"সরেন তো"
নারীকন্ঠি কেউ একজন আমার ডান পাশ থেকে বলল। খুব
মনোযোগ দিয়ে ফেসবুকিং
করছিলাম। হঠাৎ এমন ধমক
সুরে কথা শুনে বেশ চমকে উঠলাম।
মেয়েটি এমন ভাবে
কথাটা বলেছে মনে হচ্ছে মেয়েটা এই সিটটায় বসে
ছিল। পাশের সিট অবশ্য খালি
আছে। মেয়েটার দিকে
ঠিকমত না তাকিয়েই বাধ্য
ছেলের মত সরে বসলাম।
. "দাঁড়ান! আপনাকে ওদিকে সরতে
বলিনি! জানালার
পাশে আমি বসব, আপনি উঠোন
আমি জানালার পাশে
যাচ্ছি"
. মেয়ের কথা গুলো কেমন যেন
দখলধারী লাগছে।
"আসলেই কি মেয়েটা এখানে বসে
ছিল!! স্টান্ডে
কোনো কারনে নেমে এখন আবার
উঠেছে!! " ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ালাম।
হামাগুড়ি দিয়ে
মেয়েটে সিটে বসতে যাবে এমন
সময় আচমকাই বাসটা
সামনে যেতে লেগেই ব্রেক
দেয়াতে ধপাস করে পড়ে যাচ্ছিলো। তখনকার মূহুর্ত না
বুঝেই মেয়েটির একটি
হাত ধরে ফেললাম। মেয়েটি বড়
বড় তীব্র চোখে
তাকিয়েছে আমার দিকে।
. "সরি! সরি! আসলে বাসের হঠাৎ
ব্রেকে আপনি বসতে
গিয়ে পরে যাচ্ছিলেন, তাই......."
.
কথা শেষ করার আগেই মেয়েটি
কথার মাঝখান থেকে কথাটুকু টেনে নিয়ে বললঃ
.
"তাই আপনি দ্বায়িত্ব দেখাতে
আমাকে ধরে ফেললেন!!
যত্তসব!""
. "আসলে ঠিক দ্বায়িত্ব নয়, কর্তব্য
বলা যায়"
.
মেয়েটি এবার আগুনঝরা অগ্নি
চোখে তাকালো আমার
দিকে। কিছু না বলে জানালার পাশের সিটে বসে পড়ল।
আমিও চুপচাপ বসে পড়লাম
মেয়েটার পাশের সিটে।
আসলে মেয়েটার পাশের সিটে নয়,
মেয়েটাই আমার
পাশের সিটে বসেছে। চান্দিনা থেকে শাসনগাছা
যাচ্ছি। প্রায় ঘন্টা খানেক
লাগবে। কোন কিছু না
ভেবে আবারো ফেসবুকিং এ
মনোযোগ দিলাম। পেজে
পোস্ট পড়ছি আর মিটমিট হাসছি। মেয়েটি আমার
হাসিটা লক্ষ্য করেছে। আমি
মেয়েটির দিকে মোটেও
তাকাচ্ছি না। প্রথম চাহনিতে
বেশ ভয় পেয়েছিলাম।
আর ভয় পেতে চাইনা। মানুষ রাতে ভূতের ভয় পায়। যদি
কেউ দিনে নারীর ভয় পেতে চায়
তবে এ মেয়েটাই
যথেষ্ট। আচমকা মেয়েটা বলে
উঠলঃ
. "আপনি এত বেয়াদপ কেন!??"
.
ইতস্তত করে উত্তর দিলাম,
"আমি আবার আপনাকে কি
করলাম!!"
. ঝাঁঝালো কন্ঠে মেয়েটি আবার
বলল,
"আপনি হাসছেন কেন?!!"
.
মেয়েটির কথায় বুঝতে পারছি
তার রাগের মাত্রা ছাড়িয়েছে। মেয়েটির প্রতিটা
কথায় কেমন যেন ভয়
এসে আকৃষ্ট করছে। তবুও মেয়েটার
দিকে তাকাচ্ছিনা।
তাকালে হয়ত আরো ভয় পাব।
কিন্তু আমিতো এত ভীতু নই, তবে কেন মেয়েটিকে ভয় পাচ্ছি!!
