What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected “সুইমিং পুল” (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
98
Messages
11,033
Credits
104,129
LittleRed Car
LittleRed Car
Camera photo
T-Shirt
Thermometer
Glasses sunglasses
"সুইমিং পুল"

লেখকঃ আসিফ রহমান জয়



সাপ-লুডু খেলা চলছে! তুমুল উত্তেজনা! ৯৭ এর ঘরের লম্বা সাপটা মোট তিনবার জসীম সাহেবের গুটি খেয়েছে। এবারো খাবার সমূহ সম্ভাবনা। ২ পড়লে সাপের পেটে আর ৫ পড়লেই জিতে যাবেন! জসীম সাহেব ঘন ঘন ছক্কা ঝাকাচ্ছেন, আর জোরে জোরে বলছেন-লাগে ৫ লাগে... ৫ লাগে... ৫... ৫...
পরিবারের অন্যরা সবাই জসীম সাহেবকে ঘিরে আছে। ওরাও সাথে সাথে জোরে জোরে বলছে- লাগে ২... লাগে ২... ২। আবারো যেনো সাপ খায়, সবাই মিলে তাই দোয়া করছে। জসীম সাহেবের ছয় বছরের ছোট মেয়ে বর্ষাও কুটুর কুটুর করে বলছে-আল্লাহ প্লিজ ২... একটা ২... আল্লাহ প্লিজ।
জসীম সাহেব বেশ আহত হয়ে অবাক দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকালেন! বর্ষা মিটিমিটি হাসছে। হাসতে হাসতে বললো-
-বাবা, একটা ২ ফেলো। প্লিজ বাবা।
জসীম সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন-সবাই ৫ বলো। যদি ৫ পড়ে, তাহলে শুক্রবার সবাইকে নিয়ে রিসোর্টে বেড়াতে যাবো। ৩ দিন-২ রাতের প্যাকেজ। আর ২ পড়লে কোত্থাও যাবো না। ভেবে দেখো কি করবে?
জসীম সাহেবের ছেলে রাকিব, বড়মেয়ে নওশীন, স্ত্রী নীলুফা সবাই এক মূহুর্তের জন্য থমকে গিয়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। তারপর সবাই একসাথে জোরে জোরে বলতে লাগলো-
-৫ ... ৫ ... আল্লাহ ৫... প্লিজ ৫... প্লিজ ৫...
জসীম সাহেব ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ছক্কা ছাড়লেন! ছক্কা গড়াতে গড়াতে বোর্ডের এক কোনায় যেয়ে থামলো- ৫!!!
সবাই একসাথে খুশীতে চিৎকার করে উঠলো!
"হ্যাপি-ইন" রিসোর্টের সিকিউরিটি গার্ড কাশেম বুধবার নাইট শিফট শেষ করে ভোর বেলা খেতে বসেছে। সখিনা ঘুম ঘুম চোখে ভাত-তরকারী বেড়ে তাকে খাওয়াচ্ছে। তাদের একমাত্র বারো বছরের ছেলে সায়েম খাটের একপাশে ঘুমিয়ে আছে। ছেলের ঘুম যাতে না ভাঙ্গে সেই জন্য দু'জনে ফিসফিস করে কথা বলছে। সায়েম আর সখিনা গ্রামের বাড়িতেই থাকে। করোনাতে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল ছুটি। ওরা তাই মাস দুয়েকের জন্য এখানে বেড়াতে এসেছে। সখিনা আরেক হাতা ভাত বেড়ে দিতে দিতে বললো-
-তুমার পোলার অনেক শখ হইছে গো। কয়... তুমগো রিসোটো যাইবো, মাঠে খেলবো, নীল-পুকুরে গোছল করবো।
কাশেম হাসতে হাসতে বললো-
-ওইটা নীল পুকুর না, ওইটারে কয়-সুইমিং পুল।
-হ হ... হেইটাই। আমার ওইসব মুহে আহে না। তোমার পোলা কি সোন্দর কইরা কয়? ওয় ইংরিজি কইলে, খুব মিষ্টি লাগে। আইচ্চা, সুইম পুলের পানি নাকি সমুদ্রের নাহাল নীল? তুমি আমগোরে কবে নিবা গো?
