উফফ!!! সবাই কি রকম লিখতেছে, আমার পেপারটা
স্যারের কাছে ৷ রাগটা এবার মাথায় উঠে যাচ্ছে,
তওসীপ্পা শয়তান ছেলে একটা, আগে ক্লাস
থেকে বের হই পরে বুঝাবো মজা ৷ আমি কি ওর
কাছে কাগজ চাইছি, আর কাগজটি মারলো ঠিক হল
সুপারের সামনে ৷ বদ স্যারের ভাবনা, আমি কাগজটি
চাইছি তাই আমার কাছে মারলো ৷ এই দিকে দশ মিনিট
পার হয়ে গেলো, এই পরিক্ষায় নির্ঘাত ডাব্বা
মারবো ৷ মায়ের মুখ খানা সামনে ভেসে উঠলো,
খুন্তি হাতে মা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে
বলতেছে ৷
— সারাবছর ফোন টিপছিস কিছু বলি নি, এবার যদি পরিক্ষা
খারাপ হয় তো এই বিয়ে ক্যান্সেল ৷
ইশশ!! কত দিন পর একটি মনের মতো ছেলে
খুজে পাইছে ৷ সেটা কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না
৷
স্যারকে বললাম,
— স্যার আমি কেনো দোষ করি নি পেপারটা দিন ৷
— না, তোমার পেপার দেওয়া হবে না ৷
— স্যার পেপার দিবেন কিনা বলেন?
— বসো তুমি, আমার সময় হলে পেপার দিবো ৷
— স্যার আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
কথাটা শোনার পর, স্যার সাথে সাথে ঘুরে তাঁকাল
আর ক্লাসের সবাই লেখা বন্ধ করে দিলো ৷ বেশ
হইছে, আমার পেপার স্যারের কাছে আর ওরা কি
সুন্দর লিখছিলো ৷ ঠিক তখনি স্যার বলল,
— এই কি বললে তুমি? (স্যার)
— হ্যাঁ স্যার, যদি এই পরিক্ষা খারাপ হয় তো মা বলে
দিছে, বিয়ে ক্যান্সেল ! তো বুঝতে পারছেন?
পেপার না দিলে আমাকে বিয়ে করতে হবে ৷
কোনটা করবেন? বিয়ে করবেন নাকি পেপার
দিবেন?
এবার স্যারের মুখখানা দেখার মতো হয়েছে,
হয়তো স্যারের বউয়ের কথা মনে পরছে ৷ কথা
না বাড়িয়ে পেপার দিয়ে চলে গেলেন স্যার ৷
এদিকে কেউ কেউ বলছে, আয়না তুই পারিসও
বটে, আবার কেউ বলছে, স্যারে আয়নাকে
এখনো চিনে উঠতে পারে নি ৷ বলেই হো হো
করে হেসে দিলো ৷
পরিক্ষা শেষ করে যখন বের হলাম, ঠিক তখনি
তওসীফ এসে বলল,
— আয়না আজ যা হলো, হল সুপার আর কখনো
তোর খাতা নিবে না ৷
— কুত্তা ছেলে আজ তোর একদিন কি আমার
একদিন ৷
— আরে দোস্ত দাড়া, তোরে কত্তো ভালবাসি
আমি, আর যখন দেখলাম তুই না লিখে কলম খাচ্ছিস ৷
তাই কাগজটি দিলাম তোকে ৷ বিশ্বাস কর হল সুপারকে
খেয়াল করি নি ৷
— মাইর খাওয়ার আগে বিদায় হো এখান থেকে ৷
— দোস্ত আরেকটা কথা বলতাম তোকে ৷
— কি বলবি? তাড়াতাড়ি বল, এক জায়গায় যাবো ৷
— না মানে, সামনে ফেব্রুয়ারি মাস ৷
— তো, সে আমি জানি ৷
— না মানে সামিয়াকে নিয়ে ঘুরতে যাইতাম ৷
— যা তা আমাকে বলছিস কেনো?
— তোকে একটা জিনিস দিবো
— কি?
— এই নে বাঁশি, যখনি পার্কে যাবি তখন এই বাঁশি বাজাবি ৷
বলেই দৌড়..
ফাজিল ছেলে, আমাকে ঘুষ দিলো ৷ সে যাই
হোক, এই বাঁশি কাজে লাগানো যাবে ৷ আগের
বাঁশিটা ঠিক মতো বাজছে না ৷
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি,বদ ছেলের জন্য আর
কতক্ষণ যে অপেক্ষা করতে হবে কে জানে ৷
কত করে বললাম, হাত চুলকায়, কোন এক পার্কে
যেতে হবে ৷ তা এখনো আসার নাম নাই ৷ ওই দিকে
পেটের মধ্যে ইদুর বাবাজি কিচিরমিচির শুরু করছে ৷
সেই সকালে কি না কি খেয়েছি মনে আছে নাকি,
ইশশ!! মায়ের কথা মনে পড়তেই মায়ের পা দুখানা
চোখের সামনে চলে আসলো ৷ আজ শেষ
পরিক্ষা ছিলো, তাই আয়নার সামনে বসে সেইরকম
একটা সাঁজ দিলাম কিন্তু মনের মতো হচ্ছে না ৷ ঠিক
তখনি মা বলল,
— আয়না আর কতক্ষণ থাকবি আয়নার সামনে?