নিঃশ্বাসটুকু ফেলে
ঝাড়ির অনুরূপে বললামঃ
.
"হাসতেও পারব না নাকি?
হাসতেও আপনার কাছে পার্মিশন নিতে হবে??"
.
মনে হয় এবার মেয়েটা ভয়
পেয়েছে। আড় চোখে
মেয়েটার দিকে তাকালাম।
মেয়েটার অগ্নিকুন্ড চেহারায় মলিনতার ভাব এসেছে।
এই প্রথম ভালো করে
মেয়েটাকে দেখছি। মেয়েটা চুপ
হয়ে গেল।
"তাহলে কি ঝাড়িতে কাজ
হয়েছে! নাকি মেয়েটা অন্য কিছু ভাবছে?"
থাক সে যা ভাবার ভাবুক।
মেয়েটি এবার আমার দিকে
তাকিয়েছে। চোখে চোখ পড়ল
মেয়েটির। নেশা
জাগানো চোখ তার। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে
নেশায় ধরে যাবে। কিন্তু আমি
নেশাগ্রস্ত হতে চাইনা।
চোখ নামিয়ে নিলাম। মেয়েটিও
বাহিরে তাকিয়েছে।
শো শো বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। বাস বেশ দ্রুত
গতিতেই চলছে। বাতাসে ভেসে
মেয়েটির খোলা
চুলগুলো আমার মুখের উপর এসে
আছঁড়ে পড়ছে।
মাদকাসক্ত চুল বলা যায়। মাতাল করার মত ঘোলাটে
গন্ধ। বেশ মনমালিন্য! মেয়েটির
চুল আমার চোখ মুখ
বারবার ছোঁয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি
এখনো তার চুলের
দিকে নজর পড়েনি। আমিও কিছু বলছিনা। শুভ্রাকাঙ্খি
চুল বাতাসে ঢেউ তুলছে। ঢেউয়ের
প্রান্ত এসে বিলীন
হচ্ছে আমার মুখের উপর নাক
বরাবর। চুলের গন্ধটা যেন
সারা মুখে দলা পাকিয়ে নিয়েছে। হঠাতই মেয়েটা
আমার দিকে তাকালো। মেয়েটা
খেয়াল করল চোখ বন্ধ
করে আছি। মেয়েটা কি যেনো
ভেবে নাড়িয়ে দিল
আমাকে। চোখ খুলে দেখি মেয়েটা কি যেন বিড়বিড়
করে বলছে। জিজ্ঞেস করলামঃ
.
"কিছু বললেন?"
.
কটকট করে দাঁতে দাত লাগিয়ে তার রাগটা আড়ালে
রেখে বলল,
"ঘুমুচ্ছিলেন?"
.
মূহুর্তে মনে পড়লো মেয়েটির
চুলের মাদকতায় চোখ আবেশে বন্ধ করেছিলাম।নির্লি
প্তভাবে বললামঃ
.
"কই! নাতো।"
.
"ভাংতি টাকা হবে? দশ টাকা? আমার কাছে ভাংতি
নেই"
.
"জ্বি হবে। কিন্তু কেন?"
.
"দশ টাকার বাদাম কিনুন" .
বাসে দেখলাম একটা লোক বাদাম
বিক্রি করছে। আমি
একটু বাড়িয়ে বিশ টাকার বাদাম
নিলাম। বাদামে
ঠোঙ্গাটা মেয়েটার হাতে দিতেই তার ঠোঁটের
ব্যালকনিতে এক চিলতে হাসি
দিল। এতক্ষন খেয়াল
করিনি। মেয়েটা হাসি দিলে তার
গালে টোল পড়ে।
বেশ অদ্ভুদ রকমের ভালো লাগছে মেয়েটাকে। মেয়েটা
হাতে বাদামের ঠোঙ্গা নিয়ে
ইতস্তত করছে। বুঝতে
পারলাম হাতে ঠোঙ্গা নিয়ে
খেতে পারছেনা। কিছু না
বলেই ঠোঙ্গাটা তার হাত থেকে আমার হাতে নিতে
গেলাম তখন আমার আঙ্গুল গুলো
তার আঙ্গুল স্পর্শ করল।
বৈদ্যুতিক শকের মত চমকে উঠলাম।
এবার মেয়েটি আর
রাগ দেখালো না। কিছু বললও না। হাতে ঠোঙ্গাটা
নিয়ে বললামঃ
.
