ পড়ে সেদিন শাশুরির রুমে গেলাম। মাকে সালাম করি পা ছুঁয়ে। মা হাত সরিয়ে নিয়ে বলে এটা কি করস তুই! তোর স্থান আমার বুকে রে মা। কি হইছে সালাম কেন! মা আমার মুখ দেখেই বুঝে ফেলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন। এত সুখ আল্লাহ! একি আমার কপালে সইবো!
শশুর মশাইকে বলেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েন। আমিও পড়মু আপনে দাদা হইতাছেন। এখন একটু কথা শিখেন। নাতির লগে অনেক গপসপ করন লাগবো।
নিচে ড্রাইভারকে পাঠান মিষ্টি আনতে।
মা'র কাজ এখন, আমার সাথে পার্মানেন্ট থাকবে একটা কাজের লোক খোঁজা। রোজ দারোয়ান কাজের লোক নিয়ে আসে তিনতলায়। শাশুড়ী মা আমাকে পাশে বসিয়ে ইন্টারভিউ নেয়। কাজের লোকের। কোন কাজের মানুষই তার পছন্দ হচ্ছে না। কারও শরীর বেশি ভারি, সে আমাকে না দেখা শুনা না করে নাকি সারাদিন ঘুমাবে। কারও বুক নাকি বেশি ভারি, কি ভয়ঙ্কর কথা। মা বলে বাড়ির মিনসেগুলা হয় বিড়ালের মতন। সুযোগ পাইলেই এইটা ওইটা আইঠা করে রাখব। তাই সবসময় চোখে চোখে রাখবা। আর এত বুক ভারি মাইয়াদের কামে রাখন ঠিক না। বাড়ির মিনসেগুলার চোখ যাইব ওর দিকেই।
আপাতত কাজের বুয়া দেখা বন্ধ। কারণ মাকে বুঝিয়ে বলি বাসায় দুটো বয়স্ক কাজের বুয়া অনেক বছর ধরেই। কি দরকার নতুন মানুষের আর! আপনি তো চব্বিশ ঘণ্টাই আমার সাথে আছেন।
ভাদ্র মাস। মা তার আলমারি খুলে সব কাপড় রোদে দিচ্ছেন বারান্দায় মেলে মেলে। তার মধ্যে থেকে লাল একটা বেনারসি শাড়ি বের করে আমাকে দেখান। এটা আমার বিয়ার শাড়ি গো মা। খুব যত্নে রাখবা এটা তোমারে আমি দিলাম। আর এই যে পলিতে প্যাকেট করা, এইটা হইল ইমরানের ছোট্ট বেলার জামাকাপড়। ওর পোলা কিংবা মাইয়া হোক এটা তুমি একদিনের জন্য হইলেও পরাইবা।
মায়ের সাথে আমিও মায়ের আলমারি খুলে কাপড় রোদে দিতে থাকলাম। মা একটা পলি থেকে লাল টুকটুকে সাটিনের ব্লাউজ বের করল। কী যে সুন্দর স্লিভলেস! আমাকে লাজুক মুখে বলে এই যে সেই ব্লাউজ গো মা।
মা আজকে তার রুমে যেয়ে তার গয়নার বাক্সটা খুলে খুব সুন্দর দুটো চুড় আমার হাতে পরিয়ে দিল। এটা আমি তোমারে দিলাম তুমি এতো বড় খুশি আজ আমার বাড়িতে আনতাছো, এই খুশি আমি রাখি কেমনে।
সেইদিন ছিল ইমরানের অফিস বন্ধ। ডাক্তার দেখিয়ে ওর সাথেই বাইরে খেয়েদেয়ে বাসায় ফিরি।বাসায় এসেই ওয়াশ রুমে ইমরান। বাসায় ওয়াইফাই কানেক্ট থাকাতে ওর মোবাইল ম্যাসেজ সিগনাল দেওয়া শুরু করল একটু পরপর। আমি কোনদিনও ওর সেল ফোন ধরিনা। সেইদিন কি মনে করে ফোনটা হাতে নিলাম। দেখি একটু পর পর নীলা নামে এক মেয়ে ম্যাসেজ দিচ্ছে। আমার হাত পা তখন কাঁপছে। আমি ম্যাসেজে ঢুকি। ইমরানকে লিখা কই তুমি? তোমাকে পাচ্ছি না কেন? খুব দরকার আমার তোমাকে। মিস ইউ সোনা।
আমি আর পড়তে পারছি না। আমার সমস্ত পৃথিবী মনে হয় উল্টে গেলো।
ইমরান শাওয়ার নিয়ে আসার পর ওর দিকে তাকাতে পারছি না।
সেই রাতে আমি কোন কথাই বলিনি। সারারাত ঘুমাতেও পারিনি। সকালে উঠে ব্যাগে কাপড় গুছতে লাগলাম। ইমরান খুবই অবাক! কোথায় যাও তুমি? আমি শুধু বলি তুমি আমাকে না শুধু আমার সন্তানকেও ঠকিয়েছ ইমরান। ও আমার হাত ধরে বলে মানে কি? মানে হলো নীলা কে? ও নো! আমার বন্ধু, কেন বলতো!