— হু হা হা হা, আয়না এখন আয়না দেখতে ব্যস্ত ৷
ওমনি মা রান্না ঘর থেকে খুন্তি হাতে তেড়ে
এসে, ওই অলক্ষুনে কথাটি বলল, যে পরিক্ষা খারাপ
হলে বিয়ে হবে না ৷ তখন মাকে বললাম,
— তোমার পা দুখানা সামনে আনো, সালাম করে যাই ৷
তার পর দেখবো কেমনে বিয়ে বন্ধ হয় ৷
আজ মায়ের পা ধরে সালাম করে আসাতে মনে হয়
পরিক্ষাটা ভাল হয়েছে ৷
কারো ডাকে ঘোর কাটলো ৷
— কি হলো একা একা হাসছো কেনো? (বিশ্ব)
— আপনার এখন আসার সময় হলো? সেই কতক্ষণ
ধরে অপেক্ষা করছি ৷
— আরে কাজের চাপে একটু দেরি হয়ে
গেলো ৷
— চলেন
— কোথায়?
— পার্কে...
— আবার? ( ভ্রুঁ কুঁচকে তাঁকিয়ে)
— হুম,
কিছু না বলেই আমার সাথে হাটা দিলো, এই
ছেলেটাকে অনেক জ্বালাই ৷ তার সাথে কয়েক
মাস আগেই পরিচয় ৷ একদিন পার্কে ঢুকতেই দেখি
একটা লোক হিসু করতেছে ৷ ফোনটা বের করে
ভিডিও করতেছিলাম ৷ ওমনি বদ ছেলেটা এসে বলল,
— আপনি এগুলো কি করছেন? একটা মেয়ে হয়
লোকের হিসু করা ভিডিও করছেন?
লোকটার দিকে তাঁকালাম, কিছু না বলেই আবার ভিডিও
করায় মনযোগী হলাম ৷
তবে লোকটা এমন ভাবে তাঁকিয়ে ছিলো যে,
তাকে না বলে থাকতে পারলাম না ৷ আস্তে করে
বললাম,
— চুপচাপ দেখে যান কথা বলবেন না ৷
ভিডিও করা শেষ করে হিসু করা লোকটার সামনে
গেলাম ৷
— এই যে আঙ্কেল পাঁচশত টাকা বের করেন ৷
— মানে তোমাকে টাকা দিতে যাবো কেনো?
— দিবেন না?
— এই মেয়ে, দেখে তো মনে হয় ভদ্র
ঘরের মেয়ে ৷ তোমার ধান্দা বুঝতে পারছি, তা
এইভাবে টাকা দিবো না ৷একদিন আমাকে খুশি করো,
শুধু পাঁচশ টাকা না আরো দিবো ৷
মেজাজটা চরম মাত্রায় উঠে গেছে, হাসি মুখ নিয়ে
বললাম,
— চাচা দেখছেন জুতো? একদম পুরানো হয়ে
গেছে ৷ বলেই জুতাটা খুলে হাতে নিলাম
— ব্যাটা লুইচ্চা এই জুতা দিয়ে পিটিয়ে তোর টাক
ফাটিয়ে দিবো ৷ দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ
সম্মানি লোক, তা মন এতো নিচে কেনো? এক
হাজার টাকা বের কর না হলে এই ভিডিও ইন্টারনেটে
ছেড়ে দিবো৷
এবার লোকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
— মানে?
— পার্কে ঢোকার সময় সতর্কবাণী পড়ে
ঢোকেন নি? কি কি করা যাবে না? কথা না বাড়িয়ে টাকা
দিন ৷
লোকটি আর কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে চলে
গেলো ৷ এবার বাঁশিটা হাতে নিলাম, বাজানোর সাথে
সাথে বাচ্চাগুলো দৌড়ে এসে বলল,
— বুবু তুমি এসে গেছো?
— হ্যাঁ, এই নে এক হাজার টাকা, তোরা ভাগ করে নিস ৷
ওরা চলে গেলো, বেঞ্চে গিয়ে বসলাম ৷ ওমনি
সেই ছেলেটা বলল,
— আপনি পারেনো বটে, আমি কত উল্টা পাল্টা কথা
ভাবলাম ৷
— না ঠিক আছে, প্রথমে সবাই এরকম ভাবে ৷
ছেলেটির সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, ওর নাম
বিশ্ব, কোন একটি কোম্পানিতে জব করে ৷ আর
এইখানে আসছে মন ভালো করতে ৷ সেই
থেকে ছেলেটির সাথে পরিচয় ৷ মাঝে মাঝে
তাকে নিয়ে পার্কে যাই, যখন আমার হাত চুলকায় ৷
আর হাত চুলকায় মানে, হাতে টাকা আসে ৷
আজও তাকে নিয়ে পার্কে আসলাম ৷ শেষ পরিক্ষা
বলে আজ একটু বেশি ঘুরবো ৷
— এই আয়না তুমি মানুষকে এইভাবে বিরক্ত করো
কেনো?
— কি করবো তাইলে, আমাদের সমাজে
মানুষগুলো বড্ড স্বার্থপর ৷ নিজের ক্ষনিকের কিছু
সুখের জন্য কত টাকা খরচ করে ৷ কিন্তু এই যে
পথের কত মানুষ না খেয়ে থাকে, তাদের দিকে
ফিরিয়েও তাঁকায় না ৷ তাই এই পথ বেঁছে নিলাম, ওরা
যখন টাকা খরচ করে ক্ষনিকের সুখ খুজে নেয় ৷
তার থেকে যদি কিছু ভাগ ওই অনাথ বাচ্চাদের দেওয়া
হয় তাতে কি বেশি অন্যায় হয়?
