"ফেসবুকিও রম্য"
মূল লেখক : আসিফ রহমান জয়
(লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত)
"আমার ফেসবুক আমি দেখবো, যখন ইচ্ছা তখন দেখবো"-ভোটাধিকারের মতো এটাও নিশ্চই একটা গণতান্ত্রিক অধিকার! আর এই অধিকার ("ফেবুধিকার" হবে নাকি!) নিশ্চই সবারই কম-বেশী চর্চ্চা করা উচিত। তা চর্চ্চা করুন, নিজেরটা দেখুন, একশোবার কেন হাজারবার দেখুন, কে মানা করেছে? কিন্তু অন্যেরটা দেখা নিশ্চই সমীচিন না!
তাহলে খুলেই বলি...
মাঝে মাঝে আমার বাইক নষ্ট হয়। আমি ভীষন রকমের পজিটিভ মানুষ। বাইক নষ্ট হলেই আমার মনে হয়, যাক এই সুযোগে রিক্সায় ওঠা যাবে। ঢাকা শহরে রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানোর মতো মজার আর কিছু নেই। আসলে শুধু ঢাকা শহর না, যেকোন শহরেই রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানো দারুন আনন্দের! সবচেয়ে বেশী আনন্দ হলো, খুলনা শহরে ঘন্টাচুক্তি করে রিক্সায় ঘুরে বেড়ানো! আচ্ছা, এখনো কি খুলনায় ছেলেমেয়েরা ঘন্টাচুক্তি করে রিক্সায় ঘোরাঘুরি করে?
যাহোক, রিক্সায় নাহয় ঘুরলাম কিন্তু রিক্সায় করে তো আর এতো দূরের অফিসে যাওয়া যাবে না? আমার অফিস উত্তরায়, আর বাসা মোহাম্মদপুরে। হরতাল ছাড়া রিক্সা করে পুরোট পথ কখনোই পাড়ি দেওয়া যাবে না, তাছাড়া এর মধ্যে ভিআইপি রোডও আছে। কাজেই হয় বাসে করে অথবা সিএনজি করে আমাকে অফিস যেতে হবে।
সিএনজি তে উঠলেই আমার নিজেকে কেমন যেন খাঁচায় বন্দী লেজবিশিষ্ট আদিমানব মনে হয়! মনে হয়, আমি কোন চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দী হয়ে আছি, আর লোকজন খাঁচার বাইরে থেকেইআমাকে কলাটা, বাদামটা খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে খাঁচা ধরে 'হুপ হুপ' করে হাঁক ছাড়ি। তাছাড়া সিএনজি ড্রাইভাররা এদের ইচ্ছামতো চালায়। যতোই বলি- 'ভাই, আস্তে চালান। বেশী স্পিডে গেলেও আমি কিন্তু একই ভাড়া দেবো।' তা সে ব্যাটা কথা কানেই তোলে না। এর চাইতে বরং বাসে ওঠা অনেক ভালো। সিটিং বাসগুলো বেশ খোলামেলা, ফাঁকা রাস্তা পেলে একটু স্পিডে চালায় কিন্তু নিরাপদ। আমার বাসার সামনে থেকেই অনেকগুলো বাস সরাসরি উত্তরা যায়, লাইন ধরে একবার উঠে পড়লেই হলো।
এই বাসে উঠেই কিঞ্চিৎ বিপত্তিতে পরলাম!
ভিড় ঠেলে বাসে উঠলেই আমার ভানু'র সেই বিখ্যাত কৌতুকের কথা মনে পড়ে যায়। কৌতুকটা বলে ফেলি। প্রাসংগিক বলেই বলছি, কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পারবেন।
"
ভানু একবার কলকাতা ভ্রমনে বেড়িয়ে, ভীড় ঠেলে এক বাসে উঠেছে। সীট পায়নি বলে দাঁড়িয়ে আছে। বাস হঠাৎ ব্রেক চাপতেই ভানু আর তাল সামলাতে না পেরে এক মহিলার কোলে যেয়ে পড়েছে। ভদ্রমহিলাও যথারীতি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেছেন।
ভদ্রমহিলাঃ একি! ছি ছি ছি... আপনি আমার কোলের ওপর এসে পড়লেন!
ভানুঃ (কাঁচুমাচু হয়ে) মাফ করবেন, ইচ্ছা করে তো বসি নাই, ধাক্কা লাইগা বইসা পড়সি।
ভদ্রমহিলাঃ ধাক্কা সামলাতে পারেন না তো বাসে ওঠেন কেন?
