What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মিশরের ঐতিহাসিক সুয়েজ খাল (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
8DLMGBj.jpg


খাল কাটার কথা শুনলেই মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। কেননা খাল কেটে যে কুমিরকে আনা হয়! কিন্তু খাল কেটে জাহাজ চলাচল নিশ্চয়ই জনহিতকর হবে। হ্যাঁ, এমনটাই ঘটেছে মিশরে। সেখানে সভ্যতার প্রয়োজনে প্রকৃতির সাথে মানুষ কত অবলীলায় যুক্ত করে দিয়েছে কৃত্রিমতাকে। এর ফলে সেই স্থানটি হয়ে ওঠেছে আরও প্রানবন্ত, বিশ্ব অর্থনীতিতে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভাবনীয় এ সৃষ্টির নাম সুয়েজ খাল।

সুয়েজ খাল খননের ইতিহাস

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ খাল সুয়েজ খাল। এর প্রকৃত নাম 'হে সুয়েজ ক্যানাল' যাকে আরবীতে 'কা'নাত আল সুয়াইস' নামে ডাকা হয়। মিশরের সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে অবস্থিত সুয়েজ খাল ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে যুক্ত করেছে।

সুয়েজ খালের ইতিহাস চার হাজার বছর পূর্বের। ঐতিহাসিকদের মতে, মিশরের রাজা ফারাও নেকো একদিন স্বপ্নে নীল নদ থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত দীর্ঘ এক খাল খননের দৈববাণী পান। এ বাণী পাওয়ার পরই রাজা লক্ষাধিক দাস নিয়ে শুরু করেন খাল কাটার কাজ। নেকো বিশ্ববাসীকে জানাতে চাইলেন, তারা শুধু যুদ্ধবাজই নন, বিশ্ববাণিজ্য ও সম্প্রীতির পথেও তারা হাঁটতে পারেন।

কিন্তু হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় এ খাল খনন কর্মসূচি। ঐতিহাসিকরা মনে করছেন, আবারও দৈববাণী এসেছিল রাজার কাছে। সে দৈববাণীতে লেখা ছিল, এ খাল মিশরের জন্য অশুভ। তাই বাধ্য হয়ে মিশরকে রক্ষা করতে খাল খনন বন্ধ করে দেন রাজা নেকো। ফলে ফারাও নেকোর আমলে সুয়েজ খালের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, হয়নি ভূমধ্যসাগর আর লোহিত সাগরের মিলন। প্রজারাও সময়ের সাথে সাথে দৈববাণীকে অকাট্য মেনে নিয়ে সুয়েজ খালের কথা ভুলে যায়।

বিখ্যাত দার্শনিক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মিশর অভিযানে এসে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে লোহিত সাগরকে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু ভূমধ্যসাগর লোহিত সাগরের চেয়ে দশ মিটার উঁচু বলে খাল খননের চিন্তা বাদ দেওয়া হয়। এভাবে একের পর এক বাধায় মিশরকে সুয়েজ খালের জন্য অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর। অনেকেই বিশ্বাস করেন এই সুয়েজ খাল দিয়ে মিশরে নেমে এসেছিল এক অমানবিক দুর্দশা। কেউ কেউ একে মিশরের কন্টকহার বলে দাবি করেছিল।

অনেক বছর পরে ১৮৫৪ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রকৌশলীরা মিলে সুয়েজ খাল খননের নিঁখুত পরিকল্পনা করেন। এ পরিকল্পনার মূল কারিগর ছিলেন প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দি ল্যাসেন্স। তখন সায়িদ পাশা ছিলেন মিশরের অধিপতি।

সমস্ত পরিকল্পনা শেষ করে ১৮৫৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয় সুয়েজ খালের খনন কাজ। দীর্ঘ দশ বছর ধরে খনন করার পর ১৯৬৯ সালের নভেম্বর মাসে খালটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ খাল খনন করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার শ্রমিককে।

