আমার মাধ্যমিকের রেজাল্ট আশানুরূপ না হওয়ায় বলা যায় কিছু অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় বাবা মা'র পক্ষ থেকে। সেটা যে এতটা ফলপ্রসূ এবং কার্যকর হবে তা উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষনার আগে কেউই বুঝতে পারিনি। যার ফলে মফস্বল শহর ছেড়ে ঢাকায়,বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার একটা যৌক্তিক ইচ্ছা সকলের মনে জেগে উঠে। আর আমার বড় বোন দুলাভাই যেহেতু ঐ শহরে লালমাটিয়ায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসবাস করেন, তখন থাকা খাওয়ার,নিরাপত্তার চিন্তা করতে হচ্ছেনা আলাদা করে। তাই কোচিং করার উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি নিজের বইপত্র এবং কন্যা জামাতার জন্য একগাদা উপঢৌকন সহ আব্বার সাথে ঢাকায় আগমন।
দুলাভাই একটা কর্পোরেট হাউসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আপা বিয়ের আগেই একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকুরিতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর দুলাভাই আপাকে বুঝালেন, এভাবে সপ্তাহের পাঁচ দিন আসা যাওয়া সহ দুজনেই বারো ঘন্টা করে পরিশ্রম এবং দৌড়ঝাঁপ করলে জীবনিশক্তি কতদিন আর টিকে রইবে। আমি বাসায় ফিরে ক্লান্ত অবসন্ন তোমাকে না দেখে শরতের শিশির ভেজা তাজা শিউলিফুলের মতো তোমার মুখখানি দেখতে চাই। সংসারে বাইরের যতো ঝড়ঝাঁপটা আমি সামলাই, তুমি বরং সংসার এবং আমাকে সামলাও ভালোবাসা এবং মমতার সাথে।
এরকম মিঠি মিঠি বোল শুনে আপা কেন, আরো অনেক নারীই হয়তো সকাল সন্ধে উদয়াস্ত না খেটে গৃহকোনে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলতো। তবে এখন পর্যন্ত এরা কোনো ভুল করেছে এমন কোনো আলামত দেখা দেয়ার পরিবর্তে এখনও যেন তাদের হানিমুন পর্ব চলছে। তাদের ভাবসাবে বিয়ের পর যে বছর তিনেক কেটে গেছে তা বুঝার কোনো উপায় নাই।
আমার বাবা মাঝারি উচ্চতার গোবেচারা টাইপের একেবারে সাধারন চেহারার একজন মানুষ। গায়ের রঙ ফর্সা দূরের কথা,একটু যেন কালচে ঘেষা। বিপরীতে মা যেমন দীর্ঘাঙ্গী, তেমনি তাঁর গায়ের রঙ। একেবারে দুধে আলতা মেশানো মিষ্টি ফর্সা। তারপর মা হাসলে আসলেই যেন মুক্তো ঝরে। বাবার শ্যালিকারা বহুদিন এই জুটিকে ঠাট্টা করে বলতো, বাঁদরের গলায় সিঁদুরে আম। আপা পেয়েছে বাবার প্রায় সবকিছু। আপনজনেরা ভালোবেসে বলতো উজ্জ্বল শ্যাম বর্ন। উচ্চতাও মাঝারি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আপার দু' ব্যাচ সিনিয়র মেধাবী এক ছাত্রের এই আপাকেই চোখে লেগে গেল। শেষ পর্যন্ত তিনিই এখন আমার দুলাভাই।
আমি মায়ের রুপ রঙ তো পেয়েছিই, বাড়তি পেয়েছি গভীর মায়াবী এক জোড়া চোখ। সেই চোখে একটু কাজলের রেখা টানলেই কতজন যে ঘায়েল হয়ে যায় তা একটু বড় হওয়ার পর থেকেই টের পেয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু ঢাকায় আসার কিছুদিন পরেই মনে হচ্ছিল, আমার একেবারে সাধারন বড় বোনটির যোগ্যতার তূলনায় প্রাপ্তি অনেক অনেক বেশি।