ভানুঃ অপরাধ হইসে,মাফ চাই।
ভদ্রমহিলার স্বামীঃ (ক্ষেপে যেয়ে) মাফ চাই বললেই হয়ে গেলো? ধাক্কা লাগলো বলে, একেবারে আমার স্ত্রীর কোলে এসে বসবেন!!
ভানুঃ আইসা বসি নাই, ধাক্কায় বসছি।
ভদ্রমহিলার স্বামীঃ বদমায়েশীর জায়গা পাননি! দেখছেন মশায়রা, কিরকম অসভ্য!!
আশে-পাশের লোকজনও ক্রমশঃ খেপে যাচ্ছে। উপায় না দেখে ভানু বললো-
ভানুঃ এই আমার কথাটা শোনেন। এই আমার নামের কার্ড আছে...নেন। নাম-ঠিকানা সবই দেয়া আছে। আপনার যখন সময়-সুবিধা হইবো, ফাক পাইলেই আমার স্ত্রীর কোলে গিয়া বইসা আইসেন।
"
থিয়েটারের দেবাশীষদা ক্লাস নেওয়ার সময় বার বার বলতেন-
-'অবজারভেশন, অবজারভেশন এবং অবজারভেশন। অবজারভেশন পাওয়ার বাড়াতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। লোকদের দেখতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের আচার-আচরন, তারা কিভাবে কথা বলে, এসব স্টাডি করতে হবে। তাহলেই আপনি শিখবেন, আপনি জানবেন।'
আমি সেই থেকে দেখি। আগে দেখার পাশাপাশি স্টাডিও করতাম। এখন স্টাডি করা বাদ দিয়েছি, কিন্তু দেখাটা ছাড়িনি।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেখেছি, লোকজন বাসে উঠে হালকা গল্প-গুজব করতো, পাশের মানুষটার সাথে টুকটাক কথা বলতো। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, খেলা নিয়ে অপরিচিত, অচেনা লোকজন একে অন্যের সাথে ভালোই আড্ডা দিতো। কেউ কেউ গম্ভীর মুখে পেপার পড়তো। গল্প-গুজবের ফাঁকে গন্তব্য আসলে 'আসি ভাই, আবার দেখা হবে' বলে নেমে যেতো। এখন সবাই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে থাকে। যে যার মতো স্মার্টফোনে ফেসবুক ব্রাউজ করে বা ইউটিউব দেখে, কানে গোজা থাকে হেড ফোন। আমি দেখার কিছু পাই না, আশে-পাশে সব ডিজিটাল মানুষ দেখি।
বাস তখন মীরপুর পেরিয়ে কালশী রোডে। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে বেশ জোরে ছুটছে। বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে খোলা জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকছে। আমি বেশ কিছুক্ষন ধরে আশে-পাশে দেখা বাদ দিয়ে ফেসবুকে মনোনিবেশ করেছি। একের পর এক পোস্ট দেখছি, আর পছন্দসই পোস্টে লাইক দিচ্ছি। তন্ময় হয়ে দেখছিলাম, পড়ছিলাম, লাইক দিচ্ছিলাম। এর মধ্যে একটা পোস্ট দেখলাম, খুব হাসির পোস্ট। এই পোস্টটা বেশ কয়েকদিন ঘুরে-ফিরেই টাইমলাইনে এসেছে। পোস্টের বিষয়বস্তু হলো-একটা ছবি। ছবিতে একটা ছয়-সাত মাস বয়সী ছোট বাচ্চা বেসিনে শুয়ে আছে। বেসিনের কল খোলা, কলের পানিতে বাচ্চার শরীর ভিজে যাচ্ছে। বাচ্চাটা ক্যাপশানে বলছে-'তোমরা কেউ আমার আম্মুকে দেখলে বলো, যে আমি ভিজে যাচ্ছি, আমাকে যেন এখান থেকে নিয়ে যায়। আম্মু ফেসবুকিং করতে করতে আমাকে ভুলেই গেছে' – নেহাতই মজার একটা পোস্ট!
এই পোস্টটা আগেও অনেকেই শেয়ার করেছে। আমি এই পোস্টে আগেও বেশ কয়েকবার লাইক দিয়েছি। আমি লাইক দিতে যেয়েও দিলাম না। পোস্টটা ওপরের দিকে ঠেলে দিতেই আমার পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো-'আহা দিন না ভাই, একটা লাইক দিন...'
আমি চমকে এবং থমকে গেলাম!
