কখনও এমন হয় আনন্দে চোখে আসে জল। এটাইতো আবেগ (ইমোশন)। কিন্তু কান্না মানে তো দুঃখ, বেদনা। প্রিয়জনের সঙ্গে হয়তো বিচ্ছেদ হল, অশ্রু তো তখন আসবে, কিন্তু আনন্দে কেন?
আমরা অনেক সময় বলি কাঁদো, কেঁদে বুক হাল্কা করো। ধুয়ে মুছে যাক সব হৃদয়ের বাষ্প।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কান্নার এক হিতকরি প্রভাব পড়ে শরীরের উপর। দেহ আর মনের কুশলে কান্নার আছে বিশেষ ভুমিকা।
তাহলে আনন্দাশ্রু আর দুখের অশ্রুর মাঝে তফাত কেমন? জীবনে কোন আশ্চর্য অর্জন, সন্তানদের সফলতা, বহুদিন পর তাদের সঙ্গে মা–বাবার মিলন—এতো আনন্দাশ্রু। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরছেন, দেখা হল বৃদ্ধ মা বাবার সঙ্গে, সেখানে তো আনন্দের অশ্রু বেরুবেই।
কান্নার রকমসকম
কান্নারও নানা ধরন আছে
তিন ধরনের কান্না দেখা যায়। এরমধ্যে
১. এমন কান্না যা থাকে সর্বক্ষণ। একে বলে ব্যাজাল টিয়ারস। সারাদিন থাকে চোখেই। চোখ পিচ্ছিল করে আর জীবাণু করে দূর। এতে থাকে লবন, পানি, তেল আর মিউকাস। তেল–অশ্রু বাস্প হয়ে উড়ে যেতে বাঁধা দেয়।
২. আবেগের অশ্রু। এতে থাকে স্ট্রেস রমোনও।
৩. চোখ কোন কারনে উত্তেজিত হলে কান্না আসে। হয়ত কোন কিছু চোখে পড়ল, অশ্রু একে ধুয়ে বের করে দেয়। পেঁয়াজ কাটলে যেমন চোখে পানি আসে।
কান্নার হিত কথা
কাদলে এমন হরমোন শরীর থেকে ঝরে, যাতে মন ভালো হয়। নিঃসৃত হয় অক্সিটোসিন আর অ্যান্ডর ফিন, আর এতে মনে আসে আনন্দ। কেঁদে বুক হাল্কা হলে ভালো। তাহলে মেঘের পরে রোদ ওঠে। মেজাজ হয় চনমনে। কিন্তু কান্না চেপে রাখলে, কাঁদতে লজ্জা বোধ করলে বরং মন খারাপ কমে না। নিজেকে স্বাভাবিক করতে তাই, কান্নার দরকার আছে।
আনন্দাশ্রুর ধরন
সুখের কারণেও চোখে জল আসে
আমোদ–আহ্লাদ: ধরুন যখন 'প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন। তবু প্রান কেন কাদেরে।' হাসতে হাসতে চোখে কান্না এলে, খুব মজার জিনিষ দেখে এল অশ্রু—এটাই আনন্দের অশ্রু।
স্নেহ–মমতা: কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠান বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা উপকারের প্রকাশে আসে আনন্দাশ্রু। এই ধরনের অশ্রুর মুখোমুখি আমি হয়েছিলাম, যখন ক্যানসার ধরা পড়লো তখন। তখম দেশ বিদেশে থাকা আমার ছাত্র–ছাত্রীদের সহমর্মিতা আর আমার সহকর্মীদের সাহায্য এবং প্রার্থনা দেখে সেই অসুস্থতার মধ্যেও আমার বেরিয়ে ছিলো আনন্দাশ্রু। মুক্তিযুদ্ধে থেকে সন্তান ফিরে এসেছে, মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, সেটা তো আনন্দাশ্রু।
সৌন্দর্য: যা কিছু সুন্দর, যার সৌন্দর্য অভিভূত করে রাখে তা দেখেও আসে আনন্দাশ্রু। হৃদয় ছোঁয়া গান শুনেও অনেক সময় অশ্রু ঝরে। লোক গীতি, ভক্তি গীতি ধরনের গান এমন প্রভাব ফেলে মনে।
অর্জন: বিশাল কোনকিছু অর্জন করলেন নিজে বা আপনার প্রিয়জন তখনো আসে চোখে জল। এই অশ্রুও আনন্দের প্রকাশ ঘটায়।
এ ছাড়াও কোন দুর্ভেদ্য বাঁধা অতিক্রমের পর আসে আনন্দাশ্রু। পুরুষের চেয়ে একজন নারীর চোখে বেশি আসে আনন্দাশ্রু। আনন্দাশ্রু স্বাস্থ্য হিতকর। কাঁদলে আবাগের ভারসাম্য থাকে। আবেগ তা আনন্দের হোক বা দুখের হোক, কাঁদলে মন হালকা হয়। তাই কাঁদুন, কেঁদে বুক হালকা করুন। মন ভাল হবে। মেঘের পরে রোদ হেসেছে, এইতো ভালো।
* ডা. শুভাগত চৌধুরী, ঢাকা