"এবার আপনি বাদাম ছিঁলে খান"
.
মেয়েটা রৌদ্রজ্জ্বল মুখ দেখে বুঝতে পারলাম মেয়েটা
খুশি হয়েছে। মেয়েটাও যেন এটাই
বলতে চাচ্ছিল যে,
"আমি হাতে ঠোঙ্গা নিয়ে খেতে
পাররছিনা। আপনি
ঠোঙ্গাটা হাতে নিন, আমি ঠোঙ্গা থেকে নিয়ে বাদাম
খাব"
.
মেয়েটা বাদাম ছিঁলে খাচ্ছে।
অদ্ভূদ ভঙ্গিতে খাচ্ছে
সে। তাকিয়ে আছি তার দিকে। নেশাগ্রস্ত হতে না
চেয়েও নেশাগ্রস্ত হয়ে গেছি
মেয়েটার। বেশ কিছুক্ষন
পর মেয়েটি আমার দিকে
তাকালো। খানিকটা লজ্জা
পেল মনে হয়। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে চোখের পলকে।
চোখগুলোও লজ্জা পেয়েছে তার।
মেয়েটি জিজ্ঞেস
করলঃ
.
"আপনি খাবেন না?" .
"না, বাদামের প্রতি কোনো
ইন্টারেষ্ট নেই"
.
"অদ্ভূদ তো! কিন্তু কেন?"
. কিছু বললাম না আর। কারন বাদাম
বেশ পছন্দ আমার।
কিন্তু তার এই প্রশ্নের কোনো
উত্তর আমার কাছে নেই।
তাই চুপ হয়ে গেলাম। মেয়েটি
বাদাম ছিঁলে আমার এক হাতে দিয়ে বলল,
"নিন, খান। যেটার প্রতি
ইন্টারেষ্ট থাকবে না
সেটাটাই বেশি করে করতে
চেষ্টা করবেন"
. ভদ্রতা বজায় রাখতে বাধ্য
ছেলের মত খেতে লাগলাম।
বাতাস যেন কানে কানে বলছে
মেয়েটার সাথে
পরিচিত হওয়া দরকার। গলাটা
ঝাঁকিয়ে কাশি দিয়ে জিজ্ঞেস করলামঃ
.
"যদি কিছু মনে না করেন আপনার
নামটা জানতে পারি?"
"অবশ্যই! আমি অদ্রিতা, আর
আপনি?" "শুভ্র" (বেশ ছোট্ট উত্তর দিলাম)
"তা কিসে পড়েন?"
এবার মেয়েটিই প্রশ্ন করল।
হন্তদন্ত হয়ে বললামঃ
"অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে, আপনি?"
"আমি ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে" "দুজনেই দ্বিতীয় বর্ষে, তবে
ক্লাসের ধাপটা ভিন্ন.. হা
হা হা..."
বলতে বলতে হেসে দিলাম।
.
"অ্যাই শাসনগাছা....শাসনগাছা নামেন.....তাড়াতাড়ি
আহেন....."
.
"বাম পা আগে.... বাম পা আগে...."
.
বাসের হেলপার ডাকছে। বাস থেকে নেমেমে গেলাম।
কেউ একজন পেছন থেকে বলল,
"এই যে একটু ধরুন তো নামতে
পাড়ছি না"
"বুঝতে পারছিলাম না, হাত ধরতে
বলছে নাকি ব্যাগ ধরতে বলেছে"
ছোট ছোট আঙ্গুলের একটা হাত
বাড়িয়ে দিল। তাকিয়ে
দেখি পাশের সিটের সেই
মেয়েটা। হাত ধরেতেই
দ্বিতীয়বারের মত চমকিয়ে উঠলাম। কত সেকেন্ড হাত
ধরে রেখেছিলাম? ৪সেকেন্ড!