দুলাভাই লম্বা একহারা গড়ন। পেটানো শরীর। পুরুষ মানুষের গায়ের রঙ যতোটা ফর্সা হলে খারাপ লাগেনা,ঠিক ততটাই ফর্সা তিনি। ছুটির দিনে কেন জানি দুজনেই দেরি করে ঘুম থেকে উঠতো। তারপর আদিখ্যেতা করে আপা পরম যত্নে দুলাভাইকে সেভ করে দিতো। আফটার সেভ লাগিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে আফটার সেভ মেশানো দুলাভাইর গায়ের গন্ধ টেনে নিতো। ভালেবাসার মানুষের সবকিছুই মনে হয় ভালো লাগে। ছুটির দিনের সকালবেলা এগুলো দুলাভাই উপভোগ করলেও আমার কেন জানি গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিতো। প্রতি রোজার ঈদের ছুটিতে তারা নতুন নতুন দেশে ঘুরে বেড়াতো। এছাড়া অফিসে দু'একদিন ছুটি মিললেই দেশের যেখানে যতো সুন্দর জায়গা আছে দুজনে চলে যেতো। আমি মনে মনে ভাবতাম, একটা মেয়ে বিয়ের পরে স্বামীর কাছ থেকে যতটুকু ভালোবাসা,মনোযোগ,গুরুত্ব এবং মর্যাদা আশা করতে পারে,আপা না চাইতেই বোধহয় তার চেয়ে বেশি পেয়ে গেছে।
অথচ এতটা পাওয়ার কথা আমার! সাধারন চেহারার, মাঝারি মেধার আপার এই সৌভাগ্য কেন যেন আমার সহ্য হতোনা। একদিন ব্যাপারটা বুঝে ফেললাম। আমি নিজের অজান্তেই দুলাভাইর প্রেমে পড়ে গেছি। প্রথম দিকে একটু বাঁধো বাঁধো লাগলেও পরে মনে হলো, এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নাই। নিজেকে অন্যভাবে বুঝালাম; শ্রীদেবী,হেমামালিনীর মতো ডাকসাইটে সুন্দরীরা বিবাহিত লোকের সাথে শুধু প্রেমই করেনি,তাদের সাথে ঘরও বেঁধেছে। আমিও তো চোখে পড়ার মতো সুন্দরী। আর সুন্দরী মেয়েদের দোজবরে বিয়ে হওয়াটাই যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে।
দুলাভাইর প্রতি আমার আকর্ষন এবং আপার প্রতি বিরক্তিমেশানো ঈর্ষা দিনদিন বেড়েই চললো। ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর একটা সুযোগ হঠাৎ করেই এসে গেল।
লালামাাটিয়া থেকে মতিঝিলে দুলাভাইর অফিসে যেতে যানজটের কারনে ইদানীং প্রায়ই দেরী হচ্ছিল।তাই এখন থেকে আধা ঘন্টা আগে বের হতে চাচ্ছেন।আমি এই সুযোগে বললাম,তাহলে তো ভালোই হলো।একসাথে বের হয়ে আমি ফার্মগেটে কোচিংয়ে নেমে যাবো। রিকশা ঠেলে প্রতিদিন যাওয়ার চেয়ে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে। যেই কথা সেই কাজ, সপ্তাহে পাঁচ দিন দুলাভাই আর আমি একসাথে বের হই। ড্রাইভার থাকে,তাই খুব একটা প্রগল্ভ হইনা। একদিন অসুস্থতার জন্য ড্রাইভার আসতে পারেনি। দুলাভাই নিজে ড্রাইভিং সীটে,আমি তার পাশে। ভালোলাগায় মনটা আচ্ছন্ন হয়ে গেল। দুলাভাইকে বললাম,আমাকে নিয়ে একদিন লংড্রাইভে যাবেন? পথে গাড়ি থামিয়ে ফুচকা চটপটি আইসক্রিম খাবো। দুলাভাই হেসে বললেন, সুন্দরী শ্যালিকা চাইলে না করি কিভাবে? তোমার আপাকে বলে দেখো, এক ছুটির দিনে বেড়িয়ে পড়বো।
অভিমান করে বললাম, শুধু আমাকে নিয়ে যেতে ভয় পান বুঝি! দরকার নেই যাওয়ার। আপনি আপার আঁচলেই বাঁধা থাকুন।
হোহো করে হেসে দুলাভাই বললেন, রাগ করলে তোমাকে যে কি অপূর্ব লাগে তা কি তুমি বুঝো? যাও, এ কারনেই তোমাকে নিয়ে বের হবো একদিন।