আমি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না। মায়ের রুমে গেলাম, মাকে সালাম করলাম। বাবাকে সালাম করলাম। আমি চলে যাচ্ছি মা। মা আমার হাত ধরে বলে জামাই বউ ঝগড়া হইবো তার মানে এই না যে ঘর থাইকা চলে যাবি মাইয়া। ঘর থেকে বাইর হইলেই ৩য় পক্ষ আইব রে। যতবড়ই সমস্যা হোক সেটা ঘরে বসেই সমাধান করা ভাল। ঘরের বাইরের মানুষগুলা কূটবুদ্ধি দিবরে মা।
আমাদের থুইয়া তুই যাইসনারে মা।
আমি চোখ মুছতে মুছতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রিক্সা ধরি।
রাত ১টায় সেল ফোনটা বেজে উঠে। দেখি ইমরানের ফোন ইচ্ছে না থাকা সত্তেও ধরি ফোন। ওপার থেকে ইমরান কাঁদছে। সেঁজুতি মা হসপিটালে। বাথরুম মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল স্ট্রোক করেছে। তোমাকে খুঁজছে মা। আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠি। বাবাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছাই।
আমাকে দেখে আমার শশুর মশাই, ইমরান, ইরফান সহ ছোট শিশুদের মতন দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। শাশুড়ি মা আমার আইসিইউতে। রাত ৩টা। আমরা সবাই আইসিইউর সামনে। ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছে ডাক্তার। এমন সময় একজন সিস্টার এসে বলে সেজু কার নাম। আমি চিৎকার করে উঠে দৌঁড়ে আগাতে গেলে শশুর মশাই বলে মাগো আস্তে পা ফেলো, তোমার শরীর আর একজন আছে গো মা।
মা'র কাছে গেলাম। কতরকম মেশিন পত্র মায়ের শরীরে আটকানো। আমি আমার মায়ের হাতটা ধরে চুমু দেই মাগো আমাকে মাফ করে দেন। মা ইশারায় তার মুখের মাস্ক সরাতে বলে আমি ভয়ে ভয়ে সরাই। আস্তে আস্তে বলে ঘর থুইয়া কনোদিন বাইর হবিনারে মা কথা দে। আমি মায়ের হাত চেপে ধরি। মা শক্ত করে হাত চেপে ধরে আমার। বউরে আমি আর বাচঁমু না। তোর উপর অনেক দায়িত্ব।
বুইড়া খোকা, আমার দুই পোলা, আর যেইটা আইতাছে। কন্যা, একসময় জায়া আর এক সময় জননীর রূপ নিবি। সংসারের জন্য শক্তও হওয়ার যেমন প্রয়োজন আছেগো তেমনি নরম হওয়ারও দরকার আছে।কোনদিন সংসার ছাইড়া যাবিনা গো মা। এই সংসার তোর কোন তৃতীয় শক্তি যেনো না আসে। অনেক দোয়া দিয়া যাইতেছি গো মা তোরে। আমি স্বপ্নে দেখছি তোর একটা মাইয়া হইব।
তারপর ছটফট শুরু করল আমার শাশুড়ি। আমি চিৎকার করে ডাকছি ডাক্তার, সিস্টার! আমার শাশুড়ির প্রেসার আপ ডাউন শুরু করল। আর প্রেসারটা উঠল না।