নাকি আরো কিছুক্ষন।
ভালোবাসতে কি ৪ সেকেন্ড
যথেষ্ঠ? মেয়েটাকে
ভালোবেসে ফেলেছি। সব কিছু কেমন ঘোরের মধ্য দিয়ে
যাচ্ছে। অন্য কোনো জগতে
নিজেকে আবিষ্কার করছি
ঐ মূহুর্তে। পুরুপুরি নেশাগ্রস্ত
হয়েছি। কিসের প্রতি!
মেয়েটার চোখের নেশায়? নাকি মেয়েটির টোল পড়া
হাসির নেশায়? নাকি মেয়েটার
আলতো ছোঁয়ার
নেশায়? নাহ! ভিন্ন ভিন্ন কেন
হবে! মেয়েটার সব কিছুর
নেশায় পড়েছি। .
"ধন্যবাদ"
মেয়েটার কথায় ঘোর কাটল।
তাকিয়ে আছি মেয়েটার
দিকে। মেয়েটা হনহন করে
লোকালয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটাকে ডাকতে ইচ্ছে করছে।
আবারো সেই ৪
সেকেন্ডের ছোঁয়ার নেশাগ্রস্ত
হতে ইচ্ছে করছে।
মেয়েটার মাদকতা চুলের গন্ধ
নিতে ইচ্ছে করছে আবার। ভালোবাসা যেন হারিয়ে যাচ্ছে
ঠক ঠক করে।
লোকালয়ে কোথায় যেন হঠাৎ ই
মিলিয়ে গেল সে। সেই
জায়গাটায় ঠের দাঁড়িয়ে রইলাম
কিছুক্ষন। হাঁটা ধরলাম নিজ গন্তব্যে...............
নারীকন্ঠি কেউ একজন আমার ডান পাশ থেকে বলল। খুব
মনোযোগ দিয়ে ফেসবুকিং
করছিলাম। হঠাৎ এমন ধমক
সুরে কথা শুনে বেশ চমকে উঠলাম।
মেয়েটি এমন ভাবে
কথাটা বলেছে মনে হচ্ছে মেয়েটা এই সিটটায় বসে
ছিল। পাশের সিট অবশ্য খালি
আছে। মেয়েটার দিকে
ঠিকমত না তাকিয়েই বাধ্য
ছেলের মত সরে বসলাম।
. "দাঁড়ান! আপনাকে ওদিকে সরতে
বলিনি! জানালার
পাশে আমি বসব, আপনি উঠোন
আমি জানালার পাশে
যাচ্ছি"
. মেয়ের কথা গুলো কেমন যেন
দখলধারী লাগছে।
"আসলেই কি মেয়েটা এখানে বসে
ছিল!! স্টান্ডে
কোনো কারনে নেমে এখন আবার
উঠেছে!! " ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ালাম।
হামাগুড়ি দিয়ে
মেয়েটে সিটে বসতে যাবে এমন
সময় আচমকাই বাসটা
সামনে যেতে লেগেই ব্রেক
দেয়াতে ধপাস করে পড়ে যাচ্ছিলো। তখনকার মূহুর্ত না
বুঝেই মেয়েটির একটি
হাত ধরে ফেললাম। মেয়েটি বড়
বড় তীব্র চোখে
তাকিয়েছে আমার দিকে।
. "সরি! সরি! আসলে বাসের হঠাৎ
ব্রেকে আপনি বসতে
গিয়ে পরে যাচ্ছিলেন, তাই......."
.
কথা শেষ করার আগেই মেয়েটি
কথার মাঝখান থেকে কথাটুকু টেনে নিয়ে বললঃ
.
"তাই আপনি দ্বায়িত্ব দেখাতে
আমাকে ধরে ফেললেন!!