চমকে গেলাম এই জন্য যে, আরে কি মুশকিল! ভদ্রলোক দেখি আমার পাশের সীটে বসে থেকে আমার দিকে একেবারে ঝুঁকে এসে আমার ফেসবুক (ব্যক্তিগত সম্পত্তি) দেখছেন! কি আশ্চর্য্য! অন্যের ফেসবুক কেউ এভাবে দেখে!?
থমকে গেলাম এই জন্য যে, হালা দেখসস দেখসস! চুপ থাক! তুই আবার আমারে উপদেশ দ্যাশ কেন? আমার লাইক আমি দেবো যেখানে ইচ্ছা সেখানে দেবো! এইটা আমার আরো একটা গনতান্ত্রিক অধিকার-'লাইকাধিকার!'
আমি মোবাইলটা কোলের ওপর রেখে, মাথাটা একটু নীচু করে চশমার ওপর দিয়ে ভদ্রলোকের দিকে সরাসরি তাকালাম। এটা অনেক প্রাক্টিস করা একটা রি-একশন! সময়-বিশেষে দারুন কাজে দেয়। গম্ভীর মুখে বললাম-
-'সরি, আমাকে কিছু বললেন?'
ভদ্রলোক মাঝবয়সী। মাথার প্রায় পুরোটা জুরেই চকচকে টাক। চোখে একটা বড়সড় চশমা, ছোট ছোট বর্তুলাকার চোখ। নাকটা মুখের চাইতে এক সাইজ বড়। ক্যাজুয়াল চেক শার্ট আর ডিপ কালারের প্যান্ট পড়নে। নিশ্চই আমারই মতোই অফিস যাত্রী।
-'হে হে... পোস্টটা খুব মজার। লাইক দিয়ে দিন।'
আমি গলার স্বর আরো ভারী করে বললাম-
-'আপনি কি এতোক্ষন আমার ফেসবুক দেখছিলেন?'
ভদ্রলোক 'হে হে' করা বাড়িয়ে দিলেন-
-'হে হে...জি...হে হে...।'
-'আমার অনুমতি ছাড়াই দেখছিলেন? উকি মেরে?'
-'জি দেখছিলাম। আমার মোবাইলটার চার্জ নেই তো, তাই আমারটা দেখতে পারছি না।'
এতোক্ষন চমকে আর থমকে ছিলাম, এবার ভড়কে গেলাম! বলে কি এই লোক? মোবাইলে চার্জ নেই বলে সে দিব্ব্যি অন্যের ফেসবুক উকি মেরে দেখবে! ফেসবুক ছাড়া কি সে থাকতেই পারে না? একে তো দেখছি পুরোপুরি ফেসবুকের নেশায় পেয়েছে! নেশার জন্য রাস্তা-ঘাটে ছিনতাই করতে শুনেছি, এওতো অনেকটা তাই দেখছি। 'হিরোইঞ্চি'-র মতো 'ফেবুঞ্চি' নাকি?
আশে-পাশের লোকরাও এখন আমাদের দিকে ফিরে আমাদের কথা শুনছে। আমি গলার স্বর আরো একধাপ চড়ালাম-
-'আপনার মোবাইলে চার্জ নেই বুঝলাম। আপনার জরুরী প্রয়োজন হলে, আপনি আমাকে বলে কিছুক্ষনের জন্য আমার মোবাইল নেন। তারপর আমার মোবাইলে আপনার নিজের ফেসবুক দেখেন। আপনি আমারটা দেখবেন কেন?'
-'আরে নাহ... আমি আপনার মোবাইল নেবো কেন? আর আপনার মোবাইলে আমার পার্সোনাল ফেসবুক খুললে আবার দেখা যাবে, তাড়াহুড়া করে নেমে যাবো, লগ আউট করতে খেয়াল থাকবে না...অসুবিধা না?'
-'ওহো! নিজের একাউন্ট অন্যের মোবাইলে থাকলে অসুবিধা আর উকি মেরে অন্যের ফেসবুক দেখছেন এটা আর অসুবিধা না?'
-'রাগেন কেন ভাই? আমি তো আর আপনার পার্সোনাল জিনিষ দেখতেসি না। পাব্লিক পোস্ট, নিউজফিড, গ্রুপের পোস্টগুলো দেখছিলাম।'
-'ওই মিয়া, না দেখলে বোঝেন কিভাবে কোনটা পারসোনাল আর কোনটা পাবলিক পোস্ট? ইয়ার্কি করেন আমার সাথে? আর আমি কোনটায় লাইক দেবো কি না দেবো এইটা বলার আপনি কে?'
