What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made রাজতিলক 🌼🌼🌼🌼🌼 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
কিছুদিন ধরে ফিসফাস শুনছিলাম, একদিন আমার পিঠাপিঠি বোন নীলা অধৈর্য্য হয়ে বলেই ফেললো -



আপা এবার অন্তত রাজি হয়ে যাও । তোমার কারণে সিয়ামদের বাসা থেকেও প্রস্তাব পাঠাতে পারছে না ।



নীলা আমি কোনো ঝামেলা করি না, ঝামেলা করে আমার কপাল । দাগ পড়া মেয়ে কেউ সেধে নিজের ঘাড়ে নিতে চায় না, হোক সে যতোই গুনি, বিয়ের বাজারে সে বেগুনি ।



কেন বড় ফুপু যে পাত্র আনলো তিনি তো রাজিই ছিলেন কিন্তু তখন তো তুমি…



বড় ফুপুর আনা পাত্রকে তুই বিয়ে করতিস নীলা ? আমার চেয়ে শুধু লেখাপড়ায় কম এটা না হয় মানলাম কিন্তু তোর কাছে কী লোকটার চালচলন, কথাবার্তায় মনে হয়েছে কোনোভাবে আমাদের মনের মিল হতো ? এই খটখটে গরমে কাঁচা হলুদ রঙের সাফারি গায়ে একটা মানুষ, রবীন্দ্র সঙ্গীত কানে যাওয়া মাত্র বলে বসলেন - এডি শুনলে আমার ঘুম আহে ! সবকিছু বাদ দিলেও মেয়ে দেখতে এসে কেউ জানতে চায় পাত্রীর বেতন কতো ! তুই চিন্তা করতে পারিস এমন কাউকে তোর পাশে?



নীলা আর কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেলো । আমি ঠিক করলাম, মা'কে বলবো আমার বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে নীলার কথা ভাবতে । ঠিক তখনই বড় খালা প্রস্তাব নিয়ে এলেন । আমি ঠিক করলাম, ছেলে যেমন ই হোক, যদি আমাকে পছন্দ করে আমি চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে যাবো ।



আড়ালে মা'কে বলা বড় খালার কথাগুলো শুনে মনটা একেবারে চুপসে গেলো । বড় খালা এমনিতে আমাকে অনেক আদর করেন । একেবারে মা'র মতোই । সেই তিনি এভাবে বলাতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো । খালা বলছিলেন -



শোন রুনু, অল্পের ওপর দিয়ে পার করা যাচ্ছে এই তো বেশি । বেলা'র বয়সটা হিসেব করেছিস একবার? ত্রিশ শেষ হয়েছে । ছেলেরা আগে দেখে গায়ের রঙ, টলটলে চেহারা । আমাদের বেলা দেখতে ভালো কিন্তু ঐ এক দাগের কারণেই তো মার খেয়ে যায় বারবার । এই ছেলের কোনো চাওয়াচাওয়ি নেই । বয়সটা একটু বেশি, তাতে কী? পুরুষ মানুষের তেতাল্লিশ কোনো বয়স হলো? আরেকটা কথা মনে রাখিস, ত্রিশ পেরোনো খুঁতওয়ালা মেয়ে বিয়ের বাজারে অচল ।



তাও আপা, বয়সটা আমার একটু বেশিই মনে হচ্ছে ।



আবারও সেই একই কথা ! ছেলের কিন্তু চেহারা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই । দেখেশুনেই বেলাকে দেখতে চেয়েছে । এমন পাত্র কিন্তু আর পাওয়া যাবে না । তোর আরো দু'টো মেয়ে আছে না ? বেলা'র বিয়ে হচ্ছে না দেখে ওরাও তো আটকে আছে । তুই রাজি হয়ে যা । না করিস না ।



হুম।



আর সব কিছু ছাপিয়ে মুখের ঐ পোড়া দাগটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়ে আছে । কপালের বা পাশের টকটকে একটা লাল দাগ নিয়েই আমি পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম । আমার দাদী বলতেন, ওটা নাকি রাজতিলক, আমার নাকি রাজ কপাল । বড় হলেই রাজপুত্র এসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে আমাকে । বড় হওয়ার সাথে সাথে দাগটাও আরো বড়, আরো গাঢ় হয়েছে । হঠাৎ দেখলে মনেহয়, পুড়ে গেছে জায়গাটা ।