কাশেম মাথা ঝাঁকিয়ে খাওয়ার দিকে মন দিলো।
জসীম সাহেব সবাইকে নিয়ে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। 'হায়েস' গাড়ি হাইওয়ে ধরে হাই স্পীডে ছুটে চলেছে। স্পীডের সাথে তাল মিলিয়ে গাড়িতে জোরে সোরে হিন্দি গান বাজছে-"বাস এক সানাম চাহিয়ে আশিকি কে লিয়ে..."।
ছেলে-মেয়েরা এই ব্যাকডেটেড হিন্দি গানে খুব বিরক্ত হলেও আজ কিছুই বলছে না। সবাই মনে মনে খুব খুশী। করোনার জন্য অনেকদিন ঘরে আটকে ছিলো, আজ একটু আনন্দ করা যাবে।
জসীম সাহেব গানের ভলিউম কমিয়ে দিয়ে বললেন-
-বাচ্চারা ট্রানশ্লেষন করো তো-'আমাদের হায়েস গাড়ি হাইওয়ে ধরে হাই স্পীডে ছুটে চলেছে।'
নীলুফার দিকে তাকিয়ে বললেন- বুঝলে নীলু, এ হলো ছুটির ফাঁকে ফাঁকে লেখা-পড়া করা।
নীলুফা বিরক্ত হয়ে বললেন-ওদের ট্রানশ্লেষন ধরে লাভ হবে না। ওরা সব ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। ওদের বরং ইংরেজী থেকে বাংলা করতে বলো।
জসীম সাহেব হো হো করে হেসে ফেললেন-ঠিক, ঠিক বলেছো। ওদের ইংলিশের জ্ঞান আমার চাইতে বেশীই হবে।
নীলুফা'র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললেন-
-শোন, আমি কিন্তু সাথে একটা বিয়ারের বোতলও এনেছি। তোমরা সবাই রাতে ঘুমিয়ে গেলে আমি একা একা সুইমিং পুলের পাশে বসে খাবো। আমার অনেকদিনের শখ। ওয়েবসাইটে ওদের সুইমিং পুলের ছবি দেখেছো? নীচের টাইলস গাঢ় নীল তো, দেখে মনে হয় সমুদ্রের নীল পানি। সামনে নীল পানি, হাতে থাকবে সুরা, ব্যাকগ্রাউন্ডে পছন্দের গজল বাজবে। আইডিয়া কেমন?
নীলুফা বড় বড় চোখ করে তাকালো।
রিসিপশন ডেস্কের একটু দূরেই ম্যানেজারের অফিস। অফিসে কাশেম মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রিসোর্টের ম্যানেজার মনসুর খান সমানে বকা-বাদ্য করে যাচ্ছেন।
-তুমি আশা করো কীভাবে যে, তোমার ছেলে আমার ক্লায়েন্টদের সাথে এক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটবে? তোমার এতো সাহস হয় কীভাবে?
কাশেম মিনমিন করে বললো-
-স্যার, আমার ছেলে গেরামে থাকলিও, মুখ্যু না। গেরামের ইস্কুলে পড়াশোনা করে, খুব ভালো পড়ে, কিলাসে ফাস্ট হয়, ইংরেজী বলতি পারে। আদব-লেহাজের কোনো কমতি পাবেন না।
-আরে ধুর...গ্রামের স্কুলে ফার্স্ট হয় তো কি হয়েছে! ওকে মাথায় নিয়ে নাচতে হবে? তুমি এসব বুঝবে না... সবকিছুর একটা ক্লাস আছে। ওখানে সব শহুরে লোকজন থাকবে, ওদের স্মার্ট স্মার্ট ছেলে-মেয়েরা থাকবে।
-স্যার, ও এককোনায় পইরা থাকবো...
-চুপ। এই নিয়ে আর কোনো কথা না। যাও তোমার ডিউটিতে যাও। যত্তোসব...!
