What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected গল্পটা ভালবাসার.... (1 Viewer)

Pegasus

Member
Joined
Mar 8, 2018
Threads
103
Messages
171
Credits
28,977
বাসকাউন্টারের এক শিটে বসে আছি।
মাথাটা নিচু করেই।
বাস আসতে নাকি এখনও দেরি হবে। এখানকার
ম্যানেজার জানালেন। আশেপাশে অনেকেই
বসে আছে।
আমাদের সকলের গন্তব্যপথ টা মনে হয় একই।
.
ক্রিং ক্রিং ফোন বাজছে । জিন্স প্যান্ট
থেকে ফোনটা বের করলাম। যা ভাবছিলাম
তাই।
-- হ্যা বল।(আমি)
-- কোথায় তুই?
-- এইতো বসে আছি
-- বাসে?
-- না কাউন্টারে
-- ওহ কখন ছাড়বে?
-- জানা নেই। তবে শুনলাম একটু পড়েই। চিন্তা
করিস না আমি ঠিক চলে যাবো।
-- হুম দেখে শুনে আসবি। আর বাসে উঠলে
আমাকে ফোন দিয়ে জানাবি।
-- আচ্ছা বাই
এই নিয়ে সকাল থেকে ৫০বার ফোন করা হলো।
আমি এখন কি করছি, কোথায় কখন আসবো?
ইত্যাদি ইত্যাদি
.
ফোনটা পকেটে রেখে। সামনের দিকে
তাঁকালাম।
একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে আছে। মনে
হয় ওরা বন্ধু না হয় ভালবাসার সম্পর্ক দিয়ে আঁকা
ওদের জীবন। মেয়েটা ছেলেটাকে খাইয়ে
দিচ্ছে, বাহ! ভালবাসার সম্পর্কগুলো কি এমনই
মধুর হয়? হয়তো? জানা নেই
.
হেল্পার ডাক দিলো বাস নাকি চলে আসছে।
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাসে উঠে পরলাম। ব্যাগে
তেমন কিছুই নেই। এইতো দুটা টি শার্ট,পেন্ট আর
একটা পাঞ্জাবি।
নিজের সীটটা খুজে বসে পড়লাম।
বাস চলতে থাকলো।
মাথাটা সিটের সাথে হেলান দিলাম।চোখ
দুটো বন্ধ করলাম।
আপনাদের বলা হয়নি না কোথায় যাচ্ছি।
যাচ্ছি! কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।
যার বাসায় যাচ্ছি ! ওর নাম আঁখি! ওরে খুব
ভালোবাসি।
আঁখি আমার খুব ভালো বন্ধু প্লাস ক্লাস মেট।
ওর সাথে লম্বা তিন বছরের সম্পর্ক আমার। দুজনে
একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করি।
পড়াশোনা, আড্ডা ঘুরা,মাস্তি সব ওকে
ঘিরেই। আঁখিকে বন্ধু হিসাবে পেয়ে এই
জীবনে অন্য কাউকে আর তেমন করে জড়ানো
হয়নি। আর আঁখিও জড়ায় নি! শুধু আমি একমাত্র ওর
ছেলে বন্ধু।
মেয়েটা অসম্ভব রকমের ভালো। আর এই ভালো
মেয়েটাকে একদিন ভালবেসে ফেললাম।
কিন্তু সেটা মনের অন্তরালেই। মুখ ফুটে কখনো
বলা হয়ে উঠেনি। আঁখি তোর হাতটা
সারাজীবনের জন্য ধরতে দিবি,,, !
এইতো গত বেশ কিছুদিন আগে..ভেবেই নিয়ে
ছিলাম ওকে আমার মনের কথাটা জানাবো।
কিন্তু সেইদিনের পর বেশ কিছুদিন ও আর
ভার্সিটিতে আসেনা। এইদিকে ফোন বন্ধ।
কেমন জানি অস্তির অস্তির লাগছিলো। মনে
হচ্ছিলো আঁখি আমার জীবন থেকে হারিয়ে
গেল। সেটা অনেক মহামুল্যবান একটা জিনিস!