শুরুর দিকে সুয়েজ খালের দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। তারপর আরো কিছু সংস্কারের পর ২০১০ সালের হিসাব মতে, সুয়েজ খালের দৈর্ঘ্য ১৯০.৩ কিলোমিটার, গভীরতা ২৪ মিটার ও সবচেয়ে সরু স্থানে এর প্রস্থ ২০৫ মিটার। ১৮৭৫ সালের আগ পর্যন্ত সুয়েজ খাল সুয়েজ ক্যানাল অথরিটির মালিকানাধীন ছিল। ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ শিল্পপতি রথচাইল্ড সুয়েজ খালের কিছু শেয়ার কিনে নেন। এরপর থেকে ব্রিটিশরা এই খালের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে আসছিল। কিন্তু ১৯৫৬ সালে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দেল নাসের সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করেন। এরপর থেকে সুয়েজ খালকে নিয়ে সংকট শুরু হয়। ১৯৫৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুয়েজ খালকে বন্ধ রাখা হয়। আবার ১৯৬৭-১৯৭৫ পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর সুয়েজ খাল বন্ধ ছিল। আরব ও ইসরায়েলের যুদ্ধের সময় মিশর ইচ্ছাকৃতভাবে সুয়েজ খালে ৪০ টি জাহাজ ডুবিয়ে এর মধ্য দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়।

সুয়েজ খালের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

যখন সুয়েজ খাল ছিল না তখন ইউরোপের কোন জাহাজকে ভূমধ্যসাগর থেকে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তমাশা অন্তরীপ পাড়ি দিয়ে আরব সাগর হয়ে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে যেতে হতো। এর ফলে জাহাজগুলোকে জ্বালানি খরচ বাবদ গুনতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা। আর ভারত মহাসাগর থেকে ইউরোপের দেশসমূহে যেতে সময় নিত ৪০-৫০ দিন। এ খাল খননের ফলে ইউরোপ ও ভারতের দূরত্ব প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার কমে গিয়েছে। এখন এই রুটে ইউরোপ থেকে ভারতে যেতে মাত্র ২০ দিন সময় লাগে। বর্তমানে বিশ্বের মোট সমুদ্র বাণিজ্যের পাঁচ শতাংশ ঘটে এই খাল দিয়ে।

YtEU7WN.gif


বর্তমানে সুয়েজ খালের সাথে আরো ৩৫ কিলোমিটার বাইপাস খনন করা হয়েছে, যার ফলে সুয়েজ খালে প্রবেশের জন্য জাহাজকে এখন ১৮ ঘন্টার বদলে ১১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে এই সুয়েজ খাল দিয়ে দৈনিক ৯৭ টি জাহাজ চলাচল করতে পারবে। এর ফলে মিশরের অর্থনীতিতে যোগ হবে ১৩২০ কোটি ডলার।

জাহাজ চলাচল পদ্ধতি

কৃত্রিম এ খালের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের জন্য কিছু নিয়মাবলি কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। এদের মধ্যে কিছু নিয়ম জাহাজ পারাপারের সময় আর কিছু জাহাজ কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য—

  • ২০ মিটার পর্যন্ত ড্রাফট বা ২ লক্ষ ৪০ হাজার ডেড ওয়েট টনস এবং ৬৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু (ক্ষেত্র বিশেষে ৭৭.৫ মিটার)। এর বেশি পণ্যবাহী জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল করতে পারবে না।
  • সুয়েজ কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে জাহাজ আগমনের নোটিশ পাঠাতে হবে।
  • জাহাজে পাইলট (জাহাজ নিরাপদে বন্দরে পৌঁছানোর জন্য একজন নেভিগেশনাল বিশেষজ্ঞ) উপস্থিত থাকতে হবে।
  • জাহাজের সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে থাকতে হবে।
  • জাহাজের আকার ও আকৃতি আগে থেকে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
  • অনুসন্ধানী আলো বা সার্চ লাইট থাকতে হবে।
  • জাহাজে যথেষ্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • জাহাজ দিয়ে কি ধরণের পণ্য পরিবহন করা হবে তা পরিষ্কারভাবে আগে থেকে সুয়েজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
উপরোক্ত শর্তাবলী পূরণ করার পরই একটি জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। সুয়েজ খালে পানির সমতা বজায় রাখার জন্য পানামা খালের মতো কোন গেট নেই। তবে দুটি লেক রয়েছে। গ্রেট বিটার লেক ও বাল্লাহ বাইপাস। এদের সাহায্যে সুয়েজ খালে সাগরের পানি অবাধে প্রবাহিত হয়। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী শান্তিকালীন অথবা যুদ্ধকালীন যে কোন সময়েই সুয়েজ খাল যে কোন দেশের পতাকাবাহী বাণিজ্যিক বা যুদ্ধ জাহাজের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top