— হুম বুঝলাম
— চলেন ওই ঝোপের ওই দিকে যাই ৷
— এই না না, ওই দিকে যাওয়ার কোনো দরকার নেই
৷(বিশ্ব)
— আরে চলেন তো
আস্তে আস্তে ভিতরে চলে গেলাম, উফফ!!
ছেলে মেয়ে গুলো এতো নিচে নেমে
গেছে, কি বলবো ভিডিও করতেও বিরক্ত লাগছে
৷ বিশ্বর দিকে তাঁকালাম, চোখের উপর চোখ
পড়তেই অন্য দিকে তাঁকালাম ৷ এই প্রথম ভিডিও
করতে লজ্জা লাগছে ৷ নাহ আজ আর ভিডিও করা
যাবে না ৷ যখনি চলে আসতে যাবো তখনি দেখি,
ইয়েন যাকে কিনা আমি পাগলের মতো ভালবাসতাম ৷
বড় লোক বাপের একমাত্র ছেলে, যখন বন্ধুত্ব
ছিলো ওর সাথে ৷ তখন ওর জন্মদিনে দুই হাজার টাকা
খরচ করে উপহার দিতে হয়েছে ৷ একদিন ভালবাসার
কথা জানাই তখন উত্তরে বলেছিলো,
— তোমার সাথে হেসে হেসে কথা বলি বলে
এই নয় যে ভালবাসতে হবে ৷ আর তোমার মতো
কত মেয়ে আমাকে প্রপোজ করেছে
জানো? কারন আমার বাবার অনেক টাকা আছে ৷
বলেই চলে গেলো, তারপর থেকে কোন দিন
ওই ছেলের সামনে যাই নি ৷
"
এবার পাইছি তোরে, তোর বাপের অনেক টাকা তাই
না? ওর সামনে গিয়ে বললাম,
— এই যে মশাই কি করতেছেন এই পাবলিক
প্লেসে?
— না মানে, আয়না তুমি?
— জ্বী পাঁচ হাজার টাকা বের করেন ৷
— মানে?
— না হলে এই ভিডিও চলে যাবে আপনার বাবা সহ
অন্যান্য জায়গায় ৷
— এতো টাকা আমার কাছে নাই ৷(ইয়েন)
— এতো কিছু আমি জানি নাকি?
— ছি! ছি! আয়না আমি জানতাম তোমরা গরিব, তাই বলে
এইভাবে টাকা নিচ্ছো?
— আপনার সাথে কথা বলতে আমার বিরক্তি লাগছে ৷
টাকাটা দেবেন কিনা বলেন?
পরে দেখলাম দুইজনের কাছ থেকে সব মিলিয়ে
চার হাজার পাঁচশ টাকা দিছে ৷
— আর পাঁচশ টাকা কই?
— দেখো আয়না, আমাদের কাছে আর নেই ৷
— আচ্ছা, মাফ করে দিলাম ৷
ওরা চলে যাওয়ার পর বিশ্ব বলল,
— কি হলো ওকে তুমি চিনো?
— হুম, ভালবাসতাম খুব ৷
বিশ্ব মাথা নিচু করে আছে,
— ভালবাসেন আমাকে তাই না ?
— না মানে
— দেখেন এটা কখনো সম্ভব না ৷ আমি আপনাকে
বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবি নি ৷
বলেই হাটা ধরলাম বাড়ির দিকে, বাড়িতে ঢোকা মাত্রই
মায়ের ঝাঁঝালো বকুনি ৷ বিয়েটা নাকি ভেঙে
গেছে আমার জন্য ৷ মায়ের রুমে গিয়ে শুয়ে
পরলাম মায়ের কোলে ৷
— কি হয়েছে তোর (মা)
— এই নাও টাকা
— কিসের টাকা?
— একজনের কাছে থেকে মেরে দিলাম চার
হাজার পাঁচশ টাকা ৷ দুই হাজার পাঁচশ টাকা আলেয়া ভাবিকে
দিয়ে আসলাম ৷ তার ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে
পারছিলো না ৷
— দুই হাজার টাকা রাখলি কেনো?
— ওটা আমার তাই
— ওই সবে আর যাইস না মা, তুই একা মেয়ে হয়ে
ঝামেলায় কেনো যাচ্ছিস? (মা)
— আমি একা না তো বিশ্ব আছে তো
বলেই থেমে গেলাম, হয়তো বিশ্ব আর আমার
সাথে থাকবে না ৷ তা না হলে এতোক্ষণে একটা
ফোন দেওয়ার কথা, কিন্তু বিকেল থেকে
কোনো ফোন আসে নি ৷ তার দুই দিন পরে
বিশ্বর ফোন...
— আয়না কাল দেখা করতে পারবে?
— কেনো কোনো পার্কে যেতে হবে নাকি?
— না, কাল চারটায় আমার অফিসের সামনের কফিশপে
চলে আসবে ৷
বলেই ফোনটা কেটে দিলো ৷ এই দুই দিনে
অনেক মিস করেছি, ছেলেটা সত্যি আমার অভ্যাস
হয়ে গেছে ৷
"
কফিশপে বসে আছি, ওমনি বিশ্ব এসে বলল,
— তোমার জন্য সুখবর আছে ৷
— কি?
