ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আজ আবার মাঠে নামছে বাংলাদেশ। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে সন্ধ্যা ৭টায় স্বাগতিকদের মুখোমুখি কৃষ্ণা-স্বপ্নারা। গত আগস্টে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে থিম্পুতে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এবার তা পুষিয়ে নিতে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের শিরোপা জয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল।
গ্রুপ পর্বের খেলায় পাকিস্তানকে ১৭-০ গোলে হারিয়ে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশের মেয়েরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২ গোলে জয় পেয়েছিল বি গ্রুপের আরেক দল নেপালও। বাকি ছিল দুদলের গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াই। সেই লড়াইয়েও বাংলাদেশ জয় পায় ২-১ গোলে। অবশ্য ম্যাচে একটি পেনাল্টি মিস করে বাংলাদেশের মাসুরা। বাংলাদেশের গোল দুটিও হয় ম্যাচের প্রথমার্ধে। যোগ করা সময়ে একটি গোল শোধ করে নেপাল। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম গোল করেন পাকিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ সাত গোল করা সিরাত জাহান স্বপ্না। অন্যটি এসেছে কৃষ্ণা রানী সরকারের পা থেকে।
অন্যদিকে 'এ' গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভারতও সেমিফাইনালে উঠেছে। মালদ্বীপকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ভুটান।
গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত ফুটবল নৈপুণ্য উপহার দেয়। ম্যাচের ১৬ মিনিটে স্বপ্নার গোলে লিডও পায় তারা। ম্যাচের ৩২ মিনিটে কৃষ্ণা রানীর দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। গোলরক্ষক রূপনা চাকমার পা থেকে 'হাই ভলি'তে উড়ে আসা বল সিরাত জাহান স্বপ্নাকেও খুঁজে নিতে পারত। কিন্তু সেখানে উপস্থিত কৃষ্ণা। হাওয়ায় ভেসে আসা বল নিজেদের অ্যাটাকিং থার্ডের অনেক পেছনে পড়ল। নেপাল ডিফেন্ডারদের পেছন থেকে বের হয়ে গতিতে পেছনে ফেলে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়ে বক্সে ঢুকে ভলিতে বল জালে পাঠান। গোলরক্ষক থেকে কৃষ্ণা গোলের আগ পর্যন্ত মাত্র দুই টাচ, দুর্দান্ত গোলটি করেই আনন্দে মাটিতে শুয়ে পড়েন টাঙ্গাইলের মেয়ে কৃষ্ণা।
২০১৬ সালেই বাংলাদেশ চিনেছিল তাকে। হাসিমুখে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ তছনছ করতে জুড়ি ছিল না তার। নেতৃত্বগুণও ছিল চমৎকার। ফলে ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এশিয়ার সেরা আটে নাম লিখিয়েছিল বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে ৮ গোল করে হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।
গত বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান সেরা আটের লড়াইয়ে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন কৃষ্ণা। পরেরবার আলোচনায় এসেছেন তামিলনাড়–র ক্লাব সিথু এফসির হয়ে ভারতের উইমেন্স লিগে খেলার সুযোগ পাওয়ায়। যদিও ভারতীয় ক্লাবটির হয়ে মাঠে নামার তেমন সুযোগ হয়নি এই গোলমেশিনের।
ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কোচ রব্বানী দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, ফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়েই আমরা দেশ থেকে এসেছি, আমাদের মেয়েরা সবাই খুব ভালো আছে। আশাকরি আমরা সেমিফাইনালে জয়লাভ করার জন্যই মাঠে নামব এবং আমাদের মেয়েরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে। ইনশা'আল্লাহ আমরা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ব।
অন্যদিকে অধিনায়ক মৌসুমী বলেছেন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আর কালকে (আজ) যেহেতু সেমিফাইনাল খেলা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমরা যদি উইন করতে পারি তাহলে আমরা ফাইনাল খেলব। আমরা অবশ্যই জেতার মনোভাব নিয়ে মাঠে নামব, মেয়েরা যদি তাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারে তাহলে আমরা উইন করে ইনশা'আল্লাহ ফাইনাল খেলব।