বাইরে মসজিদে ভোরের আজান শোনা যাচ্ছে। ঠিক তখনি ডাক্তার এসে অফিসিয়ালি ডিক্লেয়ার দিলো আমাদের মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
দুই বছর পর। আমাদের বাসা আলো করে ম্যারি এসেছে। আমার শশুড় মশাই ওর নাম রেখেছে ম্যারি।
আমাদের ভূঁইয়া বাড়িরও নতুন নাম করন করা হলো মরিয়ম ভবন।
সবাই ব্যাস্ত ম্যারি কে নিয়ে। যতক্ষণ ইরফান বাসায় থাকে এক পলকও চোখছাড়া হতে দেয়না ম্যারিকে। ইমরান অফিস থেকে যত তাড়াতাড়ি পারে বাসায় ফিরে, ম্যারিকে সময় দিতে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নিয়েছে শশুর মশাই। সারাদিন গান, কবিতা এমনকি খাওয়ানোর দায়িত্বও তিনি নিয়েছেন। বারান্দায় বসে বাটি চামচ নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি হা করো বুবু। তুমি না খাইলে উপর থাইকা পাগলি বুড়ি আমারে জাঁতাকলে পিষব। তুমি খাইয়া লও।
মেয়ে আমার কি বুঝে উপরের দিকে তাকায়ে টাপাটপ খেয়ে নিল।
আমিও আকাশের দিকে তাকালাম। মাগো তুমি কি তোমার সংসার দেখতে পাও! তুমি ছাড়া আমরা যে সবাই এতিম। পুরো বাড়ি জুড়ে আমি যে শুধু তোমারই গন্ধ পাই।
যেখানে থাকো মা, ভাল থেকো।
(সমাপ্ত)
শাশুড়ি মা খুবই বিরক্ত আমার উপর। নয়া নয়া বিয়া হইছে মাইয়্যা তুমি আমার পিছপিছ ঘুরে বেড়াও কেন! তুমি থাকবা আমার পোলার লগে।
আপনার পোলা সারাদিন ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে থাকে মা। ওর সাথে কি গল্প করব! হারমজাদার ল্যাপটপটা ভাইঙ্গা দেও। একদম বাপের লাহান হইছে। শোন সেজু! মা আমি সেজু না সেঁজুতি। ওই হইল আর কি। শোন মাইয়া তোর শশুর ও এমন ছিলো। আমার যেইদিন বিয়া হয় আকাশে বিশাল চাঁদ। চাঁদের আলো উপচায়া পড়তাছে উঠানে।তখন আমরা থাকতাম এক মফস্বল শহরে। তোর শশুরে কইলাম বাইরে কি সুন্দর জোছনার আলো, চলেন আমরা উঠানে মাদুর পাইতা বসি। আমি একটুখানি গানও জানি, আপনি আমার কোলে মাথা রাইখা শুইয়া থাকবেন, আমি আপনার চুলে বিলি দিমু; আর এই চাঁদের আলোয় গান শুনামু। তোর শশুর আমার দিকে চোখ বড় করে তাকাইয়া কয় এই পাগল ব্যাটি কি কয়! আমর কি কুত্তা কামড়াইছে নি! এই হইল বউ আমার প্রথম রাতের গল্প।
আর একদিনের গল্প কইরে বউ। নতুন বিয়া হইছে স্বামীর লগে ঘুড়তে মন চায়। তোর শশুর কোথাও নিতে চায়না। আমার শাশুড়ি আছিলো খুব ভাল মানুষ। আমারে অনেক আদর করত। তারে যাইয়া কইলাম আমি আপনার পোলার লগে সিনেমা দেখতে যামু, আপনি একটু কইয়া দেন মা!