যত্তসব!""
. "আসলে ঠিক দ্বায়িত্ব নয়, কর্তব্য
বলা যায়"
.
মেয়েটি এবার আগুনঝরা অগ্নি
চোখে তাকালো আমার
দিকে। কিছু না বলে জানালার পাশের সিটে বসে পড়ল।
আমিও চুপচাপ বসে পড়লাম
মেয়েটার পাশের সিটে।
আসলে মেয়েটার পাশের সিটে নয়,
মেয়েটাই আমার
পাশের সিটে বসেছে। চান্দিনা থেকে শাসনগাছা
যাচ্ছি। প্রায় ঘন্টা খানেক
লাগবে। কোন কিছু না
ভেবে আবারো ফেসবুকিং এ
মনোযোগ দিলাম। পেজে
পোস্ট পড়ছি আর মিটমিট হাসছি। মেয়েটি আমার
হাসিটা লক্ষ্য করেছে। আমি
মেয়েটির দিকে মোটেও
তাকাচ্ছি না। প্রথম চাহনিতে
বেশ ভয় পেয়েছিলাম।
আর ভয় পেতে চাইনা। মানুষ রাতে ভূতের ভয় পায়। যদি
কেউ দিনে নারীর ভয় পেতে চায়
তবে এ মেয়েটাই
যথেষ্ট। আচমকা মেয়েটা বলে
উঠলঃ
. "আপনি এত বেয়াদপ কেন!??"
.
ইতস্তত করে উত্তর দিলাম,
"আমি আবার আপনাকে কি
করলাম!!"
. ঝাঁঝালো কন্ঠে মেয়েটি আবার
বলল,
"আপনি হাসছেন কেন?!!"
.
মেয়েটির কথায় বুঝতে পারছি
তার রাগের মাত্রা ছাড়িয়েছে। মেয়েটির প্রতিটা
কথায় কেমন যেন ভয়
এসে আকৃষ্ট করছে। তবুও মেয়েটার
দিকে তাকাচ্ছিনা।
তাকালে হয়ত আরো ভয় পাব।
কিন্তু আমিতো এত ভীতু নই, তবে কেন মেয়েটিকে ভয় পাচ্ছি!!
নিঃশ্বাসটুকু ফেলে
ঝাড়ির অনুরূপে বললামঃ
.
"হাসতেও পারব না নাকি?
হাসতেও আপনার কাছে পার্মিশন নিতে হবে??"
.
মনে হয় এবার মেয়েটা ভয়
পেয়েছে। আড় চোখে
মেয়েটার দিকে তাকালাম।
মেয়েটার অগ্নিকুন্ড চেহারায় মলিনতার ভাব এসেছে।
এই প্রথম ভালো করে
মেয়েটাকে দেখছি। মেয়েটা চুপ
হয়ে গেল।
"তাহলে কি ঝাড়িতে কাজ
হয়েছে! নাকি মেয়েটা অন্য কিছু ভাবছে?"
থাক সে যা ভাবার ভাবুক।
মেয়েটি এবার আমার দিকে
তাকিয়েছে। চোখে চোখ পড়ল
মেয়েটির। নেশা
জাগানো চোখ তার। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে
নেশায় ধরে যাবে। কিন্তু আমি
নেশাগ্রস্ত হতে চাইনা।
চোখ নামিয়ে নিলাম। মেয়েটিও
বাহিরে তাকিয়েছে।
শো শো বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। বাস বেশ দ্রুত
গতিতেই চলছে। বাতাসে ভেসে
মেয়েটির খোলা
চুলগুলো আমার মুখের উপর এসে
আছঁড়ে পড়ছে।
মাদকাসক্ত চুল বলা যায়। মাতাল করার মত ঘোলাটে
গন্ধ। বেশ মনমালিন্য! মেয়েটির
চুল আমার চোখ মুখ
বারবার ছোঁয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি
এখনো তার চুলের
দিকে নজর পড়েনি। আমিও কিছু বলছিনা। শুভ্রাকাঙ্খি
চুল বাতাসে ঢেউ তুলছে। ঢেউয়ের
প্রান্ত এসে বিলীন
হচ্ছে আমার মুখের উপর নাক
বরাবর। চুলের গন্ধটা যেন
সারা মুখে দলা পাকিয়ে নিয়েছে। হঠাতই মেয়েটা
আমার দিকে তাকালো। মেয়েটা
খেয়াল করল চোখ বন্ধ
করে আছি। মেয়েটা কি যেনো
ভেবে নাড়িয়ে দিল
আমাকে। চোখ খুলে দেখি মেয়েটা কি যেন বিড়বিড়
করে বলছে। জিজ্ঞেস করলামঃ
.