ম্যাসে গিয়ে দেখি নেই, ওর বান্ধবিদের
কাছে থেকে জানতে পারি। হঠাৎ করেই
নাকি ওর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাই হুট
করেই চলে গেছে।
কিন্তু যাবার আগে আমাকে তো একটা ফোন
করে জানাতে পারতো? কিজানি হয়তো
প্রয়োজন মনে করেনি।
তারপর বেশ কিছুদিন ভার্সিটি যাই না।
.
একদিন সকালে হঠাৎ আঁখির ফোন। আমার সাথে
নাকি ওর কিছু কথা আছে। আমারও তো ওরে
অনেক কিছু বলার আছে। আজ সব বলবো আঁখিকে।
দুজনে বসে আছি চিরচেনা বট গাছটার নিচে!
-- কিরে তুই আমাকে না বলেই বাসায় চলে
গেলি? একটিবার তো জানাতে পারতি!
জানিস কতটা টেনসন হচ্ছিলো আমার
--.....
-- কি হলো কথা বলছিস না যে??
-- আসলে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন! কি
থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারিনি।
তাই তাড়াহুড়া করে চলে গেছি। সরি দোস্ত
-- হুম আমি কিছু মনে করিনি
আজ কেনও জানি আঁখিকে অন্যরকম লাগছে।
কেমন অন্য মনস্ক্য , কথা বার্তা চালচলন। আগে
তো কখনো দেখিনি এমন।যদিও ও খুব কম কথা
বলে. কিন্তু আজ একটু বেশি।
-- তারপর আংকেল এখন কেমন??
--.....
-- এই আঁখি
-- ভালো
-- একটা কথা বলবো?
-- হুম বল
-- তোর চোখ মুখ এমন শুকনা শুকনা লাগছে কেন।
কিছু হয়েছে
-- কই নাতো!
-- লুকাচ্ছিস? কি হয়ছে বল?
-- রাজ!
বলেই কাঁদতে শুরু করে দিলো।
-- এই পাগলি কাঁদছিস কেন তুই? কি হয়ছে বল
আমায়!
-- জানিস আমার না আর পড়াশোনা করা
হবেনা! তোর সাথে হয়তো আর দেখাও হবে না
কোনদিন! ( কেঁদে কেঁদে)
বুকটা ধরাস করে উঠলো কি বলছে ও
-- কি বলছিস এগুলা আমিতো কিছুই বুঝতে
পারছিনা
তারপর আমার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে
দিলো।
-- এটা কি?
-- আমার বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ড
কথাটা শোনার পর মনে হলো বুকের বাম
পাশটাই কেউ বিশাল এক হাতুড় দিয়ে আঘাত
করলো।
-- মানে?
-- মানে আর দশদিন পর আমার বিয়ে।
আর তোকে আসতেই হবে কিন্তু । না করতে
পারবিনা। ( চোখ মুছতে মুছতে).
তুই আমার খুব ভালো বন্ধু। আর তুইতো জানিস
আমার তেমন কোন বন্ধু নেই। আর তুই যদি না আসিস
আমি বিয়েই করবো না।
মুখ দিয়ে আর কথা যেন বের হতে চাচ্ছে
না....চোখে মনে হয় পানি জমে গেছে,, চোখ
বন্ধ করতে ভয় করছে যদি পানি বের হয়ে যায়।
ইচ্ছে করছে মাটির ভিতরে ঢুকে যেতে।
জীবনে প্রথম যাকে ভালোবাসলাম তাকে
বলতেই পারলাম না ভালবাসি কথাটা। আর
সেই ভালবাসার মানুষটির বিয়ের কার্ড হাতে
আমার।
অনিচ্ছা সত্তেও মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল।
হুম যাবো!
মেয়েটা মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। ঠাঁই বসে
থাকলাম!
কেন জানি বুক ফেঁটে কান্না বেরিয়ে আসতে
চাচ্ছে।
কার্ডটা খুলে দেখলাম হুম ওই মাসের ৫
তারিখে বিয়ে।
.
ভাইয়া, ভাইয়া শুনতে পারছেন (অপরিচিতা )
-- জ্বী বলুন
-- আমার না একটু সমস্যা আছে আমাকে একটু
জানালার পাশে বসতে দিবেন??
কিছু না বলেই মেয়েটাকে ঢুকতে দিয়ে সরে
বসলাম।
.