"খুঁতওয়ালা মেয়ে" কথাটা বুকে যেন কাঁটার মতো বিঁধতে লাগলো । মন খারাপ নিয়েই স্কুলে রওনা দিলাম । আনন্দ-নিকেতন হাই স্কুলে ইংরেজি পড়াই আমি । মাস্টার্স শেষ করার পরপরই স্কুলটাতে চাকরী হয়ে গিয়েছিলো আমার । মর্নিং শিফটে ক্লাস আমার, দেড়টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসি । এরপর বাকীটা দিন সংসারের জন্য বরাদ্দ থাকে ।



পাত্র পক্ষ বসে আছে ড্রইংরুমে । আমি নিজ হাতে সমস্ত নাস্তা বানিয়েছি । কপালে একটা ছোট্ট লাল টিপ আর কাজল লাগানো ছাড়া আর কোনো সাজগোজ না করা এই আমি আজ হালকা সাজে সাজালাম নিজেকে । ড্রইং রুমের টেবিলে আমার হাতের কাজ করা কভার লাগানো । পাত্রের মন গলানোর জন্য যতো রকম কিছু করা যায় আর কি । নীলা খুব আগ্রহ নিয়ে সব কাজ করছে । আমার খুব মায়া লাগছে বেচারির ওপর । আজ যেন আমার একটা দফারফা হয়েই যায়, এই প্রার্থনা করছি সারাক্ষণ ।



আমি ড্রইং রুমে ঢুকতেই শুনলাম আমার প্রশংসার ফুলঝুরি ফোটাচ্ছে বাড়ির লোকেরা । আমি ঢুকেই পূর্ণ দৃষ্টিতে সবাইকে একবার দেখে নিলাম । সাদা শার্ট পড়া চল্লিশ পেরোনো ইনিই বোধহয় পাত্র । বেচারা বোধহয় অফিস থেকেই সরাসরি চলে এসেছেন। বেশ ক্লান্ত লাগছে ওনাকে । ওনার পাশে বসা একটা ছেলে আর তিনজন তিন বয়সী মহিলা । মহিলা তিনজনও কথায় হার না মানা পণ করেছেন । অবিরত কথা বলেই যাচ্ছেন । আমি রুমে আসায় তাদের খুব একটা ভাবান্তর ঘটলো না শুধু ঐ মানুষটা, যার নাম হুমায়ূন কবির, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ একটা হাসি দিলেন ।



হুমায়ূন সাহেবের বড় ভাবী, তিনিই সব কথাবার্তা বললেন । সরাসরি বলেই ফেললেন, মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে । আমাদের বাড়িতে হঠাৎ যেন খুশির দমকা বাতাস বয়ে গেলো । মিষ্টি মুখ শেষে তারা বিদায় নেয়ার আগে জানিয়ে গেলেন, আগামী সপ্তাহে তারা ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন । সেখানেই আংটি বদল আর বিয়ের ডেট ঠিক হবে । ভাবী আমার হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে হাতটা মুঠ করে দিলেন । হুমায়ূন নামের মানুষটার সাথে আমার কোনো কথা হলো না শুধু বের হয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ছোট্ট একটা বক্স ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা আপনার জন্য ।



একটু নিরিবিলি হয়ে মুঠো খুলতেই প্রায় অচল একটা পাঁচশো টাকা বেরিয়ে এলো । খুব কষ্ট পেলাম, মনে হলো আমার খুঁত এর সাথে মিলিয়ে এমন ময়লা একটা নোট ইচ্ছে করে দিয়ে গেছেন তারা । বক্সটা খুলতেই খুব সুন্দর একটা কলম বেরিয়ে এলো, সাথে ছোট্ট একটা চিরকুটে লেখা - শুভ কামনা । দপ করে নিভে যাওয়া আনন্দটা দ্বিগুণ হয়ে ফিরে এলো যেন । মানুষটার রুচি আছে বলতে হবে । সেদিন রাতে খুশিতে আমার ঘুম আসছিলো না । আমিও যে নিজেকে সংসারী ভাবতে শুরু করেছিলাম ।