-'না মানে, দেখলাম বেশ কিছু পোস্টে লাইক দিলেন, কিন্তু এইটা চরম হাসির একটা পোস্ট, তাই বলছিলাম...'
তাকিয়ে দেখলাম আমাদের আশে-পাশের লোকজন সব মিটিমিটি হাসছে। ওদের হাসি দেখে আমার রাগ চরমে উঠলো। ধমক দিয়ে বললাম-
-'আপনি কি পাগল না মাথা খারাপ! কি উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন? রাস্তা-ঘাটে ফাইজালামি করেন নাকি?'
-'ভাই রাগ করেন কেন? এই দেখেন আমার মোবাইলে চার্জ নাই। থাকলে এখনই আমার ফেসবুক আপনাকে দেখাতাম। এ আর এমন কি! আচ্ছা, আপনি আমার ফোন নাম্বার রাখেন। সময়-সুযোগ মতো একদিন আসেন, আপনাকে আমার পার্সোনাল ফেসবুক দেখিয়ে দেবো।'
আরে! এযে ভানুর কৌতুকের নতুন ভার্ষন! অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর হতে শুনেছি। আমি এই লোকের কথা শুনে একাধারে রাগান্বিত, শোকাহত এবং হতচকিত হয়ে শেষটায় ফিক করে হেসেই দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, লোকটা পাগল হলেও হতে পারে। আমায় হাসতে দেখে আশে-পাশের লোকজন হো হো করে হেসে দিলো।
আমি হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে বললাম-
-'দিন, আপনার ফোন নাম্বার দিন।'
ভদ্রলোক পকেট থেকে বের করে কার্ড দিলেন। আমি কার্ড দেখে আর একবার চমকে গেলাম! ওরে বাবা, এযে দেখছি রীতিমতো এডভোকেট! কাকরাইলে অফিস। বাসের কন্ডাক্টর সামনে থেকে হাঁক ছাড়লো-'এয়ারপোর্ট কে কে নামবেন? জলদি করেন।'
ভদ্রলোক বললেন-'আমি এয়ারপোর্টেই নামবো। ভাই আসি, কিছু মনে নিয়েন না।'
আমি সরে জায়গা করে দিলাম। ভদ্রলোক দরজার কাছে যেয়ে দাড়ালেন। আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেললো। আমি বললাম-
-'ভাই, নতুন একটা পোস্ট এসেছে এই মাত্র। খুবই মজার। দেখবেন নাকি?'
আমার আশে-পাশের সবাই আবারো হেসে উঠলো। ভদ্রলোক নিজেও হেসে দিয়ে নেমে গেলেন। আমার সামনেই দুইজন তরুনী বসেছিলো। তাদের একজন হেসে গদ গদ হয়ে বললো-'ভাইয়া, আমি দেখতে পারি?'
আরে! এতো ভালো বিপদ! আমার ফেসবুক কি পাবলিক প্রোপার্টি নাকি?
আমি ধমক দিয়ে বললাম-'ম্যাডাম, আপনার কি মনে হয় এখানে কমেডি চলতেসে? নাকি 'ইত্যাদি'র শ্যুটিং হচ্ছে?'
তরুনীটি মিন মিন করে বললো-'না উনি দেখছিলো, এজন্য আমি ভাবলাম মজার কিছু কিনা?'
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তরুনীর জন্য মায়াই লাগলো। বেচারীকে ধমক দেয়া ঠিক হয়নি। তার আর কি দোষ? জাকারবার্গ ভাইজান যে কি এক মজার জিনিষ বানালো!
এতো মজা ক্যারে?
(গল্পের শেষাংশে 'তরুনীর' অংশটুকু একেবারেই বানানো। এটা আমার বউয়ের জন্য এক ধরনের এসিড-টেস্ট। সে ইদানীং আমার লেখা পুরাটা না পড়েই লাইক দেয়। যদি এই লেখাটা পুরা পড়ে, তাহলে অতিঅবশ্যি আমার কান চেপে ধরে জিজ্ঞেস করবে-'এই তরুনী কে ছিলো...বল'। তাহলেই বুঝবো সে পুরোটা পড়েছে। আর কান চেপে না ধরলে, বুঝবো অর্ধেকটা পড়ে বিরক্ত হয়ে লাইক দিয়েছে। কি আর করা, দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওটাই মেনে নিতে হবে। ওই যে বললাম, আমি খুব পজিটিভ ধরনের মানুষ!)