কাশেম চুপচাপ মাথা নীচু করে তার ডিউটিতে ফিরে গেলো।
রিসোর্টটা জসীম সাহেবের দারুণ পছন্দ হলো। সাধারনতঃ তাঁর পছন্দের জিনিসগুলো ফ্যামিলির অন্য সবার পছন্দের সাথে মেলে না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন হলো।
বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রিসোর্টের চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। চমৎকার সব গাছপালা দিয়ে আর্কিটেক্ট মনমুগ্ধকর ডিজাইন করেছে। নানা জাতের ফুলের গাছে থোকা থোকা ফুল ফুটে রয়েছে। ঠিক যেনো সাজানো-গোছানো আদর্শ একটা গ্রাম। আবার থাকার জায়গা একেবারে শহরের আধুনিক ফাইভ স্টার হোটেলের মতো। বিলাস-বহুল এসি রুম। রুমের ভেতরে কম্ফি বেড, সোফাসেট, টিভি। বিল্ডিং এর পিছনে ঝকঝকে সুইমিং পুল। গাঢ় নীল রঙের টাইলসের জন্য সুইমিং পুলের পানিকে সমুদ্রের নীল পানি বলে ভ্রম হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই জসীম সাহেব আর তাঁর তিন ছেলে-মেয়েকে সুইমিং পুলের পানিতে লাফালাফি করতে দেখা গেলো। করোনার জন্য এখন রিসোর্টে ভিড় তেমন নেই বললেই চলে, পুরোটাই আজ ওদের রাজত্ব। সুইমিং পুলে ওরা প্রায় চার ঘন্টা পানি ঘাটাঘাটি করে কাটিয়ে দিলো। রাকিব আর বর্ষাকে রীতিমতো টেনে-হিঁচড়ে ধমকে-ধামকে উঠাতে হলো। নীলুফা ছবি তোলা-তুলি নিয়ে ব্যস্ত থাকলো। আজ আর সুইমিং পুলে নামলো না, কাল নামবে।
দুপুরের জম্পেশ বুফে খাবারের পর বিকেলটাও খোলা মাঠে দৌড়াদৌড়ি-হুড়োহুড়ি করে দারুণ কাটলো। মাঠে ছেলে-মেয়েদের খেলার জন্য ভলিবল থেকে শুরু করে ক্রিকেট, ফুটবল সবকিছুরই ব্যবস্থা আছে। বিকেলের স্ন্যাক্সে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠার সাথে নুডুলস, চা-কফি জসিম সাহেবকে মুগ্ধ করলো। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন যে, দুই-তিন মাস পরপর এখানে এসে দিন দুই কাটিয়ে গেলে ব্যাপারটা মন্দ হবে না। এ যেন শহরে থেকেও গ্রামের আমেজ।
রাতে ডিনারের পর সবাই রুমের নরম ফোমের বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে আর খুনসুটি করছে। জসীম সাহেব ছেলে-মেয়েদের চোখ এড়িয়ে, তাঁর ব্যাকপ্যাকে বিয়ারের বড় বোতলটা নিয়ে সুইমিং পুলের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তাঁর অবশ্য এসবে মোটেও অভ্যাস নেই। এক ক্লায়েন্ট জোর করে গছিয়ে দিয়েছে। তিনিও ভাবলেন, সব জিনিসই একবার টেস্ট করা উচিত। কিন্তু এসব জিনিস কি আর একা একা খাওয়া যায়? নীলুফাকে অবশ্য ইশারা দিয়ে এসেছেন যদি ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়িয়ে আসতে পারে। রিসোর্ট কতৃপক্ষের পারমিশন নিয়ে তিনি এক প্লেট চিকেন ফ্রাই আর বাদাম-মাখনির অর্ডার দিলেন। এসবের সাথে নাকি ঝাল জাতীয় হালকা খাবার খেতে হয়।
প্রথম পেগ খাবার পর জিনিসটা একেবারেই বিচ্ছিরি লাগলো! ধ্যাত... তিতা, স্বাদহীন একটা জিনিস! কেন যে মানুষ এতো আগ্রহ নিয়ে খায় কে জানে! তিনি জোর করে চিকেনের সাথে আরো দুই পেগ খেয়ে ফেললেন। সাথে বাদাম-মাখনি থাকায় ব্যাপারটা একটু সহনীয় হলো। তিন পেগ খাবার পর তাঁর মাথাটা কেমন যেন হালকা হালকা লাগতে লাগলো। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাড়াতে যেয়ে দেখলেন, গোটা পৃথিবীটা কেমন যেনো স্লো-মোশনে ঘুরে উঠলো। যেদিকে তাকান সব কিছুই কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগে। আরেহ... এইটাই কি নেশা নাকি! এই ঘোর ঘোর লাগা ব্যাপারটা তাঁর বেশ ভালো লাগলো। হঠাৎ করেই নিজেকে বড়-সড় কেউকেটা জাতীয় মনে হলো। মনে হলো তিনি অয়োময় নাটকের ছোট মীর্জা। চতুর্থ গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছোট মীর্জার মতোই বেশ গম্ভীর গলায় ডেকে উঠলেন-হানিফ।
