What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বিয়ের জন্য পাগলামি–২ (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by Hannah Hilton to join our community. Please click here to register.
bZTeNO6.jpg


সালাম সাহেব দরজা বন্ধ করে ফিরে গিয়ে স্ত্রীর পাশে বসলেন। শিউলি বেগম স্বামীকে প্রশ্ন করলেন,

-কই রাহুল আসেনি?
-না। এলে তো দেখতে পেতে।
-তাহলে বেল বাজাল কে?
-জানি না। দরজা খুলে দেখলাম কেউ নেই। হতে পারে কেউ সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় শয়তানি করে বেল বাজিয়ে চলে গেছে।

নিতুর এমনিতেই ঠান্ডা সহ্য হয় না। তার ওপর পুরো শরীর, কাপড় ভিজে জবজব করছে। ও বুঝতে পারছে না, ওর এখন কী করা উচিত। বাসায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, চিঠি লিখে রেখে সকালবেলা বাসা থেকে পালিয়েছে। এখন বাসায় ফিরে গিয়ে নিজের স্বামীকে ছোট করতে চাইছে না। বিয়ের পর স্বামীই সাধারণত স্ত্রীকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু নিতুর কপাল এতই খারাপ যে তার স্বামী নতুন বউকে দরজার সামনে রেখে পালিয়ে গেছে। ওর ধারণা, রাহুল এতক্ষণে দৌড়ে মিরপুর থেকে ফার্মগেট চলে গেছে।


সালাম সাহেব কিছুতেই তার রাগ দমন করতে পারছেন না। ওনার রাগ এখন রাহুলের প্রতি নয়, তিনি এখন রেগে আছেন এই বেকুব মেয়েটির ওপর। উনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, এত সুন্দর একটা মেয়ে কীভাবে এবং কী দেখে তার বলদ ছেলেটাকে বিয়ে করল। হঠাৎ সালাম সাহেবের মনে হলো, তার ছেলে হয়তো এই মেয়েকে তাবিজকবচ করেছে। সালাম সাহেব পাশে বসা স্ত্রীকে কোমল স্বরে বললেন,
-আচ্ছা, তুমি না প্রায় বলো, তোমার মামা নাকি তাবিজ-টাবিজ বানানোতে ওস্তাদ।
-হ্যাঁ, তিনি ওস্তাদ মানুষ। তুমি তো তাকে কোনো দামই দাও না। তা তুমি হঠাৎ মামার কথা কেন জিজ্ঞেস করছ? তোমার কি তাবিজ-টাবিজ লাগবে?
-না, তোমার ওই ভণ্ড মামার তাবিজ আমার লাগবে না। আমি জানতে চাইছি, তোমার ওই ভণ্ড মামা কি এর মধ্যে আমাদের বাসায় এসেছিলেন?
-খবরদার, মুরব্বি মানুষকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবে না।

-আচ্ছা বলব না। কিন্তু তিনি কি এসেছিলেন?
-না। এ প্রশ্ন কেন করছ?
-আমার ধারণা, উনি তোমার ছেলেকে কোনো জাদুটোনা শিখিয়েছেন। যা দিয়ে সে ইদানীং মেয়েদের জাদুটোনা করছে।

-আচ্ছা, তুমি সারাক্ষণ আমার ছেলেটার পেছনে লেগে থাকো কেন? ছেলেটা এখনো বাসায় ফেরেনি। কোথায় টেনশন করবে, তা নয়। যাও, ছেলেটাকে একটু খুঁজে নিয়ে আসো।
-কোথায় খুঁজব তোমার দামড়া ছেলেকে? শোনো, আমার ধারণা তোমার ছেলে আজ রাতে আর বাসায় আসবে না।

-খবরদার, অলক্ষুণে কথা বলবে না। যাও সামনের মোড়ের দোকানগুলোতে একটু খোঁজ নিয়ে দেখো।

-বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে। আচ্ছা, দাও একটা ছাতা দাও। তোমার শাহাজাদাকে খুঁজে নিয়ে আসি।

-শোনো, একটু ক্লাবের সামনেও খুঁজে দেখো।

সালাম সাহেব জানেন, ছেলে আশপাশে কোথাও নেই। তারপরও তিনি খুঁজতে বের হলেন। কারণ, তা না হলে এই নারী সারা রাত কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করবে।
সালাম সাহেব দরজা খুলে বাইরে পা রাখলেন। দেখলেন, মেয়েটি এখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তিনি মেয়েটিকে কোনো কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন।