খুশিতে মনটা ভরে গেল। যাক, অবশেষে শিকার নিজেেই খাঁচার দিকে এগুচ্ছে।
বাবা মা নিয়মিত আমার পড়াশোনার খবর নেন। বাবা বলেন,আমি সিরিয়াসলি চেষ্টা করলে নিশ্চিতভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবো। মা বলেন,পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আমি যেন আপাকে সংসারের কাজে সাহায্য করি। বাবা মা'র কথা কিভাবে ফালাই? ঢাকায় এই পরিবারের কাছাকাছি থাকার জন্য আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করি, আর আপার কাজে সাহায্য করতে দুলাভাইর দেখভালের দায়িত্ব অনেকটাই মাথা পেতে নিয়েছি।
আমার ভর্তি পরীক্ষা খুব ভালো হলো। একই সময় জাল গুটিয়ে আনার মহাসুযোগ হাতের মুঠোয় এসে গেল। আপার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী চিটাগাংএ থাকে। তার বিবাহবার্ষিকীতে আপা দুলাভাইর দাওয়াত। কিন্তু শেষ মুহুর্তে দুলাভাই অফিসিয়াল ঝামেলায় আটকে যাওয়ায় আপাও যেতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু দুলাভাইর পিড়াপিড়ি ও বান্ধবীর অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে রাজী হলেন। আমাকে বলে গেলেন,আমি যেন দুলাভাইর খেয়াল রাখি, কোনোরকম অযত্ন না হতে দেই।
মনে মনে বললাম, আমি স্পেশাল খেয়ালই রাখবো,তোমার চিন্তা করতে হবে না। এসে হয়তো দেখবে, সবকিছু বদলে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালের ফ্লাইটে আপাকে উঠিয়ে দিয়ে দুলাভাই অফিসে গেলেন জরুরী মিটিং এটেন্ড করতে। দুপুরেও ব্যস্ত থাকবেন জানিয়ে গেছেন। রাত আটটার দিকে ফিরে বললেন,আজ অফিসে বড়সড় একটা ডীল হয়ে গেল। সেই খুশিতে চলো তোমাকে নিয়ে বাইরে খেয়ে আসি। আমি ভালো মানুষ সেজে বললাম,আপনি সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত। বলেছেন, তাতেই আমি খুশি। আজ বাইরে না গিয়ে খেয়েদেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিন। কাল সকালে দেখা যাবে।
খেতে বসে দুলাভাই অবাক। তার পছন্দের টাকি ভর্তা, শুটকি বেগুন,সর্ষে ইলিশ, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট আর মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরী টক দই, সঙ্গে যশোরের খেজুরের পাটালী দেখে খুশিতে সারা মুখে আলো ফুটলো। খেয়ে উঠে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বললেন,কোনো ফাইভস্টার হোটেলে খেয়ে এই তৃপ্তি পেতাম না। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। খুব খুশি হয়েছি। বলো, কি চাও তুমি। আমার সাধ্যে কুলালে যা চাইবে তা পাবে।
বললাম,আপনি খুশি হয়েছেন এতেই আমি আনন্দিত। কিছু দিতে হবেনা।
--- তা বললে হবে না। আমার নিজের তৃপ্তির জন্য হলেও কিছু চাও।
--- ঠিক আছে। কাল সারাটা দিন আমাকে দিন। সকালে দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হবো। পথে থেমে কোথাও নাস্তা করে নেবো। দুপুরাবধি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে অতিথি পাখী দেখে ওখানকার বিখ্যাত বটতলার হোটেলে লাঞ্চ করবো। তারপরেরটা পরে ভাবা যাবে। যাবেন?