আজ যাচ্ছি সেই বিয়েতেই! আমিই মনে হয় এই
প্রথম যে কিনা ভালবাসার মানুষটির বিয়েতে
যাচ্ছে।
কি করবো ওকে যে কথা দিয়েছি? ভালবাসার
মানুষটি যখন এতো করে বলল তখন না করি কি
করে?
যদিও ভেবেছিলাম যাবো না কিন্তু একদিন
হঠাৎ করেই ও ওর বড় ভাইকে নিয়ে আমার
বাড়িতে হাজির। তারপরও বলেছিলাম আমার
কাজ আছে , আমি যেতে পারবোনা। তবু তারা
নাছোড় বান্দাহ। আমাকে সেইদিনই নিয়ে
যাবে। অনেক বলার পর রাজি হয় আর বলি
বিয়ের দিন যাবো।
কিন্তু না আমাকে এখনই নিয়ে যাবে।
অতপর বলি বিয়ের আগের দিন যাবো।
একদিকে বন্ধুত্ব অন্য দিকে ভালবাসা।
যখন বলতেই পারলাম না ভালবাসি কথাটা তখন
বন্ধু হয়েও তো কিছু দায়িত্ব আছে।
নির্লজ্জ্ব, বেহায়া সব হয়ে এখন যাচ্ছি!
.
হঠাৎ গাড়ির ফুল ব্রেক! হেল্পার জানালো
চলে আসছি।
বাস থেকে নেমে.. সিএনজিতে করে রওনা
দিলাম।
অনেক আগে এসেছিলাম।যদিও চেনার কথা
কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে আজ অচেনা।ভীষন অচেনা
সিএনজি থেকে নেমে, হাতে ব্যাগ নিয়ে
বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম।
ঢুকতেই দেখি গেইটের একপাশ ধরে দাঁড়িয়ে
আছে আঁখি।
চোখ গুলো কেমন জানি লাল হয়ে আছে,
চোখের নিচে অনেকটা জুড়ে কালো দাগও
পড়েছে।
বিয়ের আগে সব মেয়েরই কি এমন চোখ লাল হয়,
চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে? পড়ে হয়তো।
চোখটা নামিয়ে নিলাম,,, অন্যর বউয়ের দিকে
এইভাবে তাঁকিয়ে থাকার কোন অধিকার নেই
আমার।
-- তোকে ফোন দিতে বলেছিলাম না(আঁখি)
-- ভুলে গেছি ( মিথ্যা বললাম,আসলে ইচ্ছা
করেই দেয়নি)
-- আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
-- নাহ
-- ভেতরে আই
আঁখির পেছন পেছন ভিতরে গেলাম!ভিতরে
ঢুকেই বুঝতে পারলাম বাড়িতে বেশ বিয়ের
তোড়ঝোড় চলছে।
ছেলে, বুড়া, যুবক,যুবতি সব বয়সী মানুষে পরিপূর্ন
বাড়ির ভেতর টা। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত,
কেউ আড্ডায়,মাস্তিতে আর পিচ্চি গুলাতো
হৈ-হুল্লোর করে বেড়াচ্ছ! কিছু আন্টি আপু বয়সী
মেয়েরা.. গয়না শাড়ি পছন্দে মেতে আছে।
আর কিছু সংখ্যক রান্না কাজে হাতে হাত
লাগাচ্ছে।
.
একটা রুম দেখিয়ে বসতে বলে চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে গা টা একটু এলিয়ে দিলাম
বিছানায়।
-- কি অবস্থা রাজ?(আবির ভাই)
-- এইতো ভালো ভাই (কুনই ভর দিয়ে বিছানা
থেকে উঠে বসলাম)
-- তারপর নাস্তা পানি কিছু হয়েছে
-- এইতো
আঁখি দেখি প্লেটে করে বেশ কিছু খাবার
নিয়ে আসল।
তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
৫ টা
আবির ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো।
ভাই বলল আজ নাকি আঁখির গাঁয়ে হলুদ!
উঠে পড়লাম, ফ্রেশ হয়ে একটা টি শার্ট গায়ে
দিলাম।
রুম থেকে বেরিয়ে,, চোখ দুটো কেন জানি
কাউকে খুজতে লাগল!
নাহ কি হচ্ছে এসব???
