What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected আলোর দেখা ©রূপান্বিতা (2 Viewers)

©রূপান্বিতা
'ধুত্তোর' বলে ল্যাপটপ টা শাট ডাউন করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল রন।
আজকাল কিচ্ছু ভালো লাগে না ওর। ওদের অফিস মাল্টিন্যাশনাল, তাই এখনও ওয়ার্ক ফ্রম হোম ই চালিয়ে যাচ্ছে। আর রোজ একটানা বসে থেকে থেকে আর ভালো লাগছে না ওর। একা থাকে, বাবা -মা শিলিগুড়িতে...কতদিন বাড়ি যাওয়া হয় নি! তারমধ্যেই কিছুদিন আগে মেইল পেয়েছে যে ওদের স্যালারি কমানো হচ্ছে বর্তমান আর্থিক মন্দার জন্য। কিন্তু খরচ তো কমে নি! আর এই ছয় - সাত মাস হয়ে গেল, বাড়িতে বন্দী...কোত্থাও বেড়াতেও যায় নি...এমন কি বাড়িও যেতে পারে নি! সেই রন, যার কিনা 'পায়ের তলায় সর্ষে'। এইসব ভেবেই খুব বিরক্ত লাগে ওর। এই একটা ছাতার মাথার ভাইরাস গোটা পৃথিবীকে শেষ করে দিল!
ভাবতে ভাবতে জানলার কাছে এসে দাঁড়ালো ও। আজকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে। দু একটা বাড়িতে শাঁখ বাজার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। শাঁখ বাজার শব্দ শুনেই মন টা আরও খারাপ হয়ে গেল ওর। পুজোতে হিমাচল প্রদেশ যাবার কথা ছিল ওর! ব্যাটা করোনা! নাহ্, জীবন বড্ড বাজে!
বিরক্তিতে মাথা নাড়ছে, হঠাৎ খোলা জানলা দিয়ে চোখ পড়ল পাশের ফ্ল্যাটের দিকে। একজন বয়স্ক মানুষ আর ওঁর মেয়ে থাকেন ওই ফ্ল্যাটে। মেয়েটাও বোধহয় ওর মতোই ওরার্ক ফ্রম হোম করছে। তবে বাজার -হাট সব ই একা হাতেই করে। আর সারাদিন চড়া গলায় বকবক করে। স্পষ্ট বোঝা যায় না কী বলছে, কিন্তু গলার আওয়াজটা পাওয়া যায়। আর রাবনের মতো হা হা করে হাসির শব্দ ও পাওয়া যায়। কিসের এতো হাসি আর মজা, কে জানে!
বেজার মুখে আবার চেয়ারে বসতে যাবে, দেখে কিছু লাইট জ্বলে উঠল বাইরে। পুজোর লাইট। বোধহয় চেক করে দেখছে লাইট জ্বলছে কিনা ঠিক ভাবে। প্রতিবার ই করে। তবু, ওই হলুদ হলুদ বাল্বের চেইনের মধ্যে একটা আলাদা মায়া আছে! ছোটবেলা আছে! তাই আবার জানলার কাছে এলো রন। এক্ষুণি নিভিয়ে দেবে লাইট...তার আগে একটু দেখে নেওয়া আর কি!
হঠাৎ দেখে, পাশের ফ্ল্যাটটির ব্যালকনিতে সেই মেয়েটা...চিৎকার করে বলে উঠল, "বাবা, এখানেই এসো, লাইট চেক করছে ক্লাব থেকে, নিভিয়ে দেবার আগেই এখানে কেক টা কেটে ফেলি.."
বলতে বলতেই মেয়েটির বাবা এসে গেলেন। আর মেয়েটি একটা ছোট্ট টুলের ওপর একটা আরো ছোট্ট প্লেট রাখল।
কেক! মানে জন্মদিন বোধহয়। যদিও ওঁদের সেভাবে চেনে না, কিন্তু জন্মদিন হলে উইশ করা উচিৎ... তাই একটু অপেক্ষা করে রন। আর, ওই হলুদ আলোতে বাবা - মেয়ের হাসিমুখ দেখতেও ভালো লাগছিল খুব। বাবা - মাকে মিস করছিল। নাহ্ ট্রেন না রেগুলার হলেও বাসে করেই চলে যাবে ও শিলিগুড়ি... চার মাস হয়ে গেল বাড়ি যায় নি!
দুজনের সন্মিলিত হাসির মধ্যেই মেয়েটির চোখ পড়ল রনের দিকে। খানিকটা বাধ্য হয়েই ও বলে উঠল "হ্যাপি বার্থডে"। বাবা না মেয়ে, কার বার্থডে কে জানে...যার জন্মদিন সে ই "থ্যাংকইউ" বলবে নিশ্চয়ই!
মেয়েটি ওর কথা শুনে একটু অবাক হয়েই তাকাল ওর দিকে। তারপর মুচকি হেসে বলল "না, না...আমাদের কারও জন্মদিন না...আসলে আমরা রোজ ই বেঁচে থাকা সেলিব্রেট করি। আর সেজন্য, সেদিনের জন্য, একটা না একটা কারণ খুঁজে বের করে নিই। যেমন - কাল আমি একটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছিলাম না অনেকদিন ধরে, সেটা খুঁজে পেয়েছি, তাই সেলিব্রেট করেছি...তেমনি আর কি! রোজ বিকেলের চা - জলখাবার খাই। আজ কেক বানিয়েছি..."।
ইন্টারেস্টিং তো! বেঁচে থাকার উদযাপন!
নিজের অজান্তেই ও জিজ্ঞেস করে ফেলল "আজ কি সেলিব্রেট করছেন!"
"আজ? আজ তো দারুণ ভালো একটা খবর আছে...সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে...স্থিতিশীল আছেন উনি... এরচেয়ে বেশি আনন্দের কি হতে পারে, বলুন?" হাসতে হাসতে বলল মেয়েটি।
তক্ষুণি ঝপ করে আলো টা নিভে গেল। চেক করা শেষ। আবার বোধহয় ঠিক পুজোর সময়েই জ্বালাবে।
চোখটা বন্ধ করে ফেলল রন।
পাশের ব্যালকনিতে দুজন মানুষ তখনও হাসছেন, কথা বলছেন।
বেঁচে থাকা, ভালো থাকা উদযাপন করছেন!
"আমাকে কেকের ভাগ দেবেন না? আমিও সেলিব্রেট করতে চাই, আপনাদের সাথে..." জোরে বলে উঠল রন।
"নিশ্চয়ই...আসুন না প্লিজ..." হেসে বলল মেয়েটি...হাজার ওয়াটের আলো সেই হাসিতে...
ঝটপট চটি পরছিল রন। তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
কালো মনে আলোর দেখা পেয়েছে যে!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top