ফরাসী মুভি ইন্টাচেইবল (Intouchable,2011) তে ফিলিপ একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি ও সংস্কৃতিমনা, কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী। আধুনিক চিত্রকর্মের প্রদর্শনী থেকে চড়া দামে ফিলিপকে একটি ছবি কিনতে দেখে সহযোগী গরীব ড্রিস অবাক হয়ে যায়। ড্রিস দাবি করে, ফিলিপ ঠকছে সে এর চেয়ে ভাল ছবি আঁকতে পারে। ফিলিপ হেসে উড়িয়ে দিলে, ড্রিস গোঁ ধরে সেও ছবি আঁকবে। এবং সত্যিই আধুনিক দূর্বোধ্য একটি ছবি এঁকে ফেলে। পরে বাজারে ভাল দামে ছবিটি বিক্রিও করে দেয় ফিলিপ।
ফরাসী মুভি ইন্টাচেইবল - Source: T3.gstatic
এখন একটি প্রশ্ন জাগে চিত্রকর্মের মূল্যায়ন কীভাবে হয়? দক্ষ হাতের শিল্প-কর্ম না অদক্ষ হাতের তার পার্থক্য করাও দূরহ হয়ে উঠেছে আধুনিক চিত্রশিল্পে। বিশেষ করে অ্যাবস্ট্রাক্টিসিজম, সুরিয়ালিজম এবং প্রিমিটিভ ধাঁচের ছবিগুলোর কোন সঠিক প্রোপর্শন, অবয়ব, রং এর যথোপযুক্ত ব্যবহার না থাকায় যে সে এঁকে ফেলতে পারে। যেমনটা সিনেমার আনাঢ়ি ড্রিসের করা চিত্রকর্ম। যেহেতু বোধগম্যতা আধুনিক চিত্রশিল্পীগণ থোড়াই কেয়ার করেন, এবং শিল্প কর্মের অর্থবাচকতা শিল্পী মনের একান্ত ব্যক্তিগত হওয়ায় অন্য কারও মূল্যায়ন যথেষ্ঠ হচ্ছে না। তাই আধুনিক শিল্পে আনাড়ি শিল্পের শিল্প-কর্মের মধ্যে তুলনামূলক মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে মূল্যায়নের প্রশ্নে শিল্প বিশ্লেষকগণ একটু নড়ে-চড়ে বসছেন। কোন শিল্পকে খারাপ বলব আর কোনটিকে ভাল বলব তার নীতি নির্ধারণে বিশ্লেষকগণ যারপরনাই হিমশিম খাচ্ছেন।
ভাল কাজ ও খারাপ কাজ বিচারের মানদন্ড নির্ধারণে বিশ্লেষকগণ এমন সব ফ্যাক্টর হাজির করেছেন যেগুলো দ্বারা অতীতের শিল্পকে ভাল বা মন্দ বলা যায়। এক্ষেত্রে বিশ্লেষকগণ পরামর্শ দিচ্ছেন, অতীতের শিল্পগুলোকে দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করে ভাল শিল্প ও খারাপ শিল্পের চিত্রকর্মকে আলাদা আলাদা শ্রেণি বিন্যাস করা যায় এবং কীসের ভিত্তিতে এ শ্রেণি বিন্যাস করা হল তা স্বচ্ছতার সাথে নোট রাখা যেতে পারে। বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত মানদন্ড এখন বর্তমান শিল্পের উপর আরোপ করার মাধ্যমে শিল্প মূল্যায়নের মাপকাঠি তৈরী করা যেতে পারে এবং সে মূলনীতিগুলো পরবর্তী শিল্পীগণও উন্নত মানের শিল্প উৎপাদনে অনুসরণ করতে আগ্রহী হতে পারে।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ শিল্পী ও বিশ্লেষকদের নিয়ে একটি বিচারক দল তৈরি করা যেতে পারে। যারা ছবিগুলোর রেটিং তৈরি করবেন। এমনটাই পরামর্শ দিচ্ছেন অ্যামেরিকান মনোবিজ্ঞানী জেমস ম্যাক্কিন ক্যাটেল। তিনি মনে করেন, "অভিজ্ঞ বিচারক দ্বারা শিল্প মূল্যায়ন করা ছাড়া মানুষের শিল্প-কর্ম মূল্যায়ন করা সম্ভব না।"১
এমন সাধারণ মানদন্ডকে অবশ্যই অবজেক্টিভ বা বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। কারণ ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি দিয়ে শিল্প মূল্যায়ন করলে মূল্যায়নকারী পক্ষপাত দুষ্টে ভোগতে পারেন। কিন্তু শিল্পে যে বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন খাটে না! ব্যক্তির একান্ত অনুভূতির প্রকাশ যেখানে শিল্প, সে শিল্প কীভাবে বস্তুনিষ্ঠ বস্তুগত দক্ষতা বা স্কিল দিয়ে পরিমাপ করা যাবে! এ ক্ষেত্রে ক্যাটেলের দক্ষ শিল্পীদের পরামর্শকদের বিচার বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
আবার শিল্পের দার্শনিক বিচার কম হয় নি। একদল দার্শনিক মনে করেন শিল্পকে অবশ্যই সুন্দরের ধারণার বাস্তব প্রকাশ হতে হবে। প্লেটো, অ্যারিস্টাটল, প্লটিনাস সহ মধ্যযুগীও দার্শনিকদের এমনি মত। এদের মধ্যে সানতাইয়ানা তিনটি নীতির কথা বলেছেন,
(১) শিল্পে প্রাণবন্ততা ও গভীরতার অনুভূতির ছাপ থাকতে হবে
(২) পবিত্রতা ও অভিজ্ঞতার দৃঢ়তা থাকতে হবে
(৩) প্রাসঙ্গিকতা ও বৃহৎ পরিসরে উপযোগীতা থাকতে হবে।২
শিল্প মূল্যায়নে এর বাজার মূল্য বিবেচনায় আনা যেতে পারে বলে অনেকে অভিমত দেন। এক্ষেত্রে সমস্যাও আছে, দামী শিল্প-কর্মই যে উন্নত মানের শিল্প হবে তার কী গ্যারান্টি আছে। বাজারের পণ্যের মূল্য পণ্যের গুণগত মান ছাড়াও চাহিদা, দুষ্প্রাপ্যতা, ক্রেতার ইচ্ছা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।