বাড়িটা বেশ বড়, বড় বলতে অনেকটাই বড়।
আঁখিরা ওর চাচা-চাচী, দাদা-দাদি সকলেই
এক সাথে থাকেন। এ এক বিশাল পরিবার।
সে অনুসারে বাড়িটা ঠিকই আছে।
আঁখিকে কোথাও দেখতে পেলাম না হয়তো
কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। আর ব্যস্ত থাকবেই
বা না কেন আজ বাদে কাল ওর বিয়ে।
.
বাড়িটা আজ খুব সুন্দর করে সাঁজানো হচ্ছে।
অন্য দিকে ডেকোরশোনের কাজ চলছে।
সামনে এগিয়ে একটা মঞ্চ দেখতে পেলাম।
এখানেই হয়তো আঁখির গাঁয়ে হলুদ হবে।
.
বাড়ির বাইরে চলে আসলাম... কেন জানি আজ
কিছুই ভাললাগছে না। ভাললাগার তো কথাও
না!
সামনের পুকুরপাড়টাই... সেন্ডেল পেরে বসে
পড়লাম! কিছু কুড়ি পাথর পুকুর পানিতে ছুড়ে
মারলাম।গুরুজন রা বলেন
এমন করলে নাকি মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু
আমার তো হয়না।
দুহাতের ওপর ভর দিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে
তাকালাম। বাহ বেশ খারাপ! আকাশটা হয়তো
আজ অনেকের কাছে ভালোও লাগবে কিন্তু
আমার কেন জানি ভাললাগছে না। আকাশে
প্রচুর কালো কালো মেঘ ভাসছে।
যার বুকেই কালো মেঘ জমে আছে। তার আবার
মেঘ দেখার প্রয়োজন কি! যাই
সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার
হাহাকার শুনতে পাচ্ছি। পাখির কলোরব!
.
বাহ! বাড়িটা কি অপরুপ লাগছে! অনেক দূর
থেকে এর স্পষ্টতা পাচ্ছে। যে দেখবে সেই
বলবে এটা বিয়ের বাড়ি।
চারিদিকে মরিচ বাতি জ্বলছে।
লাল,নীল,বেগুনি রংয়ের।
.
এখন আমার কি করা উচিত, কি করতে হবে কিছুই
বুঝতে পারছিনা।
আবির ভাইকেও দেখছি না।
ওই তো মঞ্চে ফুল সাজাচ্ছে।
আমাকে দেখে আবির ভাই বলল --কোথায়
ছিলে তোমাকে সেই কক্ষন থেকে খুজছি।
-- এইতো ভাই একটু বাইরে গেছিলাম।
--রাজ একটু হেল্প করও তো ভাই
-- জ্বি ভাই!
ফুল সাজাচ্ছি... রজনি গন্ধা, গাঁদা, গোলাপ!
শুনেছি এগুলো নাকি ভালোবাসার প্রতীক।
তাই হয়তো এগুলা শুভ ক্ষনে ব্যবহার করা হয়!
.
রাত বাড়ছে! একটু পরেই আঁখির গাঁয়ে হলুদ!
ওকে আনা হলো,হলুদ শাড়ি পড়েছে। হলুদ গাঁদা
ফুল মাথায় দেয়া। কিছু কোমরে জড়িয়ে
রাখা। কি অপরুপ লাগছে দেখতে! অনেক আগে
একবার আঁখিকে শাড়ি পড়তে দেখেছিলাম আর
আজ। আজই হয়তো শেষ দেখা!
.
সবাই যে যার মত করে হলুদ মাখাচ্ছে। ওর ফর্সা
গালটাই হলুদ দেয়া। লাইটের আলোয় কেমন
জানি চিকচিক করছে। আমি হা করে দেখছি।
মেয়েটা মাঝে মাঝে হাসছে হয়তো
ভাবিরা বিভিন্ন কথা বলে মজা করছে।
.
রাত প্রায় অর্ধেক পার হয়ে গেছে। পেটে কিছু
খাদ্যের দানা দেওয়া দরকার। কিন্তু মনের
ক্ষুদার কি হবে? এটা পূরন হবে কি করে??
যাহোক কিছু খেয়ে শুতে গেলাম।
জানি আজ হয়তো ঘুম আসবেনা। এই বিয়ের
আনন্দে ঘুম আসা সত্যি অনেক কষ্টের! এত আনন্দ
যে বলে বোঝানো যাবে না।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি। কিছুতেই চোখে
ঘুম ধরেনা।
.
