What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আন্দামানের রহস্যঘেরা নিষিদ্ধ সেন্টিনেল দ্বীপের ইতিকথা (1 Viewer)

SoundTrack

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
530
Messages
13,427
Credits
283,450
Recipe pizza
Loudspeaker
তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে এসেও যে সব স্থান সম্পর্কে আমরা সবাই কমই জানি তারই একটি হল সেন্টিনেল দ্বীপ। এই দ্বীপ এসম্পর্কে এমন তথ্য রয়েছে যা আপনার চিন্তাকে সেই আদিম প্রস্তর যুগের দিকে নিয়ে যাবে। আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে আদিম একটি সমাজের চিত্র। তবে যাওয়া যাক আলোচনায়। সেন্টিনেল দ্বীপটির অবস্থান হল বঙ্গোপসাগরের শেষপ্রান্তে ভারত মহাসাগর এর আয়তন ৭২ বর্গ কি.মি বা ১৮০০ একর । এটি হল আন্দামান দ্বীপপুঞ্জসমুহের একটি দ্বীপ । এই দ্বীপটির মালিকানা কাগজ কলমে ভারতের হাতে । সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হল দ্বীপের অধিবাসী ও তাদের জীবন প্রণালি।

ARNSD_001.png


সেন্টিনেল দ্বীপের অবস্থান, source: Thejrchronicle

সেন্টিনেল দ্বীপে বসবাস করে বলে এখানকার অধিবাসীদের সেন্টিনেল বলা হয় । এদের জীবন প্রণালীতে এখনো কোন ধরনের পরিবর্তন আসেনি , তারা সেই আদিম যুগের মানুষের মত জীবন যাপন করে । তারা বস্ত্র হিসেবে এখনো গাছের ছাল বাকল ও পশুর চামড়া ব্যবহার করে। খাদ্য হিসেবে বন হতে সংগৃহীত ফল- মূল ও শিকার কৃত পশুর মাংস গ্রহণ করে । তারা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ ব্যাবহার করে। অর্থাৎ তাদের কোন কথিত ভাষা নেই ।

ফলে তাদের ভাষা অন্য কারো বোধগম্য নয় । তবে ধারনা করা হয় আন্দামান কোন জনগোষ্ঠীর ভাষারই অপভ্রংশ তাদের এই সাংকেতিক ভাষা।এমন কি তারা আগুন জ্বালাতে পারে না এবং কৃষি কাজের আবিষ্কার করতে পারে নি। তাই তারা কোন প্রকার খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না, সুতরাং তাদের খাদ্যের জন্য একমাত্র ভরসা হল শিকার ভিত্তিক ও সংগ্রহ করা খাদ্য।

ARNSD_002.jpg


একজন সেন্টিনেল অধিবাসী

তাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও তাদের চেহারা সর্ম্পক একজন গবেষক বলেন তাদের অধিকাংশই আফ্রিকান অঞ্চল থেকে এখানে এসেছেন তাই তারা মূলত নিগ্রো । অর্থাৎ তাদের চেহারা কাল চুল কোঁকড়ানো নাক মোটা এবং আচরণ আক্রমনাত্নক। তবে কেউ কেউ মনে করেন তাদের মধ্যে মোগুলয়েড ও রয়েছেন।

তারা বন্য হলেও তাদের মধ্যে সীমিত আকারে পরিবার ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়। তাদের মধ্যে তিন/চার জনের পরিবার ও গোষ্ঠী পরিবারের উপস্থিতি দেখা যায়। তাদের বাসস্থানগুলো লতাপাতা ও ডাল পালা দিয়ে তৈরী।