--- যাবোনা মানে? তোমার মাথায় এত সুন্দর পরিকল্পনা কিভাবে এলো তাই ভেবে আমি অবাক। নিশ্চয়ই যাবো। তুমি সবকিছু গুছিয়ে রেখো। কাল হবে শ্যালিকার সাথে চড়ুইভাতি।
আমি মনে মনে বললাম, আমার মাথায় এর চেয়েও ভয়ানক পরিকল্পনা আছে। ধীরে ধীরে সময়মতো আস্তিন থেকে এক এক করে বের করবো। কালকের দিনটি শুধু নয়,এর পরের সবগুলো দিন শুধু আমার।
দুলাভাই একটা কর্পোরেট হাউসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আপা বিয়ের আগেই একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকুরিতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর দুলাভাই আপাকে বুঝালেন, এভাবে সপ্তাহের পাঁচ দিন আসা যাওয়া সহ দুজনেই বারো ঘন্টা করে পরিশ্রম এবং দৌড়ঝাঁপ করলে জীবনিশক্তি কতদিন আর টিকে রইবে। আমি বাসায় ফিরে ক্লান্ত অবসন্ন তোমাকে না দেখে শরতের শিশির ভেজা তাজা শিউলিফুলের মতো তোমার মুখখানি দেখতে চাই। সংসারে বাইরের যতো ঝড়ঝাঁপটা আমি সামলাই, তুমি বরং সংসার এবং আমাকে সামলাও ভালোবাসা এবং মমতার সাথে।
এরকম মিঠি মিঠি বোল শুনে আপা কেন, আরো অনেক নারীই হয়তো সকাল সন্ধে উদয়াস্ত না খেটে গৃহকোনে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলতো। তবে এখন পর্যন্ত এরা কোনো ভুল করেছে এমন কোনো আলামত দেখা দেয়ার পরিবর্তে এখনও যেন তাদের হানিমুন পর্ব চলছে। তাদের ভাবসাবে বিয়ের পর যে বছর তিনেক কেটে গেছে তা বুঝার কোনো উপায় নাই।
আমার বাবা মাঝারি উচ্চতার গোবেচারা টাইপের একেবারে সাধারন চেহারার একজন মানুষ। গায়ের রঙ ফর্সা দূরের কথা,একটু যেন কালচে ঘেষা। বিপরীতে মা যেমন দীর্ঘাঙ্গী, তেমনি তাঁর গায়ের রঙ। একেবারে দুধে আলতা মেশানো মিষ্টি ফর্সা। তারপর মা হাসলে আসলেই যেন মুক্তো ঝরে। বাবার শ্যালিকারা বহুদিন এই জুটিকে ঠাট্টা করে বলতো, বাঁদরের গলায় সিঁদুরে আম। আপা পেয়েছে বাবার প্রায় সবকিছু। আপনজনেরা ভালোবেসে বলতো উজ্জ্বল শ্যাম বর্ন। উচ্চতাও মাঝারি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আপার দু' ব্যাচ সিনিয়র মেধাবী এক ছাত্রের এই আপাকেই চোখে লেগে গেল। শেষ পর্যন্ত তিনিই এখন আমার দুলাভাই।
আমি মায়ের রুপ রঙ তো পেয়েছিই, বাড়তি পেয়েছি গভীর মায়াবী এক জোড়া চোখ। সেই চোখে একটু কাজলের রেখা টানলেই কতজন যে ঘায়েল হয়ে যায় তা একটু বড় হওয়ার পর থেকেই টের পেয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু ঢাকায় আসার কিছুদিন পরেই মনে হচ্ছিল, আমার একেবারে সাধারন বড় বোনটির যোগ্যতার তূলনায় প্রাপ্তি অনেক অনেক বেশি।