— এই নাও আমার বিয়ের কার্ড ৷ আগামী ১৪
ফেব্রুয়ারি বিয়ে, এসো কিন্তু
— হুম, আসবো
বিশ্ব তাঁকিয়ে আছে, হয়তো কিছু শুনতে চাচ্ছে ৷
বুঝতে পারছি না এতো খারাপ লাগছে কেনো? কথা
না বলেই চলে আসলাম ৷ পিছন থেকে বিশ্ব
ডাকছে, কিন্তু কেনো এতো অভিমান ওর উপর?
"
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, আজ বিশ্বর বিয়ে ৷ আয়নার
সামনে দাঁড়ালাম, বিশ্বর দেওয়া কালো শাড়িটা বের
করলাম ৷ অনেক বার বলেছিলো, এই শাড়িটা পরে
আসতে ৷ শুধু বসেছিলাম, ধুর এসব পরে হাঁটা যায় নাকি ৷
আজ শাড়িটি পরলাম, সাথে কালো চুরি, কানে ঝুমকা
আর কালো টিপ ৷ মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলেই
সাজি কিন্তু আজ কিছুতেই মন ভালো হচ্ছে না ৷
ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম পার্কের দিকে ৷
বড্ড একা লাগছে পাশে বিশ্ব থাকলে বেশ ভালো
লাগতো ৷ ফোন দিলাম বিশ্বকে কিন্তু রিসিভ
করলো না হয়তো ব্যস্ত খুব ৷ আজ কোন
কাপলকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে হলো না ৷ কিছু দুর
যাওয়ার পর দেখলাম, তওসীফ বসে আছে আর
সামিয়া ওর কাঁধে মাথা দিয়ে হাতে হাত রেখে কথা
বলছে ৷
ওর দেওয়া বাঁশিতে ফু দিলাম, সাথে সাথেই ঘুরে
তাঁকালো তওসীফ ৷ আমাকে দেখেই রিমির হাতটি
ছেড়ে দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে ৷ আমিও হাসি দিয়ে,
হাতের ইশারায় বললাম "অল দ্যা বেষ্ট"
চলে আসবো ঠিক তখনি তওসীফ দৌড়ে এসে
বলল,
— এই আয়না তোর কি হইছে?
— না রে কিছু না, আজ কেউকে বিরক্ত করবো না৷
— মন খারাপ?
— হুম
— কেনো বলবি কি ?
— না ৷
— দোস্ত তোরে বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই
৷ তবে মাথা ঠান্ডা করে ভাব সমাধান তুই নিজেই
করতে পারবি ৷ আমি গেলাম রে সামিয়া একা বসে
আছে ৷
— আচ্ছা
সমাধান আমি নিজে বের করবো কি করে? ঘরির
দিকে তাঁকালাম সময় আছে আর ১ ঘন্টা ৷ দুইটার সময়
বিয়ে ৷ না আর বসে থাকা যাবে না, যা করার সময়ের
মধ্যে করতে হবে ৷ দৌঁড়ে আসছি অনেকটা পথ,
কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে থামলাম ৷ কত
সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ চোখ দুটো
খুজে বেড়াচ্ছে বিশ্বকে ৷ ওই তো বিশ্ব বসে
আছে পাশে বউ সেজে বসে আছে একজন ৷
তার মানে বিয়েটা হয়ে গেলো? নাহ আর ভাবতে
পারছি না, কেউ একজন বলল,
— আর কতক্ষণ বিয়ের কাজটা শেষ করলে ভালো
হতো ৷
বসে থাকলে আর চলবে না, দৌঁড়ে বিশ্বর সামনে
দাঁড়ালাম ৷ বিশ্ব উঠে দাঁড়িয়ে এমন ভাবে তাঁকিয়ে
আছে মন হয় ভিনদেশে কোন প্রানী ৷
— কি দেখছেন ?
— কালো শাড়িতে বেশ লাগছে ৷
— কথা বলার সময় আরো পাবেন ৷ আমি একা একা
পার্কে ঘুরতে পারবো না ৷ আপনাকে আমার সাথে
থাকতে হবে ৷
— না আয়না তা হয় না, আমি বাবাকে অসম্মান করতে
পারবো না ৷ একটু পরে আমার বিয়ে ৷
এবার বউয়ের দিকে তাঁকালাম, মেয়েটিকে চেনা
চেনা লাগছে ৷ মেয়েটার সামনে যেতেই
মেয়েটি বলল,
— প্লিজ আপু ওই ভিডিওটি কেউকে দেখাবেন না ৷
সাথে সাথে মোবাইলে খুজতে থাকলাম ভিডিওটি৷
ওহ এই তো সেই মেয়ে, যে কিনা গাছের
আড়ালে রোমান্স করতেছিলো ৷ মেয়েটিকে
বললাম,
— আমি আমার বিশ্বকে নিয়ে গেলাম, বাকিটা তুমি
ম্যনেজ করবা ৷ সবার সামনে থেকে বিশ্বকে
নিয়ে যাচ্ছি ৷
— আমরা কোথায় যাচ্ছি? (বিশ্ব)
— পার্কে
— কে জানে আজ কার কপালে দুঃখ আছে ৷
বলে আমার দিকে তাঁকালো বিশ্ব ৷
— চলেন আগে দেখি পার্কের অবস্থা...
হেটে চলেছি পার্কের দিকে, হাতের তালু খুব
চুলকাচ্ছে....