পরের দিন রাতে বড় খালার ফোন এলো, ছেলের ভাবী ফোন করে বড় খালাকে সরি বলেছেন । ছেলের নাকি মেয়ে পছন্দ হয়নি । মেয়েকে দেখে নাকি খুব অহংকারী মনে হয়েছে । এখানে সবার সামনে লজ্জায় কিছু বলতে পারেননি কিন্তু বাসায় যেয়ে কথাটা জানিয়েছেন সবাইকে । খবরটা শুনে ক্ষণিকের খুশিতে ভাসতে থাকা আমাদের বাড়ির সবার মুখ অমাবস্যার আঁধারে ঢেকে গেলো । ঠিক সেই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলাম, বিয়ে নামক যন্ত্রণা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবো আমি । মা'কে স্পষ্ট করে বলে দিলাম , আমার বিয়ে নিয়ে বাড়িতে যেন আর কোনো কথা না হয় কখনো । মনের ভেতর একটা বিষয় খচখচ করছিলো, মানুষটা কী সত্যিই আমার সম্বন্ধে এমন কথা বলেছেন? তাঁর সাথে তো আমার কোনো কথাই হলো না ।



নীলা আর সিয়ামের বিয়ে হয়ে গেলো দুই মাসের মধ্যে । নীলা'র বিয়েতে আমি আমার সাধ্যের বেশি করেছি । নিজের জমানো সব টাকা খরচ করেছি । বাবা মা-ও তাদের সাধ্য অনুযায়ী আয়োজন করলেন । বাবা কয়েকবার আফসোস করে বললেন -



মা'রে এই আয়োজন তোর জন্য হওয়ার কথা ছিলো । আমার মনটা ভীষন খারাপ রে মা ।



মন খারাপ কোরো না বাবা । এই তো বেশ আছি ।



নীলা'র বিয়ের এক মাসের মাথায় টিউলিপের বিয়ে হয়ে গেলো । টিউলিপ আমাদের বোনদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর । মা'র চেহারাটা পেয়েছে ও । টিউলিপের বিয়ের পর আমার মনে হলো, আমি বোধহয় সত্যিই অপয়া ছিলাম । আমার কারণেই ওদের পথ আটকে ছিলো এতোদিন ।



বোনদের সংসার সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । দেখতে ভালো লাগে । ওরা ওদের বরদের নিয়ে বাসায় আসে । মা অস্থির হয়ে যান জামাই আদর করতে । আমরা তিন বোন অনেক গল্প করলেও হঠাৎ নীলা, টিউলিপ একটু আড়াল হয়ে যায় । দু'জন গুনগুন করে কথা বলে । নতুন কেনা আংটি, কানের দুল দুজন দুজনকে দেখায় । আমি মুখে হাসি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করি । সত্যি বলছি, আমি ওদের একটুও হিংসা করি না কিন্তু হাসিটা ধরে রাখতে আমাকে কেন যে চেষ্টা করতে হয় বুঝি না ।



আমার চারপাশ, পরিচিত পরিবেশ আমাকে চেপে ধরছিলো যেন । আমি ঢাকা থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাচ্ছিলাম । দিনাজপুরে এনজিওর একটা চাকরীর কথা সহকর্মী লুবনা'র কাছে শুনেছিলাম । শিক্ষা কর্যক্রমের প্রকল্পটিতে লুবনা'র সাথে আমিও এপ্লাই করলাম । লুবনা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো -



আমার তো বাড়ির কাছে দেখে আমি যাচ্ছি, আপনি কেন যাবেন আপু? আপনার তো সবই এখানে ।



লুবনা'র সাথে আমার চাকরীটাও হয়ে গেলো । বাড়িতে সবাই খুব আপত্তি জানিয়েছিলো । মা খুব কান্নাকাটি করলেন আর তন্ময় বারবার বলছিলো -