আমার শাশুড়ি তোমার শশুররে গালি দিয়া কইলো, গোলামের ঘরের গোলাম আইজই তুই বউরে লইয়া বেড়াইতে যাবি, বউ যেখানে যাইতে চায়। তোর শশুর মা'র কথা ফেলতে পারে নাই। আমি দুপুরে ভাত খাইয়াই সাজগোজ শুরু কইরা দেই। নতুন একটা শাড়ী পিন্দি, চোখে কাজল দেই, চুলে তেল দিয়া খোপা করি।ঠোঁটে লিপষ্টিকও লাগাই। সাইজা তোর শশুরের সামনে দাঁড়াই। কইলাম দেখেন-ত কেমন লাগতাছে! তোর শশুর দুই ভুরু জোরা লাগাইয়া কয় এই পাগল ব্যাটি যাইতাছি সিনেমা দেখতে আর তুমি নায়িকা সাইজা কই যাও! সব সাজন মুছো। আমার চোখ ছলছল হইয়া গেল। আমার শাশুড়ি শুনতে পাইয়া আচ্ছা মতন তোর শশুরে ধুনাইল...
বের হইলাম জামাইর লগে রিক্সা কইরা। মাথায় বড় একটা ঘোমটা।ঘোমটার কারণে আশেপাশে কিছুই দেখতে পারিনা। তোর শশুররে কইলাম মাথার ঘোমটা ফেলামু আমি। আর তোর শশুরের হাতটা ধরে বসলাম। সে কয় কি এই পাগল ব্যাটি হাত সরাও। সবাই দেখব। তো আমি আরো শক্ত কইরা হাত ধরি। দেখুক আমি কি অন্য ব্যাটার হাত ধরছিনি! শশুর-তো আৎকে উঠে কি কয় এই পাগল ব্যাটি!
যথারীতি সিনেমাহলে গেলাম। আমারে একখানে দাঁড় করায়া রাইখা সিনেমার টিকিট কাটতে লাগল। দেখি কত রঙ ঢংগের মাইয়া! ও একা টিকিট কাটতাছে। কেউ আবার ডানাকাটা ব্লাউজ পইরা আছে। আমি ঘোমটার ফাঁক দিয়া দেখি মিনসেটা মানে তোর শশুর ওই ব্যাটি গুলোর দিকে তাকায় রইছে।
বাড়িতে ঢুইকাই আমি মিনসেরে দিলাম গালি। হা কইরা তো ডানাকাটা ব্যাটি গুলার দিকে তাকায় আছিলেন! কি দেখলেন! আমিও এমন ডানাকাটা ব্লাউজ পিনমু।
হায় হায়! এই ব্যাটির মনে হয় সত্যি মাথাটা পুরাই গেছে! যাইয়া আমার শাশুড়িরে নালিশ করে। শাশুড়ীর হকুম বউ একটা আবদার করছে তুই দিবি না কেন?
আমি নিজেও জানিনা বউ কবে তোর শশুর আমার ব্লাউজ নিয়া, সত্যি ওই মাপের একটা ডানাকাটা ব্লাউজ বানায় আনছে। আইনা আমার আলমারিতে রাইখা দিছে। ব্লাউজটা কোনদিন আমি পরিনাই রে মা। কেমন জানি লজ্জা লাগে।
আবার মনটাও ভাল লাগে তোমার শশুর আমারে না জানাইয়া ব্লাউজের মাপ দিয়া বানায় আনছে।
আমার পোলাওটা হইছে বাপের মতন বলদ। বউ কি চায় বুঝেনা। নতুন বউ ঘরে। ও যাদুর বাক্স লইয়া পইড়া আছে। আরে ব্যাটা এই সময়গুলা কি আর পাবি! এহন একটু আমদ ফূর্তি কর।
আমার শশুরবাড়ী আরিজিনাল নারায়ণগঞ্জ চাষারায়। সেখানেই আমার বরের জন্ম।
আমার বরের নাম ইমরান আলী ভূইয়া। আমার শশুরের নাম আমজাদ আলী ভূঁইয়া। আমার বরের স্কুল জীবন কেটেছে নারায়ণগঞ্জে। আমার শশুরের ছিলো রঙের ব্যবসা।