"কিছু বললেন?"
.
কটকট করে দাঁতে দাত লাগিয়ে তার রাগটা আড়ালে
রেখে বলল,
"ঘুমুচ্ছিলেন?"
.
মূহুর্তে মনে পড়লো মেয়েটির
চুলের মাদকতায় চোখ আবেশে বন্ধ করেছিলাম।নির্লি
প্তভাবে বললামঃ
.
"কই! নাতো।"
.
"ভাংতি টাকা হবে? দশ টাকা? আমার কাছে ভাংতি
নেই"
.
"জ্বি হবে। কিন্তু কেন?"
.
"দশ টাকার বাদাম কিনুন" .
বাসে দেখলাম একটা লোক বাদাম
বিক্রি করছে। আমি
একটু বাড়িয়ে বিশ টাকার বাদাম
নিলাম। বাদামে
ঠোঙ্গাটা মেয়েটার হাতে দিতেই তার ঠোঁটের
ব্যালকনিতে এক চিলতে হাসি
দিল। এতক্ষন খেয়াল
করিনি। মেয়েটা হাসি দিলে তার
গালে টোল পড়ে।
বেশ অদ্ভুদ রকমের ভালো লাগছে মেয়েটাকে। মেয়েটা
হাতে বাদামের ঠোঙ্গা নিয়ে
ইতস্তত করছে। বুঝতে
পারলাম হাতে ঠোঙ্গা নিয়ে
খেতে পারছেনা। কিছু না
বলেই ঠোঙ্গাটা তার হাত থেকে আমার হাতে নিতে
গেলাম তখন আমার আঙ্গুল গুলো
তার আঙ্গুল স্পর্শ করল।
বৈদ্যুতিক শকের মত চমকে উঠলাম।
এবার মেয়েটি আর
রাগ দেখালো না। কিছু বললও না। হাতে ঠোঙ্গাটা
নিয়ে বললামঃ
.
"এবার আপনি বাদাম ছিঁলে খান"
.
মেয়েটা রৌদ্রজ্জ্বল মুখ দেখে বুঝতে পারলাম মেয়েটা
খুশি হয়েছে। মেয়েটাও যেন এটাই
বলতে চাচ্ছিল যে,
"আমি হাতে ঠোঙ্গা নিয়ে খেতে
পাররছিনা। আপনি
ঠোঙ্গাটা হাতে নিন, আমি ঠোঙ্গা থেকে নিয়ে বাদাম
খাব"
.
মেয়েটা বাদাম ছিঁলে খাচ্ছে।
অদ্ভূদ ভঙ্গিতে খাচ্ছে
সে। তাকিয়ে আছি তার দিকে। নেশাগ্রস্ত হতে না
চেয়েও নেশাগ্রস্ত হয়ে গেছি
মেয়েটার। বেশ কিছুক্ষন
পর মেয়েটি আমার দিকে
তাকালো। খানিকটা লজ্জা
পেল মনে হয়। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে চোখের পলকে।
চোখগুলোও লজ্জা পেয়েছে তার।
মেয়েটি জিজ্ঞেস
করলঃ
.
"আপনি খাবেন না?" .
"না, বাদামের প্রতি কোনো
ইন্টারেষ্ট নেই"
.
"অদ্ভূদ তো! কিন্তু কেন?"