:
------------------- সমাপ্ত -------------------
স্যারের কাছে ৷ রাগটা এবার মাথায় উঠে যাচ্ছে,
তওসীপ্পা শয়তান ছেলে একটা, আগে ক্লাস
থেকে বের হই পরে বুঝাবো মজা ৷ আমি কি ওর
কাছে কাগজ চাইছি, আর কাগজটি মারলো ঠিক হল
সুপারের সামনে ৷ বদ স্যারের ভাবনা, আমি কাগজটি
চাইছি তাই আমার কাছে মারলো ৷ এই দিকে দশ মিনিট
পার হয়ে গেলো, এই পরিক্ষায় নির্ঘাত ডাব্বা
মারবো ৷ মায়ের মুখ খানা সামনে ভেসে উঠলো,
খুন্তি হাতে মা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে
বলতেছে ৷
— সারাবছর ফোন টিপছিস কিছু বলি নি, এবার যদি পরিক্ষা
খারাপ হয় তো এই বিয়ে ক্যান্সেল ৷
ইশশ!! কত দিন পর একটি মনের মতো ছেলে
খুজে পাইছে ৷ সেটা কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না
৷
স্যারকে বললাম,
— স্যার আমি কেনো দোষ করি নি পেপারটা দিন ৷
— না, তোমার পেপার দেওয়া হবে না ৷
— স্যার পেপার দিবেন কিনা বলেন?
— বসো তুমি, আমার সময় হলে পেপার দিবো ৷
— স্যার আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
কথাটা শোনার পর, স্যার সাথে সাথে ঘুরে তাঁকাল
আর ক্লাসের সবাই লেখা বন্ধ করে দিলো ৷ বেশ
হইছে, আমার পেপার স্যারের কাছে আর ওরা কি
সুন্দর লিখছিলো ৷ ঠিক তখনি স্যার বলল,
— এই কি বললে তুমি? (স্যার)
— হ্যাঁ স্যার, যদি এই পরিক্ষা খারাপ হয় তো মা বলে
দিছে, বিয়ে ক্যান্সেল ! তো বুঝতে পারছেন?
পেপার না দিলে আমাকে বিয়ে করতে হবে ৷
কোনটা করবেন? বিয়ে করবেন নাকি পেপার
দিবেন?
এবার স্যারের মুখখানা দেখার মতো হয়েছে,
হয়তো স্যারের বউয়ের কথা মনে পরছে ৷ কথা
না বাড়িয়ে পেপার দিয়ে চলে গেলেন স্যার ৷
এদিকে কেউ কেউ বলছে, আয়না তুই পারিসও
বটে, আবার কেউ বলছে, স্যারে আয়নাকে
এখনো চিনে উঠতে পারে নি ৷ বলেই হো হো
করে হেসে দিলো ৷
পরিক্ষা শেষ করে যখন বের হলাম, ঠিক তখনি
তওসীফ এসে বলল,
— আয়না আজ যা হলো, হল সুপার আর কখনো
তোর খাতা নিবে না ৷
— কুত্তা ছেলে আজ তোর একদিন কি আমার
একদিন ৷
— আরে দোস্ত দাড়া, তোরে কত্তো ভালবাসি
আমি, আর যখন দেখলাম তুই না লিখে কলম খাচ্ছিস ৷
তাই কাগজটি দিলাম তোকে ৷ বিশ্বাস কর হল সুপারকে
খেয়াল করি নি ৷
— মাইর খাওয়ার আগে বিদায় হো এখান থেকে ৷
— দোস্ত আরেকটা কথা বলতাম তোকে ৷
— কি বলবি? তাড়াতাড়ি বল, এক জায়গায় যাবো ৷
— না মানে, সামনে ফেব্রুয়ারি মাস ৷
— তো, সে আমি জানি ৷
— না মানে সামিয়াকে নিয়ে ঘুরতে যাইতাম ৷
— যা তা আমাকে বলছিস কেনো?
— তোকে একটা জিনিস দিবো
— কি?
— এই নে বাঁশি, যখনি পার্কে যাবি তখন এই বাঁশি বাজাবি ৷
বলেই দৌড়..
ফাজিল ছেলে, আমাকে ঘুষ দিলো ৷ সে যাই
হোক, এই বাঁশি কাজে লাগানো যাবে ৷ আগের
বাঁশিটা ঠিক মতো বাজছে না ৷
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি,বদ ছেলের জন্য আর
কতক্ষণ যে অপেক্ষা করতে হবে কে জানে ৷
কত করে বললাম, হাত চুলকায়, কোন এক পার্কে
যেতে হবে ৷ তা এখনো আসার নাম নাই ৷ ওই দিকে
পেটের মধ্যে ইদুর বাবাজি কিচিরমিচির শুরু করছে ৷
সেই সকালে কি না কি খেয়েছি মনে আছে নাকি,
ইশশ!! মায়ের কথা মনে পড়তেই মায়ের পা দুখানা
চোখের সামনে চলে আসলো ৷ আজ শেষ
পরিক্ষা ছিলো, তাই আয়নার সামনে বসে সেইরকম
একটা সাঁজ দিলাম কিন্তু মনের মতো হচ্ছে না ৷ ঠিক
তখনি মা বলল,
— আয়না আর কতক্ষণ থাকবি আয়নার সামনে?