আমার দাদী-শাশুড়ি মারা যাবার পর আমার শশুর মশাই ঢাকার জিগতলায় এসে একটা জায়গা কিনে। প্রথমে একতলা করে ঢাকায় চলে আসে। এখন সেই বাড়ি ৬ তলা। পাঁচকাঠার উপর। তিনটা করে ইউনিট। আমাদেরটা ছাড়া। আমরা তিন তলায় থাকি। বাকি সবগুলোর ভাড়াতে শশুর মশাই বেশ ভালই চলে। আমাদের বাড়ি নাম ভূঁইয়া বাড়ি।
আমার একটা দেবর আছে সবেমাত্র বুয়েটে ভর্তি হলো। ওর নাম ইরফান আলী ভূঁইয়া।
আমার বর ইমরান একটা প্রাইভেট ব্যাংকের কাজ করে।
এই বাসায় তিনটা পুরুষ, তিনজনই বেশী চুপচাপ। প্রানবন্ত এবং চমৎকার একজন মানুষই, তা হলেন আমার শাশুড়ি মা।
মরিয়ম হলো আমার শাশুড়ি মায়ের নাম। আমার শশুর ম্যারি বলে ডাকেন। আমার শাশুড়ি আমার শশুরের ডাকটা খুব আনন্দ ভরে উপভোগ করেন।
সেইদিন ছিল ছুটির দিন, সবাই আমরা একসাথে দুপুরে খেতে বসেছি। আমার শাশুড়ি মা ইমরানের দিকে তাকিয়ে বলে, কিরে তুই সারাদিন ওই যাদুর বাক্স লইয়া কি টিপস? আমার সেজুমা থেকে কি ওই ছাতা সুন্দর নি!
শোন আমি তগো দুজনের হানিমুন নাকি কি যেনো কয়, সেইটার টাকা দিমু। কোন জায়গায় যাবি বউরে লইয়া! বলদা পোলা একটু ঘুইরা আয়। যখনেরটার তখনই সময় রে! সময় গেলে আর পাবিনারে বলদ পোলা আমার।
ইমরান এক সপ্তাহের ছুটি নিলো। আমরা বেড়িয়ে এলাম মালয়েশিয়া। এই প্রথম আমার দেশের বাইরে যাওয়া। সেখানে প্রতিটা সময় মিস করেছি আমার শশুরবাড়ীর লোকদের। বিশেষ করে আমার শাশুড়ী মা'কে।
দেখতে দেখতে বিয়ের একবছর কেটে গেলো। আমার শরীরে নতুন অস্তিত্ব টের পাচ্ছি। আমি নামাজ পড়ে সেদিন শাশুরির রুমে গেলাম। মাকে সালাম করি পা ছুঁয়ে। মা হাত সরিয়ে নিয়ে বলে এটা কি করস তুই! তোর স্থান আমার বুকে রে মা। কি হইছে সালাম কেন! মা আমার মুখ দেখেই বুঝে ফেলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন। এত সুখ আল্লাহ! একি আমার কপালে সইবো!
শশুর মশাইকে বলেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েন। আমিও পড়মু আপনে দাদা হইতাছেন। এখন একটু কথা শিখেন। নাতির লগে অনেক গপসপ করন লাগবো।
নিচে ড্রাইভারকে পাঠান মিষ্টি আনতে।