মৃদু মৃদু আধার ভরা সকাল। জানালার ফাক দিয়ে
দেখা যাচ্ছে! নাহ এখনওপুরোপুরি সকাল হয়নি।
ঘুমানো যায়।
.
ঘুম থেকে উঠে পরলাম।
আজ আঁখির বিয়ে! ভাবতেই কেমন লাগছে।
বিয়ে বাড়িটা আগের চেয়ে অনেক মানুষে
ছেয়ে গেছে।
আঁখিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কি করছে ও
এখন? ওরে কি বিয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে।
ইচ্ছে, সপ্ন সবই তো ছিল মেয়েটাকে এই বিয়ের
সাজে দেখতে! নিজের করে পেতে! কিন্তু
তা তো আর সম্ভব হলোনা।
অনেকেই বলাবলি করছে
বর যাত্রিরা নাকি চলে এসেছে। আখির বর কে
ছবিতে দেখেছি। বেশ সুন্দর দেখতে। আমার
থেকে হাজার গুন ভালো। তাও আবার সরকারি
চাকুরীজীবী। এমন বরই তো প্রতিটা মেয়েই
চাই।
.
লাল পাঞ্জাবিটা পরেছি! আঁখির পছন্দের
পাঞ্জাবিটা। ওরে সাথে করেই কিনেছি। খুব
যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ যে
সেটা কাজে লাগবে ভাবিনি!
সব কিছু প্রস্তুত! বর-কনে কে পাশাপাশি বসিয়ে
রাখা হয়েছে।
আঁখির ওপর থেকে যেন চোখই সরানো যাচ্ছে
না। কি সুন্দর দেখাচ্ছে! যতই প্রশংসা করিনা
কেন মনে হয় তাও কম পরে যাবে।
লাল বেনারসি শাড়ি, মেচিং ব্রাউজ
গলা ভর্তি গয়না... নাকে নাকফুল কানে দুল।
চোখে কড়া করে কাজল, ঠোটে লিপস্টিক।
হাত- পায়ে মেহেদি। বাহ! একদম ডানাকাটা
পরীর মত লাগছে!
মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে।
কাজি বারবার কবুল বলতে বলছে। মেয়েটার
ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। মুখ তুলে কিছু সময়ের জন্য
সবাইকে দেখে নিলেন! অনেকক্ষণ ধরে তার
বাবা-মা, ভাই বোনের দিকে তাঁকিয়ে
থাকলেন।
মেয়েটা হয়তো নিজেকে খুব একা মনে করছে।
.
বুকটা চিনচিন করে ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে
কলিজাটা ছিড়ে বের হয়ে আসছে।
.
অতপর বিয়ের কাজ শেষ হলো। সবাইকে
খাওয়ানোর জন্য তোরঝোড় শুরু হল।
কাঁধে কারো হাতের সর্প্শ পেলাম ঘুরে দেখি
আবির ভাই!
-- খাবে চলো
-- ভাই আমি আগেই খেয়ে নিয়েছি।
-- কখন?
-- এইতো ঘণ্টা খানেক হলো
কত সহজে মানুষকে মিথ্যা বলা যায়। কিন্তু
নারে ভাই আমি যে খাইনি। খাবো কি করে
বল?? খাবার যে গলা দিয়ে নামবে না।
.
বিদায়বেলায় আঁখি কয়েক সেকেন্ডের জন্য
ছলছল চোখে আমার দিকে তাঁকিয়ে ছিল। এ
সময়টা মনে হচ্ছিলো হাজার বছরের সমান।
চোখের ভাষাগুলো যে কিছু বলতে চাচ্ছিলো।
তাহলে কি আখিও? না না তা হবে কেন? ও
কেন আমাকে ভালবাসতে যাবে। ও তে
আমাকে শুধু বন্ধুই ভাবে।
.
রুমে এসে কাপড় গুছিয়ে ফেললাম। আমার তো
কাজ শেষ! আর থাকার দরকার নেই।
আংকেল আন্টি, আবির ভাইকে বিদায় দিয়ে
রওনা দিলাম। যদিও তারা আরও একদিন থাকতে
বলছিলো কিন্তু আমি শুনিনাই।
.