দুলাভাই লম্বা একহারা গড়ন। পেটানো শরীর। পুরুষ মানুষের গায়ের রঙ যতোটা ফর্সা হলে খারাপ লাগেনা,ঠিক ততটাই ফর্সা তিনি। ছুটির দিনে কেন জানি দুজনেই দেরি করে ঘুম থেকে উঠতো। তারপর আদিখ্যেতা করে আপা পরম যত্নে দুলাভাইকে সেভ করে দিতো। আফটার সেভ লাগিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে আফটার সেভ মেশানো দুলাভাইর গায়ের গন্ধ টেনে নিতো। ভালেবাসার মানুষের সবকিছুই মনে হয় ভালো লাগে। ছুটির দিনের সকালবেলা এগুলো দুলাভাই উপভোগ করলেও আমার কেন জানি গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিতো। প্রতি রোজার ঈদের ছুটিতে তারা নতুন নতুন দেশে ঘুরে বেড়াতো। এছাড়া অফিসে দু'একদিন ছুটি মিললেই দেশের যেখানে যতো সুন্দর জায়গা আছে দুজনে চলে যেতো। আমি মনে মনে ভাবতাম, একটা মেয়ে বিয়ের পরে স্বামীর কাছ থেকে যতটুকু ভালোবাসা,মনোযোগ,গুরুত্ব এবং মর্যাদা আশা করতে পারে,আপা না চাইতেই বোধহয় তার চেয়ে বেশি পেয়ে গেছে।
অথচ এতটা পাওয়ার কথা আমার! সাধারন চেহারার, মাঝারি মেধার আপার এই সৌভাগ্য কেন যেন আমার সহ্য হতোনা। একদিন ব্যাপারটা বুঝে ফেললাম। আমি নিজের অজান্তেই দুলাভাইর প্রেমে পড়ে গেছি। প্রথম দিকে একটু বাঁধো বাঁধো লাগলেও পরে মনে হলো, এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নাই। নিজেকে অন্যভাবে বুঝালাম; শ্রীদেবী,হেমামালিনীর মতো ডাকসাইটে সুন্দরীরা বিবাহিত লোকের সাথে শুধু প্রেমই করেনি,তাদের সাথে ঘরও বেঁধেছে। আমিও তো চোখে পড়ার মতো সুন্দরী। আর সুন্দরী মেয়েদের দোজবরে বিয়ে হওয়াটাই যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে।
দুলাভাইর প্রতি আমার আকর্ষন এবং আপার প্রতি বিরক্তিমেশানো ঈর্ষা দিনদিন বেড়েই চললো। ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর একটা সুযোগ হঠাৎ করেই এসে গেল।
লালামাাটিয়া থেকে মতিঝিলে দুলাভাইর অফিসে যেতে যানজটের কারনে ইদানীং প্রায়ই দেরী হচ্ছিল।তাই এখন থেকে আধা ঘন্টা আগে বের হতে চাচ্ছেন।আমি এই সুযোগে বললাম,তাহলে তো ভালোই হলো।একসাথে বের হয়ে আমি ফার্মগেটে কোচিংয়ে নেমে যাবো। রিকশা ঠেলে প্রতিদিন যাওয়ার চেয়ে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে। যেই কথা সেই কাজ, সপ্তাহে পাঁচ দিন দুলাভাই আর আমি একসাথে বের হই। ড্রাইভার থাকে,তাই খুব একটা প্রগল্ভ হইনা। একদিন অসুস্থতার জন্য ড্রাইভার আসতে পারেনি। দুলাভাই নিজে ড্রাইভিং সীটে,আমি তার পাশে। ভালোলাগায় মনটা আচ্ছন্ন হয়ে গেল। দুলাভাইকে বললাম,আমাকে নিয়ে একদিন লংড্রাইভে যাবেন? পথে গাড়ি থামিয়ে ফুচকা চটপটি আইসক্রিম খাবো। দুলাভাই হেসে বললেন, সুন্দরী শ্যালিকা চাইলে না করি কিভাবে? তোমার আপাকে বলে দেখো, এক ছুটির দিনে বেড়িয়ে পড়বো।