আপা না গেলে কী হয় না? তুমি গেলে তো বাড়িটা একদম খালি হয়ে যাবে ।



তুই আছিস না? তুই সামলে রাখবি সবকিছু ।



দিনাজপুর আমার ভালো লেগে গেলো । লুবনাদের বাড়ির পাশেই দুই কামরার ছোট্ট সুন্দর একটা ফ্ল্যাট পেয়ে গেলাম । আমি আর নওরীন থাকবো । ও গতমাসেই জয়েন করেছে । আমরা আসার আগ পর্যন্ত গেস্ট হাউজে থাকছিলো ও ।



সারাদিন ভীষণ কর্মব্যস্ত দিন কাটে আমাদের । সন্ধ্যার পর অফিসের ড্রাইভার কামরুল ভাই প্রায়দিনই আমাদের শহর দেখাতে নিয়ে যান । তিনজন মিলে ঘুরি ফিরি, চায়ের দোকান দেখলে নেমে পড়ি, তেলে ভাজার সন্ধান পেলে হামলে পড়ি । দারুণ কেটে যায় সময় । একাকিত্ব আমাকে ছুঁতে পারে না আর । শুধু রাত গভীর হলে দলা পাকানো কান্নাগুলো গলার কাছে সুড়সুড়ি দেয় । তবু আমি বেশ আছি , এখানে কেউ আমাকে আইবুড়ো মেয়ে বলে খোঁচা দেয় না, আমার কপালের দাগ নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই ।



মা-বাবা এসে বেড়িয়ে গেলেন কিছুদিন আগে । মা দু'একবার চেষ্টা করেছিলেন বিয়ের কথা তোলার, শুরুতেই থামিয়ে দিয়েছি । আমি তিন মাস পর একবার করে ঢাকা যাই । ঢাকার চেয়ে আসলে দিনাজপুর এখন আমার বেশি ভালো লাগে । লোকে লোকারণ্য ঢাকার বাতাসটাও কেমন যেন চটচটে হয়ে গেছে ।



দেখতে দেখতে দিনাজপুরে আমার পাঁচ বছর কেটে গেলো । নওরীন এরমধ্যে সংসারী হয়েছে । এই ফ্ল্যাটটা ছেড়ে পাশেই আরেকটা ফ্ল্যাটে উঠেছে স্বামীসহ । ওর বর ফাইয়াজও আমাদের সাথেই কাজ করেন । আগে রংপুরে পোস্টিং ছিলো, বিয়ের পরে এখানে চলে এসেছেন । আমি এখন একা থাকায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি । ভয় টয় আর পাই না । ঠিক করেছি বাড়িওয়ালা যতোদিন না তুলে দেবেন, এই ফ্ল্যাটেই থেকে যাবো ।



প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটা দল আসবে আমাদের এখানে । আমাদের কার্যক্রম, কীভাবে আরো প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা পৌঁছে দেয়া যায়, শিক্ষার মান উন্নয়নে আর কী করা উচিৎ এই বিষয়ে তিনদিনের কর্মশালা কাল শুরু হবে । সেই উপলক্ষ্যে বেশ একটা সাজ সাজ রব । কাগজপত্র, বিভিন্ন কর্মশালার প্রসপেক্টাস, সেমিনার রুম সবকিছুর তদারকি শেষে অফিসেই আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা হলো আজ । মোস্তাকিম ভাইয়ের বউ ওনার জাদুকরী হাতের খিচুড়ি, ভুনা গোশ আর ইলিশ ভাজা পাঠিয়ে দিয়েছেন । সারদিনের কর্মব্যস্ত দিনের শেষে এমন খাবার পাতে পেয়ে আমাদের সমস্ত ক্লান্তি নিমিষে গায়েব হয়ে গেলো ।



মোট চারজনের একটা দল এসেছে ঢাকা থেকে । পরিচয় পর্বে নামটা শুনে আমার বুকটা একেবারে ধুক করে উঠলো । স্মৃতির গভীর থেকে ধুলো জমা একটা মুখ স্নিগ্ধ একটা হাসি দিলো যেন । মাত্র একবার দেখা একটা মানুষকে এভাবে মনে থাকে কারো, এতো বছর পরেও ! সে ই তো নাকি আমার অবচেতন মনের কোনো বেখেয়ালি দুষ্টুমি ? সারাটা দিন সমস্ত কাজের ফাঁকে পোকাটা মাথার মধ্যে ঠক ঠক করেই যাচ্ছে , হ্যাঁ সেই মানুষটাই কিন্তু ওনার আচরণে একবারও মনে হলো না যে উনি আমাকে কখনো দেখেছেন । খুব সাবলীলভাবে কথা বলে গেলেন আমাদের সবার সাথে । আমি বারবার দ্বিধান্বিত হতে থাকলাম ।