জসীম সাহেবকে চমকে দিয়ে, অন্ধকারে তাঁর পিছন থেকে কে যেন খুক খুক কাশি দিয়ে বললো-
-স্যার, আমি হানিফ না, আমি এখানকার সিকিউরিটি। আমার নাম কাশেম।
কাশেমের ডিউটি তখন শেষ। সে সুইমিং পুলের এক পাশে চুপচাপ বসে ছিলো। তার মন ভীষণ খারাপ। ছেলেটাকে রিসোর্ট দেখাতে পারবে না, সুইমিং পুলে গোছল করাতে পারবে না। এখন বাড়ি গেলেই ছেলে তাকে এসব জিজ্ঞেস করবে। তাই এখানেই আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে একটু রাত করে সে বাড়ি ফিরবে, যাতে ততোক্ষণে ছেলেটা ঘুমিয়ে যায়। অনেকক্ষন ধরেই দূর থেকে সে জসীম সাহেবকে দেখছে।
জসীম সাহেব আমতা আমতা করে বললেন-
-ইয়ে মানে, আমি মানে... আপনাকে মানে তোমাকে তো আমি ঠিক ডাকিনি...।
কাশেম বললো-স্যারের কি কিছু লাগবে। লাগলে বলতে পারেন।
জসীম সাহেবের সাথে কাশেমের প্রায় আধা ঘন্টার ওপর কথাবার্তা হলো। কি কথা হলো, সেটা আমাদের জানা হলো না।
জসীম সাহেবের ফ্যামিলির সবাই ওনার ওপর বেশ খেপে আছে। অবশ্য খেপে থাকারই কথা। অফিস থেকে নাকি জরুরী ফোন এসেছে, তাই ৩ দিন-২ রাতের প্যাকেজ শেষ না করেই তারা সকালের নাস্তা করে সপরিবারে ঢাকায় ব্যাক করছে। সবারই কম-বেশী মেজাজ খারাপ। নীলুর মন-মেজাজ দুটোই বেশী খারাপ। একে তো সুইমিং পুলে নামা হলো না, তারওপর ঢাকায় ফিরেই আবার রান্নাঘরে ঢুকতে হবে। ভেবেছিলেন তিনদিন রান্না-বান্না ছাড়া বেশ আরামে থাকবেন। জসীম সাহেব নিজেও ভুরূ কুঁচকে মুখ ভার করে আছেন। মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে কি যেন বলছেন। নিশ্চয়ই অফিসের বসকে গালিগালাজ করছেন।
বেলা এগারোটা।
সিকিউরিটি গার্ড কাশেমকে দেখা গেলো স্ত্রী-পুত্র সহ রিসোর্টের মেইন গেটে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার পরনে সিকিউরিটির ড্রেসের পরিবর্তে পরিস্কার সাদা পাঞ্জাবী-পায়জামা, বউয়ের পরনে গাঢ় সবুজ রঙের লাল পাড়ের শাড়ি আর ছেলের পরনে জিন্সের প্যান্ট আর টি-শার্ট। কাশেম সিকিউরিটিকে তার হাতের কুপন দেখালো। সিকিউরিটি স্যালুট দিয়ে রিসোর্টের গেট খুলে দিলো।
বেলা বারোটা।
কাশেমের ছেলে সোহেল সুইমিং পুলের সিড়িতে হাফ-প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরে ঘোমটা মাথায় চোখ বড় বড় করে কাশেমের বউ পুল চেয়ারে বসে আছে। সোহেলের চোখে-মুখে একইসাথে অপার আনন্দ আর অঢেল বিস্ময় যেনো উপচে উপচে পড়ছে। শীতের অলস সূর্য্য সুইমিং পুলের নীল পানিতে ঝলমলে রোদ আছড়ে ফেলছে। সেই ঝলমলে-ঝকঝকে রোদ পানিতে ঠিকরে সোহেলের চোখে-মুখে এসে পড়ছে। সোহেলের কেন যেনো পুরো ব্যাপারটাই বিশ্বাস হচ্ছে না। সে পানিতে পা দেবার আগে আরো একবার কাশেমের দিকে অনুমতির জন্য ঘুরে তাকালো।
কাশেমের নিজের কাছেও ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছে না। সে চোয়াল শক্ত করে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। চোয়াল শক্ত করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলে চোখের পানি মোটামুটি আটকে থাকে। সে মনে মনে বললো-
-হে আল্লাহ, ফেরেশতার মতো মানুষটাকে তুমি ভালো রেখো। তাঁর পরিবারের সবাইকে তুমি সুস্থ্য রাখো।
সোহেল সুইমিং পুলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
সেদিন সকালে নাস্তা খাবার পরের ঘটনা।
জসীম সাহেব রিসোর্টের ম্যানেজারকে ডেকে পাঠিয়েছেন। স্যুটেড-বুটেড ম্যানেজার মনসুর খান ভীষণ কেতাদুরস্ত কায়দায় তাকে অভিবাদন জানালো।
-গুড মর্নিং স্যার, আমাদের রিসোর্ট আপনার কেমন লাগছে?