নিতু কখনো ভাবেনি, তার বিয়েটা এভাবে হবে। আর নতুন বউ হিসেবে এভাবে শ্বশুরবাড়ির দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। নিতু বুঝতে পারছে, এভাবে ভেজা কাপড়ে আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে সে হয়তো জ্ঞান হারাবে। রাহুলের সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার। কিন্তু ও জানে, রাহুলকে ফোন করে কোনো লাভ হবে না। ও হয়তো এতক্ষণে ফোন বন্ধ করে ফেলেছে। আর যদি ফোন খোলাও থাকে, এই অপদার্থ ফোন রিসিভ করবে না। আকস্মিকভাবে ঠিক তখনই রাহুল নিতুকে ফোন করল। নিতু ফোন রিসিভ করে কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকল। ওপাশ থেকে রাহুল ফিসফিস করে বলল,
-নিতু, তুমি কী করো?
নিতুও রাহুলের মতো ফিসফিস করে উত্তর দেয়,
-আমি এখন বাসরঘরে তোমার জন্য ঘোমটা দিয়ে বসে আছি। তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আমরা বাসররাত করব।

-শোনো, আমার সঙ্গে ফান করে কোনো লাভ নেই। আমি আমার বাপকে চিনি। ওই লোক তোমারে কোনোভাবেই ঘরে ঢুকতে দেবে না। আমি এ ব্যাপারে ৯৯ ভাগ শিওর।

-তাই? তা তুমি ১০০ ভাগ শিওর নও কেন?
-কারণ, আমি তোমাকেও চিনি। তুমিও নাছোড়বান্দা। আমি জানি তুমি ঠিকই ঘরে ঢুকবা।

-এই, তুমি এভাবে ফিসফিস করে কথা বলছ কেন?
-হিটলারের ভয়ে।

-হায়রে আমার বীরপুরুষ স্বামী। তুমি তো ফোনের ওপাশে। তোমার বাবা তো তোমার কথা শুনতে পাওয়ার কথা নয়।

-তাহলে তুমি সাহস দিচ্ছ জোরে কথা বলার জন্য?
-থাক, তোমার জোরে কথা বলতে হবে না। আমরা ফিসফিস করেই কথা বলি। এভাবে কথা বলতে কেমন জানি অন্য রকম মজা লাগছে। এই তুমি এখন কোথায়?
-আমার বন্ধু রাসেল আছে না, ওর বাসায়।

-ভেজা কাপড় বদলেছ?
-হ্যাঁ, ভেজা কাপড় বদলে ওর কাপড় পরেছি। ওই ব্যাটা তো খাটো। তাই ওর ট্রাউজার আমার থ্রি–কোয়ার্টার হয়ে গেছে। আমাকে না জোকারের মতো লাগছে।

-তুমি তো জোকারই। শোনো, আমার শরীরটা না ঠান্ডায় কাঁপছে। মনে হচ্ছে আমি আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না। আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলব?
-সম্ভাবনা আছে।
-মাই গড, কোথায় তুমি আমাকে সাহস দেবে, তা নয়। তুমি দেখি উল্টা আমাকে ভয় দেখাচ্ছ।

-শোনো, যা সত্য তা–ই বলছি। ঠান্ডায় না হোক, হিটলারের ব্যবহারে তুমি অবশ্যই জ্ঞান হারাবে। তুমি আমার বাপকে চেনো না। তুমি যতই চেষ্টা করো, কাজ হবে না। সে তোমাকে ঘরে ঢুকতে দেবে না। তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম, পাগলামি কোরো না, আমারে বিয়ে কোরো না। তুমি শুনলে না। তোমারে একটা ভালো বুদ্ধি দিই, মন দিয়ে শোনো। তুমি এখন তোমার বাসায় ফিরে যাও। বাসায় যেয়ে বলো, তুমি সকালে যে চিঠি লিখে এসেছ, সেটা ছিল ফান। তুমি তোমার কাজিনকেই বিয়ে করবে। তারপর তোমার কাজিনকে বিয়ে করে ফেলো।


QO2uXk9.jpg


-তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন এক স্বামী থাকতে যদি আবার বিয়ে করি, তাহলে ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে হয়ে যাবে না? আমার দুই স্বামী আমার জন্য মারামারি করবে, ব্যাপারটা কেমন হাস্যকর নয়?
-শোনো, আমাদের বিয়ে নিয়ে তোমার কোনো সমস্যা হবে না। আমি তোমাকে বিপদে ফেলব না। আমি কাল সকালেই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেব।
-ছি, বিয়ের দিনে কেউ ডিভোর্সের কথা বলে? শোনো, তুমি যতই চালাকি করো, আমি তোমাকে ডিভোর্স দেব না।

-নিতু শোনো, তুমি কিন্তু বোকামি করছ। আমি হলাম বেকার মানুষ, বলদশ্রেণির মানুষ। তুমি কেন বলদ স্বামীর সঙ্গে সংসার করবে?
-কারণ, আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, আমার একটা বলদ স্বামী হবে।
-বোঝার চেষ্টা করো, আমেরিকা অনেক আরামের জায়গা। ওখানে তুমি অনেক সুখে থাকবে।

-আমেরিকার সুখ আমার লাগবে না। আমি তো আমেরিকা যেতেই চাই না। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমার তো পাসপোর্টই নেই।