নতুন শব্দঃ ফেবুধিকার, লাইকাধিকার, ফেবুঞ্চি।
(©কপিরাইট)
মূল লেখক : আসিফ রহমান জয়
(লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত)
"আমার ফেসবুক আমি দেখবো, যখন ইচ্ছা তখন দেখবো"-ভোটাধিকারের মতো এটাও নিশ্চই একটা গণতান্ত্রিক অধিকার! আর এই অধিকার ("ফেবুধিকার" হবে নাকি!) নিশ্চই সবারই কম-বেশী চর্চ্চা করা উচিত। তা চর্চ্চা করুন, নিজেরটা দেখুন, একশোবার কেন হাজারবার দেখুন, কে মানা করেছে? কিন্তু অন্যেরটা দেখা নিশ্চই সমীচিন না!
তাহলে খুলেই বলি...
মাঝে মাঝে আমার বাইক নষ্ট হয়। আমি ভীষন রকমের পজিটিভ মানুষ। বাইক নষ্ট হলেই আমার মনে হয়, যাক এই সুযোগে রিক্সায় ওঠা যাবে। ঢাকা শহরে রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানোর মতো মজার আর কিছু নেই। আসলে শুধু ঢাকা শহর না, যেকোন শহরেই রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানো দারুন আনন্দের! সবচেয়ে বেশী আনন্দ হলো, খুলনা শহরে ঘন্টাচুক্তি করে রিক্সায় ঘুরে বেড়ানো! আচ্ছা, এখনো কি খুলনায় ছেলেমেয়েরা ঘন্টাচুক্তি করে রিক্সায় ঘোরাঘুরি করে?
যাহোক, রিক্সায় নাহয় ঘুরলাম কিন্তু রিক্সায় করে তো আর এতো দূরের অফিসে যাওয়া যাবে না? আমার অফিস উত্তরায়, আর বাসা মোহাম্মদপুরে। হরতাল ছাড়া রিক্সা করে পুরোট পথ কখনোই পাড়ি দেওয়া যাবে না, তাছাড়া এর মধ্যে ভিআইপি রোডও আছে। কাজেই হয় বাসে করে অথবা সিএনজি করে আমাকে অফিস যেতে হবে।
সিএনজি তে উঠলেই আমার নিজেকে কেমন যেন খাঁচায় বন্দী লেজবিশিষ্ট আদিমানব মনে হয়! মনে হয়, আমি কোন চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দী হয়ে আছি, আর লোকজন খাঁচার বাইরে থেকেইআমাকে কলাটা, বাদামটা খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে খাঁচা ধরে 'হুপ হুপ' করে হাঁক ছাড়ি। তাছাড়া সিএনজি ড্রাইভাররা এদের ইচ্ছামতো চালায়। যতোই বলি- 'ভাই, আস্তে চালান। বেশী স্পিডে গেলেও আমি কিন্তু একই ভাড়া দেবো।' তা সে ব্যাটা কথা কানেই তোলে না। এর চাইতে বরং বাসে ওঠা অনেক ভালো। সিটিং বাসগুলো বেশ খোলামেলা, ফাঁকা রাস্তা পেলে একটু স্পিডে চালায় কিন্তু নিরাপদ। আমার বাসার সামনে থেকেই অনেকগুলো বাস সরাসরি উত্তরা যায়, লাইন ধরে একবার উঠে পড়লেই হলো।
এই বাসে উঠেই কিঞ্চিৎ বিপত্তিতে পরলাম!
ভিড় ঠেলে বাসে উঠলেই আমার ভানু'র সেই বিখ্যাত কৌতুকের কথা মনে পড়ে যায়। কৌতুকটা বলে ফেলি। প্রাসংগিক বলেই বলছি, কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পারবেন।
"
ভানু একবার কলকাতা ভ্রমনে বেড়িয়ে, ভীড় ঠেলে এক বাসে উঠেছে। সীট পায়নি বলে দাঁড়িয়ে আছে। বাস হঠাৎ ব্রেক চাপতেই ভানু আর তাল সামলাতে না পেরে এক মহিলার কোলে যেয়ে পড়েছে। ভদ্রমহিলাও যথারীতি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেছেন।
ভদ্রমহিলাঃ একি! ছি ছি ছি... আপনি আমার কোলের ওপর এসে পড়লেন!
ভানুঃ (কাঁচুমাচু হয়ে) মাফ করবেন, ইচ্ছা করে তো বসি নাই, ধাক্কা লাইগা বইসা পড়সি।
ভদ্রমহিলাঃ ধাক্কা সামলাতে পারেন না তো বাসে ওঠেন কেন?