ARNSD_003.jpg


বাসস্থানের পাশে দাড়িয়ে হেলিকপ্টার কে লক্ষকরে তীর ছুড়ছে কয়েকজন সেন্টিনেল

তাদের সম্পর্কে সর্বপ্রথম ১৮৮০ সালে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি তথ্য পায় তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের কে সভ্য সমাজে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন । এ জন্য ইংরেজরা ৬ জনকে ওই দ্বীপ থেকে নিয়ে আসেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের সকলেই মৃত্যুবরণ করেন। ধারনা করা হয় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম । কারণ তারা সামান্য সর্দি/কাশি – জ্বরের মত সাধারণ রোগেই মারা যায় । তাই অনুমান করা হয় সেখানে তাদের সংখ্যা কমছে। এর পর দীর্ঘদিন তাদের সাথে আর কোন যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক চেষ্টা চালানো হয়নি। কিন্তু এর বহুদিন পর ১৯৬৭ সালে ভারতীয় সরকারের উদ্যোগে তাদের সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা চালানো হয়। তখন দেখা যায় সেখানকার অধিবাসীরা সম্পূর্ণভাবেই বন্য , এবং বাহিরের জগৎ সম্পর্কে অজ্ঞ ও শত্রুভাবাপন্ন। এবং শত্রুকে দমন করার জন্য তীর ধনুক ব্যাবহার করে । ফলে তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্কের নীতি গ্রহণ করা হয় । সুতরাং এর অংশ হিসেবে তাদেরকে খাবার দিয়ে ও অন্যান্য উপহার পাঠিয়ে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হয় । কিন্তু প্রতিউত্তরে তারা গবেষকদের তীর ধনুক ছুড়তে থাকে ,তার উপর ১৯৯০ সালে আন্দামান অভিযানে কয়েকজন প্রাণ হারায় ও নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ফলে তাদের ঐ অভিযান ব্যর্থ হয়।

ARNSD_004.jpg


সেন্টিনেলরা গবেষণা কাজে নিয়োজিতদের লক্ষ্য করে তীর দিয়ে আক্রমণ করছে

কিন্তু তাদের সম্পর্কে আগ্রহ বিন্দুমাত্র কমেনি । তাই ২০০১ সালে ভারত সরকারের সহায়তায় পুনরায় তাদের গণনা কার্য শুরু হয় । কিন্তু তাদের তীব্র বাধার মুখে দ্বীপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেনি । ফলে কৃত্রিম উপগ্রহের দ্বারা ছবি তুলে ও তাদের চলাচল শনাক্ত করে তাদের গণনা কাজ সম্পন্ন করা হয় । এখানে তাদের সংখ্যাকে সর্বনিন্ম ৩৯ জন হতে সর্বোচ্চ ২৫০ জন বলে উল্লেখ করা হয় । তবে কোন কোন গবেষক মনে করেন তাদের সংখ্যা ৫০-৫০০ জন ।

২০০৪ সালে সুনামি হলে অনুমান করা হয় সেন্টিনেল জাতীর সকলে মারা গেছে , কিন্তু পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে তাদের মধ্যে অনেকেই বেচে আছে । ২০০৬ সালে ভারতীয় একদল জেলে ভুল করে সেন্টিনেল দ্বীপে প্রবেশ করে যায় । ফলে দ্বীপের বর্বর সেন্টিনেল তীরন্দাজ বাহিনী দুই জন জেলে কে হত্যা করে । খবর পেয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী হেলিকপ্টার নিয়ে নিহতদের উদ্ধার করতে যায় । কিন্তু বর্বর সেন্টিনেলরা হেলিকপ্টার কে লক্ষ্য করে তীর ছুড়তে থাকে, যার দরুন ওই নিহতদের লাশ সংগ্রহ করা আর সম্ভব হয় নি।

এর পর থেকে সেন্টিনেল দ্বীপের বাহিরে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবেশকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় । যার কারণে এখানে কেউ আর প্রবেশ করতে পারে না । এমন কি তারাও বাহিরে আসে না এবং আসার চেষ্টাও করে না। বর্তমানে তারা ঐ দ্বীপে কার্যত স্বাধীন হিসেবে বসবাস করছে , এবং সেই আদিম প্রস্তর যুগের মতই জীবন যাপন করছে। যদিও দাপ্তরিকভাবে তা ভারতেরই অংশ। কিন্ত তা শুধু নাম মাত্র। অর্থাৎ সেখানে একমাত্র ও একক আধিপত্য সেন্টিনেলদের । তাই এখন প্রশ্ন হল – তারা আর কত দিন এভাবে জীবন যাপন করবে ? কবেই বা তারা সভ্য সমাজের কাতারে আসবে ? নাকি কোনদিনই তারা সভ্য সমাজের আলো দেখবেনা ? বা তাদের ভবিষ্যৎ ই কি? সব কিছুর উত্তরে বলা যায় – এ সব কিছুই নির্ভর করছে তাদের ভাগ্যের উপর।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top