. কিছু বললাম না আর। কারন বাদাম
বেশ পছন্দ আমার।
কিন্তু তার এই প্রশ্নের কোনো
উত্তর আমার কাছে নেই।
তাই চুপ হয়ে গেলাম। মেয়েটি
বাদাম ছিঁলে আমার এক হাতে দিয়ে বলল,
"নিন, খান। যেটার প্রতি
ইন্টারেষ্ট থাকবে না
সেটাটাই বেশি করে করতে
চেষ্টা করবেন"
. ভদ্রতা বজায় রাখতে বাধ্য
ছেলের মত খেতে লাগলাম।
বাতাস যেন কানে কানে বলছে
মেয়েটার সাথে
পরিচিত হওয়া দরকার। গলাটা
ঝাঁকিয়ে কাশি দিয়ে জিজ্ঞেস করলামঃ
.
"যদি কিছু মনে না করেন আপনার
নামটা জানতে পারি?"
"অবশ্যই! আমি অদ্রিতা, আর
আপনি?" "শুভ্র" (বেশ ছোট্ট উত্তর দিলাম)
"তা কিসে পড়েন?"
এবার মেয়েটিই প্রশ্ন করল।
হন্তদন্ত হয়ে বললামঃ
"অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে, আপনি?"
"আমি ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে" "দুজনেই দ্বিতীয় বর্ষে, তবে
ক্লাসের ধাপটা ভিন্ন.. হা
হা হা..."
বলতে বলতে হেসে দিলাম।
.
"অ্যাই শাসনগাছা....শাসনগাছা নামেন.....তাড়াতাড়ি
আহেন....."
.
"বাম পা আগে.... বাম পা আগে...."
.
বাসের হেলপার ডাকছে। বাস থেকে নেমেমে গেলাম।
কেউ একজন পেছন থেকে বলল,
"এই যে একটু ধরুন তো নামতে
পাড়ছি না"
"বুঝতে পারছিলাম না, হাত ধরতে
বলছে নাকি ব্যাগ ধরতে বলেছে"
ছোট ছোট আঙ্গুলের একটা হাত
বাড়িয়ে দিল। তাকিয়ে
দেখি পাশের সিটের সেই
মেয়েটা। হাত ধরেতেই
দ্বিতীয়বারের মত চমকিয়ে উঠলাম। কত সেকেন্ড হাত
ধরে রেখেছিলাম? ৪সেকেন্ড!
নাকি আরো কিছুক্ষন।
ভালোবাসতে কি ৪ সেকেন্ড
যথেষ্ঠ? মেয়েটাকে
ভালোবেসে ফেলেছি। সব কিছু কেমন ঘোরের মধ্য দিয়ে
যাচ্ছে। অন্য কোনো জগতে
নিজেকে আবিষ্কার করছি
ঐ মূহুর্তে। পুরুপুরি নেশাগ্রস্ত
হয়েছি। কিসের প্রতি!
মেয়েটার চোখের নেশায়? নাকি মেয়েটির টোল পড়া
হাসির নেশায়? নাকি মেয়েটার
আলতো ছোঁয়ার
নেশায়? নাহ! ভিন্ন ভিন্ন কেন
হবে! মেয়েটার সব কিছুর
নেশায় পড়েছি। .
"ধন্যবাদ"
মেয়েটার কথায় ঘোর কাটল।
তাকিয়ে আছি মেয়েটার
দিকে। মেয়েটা হনহন করে
লোকালয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটাকে ডাকতে ইচ্ছে করছে।
আবারো সেই ৪
সেকেন্ডের ছোঁয়ার নেশাগ্রস্ত
হতে ইচ্ছে করছে।
মেয়েটার মাদকতা চুলের গন্ধ
নিতে ইচ্ছে করছে আবার। ভালোবাসা যেন হারিয়ে যাচ্ছে
ঠক ঠক করে।
লোকালয়ে কোথায় যেন হঠাৎ ই
মিলিয়ে গেল সে। সেই
জায়গাটায় ঠের দাঁড়িয়ে রইলাম
কিছুক্ষন। হাঁটা ধরলাম নিজ গন্তব্যে...............