ভানুঃ অপরাধ হইসে,মাফ চাই।
ভদ্রমহিলার স্বামীঃ (ক্ষেপে যেয়ে) মাফ চাই বললেই হয়ে গেলো? ধাক্কা লাগলো বলে, একেবারে আমার স্ত্রীর কোলে এসে বসবেন!!
ভানুঃ আইসা বসি নাই, ধাক্কায় বসছি।
ভদ্রমহিলার স্বামীঃ বদমায়েশীর জায়গা পাননি! দেখছেন মশায়রা, কিরকম অসভ্য!!
আশে-পাশের লোকজনও ক্রমশঃ খেপে যাচ্ছে। উপায় না দেখে ভানু বললো-
ভানুঃ এই আমার কথাটা শোনেন। এই আমার নামের কার্ড আছে...নেন। নাম-ঠিকানা সবই দেয়া আছে। আপনার যখন সময়-সুবিধা হইবো, ফাক পাইলেই আমার স্ত্রীর কোলে গিয়া বইসা আইসেন।
"
থিয়েটারের দেবাশীষদা ক্লাস নেওয়ার সময় বার বার বলতেন-
-'অবজারভেশন, অবজারভেশন এবং অবজারভেশন। অবজারভেশন পাওয়ার বাড়াতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। লোকদের দেখতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের আচার-আচরন, তারা কিভাবে কথা বলে, এসব স্টাডি করতে হবে। তাহলেই আপনি শিখবেন, আপনি জানবেন।'
আমি সেই থেকে দেখি। আগে দেখার পাশাপাশি স্টাডিও করতাম। এখন স্টাডি করা বাদ দিয়েছি, কিন্তু দেখাটা ছাড়িনি।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেখেছি, লোকজন বাসে উঠে হালকা গল্প-গুজব করতো, পাশের মানুষটার সাথে টুকটাক কথা বলতো। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, খেলা নিয়ে অপরিচিত, অচেনা লোকজন একে অন্যের সাথে ভালোই আড্ডা দিতো। কেউ কেউ গম্ভীর মুখে পেপার পড়তো। গল্প-গুজবের ফাঁকে গন্তব্য আসলে 'আসি ভাই, আবার দেখা হবে' বলে নেমে যেতো। এখন সবাই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে থাকে। যে যার মতো স্মার্টফোনে ফেসবুক ব্রাউজ করে বা ইউটিউব দেখে, কানে গোজা থাকে হেড ফোন। আমি দেখার কিছু পাই না, আশে-পাশে সব ডিজিটাল মানুষ দেখি।
বাস তখন মীরপুর পেরিয়ে কালশী রোডে। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে বেশ জোরে ছুটছে। বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে খোলা জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকছে। আমি বেশ কিছুক্ষন ধরে আশে-পাশে দেখা বাদ দিয়ে ফেসবুকে মনোনিবেশ করেছি। একের পর এক পোস্ট দেখছি, আর পছন্দসই পোস্টে লাইক দিচ্ছি। তন্ময় হয়ে দেখছিলাম, পড়ছিলাম, লাইক দিচ্ছিলাম। এর মধ্যে একটা পোস্ট দেখলাম, খুব হাসির পোস্ট। এই পোস্টটা বেশ কয়েকদিন ঘুরে-ফিরেই টাইমলাইনে এসেছে। পোস্টের বিষয়বস্তু হলো-একটা ছবি। ছবিতে একটা ছয়-সাত মাস বয়সী ছোট বাচ্চা বেসিনে শুয়ে আছে। বেসিনের কল খোলা, কলের পানিতে বাচ্চার শরীর ভিজে যাচ্ছে। বাচ্চাটা ক্যাপশানে বলছে-'তোমরা কেউ আমার আম্মুকে দেখলে বলো, যে আমি ভিজে যাচ্ছি, আমাকে যেন এখান থেকে নিয়ে যায়। আম্মু ফেসবুকিং করতে করতে আমাকে ভুলেই গেছে' – নেহাতই মজার একটা পোস্ট!
এই পোস্টটা আগেও অনেকেই শেয়ার করেছে। আমি এই পোস্টে আগেও বেশ কয়েকবার লাইক দিয়েছি। আমি লাইক দিতে যেয়েও দিলাম না। পোস্টটা ওপরের দিকে ঠেলে দিতেই আমার পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো-'আহা দিন না ভাই, একটা লাইক দিন...'
আমি চমকে এবং থমকে গেলাম!