— হু হা হা হা, আয়না এখন আয়না দেখতে ব্যস্ত ৷
ওমনি মা রান্না ঘর থেকে খুন্তি হাতে তেড়ে
এসে, ওই অলক্ষুনে কথাটি বলল, যে পরিক্ষা খারাপ
হলে বিয়ে হবে না ৷ তখন মাকে বললাম,
— তোমার পা দুখানা সামনে আনো, সালাম করে যাই ৷
তার পর দেখবো কেমনে বিয়ে বন্ধ হয় ৷
আজ মায়ের পা ধরে সালাম করে আসাতে মনে হয়
পরিক্ষাটা ভাল হয়েছে ৷
কারো ডাকে ঘোর কাটলো ৷
— কি হলো একা একা হাসছো কেনো? (বিশ্ব)
— আপনার এখন আসার সময় হলো? সেই কতক্ষণ
ধরে অপেক্ষা করছি ৷
— আরে কাজের চাপে একটু দেরি হয়ে
গেলো ৷
— চলেন
— কোথায়?
— পার্কে...
— আবার? ( ভ্রুঁ কুঁচকে তাঁকিয়ে)
— হুম,
কিছু না বলেই আমার সাথে হাটা দিলো, এই
ছেলেটাকে অনেক জ্বালাই ৷ তার সাথে কয়েক
মাস আগেই পরিচয় ৷ একদিন পার্কে ঢুকতেই দেখি
একটা লোক হিসু করতেছে ৷ ফোনটা বের করে
ভিডিও করতেছিলাম ৷ ওমনি বদ ছেলেটা এসে বলল,
— আপনি এগুলো কি করছেন? একটা মেয়ে হয়
লোকের হিসু করা ভিডিও করছেন?
লোকটার দিকে তাঁকালাম, কিছু না বলেই আবার ভিডিও
করায় মনযোগী হলাম ৷
তবে লোকটা এমন ভাবে তাঁকিয়ে ছিলো যে,
তাকে না বলে থাকতে পারলাম না ৷ আস্তে করে
বললাম,
— চুপচাপ দেখে যান কথা বলবেন না ৷
ভিডিও করা শেষ করে হিসু করা লোকটার সামনে
গেলাম ৷
— এই যে আঙ্কেল পাঁচশত টাকা বের করেন ৷
— মানে তোমাকে টাকা দিতে যাবো কেনো?
— দিবেন না?
— এই মেয়ে, দেখে তো মনে হয় ভদ্র
ঘরের মেয়ে ৷ তোমার ধান্দা বুঝতে পারছি, তা
এইভাবে টাকা দিবো না ৷একদিন আমাকে খুশি করো,
শুধু পাঁচশ টাকা না আরো দিবো ৷
মেজাজটা চরম মাত্রায় উঠে গেছে, হাসি মুখ নিয়ে
বললাম,
— চাচা দেখছেন জুতো? একদম পুরানো হয়ে
গেছে ৷ বলেই জুতাটা খুলে হাতে নিলাম
— ব্যাটা লুইচ্চা এই জুতা দিয়ে পিটিয়ে তোর টাক
ফাটিয়ে দিবো ৷ দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ
সম্মানি লোক, তা মন এতো নিচে কেনো? এক
হাজার টাকা বের কর না হলে এই ভিডিও ইন্টারনেটে
ছেড়ে দিবো৷
এবার লোকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,
— মানে?
— পার্কে ঢোকার সময় সতর্কবাণী পড়ে
ঢোকেন নি? কি কি করা যাবে না? কথা না বাড়িয়ে টাকা
দিন ৷
লোকটি আর কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে চলে
গেলো ৷ এবার বাঁশিটা হাতে নিলাম, বাজানোর সাথে
সাথে বাচ্চাগুলো দৌড়ে এসে বলল,
— বুবু তুমি এসে গেছো?
— হ্যাঁ, এই নে এক হাজার টাকা, তোরা ভাগ করে নিস ৷
ওরা চলে গেলো, বেঞ্চে গিয়ে বসলাম ৷ ওমনি
সেই ছেলেটা বলল,
— আপনি পারেনো বটে, আমি কত উল্টা পাল্টা কথা
ভাবলাম ৷
— না ঠিক আছে, প্রথমে সবাই এরকম ভাবে ৷
ছেলেটির সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, ওর নাম
বিশ্ব, কোন একটি কোম্পানিতে জব করে ৷ আর
এইখানে আসছে মন ভালো করতে ৷ সেই
থেকে ছেলেটির সাথে পরিচয় ৷ মাঝে মাঝে
তাকে নিয়ে পার্কে যাই, যখন আমার হাত চুলকায় ৷
আর হাত চুলকায় মানে, হাতে টাকা আসে ৷
আজও তাকে নিয়ে পার্কে আসলাম ৷ শেষ পরিক্ষা
বলে আজ একটু বেশি ঘুরবো ৷
— এই আয়না তুমি মানুষকে এইভাবে বিরক্ত করো
কেনো?
— কি করবো তাইলে, আমাদের সমাজে
মানুষগুলো বড্ড স্বার্থপর ৷ নিজের ক্ষনিকের কিছু
সুখের জন্য কত টাকা খরচ করে ৷ কিন্তু এই যে
পথের কত মানুষ না খেয়ে থাকে, তাদের দিকে
ফিরিয়েও তাঁকায় না ৷ তাই এই পথ বেঁছে নিলাম, ওরা
যখন টাকা খরচ করে ক্ষনিকের সুখ খুজে নেয় ৷
তার থেকে যদি কিছু ভাগ ওই অনাথ বাচ্চাদের দেওয়া
হয় তাতে কি বেশি অন্যায় হয়?
