What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review মরণের পরে : যে সিনেমা দেখা কর্তব্য (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by joy6007 to join our community. Please click here to register.

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
F8482Ok.jpg


একজন নির্মাতা ও অভিনেতা আজহারুল ইসলাম খান-কে আমরা অনেকেই চিনি। বলা ভালো তাঁকে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। আদালতের জজ সাহেব বা পুলিশের বড়কর্তা হিশেবে প্রায়ই চোখে পড়ে তাঁকে। সেই অভিনেতা যে এক সিনেমাতেই ঢালিউডে আলাদা একটা ইতিহাস করে ফেলবেন তা কে জানত! তিনি নির্মাণ করলেন সাড়া জাগানো সিনেমা 'মরণের পরে।'

মরণের পরে কী হয় তা আমরা ধর্মগ্রন্থে পড়ে জানতে পারি। সে জীবন আমরা কেউ দেখি না। সিনেমায় মরণের পরের জীবন নিয়ে কোনো কিছু নেই বরং যা আছে সেটি মরণের আগের জীবন। তবে মিথ্যে হলো নামকরণের সার্থকতা! না, মরণের আগে জীবনের অবশ্য কর্তব্যকে পালন করে যে জীবন ধন্য হয়ে ওঠে তারই এক বেদনার আখ্যান এ সিনেমা।সন্তানদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব মরণের পরের জীবন নিয়ে আলাদা জীবনদর্শন দাঁড় করিয়েছে।

S6RTRTE.jpg


সিনেমায় স্তরে স্তরে অনেককিছু আছে যাকে আপনার আমার দর্শক ক্ষুধাকে প্রবল করে তুলবে। সেটা ঘটবে এ সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের নিখুঁত অভিনয় এবং ডিরেক্টরস ইমোশন মিলিয়ে। স্টোরি টেলিং-কে টাচি করতে এ দুটি বিষয় একসাথে কাজ করেছে। ক্লাইমেক্স বা ফিনিশিং এ গিয়ে দর্শকের চোখের জল বাঁধ মানবে না। ঠিক তখনই স্টোরি টেলিং ও ডিরেক্টরস ইমোশন সাংঘাতিকভাবে সফল হয়ে ওঠে।

সিনেমা নিয়ে বলতে গেলে গল্প বলতেই হয়। শাবানা ও আলমগীরের মধ্যবিত্ত সংসার ভালোই চলছিল।শাবানা এর মধ্যে একদিন জানতে পারে তার লাং ক্যান্সার এবং ডাক্তার আনোয়ারা জানিয়েছে আর অল্পদিনই বেঁচে থাকবে শাবানা। বড় পরিবারে ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে চোখের জল মোছে শাবানা। এর ভেতর আলমগীর দুর্ঘটনায় দুই হাত হারায়। শাবানা-আলমগীর ছেলেমেয়েদের দত্তক দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। একে একে দত্তক নিতে আসে অভিভাবকরা। বেদনাবিধুর পরিবেশ তৈরি হয় একের পর এক।