দেখতে দেখতে তিনটা দিন কেটে গেলো । আর কিছুক্ষণ পর মিটিং শেষে ওনারা রওনা দেবেন ঢাকার পথে । আমাদের কাজের ধরণ, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা সবকিছুর জন্য সাধুবাদ জানালেন ওনারা ।



মিটিং শেষে চা চক্রে হঠাৎ ওনার কাছাকাছি চলে এলাম । কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় একটা তথ্য লিখে দেয়ার জন্য কলমটা বের করতেই হঠাৎ বললেন -



কলমটা রেখেছেন এখনো ? আমি তো ভাবলাম তখনই ফেলে দিয়েছেন ।



জ্বী, মানে স্যার আমাকে বললেন?



আবার সেই স্নিগ্ধ হাসি আমার ভেতরটা নাড়া দিয়ে গেলো । চুপ করে তাকিয়ে থাকলাম । কিছু বলার মতো কথা পাচ্ছি না ।



আমি আসলে ভাবিনি কখনো আবার আপনার সাথে দেখা হবে । তবে চেয়েছিলাম, একবার যেন অন্তত দেখা হয়, সরি বলার জন্য । আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত । আপনাকে অপমান করার কোনো অভিপ্রায় আমার ছিলো না ।



আপনি আমাকে অপমান করেছেন?



আমি আসলে বিষয়গুলো ওভাবে ঠিক জানি না । ভাবি বলেছিলেন মেয়ের হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে তাই আমি পাঁচ হাজারই দিয়েছিলাম । এতে যে আপনাদের অপমান করা হয়েছে সেটা আমি কী করে বুঝবো?



পাঁচ হাজার ! মনে পড়লো প্রায় অচল পাঁচশো টাকার কথাটা । যেটা দিয়ে আমার ভাইবোনরা আইসক্রিম খেয়েছিলো । বুঝলাম মহিলার কুট চাল ছিলো ওটা । আমি আর কিছু বললাম না, চেপে গেলাম ভাবির ফোনের কথাটা । কয়েকবার, হুম বেশ কয়েকবার মুখে চলে এসেছিলো প্রশ্নটা, বিয়ে করেছেন কিনা কিন্তু খুব কষ্ট করে নিজেকে দমিয়ে রাখলাম । কী দরকার নতুন করে পুরোনো ক্ষত খুঁচিয়ে বাড়ানোর? এই যে আমার আজকের জীবন, এই তো বেশ আছি । সবাই তো সবকিছু পায় না অথবা সবার জন্য হয়তো সবকিছু বরাদ্দ থাকে না এক জীবনে । এই জীবন নিয়ে আমি খুব খুশি আছি, খুব শান্তিতে আছি ।



অফিসে এসে বসতেই বাবলু চা দিয়ে যায় এক কাপ । বাবলুর বানানো এই চা যে না খেয়েছে সে জানে না চায়েরও যে এতো স্বাদ হতে পারে । এই চা দিয়ে আমাদের আনন্দময় দিন শুরু হয় প্রতিদিন । চা শেষ করতেই কামরুল ভাই রুমে আসলেন -



ম্যাডাম ঢাকার স্যার আপনারে এই প্যাকটটা দিতে বলেছে ।



কামরুল ভাই চলে যেতেই প্যাকেটটা খুললাম । বাদামী-মেরুন তসর সিল্কের ভীষণ সুন্দর একটা শাড়ি আর শেষের কবিতা । বইটা হাতে নিয়ে মলাট উল্টাতেই একটা চিরকুট চোখে পড়লো -



নিরন্তর শুভকামনা ।

কপালের দাগটায় কিন্তু আপনাকে মানায় ভালো ।

আর হ্যাঁ , "বেলা নামটা আমার ভীষন পছন্দের".....



কাগজটা হাতে নিয়ে কপালে একবার হাত বোলালাম, হায়রে আমার রাজ কপাল !

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top