মা কথাটি খুবই ছোট্ট কিন্তু এর গুরুত্ব অপরীসিম। আমরা এই সবাই এই দুনিয়ার আলো দেখতে পাই এই মায়ের জন্য। একটা মা যে কত কষ্ট করে তার সন্তানকে মানুষ করেন তার কোন হিসেব বা তুলনা নেই। দীর্ঘ নয় মাস দশ দিন গর্ভে থেকে একটি সন্তান ভুমিষ্ট হয়। এই এতটা দিন একটা মা অনেক কষ্ট করে সেই সন্তানকে পেটের মধ্যে লালন করে।
এসব সব কিছুই বুঝেছি যখন আমার স্ত্রী সন্তান গর্ভে ধারণ করেন। আমাদের কোল জুড়ে এলো একটা সন্তান। তাকে আমরা মানুষ করতে থাকলাম। ওহ! সে কত কষ্ট। সেটা শুধু বাবা মাই বোঝে। আজ যখন বাবা হয়েছি এখন বুঝতে পারি একটা মা অথবা একটা বাবা কতটা কষ্ট করে তার সন্তানকে মানুষ করে। এটা যতটা কষ্টের আবার ততটা আনন্দের। এখন আমার সে সন্তান হাঁটে, দৌড়ায়, আমি অফিসে আসলে ফোন করে আমার খবর নেয়, আমার কোলে শুয়ে থাকে, আমার কাছে গল্প শোনে। কত আনন্দের!!
আমি কয়েক বছর আগে একটা গল্প শুনেছিলাম এবং আরো শুনেছিলাম যে সেটা সত্য ছিল। ঘটনাটি সম্ভবতঃ মধ্যপ্রাচ্যে কোন এক দেশের।
এক স্বামীহারা মহিলা তার সন্তানকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করে। ছেলেটি দিনে দিনে বড় হয়। স্কুলে পড়ে, কলেজে পড়ে। এভাবে সে একদিন অনেক বিদ্বান হয়। স্কুলে পড়া অবস্থায় মা প্রতিদিন তাকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতো। মহিলাটির একটি চোখ ছিল অন্ধ। সে এক চোখে দেখতো। তো স্কুলের অন্যান্য ছাত্ররা সেই ছেলেটিকে তিরোষ্কার করতো যে তার মা দেখতে অসুন্দর বলে। অন্ধ বলে। এর ফলে ছেলেটি খুব লজ্জা ফিল করতো। মা যাতে স্কুলে না আসে ছেলেটি তাই চাইতো। এভাবে ধীরে ধীরে মায়ের প্রতি ছেলেটির ঘৃণা জন্মাতে থাকে। কালে কালে তা প্রকট আকার ধারন করে।
এর অনেকদিন পর ছেলেটি বিদেশে চলে যায় চাকুরীর সন্ধানে। মায়ের সাথে কোন যোগাযোগ রাখে না। সেখানে সে বিয়ে করে ভালো চাকুরী করে এবং তার সন্তান হয়। তাদের নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। মায়ের কোন খোঁজ খবর রাখে না। জানেও না যে, মা বেঁচে আছে না মারা গেছে।
অনেকদিন পর ছেলেটির মা অনেক কষ্ট করে ছেলেটির ঠিকানা যোগাড় করে এবং সেই ঠিকানা মোতাবেক সন্ধানে যায়। মহিলাটি ছেলের বাড়ীতে যখন দরজা নক করে, তখন তার নাতী নাতনী দরজা খুলে দেয় এবং হাসাহাসি করতে থাকে অন্ধ দেখে। এমতাবস্থায় ছেলেটি বাহিরে এসে তার মাকে তিরষ্কার করে, চলে যেতে বলে। এতে মা খুব কষ্ট পায় এবং চলে যায় তার নিজের ঠিকানায়।
এর বেশ কিছুদিন পর ছেলেটি কি যেন এককাজে তার জন্মভুমিতে যায়। তখন সেই এলাকার লোকজন তাকে বলে যে কিছুদিন আগে তোমার মা মারা গেছেন তোমাকে একটা চিঠি লিখে গেছেন। সেই চিঠিটা ছেলেটি হাতে নিয়ে পড়ে আর অনুশোচনা করতে থাকে।
চিঠিতে লেখা ছিল----
খোকা, "আমি তোমার বাসায় গিয়েছিলাম তুমি কেমন সুখে আছো এটা দেখতে। আমার খুব ভাল লেগেছিল যে তুমি ভালো আছো। আমার মনে কোন দুঃখ নেই। তবে খোকা, তোমাকে একটা কথা আমি জানানো প্রয়োজন মনে করছি। খুব ছোটবেলায় একটা মারাত্বক দুর্ঘটনায় তুমি একটা চোখ হারিয়েছিলে। তোমার একটা চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমি আমার একটা চোখ দিয়ে দেই তোমাকে। আমার ভাবতে খুব ভাল লাগছে যে, আমার একটা চোখ দিয়ে হলেও তুমি এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখছো, উপভোগ করছ। এটাই আমার আনন্দ।"
আসুন আজ আমরা সবাই আমাদের মাকে অন্ততঃ একবার বলি, "মা আমি তোমাকে ভালবাসি"