— হুম বুঝলাম
— চলেন ওই ঝোপের ওই দিকে যাই ৷
— এই না না, ওই দিকে যাওয়ার কোনো দরকার নেই
৷(বিশ্ব)
— আরে চলেন তো
আস্তে আস্তে ভিতরে চলে গেলাম, উফফ!!
ছেলে মেয়ে গুলো এতো নিচে নেমে
গেছে, কি বলবো ভিডিও করতেও বিরক্ত লাগছে
৷ বিশ্বর দিকে তাঁকালাম, চোখের উপর চোখ
পড়তেই অন্য দিকে তাঁকালাম ৷ এই প্রথম ভিডিও
করতে লজ্জা লাগছে ৷ নাহ আজ আর ভিডিও করা
যাবে না ৷ যখনি চলে আসতে যাবো তখনি দেখি,
ইয়েন যাকে কিনা আমি পাগলের মতো ভালবাসতাম ৷
বড় লোক বাপের একমাত্র ছেলে, যখন বন্ধুত্ব
ছিলো ওর সাথে ৷ তখন ওর জন্মদিনে দুই হাজার টাকা
খরচ করে উপহার দিতে হয়েছে ৷ একদিন ভালবাসার
কথা জানাই তখন উত্তরে বলেছিলো,
— তোমার সাথে হেসে হেসে কথা বলি বলে
এই নয় যে ভালবাসতে হবে ৷ আর তোমার মতো
কত মেয়ে আমাকে প্রপোজ করেছে
জানো? কারন আমার বাবার অনেক টাকা আছে ৷
বলেই চলে গেলো, তারপর থেকে কোন দিন
ওই ছেলের সামনে যাই নি ৷
"
এবার পাইছি তোরে, তোর বাপের অনেক টাকা তাই
না? ওর সামনে গিয়ে বললাম,
— এই যে মশাই কি করতেছেন এই পাবলিক
প্লেসে?
— না মানে, আয়না তুমি?
— জ্বী পাঁচ হাজার টাকা বের করেন ৷
— মানে?
— না হলে এই ভিডিও চলে যাবে আপনার বাবা সহ
অন্যান্য জায়গায় ৷
— এতো টাকা আমার কাছে নাই ৷(ইয়েন)
— এতো কিছু আমি জানি নাকি?
— ছি! ছি! আয়না আমি জানতাম তোমরা গরিব, তাই বলে
এইভাবে টাকা নিচ্ছো?
— আপনার সাথে কথা বলতে আমার বিরক্তি লাগছে ৷
টাকাটা দেবেন কিনা বলেন?
পরে দেখলাম দুইজনের কাছ থেকে সব মিলিয়ে
চার হাজার পাঁচশ টাকা দিছে ৷
— আর পাঁচশ টাকা কই?
— দেখো আয়না, আমাদের কাছে আর নেই ৷
— আচ্ছা, মাফ করে দিলাম ৷
ওরা চলে যাওয়ার পর বিশ্ব বলল,
— কি হলো ওকে তুমি চিনো?
— হুম, ভালবাসতাম খুব ৷
বিশ্ব মাথা নিচু করে আছে,
— ভালবাসেন আমাকে তাই না ?
— না মানে
— দেখেন এটা কখনো সম্ভব না ৷ আমি আপনাকে
বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবি নি ৷
বলেই হাটা ধরলাম বাড়ির দিকে, বাড়িতে ঢোকা মাত্রই
মায়ের ঝাঁঝালো বকুনি ৷ বিয়েটা নাকি ভেঙে
গেছে আমার জন্য ৷ মায়ের রুমে গিয়ে শুয়ে
পরলাম মায়ের কোলে ৷
— কি হয়েছে তোর (মা)
— এই নাও টাকা
— কিসের টাকা?
— একজনের কাছে থেকে মেরে দিলাম চার
হাজার পাঁচশ টাকা ৷ দুই হাজার পাঁচশ টাকা আলেয়া ভাবিকে
দিয়ে আসলাম ৷ তার ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে
পারছিলো না ৷
— দুই হাজার টাকা রাখলি কেনো?
— ওটা আমার তাই
— ওই সবে আর যাইস না মা, তুই একা মেয়ে হয়ে
ঝামেলায় কেনো যাচ্ছিস? (মা)
— আমি একা না তো বিশ্ব আছে তো
বলেই থেমে গেলাম, হয়তো বিশ্ব আর আমার
সাথে থাকবে না ৷ তা না হলে এতোক্ষণে একটা
ফোন দেওয়ার কথা, কিন্তু বিকেল থেকে
কোনো ফোন আসে নি ৷ তার দুই দিন পরে
বিশ্বর ফোন...
— আয়না কাল দেখা করতে পারবে?
— কেনো কোনো পার্কে যেতে হবে নাকি?
— না, কাল চারটায় আমার অফিসের সামনের কফিশপে
চলে আসবে ৷
বলেই ফোনটা কেটে দিলো ৷ এই দুই দিনে
অনেক মিস করেছি, ছেলেটা সত্যি আমার অভ্যাস
হয়ে গেছে ৷
"
কফিশপে বসে আছি, ওমনি বিশ্ব এসে বলল,
— তোমার জন্য সুখবর আছে ৷
— কি?