-এটা কোনো সমস্যাই নয়। আমার এক আত্মীয় পাসপোর্ট অফিসে কাজ করে। তাকে দিয়ে আমি তোমার পাসপোর্ট এক দিনেই করে দেব। সে জন্য অবশ্য তাকে ঘুষ দিতে হবে। কারণ, ওই ব্যাটা একটা ঘুষখোর। তোমার এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। তুমি শুধু ঘুষের টাকাটা দিয়ে দিয়ো। বাকি সব কাজ আমিই করে দেব।
-ঠিক আছে তোমাকে আমি ঘুষের টাকা দিয়ে দেব। তুমি আমার পাসপোর্ট করে দিয়ো।
-ডান। তাহলে কথা ওই রইল। কাল সকালে আমরা ডিভোর্স করে ফেলব। এখন তুমি তোমার বাসায় চলে যাও।

-শোনো, আমাকে বদ বুদ্ধি দেবে না। আমি তোমাকে তালাক দেব না।
-তুমি না এইমাত্র পাসপোর্ট করতে রাজি হলে!
-সেটা তো হয়েছি তোমাকে নিয়ে হানিমুনে যাব বলে।

-নিতু, তুমি আসলেই বোকামি করছ। তুমি বুঝতে পারছ না, আমেরিকা গেলে তোমার কত লাভ হবে। আমেরিকা গেলে তোমার বাচ্চারা সব গড়গড় করে ইংলিশে কথা বলবে। তুমি কি চাও না তোমার বাচ্চারা গড়গড় করে ইংলিশে কথা বলুক?
-না, চাই না। আমি চাই আমার বাচ্চারা সব গড়গড় করে বাংলায় কথা বলুক।

-জাস্ট কল্পনা করো, নায়াগ্রার পাশে তুমি তোমার কাজিনের, মানে তোমার স্বামীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছ। বিষয়টা কত কিউট আর রোমান্টিক নয়?
-মোটেই রোমান্টিক নয়। আমি কাজিনের হাত না, তোমার হাত ধরে দাঁড়াতে চাই। আর সেটা নায়াগ্রার পাশে নয়, মাধবকুণ্ডের ঝরনার পাশে।

-শোনো, পাগল ছাড়া এই দুনিয়ার সবাই নিজের ভালো বোঝে। কিন্তু কেন যে তুমি নিজের ভালো বুঝতে পারছ না, সেটা আমার মাথায় ঢুকছে না।

-কারণ, আমি তো পাগল, তাই নিজের ভালো বুঝছি না। এই শোনো, আমার মনে হয় জ্বর আসছে। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার কেন জানি বৃষ্টির পানি একদম সহ্য হয় না।

-আরে তুমিই তো বললে, আসো বৃষ্টিতে ভিজি। তুমিই তো আমাকে জোর করে বৃষ্টিতে ভেজালে।

-শোনো, বিয়ের দিন কোনো বর-কনেকে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় হাঁটতে দেখছ? দেখোনি, এমনকি শোনোওনি। তাই তুমি আর আমি মিলে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলাম। এই, আমার চোখ কেমন জানি বন্ধ হয়ে আসছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। আমি আর কথা বলতে পারব না। তবে তুমি ফোন রেখো না। তুমি কথা বলো, আমি শুনতে থাকি। আজ তো আমার বাসররাত। তোমাকে তো আর ছুঁতে পারছি না, তুমি না হয় তোমার কথা দিয়ে আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো। জানো, আমার খুব ঠান্ডা লাগছে।

-নিতু শোনো, আমি এ মুহূর্তে রাসেলের বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি।

-কেন! তুমি আবার বৃষ্টিতে ভিজছ কেন?
-তুমি ভেজা কাপড়ে ঠান্ডায় কাঁপছ। আর আমি কীভাবে শুকনা কাপড়ে ঘরের মধ্যে বসে থাকি বলো?
-ওরে আমার সোনা। এখন বুঝছ তো, তোমাকে কেন আমি ডিভোর্স দেব না? রাহুল, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি। তোমাকে.....।
নিতু লাইনটি শেষ করতে পারল না। ফোনটি কানের কাছে ধরেই দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। আস্তে আস্তে ওর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ও গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে। ঝাপসা চোখে দেখল, একটা মানুষ সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে ওপরের দিকে উঠে আসছে। নিতু লোকটাকে চিনতে চেষ্টা করল। কিন্তু চোখ দুটো কিছুতেই খুলে রাখতে পারল না। জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরের ওপর ঢলে পড়ল।

সালাম সাহেব সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে ওপরে উঠে এলেন। দরজার কাছে এসে থমকে দাঁড়ালেন। তারপর তাকিয়ে দেখলেন, মেয়েটি ফ্লোরের ওপর পড়ে আছে। একপলক তাকিয়েই উনি পকেট থেকে ঘরের চাবি বের করে দরজা খুললেন। ধীর পদক্ষেপে ঘরের ভেতর ঢুকলেন। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বাইরে তখন ফ্লোরের ওপর অচেতন হয়ে পড়ে আছে বৃষ্টিতে ভেজা এক জলপরি। চলবে...

* লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top