চমকে গেলাম এই জন্য যে, আরে কি মুশকিল! ভদ্রলোক দেখি আমার পাশের সীটে বসে থেকে আমার দিকে একেবারে ঝুঁকে এসে আমার ফেসবুক (ব্যক্তিগত সম্পত্তি) দেখছেন! কি আশ্চর্য্য! অন্যের ফেসবুক কেউ এভাবে দেখে!?
থমকে গেলাম এই জন্য যে, হালা দেখসস দেখসস! চুপ থাক! তুই আবার আমারে উপদেশ দ্যাশ কেন? আমার লাইক আমি দেবো যেখানে ইচ্ছা সেখানে দেবো! এইটা আমার আরো একটা গনতান্ত্রিক অধিকার-'লাইকাধিকার!'
আমি মোবাইলটা কোলের ওপর রেখে, মাথাটা একটু নীচু করে চশমার ওপর দিয়ে ভদ্রলোকের দিকে সরাসরি তাকালাম। এটা অনেক প্রাক্টিস করা একটা রি-একশন! সময়-বিশেষে দারুন কাজে দেয়। গম্ভীর মুখে বললাম-
-'সরি, আমাকে কিছু বললেন?'
ভদ্রলোক মাঝবয়সী। মাথার প্রায় পুরোটা জুরেই চকচকে টাক। চোখে একটা বড়সড় চশমা, ছোট ছোট বর্তুলাকার চোখ। নাকটা মুখের চাইতে এক সাইজ বড়। ক্যাজুয়াল চেক শার্ট আর ডিপ কালারের প্যান্ট পড়নে। নিশ্চই আমারই মতোই অফিস যাত্রী।
-'হে হে... পোস্টটা খুব মজার। লাইক দিয়ে দিন।'
আমি গলার স্বর আরো ভারী করে বললাম-
-'আপনি কি এতোক্ষন আমার ফেসবুক দেখছিলেন?'
ভদ্রলোক 'হে হে' করা বাড়িয়ে দিলেন-
-'হে হে...জি...হে হে...।'
-'আমার অনুমতি ছাড়াই দেখছিলেন? উকি মেরে?'
-'জি দেখছিলাম। আমার মোবাইলটার চার্জ নেই তো, তাই আমারটা দেখতে পারছি না।'
এতোক্ষন চমকে আর থমকে ছিলাম, এবার ভড়কে গেলাম! বলে কি এই লোক? মোবাইলে চার্জ নেই বলে সে দিব্ব্যি অন্যের ফেসবুক উকি মেরে দেখবে! ফেসবুক ছাড়া কি সে থাকতেই পারে না? একে তো দেখছি পুরোপুরি ফেসবুকের নেশায় পেয়েছে! নেশার জন্য রাস্তা-ঘাটে ছিনতাই করতে শুনেছি, এওতো অনেকটা তাই দেখছি। 'হিরোইঞ্চি'-র মতো 'ফেবুঞ্চি' নাকি?
আশে-পাশের লোকরাও এখন আমাদের দিকে ফিরে আমাদের কথা শুনছে। আমি গলার স্বর আরো একধাপ চড়ালাম-
-'আপনার মোবাইলে চার্জ নেই বুঝলাম। আপনার জরুরী প্রয়োজন হলে, আপনি আমাকে বলে কিছুক্ষনের জন্য আমার মোবাইল নেন। তারপর আমার মোবাইলে আপনার নিজের ফেসবুক দেখেন। আপনি আমারটা দেখবেন কেন?'
-'আরে নাহ... আমি আপনার মোবাইল নেবো কেন? আর আপনার মোবাইলে আমার পার্সোনাল ফেসবুক খুললে আবার দেখা যাবে, তাড়াহুড়া করে নেমে যাবো, লগ আউট করতে খেয়াল থাকবে না...অসুবিধা না?'
-'ওহো! নিজের একাউন্ট অন্যের মোবাইলে থাকলে অসুবিধা আর উকি মেরে অন্যের ফেসবুক দেখছেন এটা আর অসুবিধা না?'
-'রাগেন কেন ভাই? আমি তো আর আপনার পার্সোনাল জিনিষ দেখতেসি না। পাব্লিক পোস্ট, নিউজফিড, গ্রুপের পোস্টগুলো দেখছিলাম।'
-'ওই মিয়া, না দেখলে বোঝেন কিভাবে কোনটা পারসোনাল আর কোনটা পাবলিক পোস্ট? ইয়ার্কি করেন আমার সাথে? আর আমি কোনটায় লাইক দেবো কি না দেবো এইটা বলার আপনি কে?'