মা'র কাজ এখন, আমার সাথে পার্মানেন্ট থাকবে একটা কাজের লোক খোঁজা। রোজ দারোয়ান কাজের লোক নিয়ে আসে তিনতলায়। শাশুড়ী মা আমাকে পাশে বসিয়ে ইন্টারভিউ নেয়। কাজের লোকের। কোন কাজের মানুষই তার পছন্দ হচ্ছে না। কারও শরীর বেশি ভারি, সে আমাকে না দেখা শুনা না করে নাকি সারাদিন ঘুমাবে। কারও বুক নাকি বেশি ভারি, কি ভয়ঙ্কর কথা। মা বলে বাড়ির মিনসেগুলা হয় বিড়ালের মতন। সুযোগ পাইলেই এইটা ওইটা আইঠা করে রাখব। তাই সবসময় চোখে চোখে রাখবা। আর এত বুক ভারি মাইয়াদের কামে রাখন ঠিক না। বাড়ির মিনসেগুলার চোখ যাইব ওর দিকেই।
আপাতত কাজের বুয়া দেখা বন্ধ। কারণ মাকে বুঝিয়ে বলি বাসায় দুটো বয়স্ক কাজের বুয়া অনেক বছর ধরেই। কি দরকার নতুন মানুষের আর! আপনি তো চব্বিশ ঘণ্টাই আমার সাথে আছেন।
ভাদ্র মাস। মা তার আলমারি খুলে সব কাপড় রোদে দিচ্ছেন বারান্দায় মেলে মেলে। তার মধ্যে থেকে লাল একটা বেনারসি শাড়ি বের করে আমাকে দেখান। এটা আমার বিয়ার শাড়ি গো মা। খুব যত্নে রাখবা এটা তোমারে আমি দিলাম। আর এই যে পলিতে প্যাকেট করা, এইটা হইল ইমরানের ছোট্ট বেলার জামাকাপড়। ওর পোলা কিংবা মাইয়া হোক এটা তুমি একদিনের জন্য হইলেও পরাইবা।
মায়ের সাথে আমিও মায়ের আলমারি খুলে কাপড় রোদে দিতে থাকলাম। মা একটা পলি থেকে লাল টুকটুকে সাটিনের ব্লাউজ বের করল। কী যে সুন্দর স্লিভলেস! আমাকে লাজুক মুখে বলে এই যে সেই ব্লাউজ গো মা।
মা আজকে তার রুমে যেয়ে তার গয়নার বাক্সটা খুলে খুব সুন্দর দুটো চুড় আমার হাতে পরিয়ে দিল। এটা আমি তোমারে দিলাম তুমি এতো বড় খুশি আজ আমার বাড়িতে আনতাছো, এই খুশি আমি রাখি কেমনে।
সেইদিন ছিল ইমরানের অফিস বন্ধ। ডাক্তার দেখিয়ে ওর সাথেই বাইরে খেয়েদেয়ে বাসায় ফিরি।বাসায় এসেই ওয়াশ রুমে ইমরান। বাসায় ওয়াইফাই কানেক্ট থাকাতে ওর মোবাইল ম্যাসেজ সিগনাল দেওয়া শুরু করল একটু পরপর। আমি কোনদিনও ওর সেল ফোন ধরিনা। সেইদিন কি মনে করে ফোনটা হাতে নিলাম। দেখি একটু পর পর নীলা নামে এক মেয়ে ম্যাসেজ দিচ্ছে। আমার হাত পা তখন কাঁপছে। আমি ম্যাসেজে ঢুকি। ইমরানকে লিখা কই তুমি? তোমাকে পাচ্ছি না কেন? খুব দরকার আমার তোমাকে। মিস ইউ সোনা।
আমি আর পড়তে পারছি না। আমার সমস্ত পৃথিবী মনে হয় উল্টে গেলো।
ইমরান শাওয়ার নিয়ে আসার পর ওর দিকে তাকাতে পারছি না।
সেই রাতে আমি কোন কথাই বলিনি। সারারাত ঘুমাতেও পারিনি। সকালে উঠে ব্যাগে কাপড় গুছতে লাগলাম। ইমরান খুবই অবাক! কোথায় যাও তুমি? আমি শুধু বলি তুমি আমাকে না শুধু আমার সন্তানকেও ঠকিয়েছ ইমরান। ও আমার হাত ধরে বলে মানে কি? মানে হলো নীলা কে? ও নো! আমার বন্ধু, কেন বলতো!