আজ থেকে আঁখির নতুন জীবন শুরু! এ এক সম্পুর্ন নতুন
পৃথিবী নতুন জগত!
আজ থেকে ওর সব অস্তিত্ব ওর বরের। যেখানে
আমার কোন হক নেই কোন অধিকার নেই।
মাথাটা ঘুরছে অনেকক্ষণ হলো দাড়িয়েই
আছি। একটু বসা দরকার!
ভাই একটু চাপবেন, বসতাম।
.
.
.
ডায়েরির পাতাটা শেষ হয়ে কাটপাতাতে
চলে এসেছে। কলমের কালিগুলোও কেমন দমে
গেছে।
শেষের পাতাটা অসম্পূর্ণ রেখেই ডায়েরিটা
বন্ধ করে দিলাম!
আজ তিন বছর হয়ে গেল আঁখির বিয়ে হয়েছে।
মেয়েটা হয়তো এতদিনে সাংসারিক হয়ে
গেছে। সংসারের ভাল মন্দ শিখে গেছে।
স্বামী,সংসারের প্রতি ঝুকে পড়েছে।
শুনেছি ওর নাকি একটা মেয়েও হয়েছে। খুব
মিষ্টি একটা মেয়ে! ভাঙগা ভাঙগা গলায়
কথা বলে। একপা দুপা করে হাঁটতে পারে! আম্মু
আম্মু করে ডাকে!
.
মেয়েটা হয়তো এত দিনে ভুলে গেছে আমায়!
ভুলে যাবারই তো কথা ! সময়টাতো আর কম
পেরোই নি। তিন তিনটা বছর চলে গেছে।
কিন্তু আমি কেন ভুলতে পারছিনা। ভুলতে
পারছিনা ওর সাথে ভাল-মন্দ কাটানো
মুহুর্তগুলোকে । সেই এক সাথে বসে আড্ডা
দেয়া,, দই-ফুচকা খাওয়া। হাসি -
ঠাট্টাতামাসায় মেতে থাকা দিন গুলো!
ভালোই তো কাটছিলো দিনগুলো।কিন্তু কেন
হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো? কেন???
আজ সে দিনগুলো সময়ের বিবর্তনে কোথায়
চলে গেল?
সত্যিই মেয়েটার সাথে আর কথা হয়নি, আর
হবেওনা হয়তো কোনদিন, কোন সময়। একদিন
হয়তো আমিও ভুলে যাবো তাকে, অচেনা কোন
এক ক্ষনে মনে পরবেনা তার কথা!
.
ওর দেয়া ডায়েরিটা শেষবারের মত হাত,হ্নদয়
স্বপর্শ করে নিলাম।
দেখে নিলাম ডায়েরির প্রথম পাতায় বড় বড়
করে লেখাটা! " হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে রাজ "
হাতের আঙ্গুল দিয়ে লেখাগুলো ছুয়ে দিলাম।
খুব যত্ন করে লেখা। কত রং করে আঁকানো।
চোখ বেয়ে কিছু পানি গড়িয়ে পড়ল। এটা
হয়তো বন্ধুত্বও হারানো কষ্টের ফল! ভালবাসার
ফল!
ডায়রিটা ছুড়ে মারলাম, ঠিক পুকুরের মাঝ
বরাবর। কেন জানি আজ পাগুলো অবোস হয়ে
আসছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চিৎকার করে
বলতে ইচ্ছা করছে।
আঁখি আমি তোকে খুব ভালবাসিরে খুব
ভালবাসি!
হাটু দুটা ভাজ করে মাটির ওপর ফেলে দিলাম!
আস্তে আস্তে ডায়রিটা তলিয়ে যেতে
থাকলো। সাথে আমার বাধানো সপ্নগুলোও!
জানি তাকে কখনো ফিরে পাবোনা। ফিরে
পাবোনা পেছনের দিনগুলো।
অনেক আগেই তো সব হারিয়ে গেছে। অনেক
আগেই
লাল হয়ে সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিমের
দিকটাই। একটু পড়েই সন্ধা নামবে। মুয়াজ্জিন
আযান দিবে তার কোকিল কণ্ঠে।
আঁখি দোয়া করি তুই সুখে থাকিস শান্তিতে

থাকিস। বর, মেয়ে, সংসার নিয়ে!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top