-'না মানে, দেখলাম বেশ কিছু পোস্টে লাইক দিলেন, কিন্তু এইটা চরম হাসির একটা পোস্ট, তাই বলছিলাম...'
তাকিয়ে দেখলাম আমাদের আশে-পাশের লোকজন সব মিটিমিটি হাসছে। ওদের হাসি দেখে আমার রাগ চরমে উঠলো। ধমক দিয়ে বললাম-
-'আপনি কি পাগল না মাথা খারাপ! কি উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন? রাস্তা-ঘাটে ফাইজালামি করেন নাকি?'
-'ভাই রাগ করেন কেন? এই দেখেন আমার মোবাইলে চার্জ নাই। থাকলে এখনই আমার ফেসবুক আপনাকে দেখাতাম। এ আর এমন কি! আচ্ছা, আপনি আমার ফোন নাম্বার রাখেন। সময়-সুযোগ মতো একদিন আসেন, আপনাকে আমার পার্সোনাল ফেসবুক দেখিয়ে দেবো।'
আরে! এযে ভানুর কৌতুকের নতুন ভার্ষন! অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর হতে শুনেছি। আমি এই লোকের কথা শুনে একাধারে রাগান্বিত, শোকাহত এবং হতচকিত হয়ে শেষটায় ফিক করে হেসেই দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, লোকটা পাগল হলেও হতে পারে। আমায় হাসতে দেখে আশে-পাশের লোকজন হো হো করে হেসে দিলো।
আমি হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে বললাম-
-'দিন, আপনার ফোন নাম্বার দিন।'
ভদ্রলোক পকেট থেকে বের করে কার্ড দিলেন। আমি কার্ড দেখে আর একবার চমকে গেলাম! ওরে বাবা, এযে দেখছি রীতিমতো এডভোকেট! কাকরাইলে অফিস। বাসের কন্ডাক্টর সামনে থেকে হাঁক ছাড়লো-'এয়ারপোর্ট কে কে নামবেন? জলদি করেন।'
ভদ্রলোক বললেন-'আমি এয়ারপোর্টেই নামবো। ভাই আসি, কিছু মনে নিয়েন না।'
আমি সরে জায়গা করে দিলাম। ভদ্রলোক দরজার কাছে যেয়ে দাড়ালেন। আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেললো। আমি বললাম-
-'ভাই, নতুন একটা পোস্ট এসেছে এই মাত্র। খুবই মজার। দেখবেন নাকি?'
আমার আশে-পাশের সবাই আবারো হেসে উঠলো। ভদ্রলোক নিজেও হেসে দিয়ে নেমে গেলেন। আমার সামনেই দুইজন তরুনী বসেছিলো। তাদের একজন হেসে গদ গদ হয়ে বললো-'ভাইয়া, আমি দেখতে পারি?'
আরে! এতো ভালো বিপদ! আমার ফেসবুক কি পাবলিক প্রোপার্টি নাকি?
আমি ধমক দিয়ে বললাম-'ম্যাডাম, আপনার কি মনে হয় এখানে কমেডি চলতেসে? নাকি 'ইত্যাদি'র শ্যুটিং হচ্ছে?'
তরুনীটি মিন মিন করে বললো-'না উনি দেখছিলো, এজন্য আমি ভাবলাম মজার কিছু কিনা?'
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তরুনীর জন্য মায়াই লাগলো। বেচারীকে ধমক দেয়া ঠিক হয়নি। তার আর কি দোষ? জাকারবার্গ ভাইজান যে কি এক মজার জিনিষ বানালো!
এতো মজা ক্যারে?
(গল্পের শেষাংশে 'তরুনীর' অংশটুকু একেবারেই বানানো। এটা আমার বউয়ের জন্য এক ধরনের এসিড-টেস্ট। সে ইদানীং আমার লেখা পুরাটা না পড়েই লাইক দেয়। যদি এই লেখাটা পুরা পড়ে, তাহলে অতিঅবশ্যি আমার কান চেপে ধরে জিজ্ঞেস করবে-'এই তরুনী কে ছিলো...বল'। তাহলেই বুঝবো সে পুরোটা পড়েছে। আর কান চেপে না ধরলে, বুঝবো অর্ধেকটা পড়ে বিরক্ত হয়ে লাইক দিয়েছে। কি আর করা, দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওটাই মেনে নিতে হবে। ওই যে বললাম, আমি খুব পজিটিভ ধরনের মানুষ!)
নতুন শব্দঃ ফেবুধিকার, লাইকাধিকার, ফেবুঞ্চি।
(©কপিরাইট)