আমি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না। মায়ের রুমে গেলাম, মাকে সালাম করলাম। বাবাকে সালাম করলাম। আমি চলে যাচ্ছি মা। মা আমার হাত ধরে বলে জামাই বউ ঝগড়া হইবো তার মানে এই না যে ঘর থাইকা চলে যাবি মাইয়া। ঘর থেকে বাইর হইলেই ৩য় পক্ষ আইব রে। যতবড়ই সমস্যা হোক সেটা ঘরে বসেই সমাধান করা ভাল। ঘরের বাইরের মানুষগুলা কূটবুদ্ধি দিবরে মা।
আমাদের থুইয়া তুই যাইসনারে মা।
আমি চোখ মুছতে মুছতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রিক্সা ধরি।
রাত ১টায় সেল ফোনটা বেজে উঠে। দেখি ইমরানের ফোন ইচ্ছে না থাকা সত্তেও ধরি ফোন। ওপার থেকে ইমরান কাঁদছে। সেঁজুতি মা হসপিটালে। বাথরুম মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল স্ট্রোক করেছে। তোমাকে খুঁজছে মা। আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠি। বাবাকে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছাই।
আমাকে দেখে আমার শশুর মশাই, ইমরান, ইরফান সহ ছোট শিশুদের মতন দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। শাশুড়ি মা আমার আইসিইউতে। রাত ৩টা। আমরা সবাই আইসিইউর সামনে। ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছে ডাক্তার। এমন সময় একজন সিস্টার এসে বলে সেজু কার নাম। আমি চিৎকার করে উঠে দৌঁড়ে আগাতে গেলে শশুর মশাই বলে মাগো আস্তে পা ফেলো, তোমার শরীর আর একজন আছে গো মা।
মা'র কাছে গেলাম। কতরকম মেশিন পত্র মায়ের শরীরে আটকানো। আমি আমার মায়ের হাতটা ধরে চুমু দেই মাগো আমাকে মাফ করে দেন। মা ইশারায় তার মুখের মাস্ক সরাতে বলে আমি ভয়ে ভয়ে সরাই। আস্তে আস্তে বলে ঘর থুইয়া কনোদিন বাইর হবিনারে মা কথা দে। আমি মায়ের হাত চেপে ধরি। মা শক্ত করে হাত চেপে ধরে আমার। বউরে আমি আর বাচঁমু না। তোর উপর অনেক দায়িত্ব।
বুইড়া খোকা, আমার দুই পোলা, আর যেইটা আইতাছে। কন্যা, একসময় জায়া আর এক সময় জননীর রূপ নিবি। সংসারের জন্য শক্তও হওয়ার যেমন প্রয়োজন আছেগো তেমনি নরম হওয়ারও দরকার আছে।কোনদিন সংসার ছাইড়া যাবিনা গো মা। এই সংসার তোর কোন তৃতীয় শক্তি যেনো না আসে। অনেক দোয়া দিয়া যাইতেছি গো মা তোরে। আমি স্বপ্নে দেখছি তোর একটা মাইয়া হইব।
তারপর ছটফট শুরু করল আমার শাশুড়ি। আমি চিৎকার করে ডাকছি ডাক্তার, সিস্টার! আমার শাশুড়ির প্রেসার আপ ডাউন শুরু করল। আর প্রেসারটা উঠল না।
বাইরে মসজিদে ভোরের আজান শোনা যাচ্ছে। ঠিক তখনি ডাক্তার এসে অফিসিয়ালি ডিক্লেয়ার দিলো আমাদের মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
দুই বছর পর। আমাদের বাসা আলো করে ম্যারি এসেছে। আমার শশুড় মশাই ওর নাম রেখেছে ম্যারি।
আমাদের ভূঁইয়া বাড়িরও নতুন নাম করন করা হলো মরিয়ম ভবন।
সবাই ব্যাস্ত ম্যারি কে নিয়ে। যতক্ষণ ইরফান বাসায় থাকে এক পলকও চোখছাড়া হতে দেয়না ম্যারিকে। ইমরান অফিস থেকে যত তাড়াতাড়ি পারে বাসায় ফিরে, ম্যারিকে সময় দিতে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নিয়েছে শশুর মশাই। সারাদিন গান, কবিতা এমনকি খাওয়ানোর দায়িত্বও তিনি নিয়েছেন। বারান্দায় বসে বাটি চামচ নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি হা করো বুবু। তুমি না খাইলে উপর থাইকা পাগলি বুড়ি আমারে জাঁতাকলে পিষব। তুমি খাইয়া লও।
মেয়ে আমার কি বুঝে উপরের দিকে তাকায়ে টাপাটপ খেয়ে নিল।
আমিও আকাশের দিকে তাকালাম। মাগো তুমি কি তোমার সংসার দেখতে পাও! তুমি ছাড়া আমরা যে সবাই এতিম। পুরো বাড়ি জুড়ে আমি যে শুধু তোমারই গন্ধ পাই।
যেখানে থাকো মা, ভাল থেকো।
(সমাপ্ত)