WyjnHbv.jpg


পরিচালক এ গল্পে চিরন্তন কিছু উপাদান রেখে দিয়েছেন। একটা পরিবারকে বাঁচাতে হলে কী কী লাগে, বড়দের দায়িত্ব কী কী, মা-বাবা সন্তানদের জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গাগুলো কেমন হওয়া উচিত, স্নেহ-মায়া-মমতা এই চিরন্তন মানবিক উপাদানগুলো কতটা গভীর হয়ে উঠতে পারে জীবন ও বাস্তবতাকে বোঝানোর জন্য। শাবানা যখন সিদ্ধান্ত নিল ছেলেমেয়েদের দত্তক দেবে সঙ্গত কারণেই কেউই রাজি ছিল না। তখন তাদেরকে বসিয়ে ঘরোয়া পরামর্শের মাধ্যমে বোঝানো হল তার যে অসুখ তাতে নিশ্চিত মৃত্যু, তার উপর পঙ্গু অথর্ব বাবা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে। সন্তানদের এসব কথা সরাসরি বলাটা অনেক বড় মনোবল ও বাস্তববাদী দর্শনকে দেখায়। ছেলেমেয়েরা রাজি হয়।অভিভাবকরা আসলে শর্তসাপেক্ষে দত্তক দেয়। বড় মেয়ে থেকে কোলের শিশু পর্যন্ত সবাইকে দত্তক দেয়া হয়।যখন ইচ্ছে হবে সবাই দেখা করবে, তাদের ভবিষ্যত নিশ্চিত হবে কিনা, অন্য বাড়িতে তাদের কোনো অযত্ন যেন না হয় এসব শর্তের মধ্যে ছিল। শর্তগুলো মানতে রাজি থাকে অভিভাবকরা। প্রথম যে ছেলেকে দত্তক দেয় সেদিন সবাই কাঁদতে থাকে।সেদিন বাকি ছেলেমেয়েরা বৈঠক করে নিজেরা। কেন তারা আর একসাথে থাকতে পারবে না, কেন এ পরিস্থিতি তৈরি হলো এসব নিয়ে কথা বলে। মেয়েটি বড় সবার তাই বুঝিয়ে বলে। যেদিন বড় মেয়ের পালা আসে সে যেতে চায় না। শেষ পর্যন্ত যেতে বাধ্য হয়।বেশ কিছুদিন পরে সবার খবর নিতে থাকে।বড় মেয়ে যেদিন দেখতে আসে মা-বাবাকে সেদিন মেয়েটি কেমন আছে জানতে চাইলে জানায় সে ভালো আছে।দামি খাবার, দামি কাপড় পায় সে।আলমগীর বলে-'কেন রে আমি কি তোকে খাবার দিতাম না? 'মেয়ে বলে-'আব্বু, তুমি তো খাবার দিতে না। তুমি তো দিতে অমৃত। 'শাবানা যেদিন শেষবারের মতো মেয়েকে দেখতে যায় মেয়ের জন্য ফ্রক নিয়ে যায়। ফ্রক পরে মেয়ে বলে সে বড় হয়ে গেছে। বলে-'মা, মনে হলো তুমি আমাকে জড়িয়ে আছ। 'মেয়ের কথা শুনে মা বলে-'তুই বড় হয়ে গেছিসরে।'

8dXgWtU.jpg


ক্লাইমেক্স বা ফিনিশিং এ এসে দর্শকের জন্য চোখের জল আরো ঝরান পরিচালক। এরকম দৃশ্য ঢালিউডের সিনেমায় আর নেই। দেখা যায় শাবানা রাতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছে। বাইরে দোলনা টাঙানো ছিল।শাবানা দেখতে পায় তার সন্তানরা দোলনায় দোল খাচ্ছে আর শাবানা হাত ইশারা করে তাদের আশীর্বাদ জানাচ্ছে। তখনই মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয় এবং শেষ মুহূর্তে পানির পিপাসা পায় তাই আলমগীর পানি আনতে যায়। আলমগীর তার পঙ্গু অসাড় দুই হাত নিয়ে কিছুই করতে পারে না। তখন মুখ দিয়ে জগ ধরে গ্লাসে পানি ঢালে এবং গ্লাসটি মুখে নিয়েই শাবানার মুখে ঢেলে দিতে চেষ্টা করে কিন্তু গ্লাস পড়ে যায়। শাবানা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

অভিনয়ে আর কী বলব! শাবানা সুনিশ্চিতভাবেই গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী।তাঁর অভিনয়ের কাছে দাঁড়াবার শক্তি অন্যদের নেই। এ সিনেমায় প্রথমদিকের হাসিখুশি শাবানা, অসুখ জানার পরে সম্পূর্ণ পাল্টে যাওয়া শাবানা অনবদ্য। ভয়েস কন্ট্রোল করে নিচু, শান্ত ভয়েসে কথা বলেছে।শেষে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে মৃত্যুর যে এক্সপ্রেশন দিয়েছে শাবানা ওটা আর কারো পক্ষে চিন্তা করাটা অন্যায়। আলমগীর ডেডিকেটেড ছিল অসাধারণভাবে।তাকে কাঁদতে হয়েছে অনেক, পঙ্গু অথর্ব হয়ে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এ অভিনয় চ্যালেন্জিং ছিল এবং আলমগীর তাতে সফল ঈর্ষণীয়ভাবে। তাদের ছেলেমেয়ের চরিত্রে শিশুশিল্পীরা মুগ্ধ করেছে।ডাক্তার আনোয়ারা অনবদ্য। খলিল, ফখরুল হাসান বৈরাগী নিজেদের জায়গায় সেরা।

যেসব বাংলাদেশী সিনেমা না দেখলে জীবনে সিনেমাখোর হিশেবে আপনি অসম্পূর্ণ থেকে যাবেন তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা 'মরণের পরে। 'অনেকদিন হয় কাঁদেন না! তবে দেখে ফেলুন এই কালজয়ী সিনেমা। আপনার চোখ ছলছল করবেই এ আমি হলপ করে বলতে পারি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top