-চমৎকার। খুবই চমৎকার।
-আমাদের সার্ভিসগুলো কি সব ঠিক-ঠাক পাচ্ছেন। সবগুলো কুপন পেয়েছেন তো? আজ রাতে বাউলদের গান হবে। তবে গানের জন্য কোন কুপন লাগবে না।
-তাই নাকি! আহা... বাউলের গান দেখার খুব শখ ছিলো কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাকে সপরিবারে এখনই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হতে হবে। হঠাৎ ই অফিসের কাজ পরে গেছে।
-বলেন কি স্যার?
-হ্যা, আমি নিজেও ব্যাপারটা নিয়ে বেশ আপসেট।
-রাইট স্যার। ইটস রিয়েলি আপসেটিং।
-আচ্ছা, আপনার কাছে একটা রিকোয়েস্ট আছে। আমি আমাদের আজকের দিনের আর রাতের কুপনগুলো আমার এক বন্ধুকে দিয়ে যাচ্ছি। স্পেশালি দুপুরের লাঞ্চ, বিকালের স্নাক্স আর রাতের ডিনার, সুইমিং পুলের কুপনগুলো। আপনি একটু সাইন দিয়ে দিন। আমার বন্ধু তাঁর পরিবার নিয়ে অন দ্যা ওয়ে তে আছেন।
-ওকে স্যার। নো প্রবলেম। এখনি সাইন দিয়ে দিচ্ছি। ওনারা মোট কতোজন?
-তিন জন। হাসবেন্ড-ওয়াইফ আর বারো বছরের ছেলে।
-শিওর... আপনারা তো ৫ জন আর ওনারা মাত্র ৩ জন। আমি এখনি সাইন-সিল দিয়ে কুপন পাঠিয়ে দিচ্ছি। উই হ্যাভ নো প্রবলেম এট অল।
-ইফ ইউ ফিল এনি প্রব্লেম। দেন কল মি।
সকাল সাড়ে এগারোটা।
জসীম সাহেবের ফোন বেজে উঠলো। গাড়ি ততোক্ষনে টংগী পার হয়ে ঢাকায় ঢুকছে।
-হ্যালো স্যার, আমি 'হ্যাপি-ইন' রিসোর্টের ম্যানেজার বলছি।
-জি বলেন।
-স্যার, আপনি বলেছিলেন যে, আপনার এক বন্ধু কুপন নিয়ে আসবে। এখানে মনে হয় কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আপনার কুপন নিয়ে আমাদের সিকিউরিটি গার্ড কাশেম এসেছে... ও বলছে...
-না। কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। ওরাই আমার সেই ফ্রেন্ড যার কথা বলে এসেছিলাম। ওরা তিন জন। হাসবেন্ড-ওয়াইফ আর একজন ছেলে। আশা করি, ওনাদের আদর-যত্নের কোন কমতি হবে না।
ওপাশে বেশ কিছুক্ষণ চুপ।
-না, স্যার। কোন কমতি হবে না।
জসীম সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তিনি একটা ঝাকানাকা টাইপ গান ফুল ভলিউমে ছাড়লেন।
নীলুফার দিকে ফিরে বললেন-
-বুঝলে নীলু...অফিসের কাজ আপাতত সামাল দেয়া গেছে। চলো আমরা আজ বাইরে কোথাও ধামাকা লাঞ্চ করি। কি বলো তোমরা? কোথায় যাওয়া যায়?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top