— এই নাও আমার বিয়ের কার্ড ৷ আগামী ১৪
ফেব্রুয়ারি বিয়ে, এসো কিন্তু
— হুম, আসবো
বিশ্ব তাঁকিয়ে আছে, হয়তো কিছু শুনতে চাচ্ছে ৷
বুঝতে পারছি না এতো খারাপ লাগছে কেনো? কথা
না বলেই চলে আসলাম ৷ পিছন থেকে বিশ্ব
ডাকছে, কিন্তু কেনো এতো অভিমান ওর উপর?
"
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, আজ বিশ্বর বিয়ে ৷ আয়নার
সামনে দাঁড়ালাম, বিশ্বর দেওয়া কালো শাড়িটা বের
করলাম ৷ অনেক বার বলেছিলো, এই শাড়িটা পরে
আসতে ৷ শুধু বসেছিলাম, ধুর এসব পরে হাঁটা যায় নাকি ৷
আজ শাড়িটি পরলাম, সাথে কালো চুরি, কানে ঝুমকা
আর কালো টিপ ৷ মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলেই
সাজি কিন্তু আজ কিছুতেই মন ভালো হচ্ছে না ৷
ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম পার্কের দিকে ৷
বড্ড একা লাগছে পাশে বিশ্ব থাকলে বেশ ভালো
লাগতো ৷ ফোন দিলাম বিশ্বকে কিন্তু রিসিভ
করলো না হয়তো ব্যস্ত খুব ৷ আজ কোন
কাপলকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে হলো না ৷ কিছু দুর
যাওয়ার পর দেখলাম, তওসীফ বসে আছে আর
সামিয়া ওর কাঁধে মাথা দিয়ে হাতে হাত রেখে কথা
বলছে ৷
ওর দেওয়া বাঁশিতে ফু দিলাম, সাথে সাথেই ঘুরে
তাঁকালো তওসীফ ৷ আমাকে দেখেই রিমির হাতটি
ছেড়ে দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে ৷ আমিও হাসি দিয়ে,
হাতের ইশারায় বললাম "অল দ্যা বেষ্ট"
চলে আসবো ঠিক তখনি তওসীফ দৌড়ে এসে
বলল,
— এই আয়না তোর কি হইছে?
— না রে কিছু না, আজ কেউকে বিরক্ত করবো না৷
— মন খারাপ?
— হুম
— কেনো বলবি কি ?
— না ৷
— দোস্ত তোরে বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই
৷ তবে মাথা ঠান্ডা করে ভাব সমাধান তুই নিজেই
করতে পারবি ৷ আমি গেলাম রে সামিয়া একা বসে
আছে ৷
— আচ্ছা
সমাধান আমি নিজে বের করবো কি করে? ঘরির
দিকে তাঁকালাম সময় আছে আর ১ ঘন্টা ৷ দুইটার সময়
বিয়ে ৷ না আর বসে থাকা যাবে না, যা করার সময়ের
মধ্যে করতে হবে ৷ দৌঁড়ে আসছি অনেকটা পথ,
কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে থামলাম ৷ কত
সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ চোখ দুটো
খুজে বেড়াচ্ছে বিশ্বকে ৷ ওই তো বিশ্ব বসে
আছে পাশে বউ সেজে বসে আছে একজন ৷
তার মানে বিয়েটা হয়ে গেলো? নাহ আর ভাবতে
পারছি না, কেউ একজন বলল,
— আর কতক্ষণ বিয়ের কাজটা শেষ করলে ভালো
হতো ৷
বসে থাকলে আর চলবে না, দৌঁড়ে বিশ্বর সামনে
দাঁড়ালাম ৷ বিশ্ব উঠে দাঁড়িয়ে এমন ভাবে তাঁকিয়ে
আছে মন হয় ভিনদেশে কোন প্রানী ৷
— কি দেখছেন ?
— কালো শাড়িতে বেশ লাগছে ৷
— কথা বলার সময় আরো পাবেন ৷ আমি একা একা
পার্কে ঘুরতে পারবো না ৷ আপনাকে আমার সাথে
থাকতে হবে ৷
— না আয়না তা হয় না, আমি বাবাকে অসম্মান করতে
পারবো না ৷ একটু পরে আমার বিয়ে ৷
এবার বউয়ের দিকে তাঁকালাম, মেয়েটিকে চেনা
চেনা লাগছে ৷ মেয়েটার সামনে যেতেই
মেয়েটি বলল,
— প্লিজ আপু ওই ভিডিওটি কেউকে দেখাবেন না ৷
সাথে সাথে মোবাইলে খুজতে থাকলাম ভিডিওটি৷
ওহ এই তো সেই মেয়ে, যে কিনা গাছের
আড়ালে রোমান্স করতেছিলো ৷ মেয়েটিকে
বললাম,
— আমি আমার বিশ্বকে নিয়ে গেলাম, বাকিটা তুমি
ম্যনেজ করবা ৷ সবার সামনে থেকে বিশ্বকে
নিয়ে যাচ্ছি ৷
— আমরা কোথায় যাচ্ছি? (বিশ্ব)
— পার্কে
— কে জানে আজ কার কপালে দুঃখ আছে ৷
বলে আমার দিকে তাঁকালো বিশ্ব ৷
— চলেন আগে দেখি পার্কের অবস্থা...
হেটে চলেছি পার্কের দিকে, হাতের তালু খুব
চুলকাচ্ছে....
:
------------------- সমাপ্ত -------------------