অভিমান করে বললাম, শুধু আমাকে নিয়ে যেতে ভয় পান বুঝি! দরকার নেই যাওয়ার। আপনি আপার আঁচলেই বাঁধা থাকুন।
হোহো করে হেসে দুলাভাই বললেন, রাগ করলে তোমাকে যে কি অপূর্ব লাগে তা কি তুমি বুঝো? যাও, এ কারনেই তোমাকে নিয়ে বের হবো একদিন।
খুশিতে মনটা ভরে গেল। যাক, অবশেষে শিকার নিজেেই খাঁচার দিকে এগুচ্ছে।
বাবা মা নিয়মিত আমার পড়াশোনার খবর নেন। বাবা বলেন,আমি সিরিয়াসলি চেষ্টা করলে নিশ্চিতভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবো। মা বলেন,পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আমি যেন আপাকে সংসারের কাজে সাহায্য করি। বাবা মা'র কথা কিভাবে ফালাই? ঢাকায় এই পরিবারের কাছাকাছি থাকার জন্য আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করি, আর আপার কাজে সাহায্য করতে দুলাভাইর দেখভালের দায়িত্ব অনেকটাই মাথা পেতে নিয়েছি।
আমার ভর্তি পরীক্ষা খুব ভালো হলো। একই সময় জাল গুটিয়ে আনার মহাসুযোগ হাতের মুঠোয় এসে গেল। আপার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী চিটাগাংএ থাকে। তার বিবাহবার্ষিকীতে আপা দুলাভাইর দাওয়াত। কিন্তু শেষ মুহুর্তে দুলাভাই অফিসিয়াল ঝামেলায় আটকে যাওয়ায় আপাও যেতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু দুলাভাইর পিড়াপিড়ি ও বান্ধবীর অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে রাজী হলেন। আমাকে বলে গেলেন,আমি যেন দুলাভাইর খেয়াল রাখি, কোনোরকম অযত্ন না হতে দেই।
মনে মনে বললাম, আমি স্পেশাল খেয়ালই রাখবো,তোমার চিন্তা করতে হবে না। এসে হয়তো দেখবে, সবকিছু বদলে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালের ফ্লাইটে আপাকে উঠিয়ে দিয়ে দুলাভাই অফিসে গেলেন জরুরী মিটিং এটেন্ড করতে। দুপুরেও ব্যস্ত থাকবেন জানিয়ে গেছেন। রাত আটটার দিকে ফিরে বললেন,আজ অফিসে বড়সড় একটা ডীল হয়ে গেল। সেই খুশিতে চলো তোমাকে নিয়ে বাইরে খেয়ে আসি। আমি ভালো মানুষ সেজে বললাম,আপনি সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত। বলেছেন, তাতেই আমি খুশি। আজ বাইরে না গিয়ে খেয়েদেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিন। কাল সকালে দেখা যাবে।
খেতে বসে দুলাভাই অবাক। তার পছন্দের টাকি ভর্তা, শুটকি বেগুন,সর্ষে ইলিশ, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট আর মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে তৈরী টক দই, সঙ্গে যশোরের খেজুরের পাটালী দেখে খুশিতে সারা মুখে আলো ফুটলো। খেয়ে উঠে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বললেন,কোনো ফাইভস্টার হোটেলে খেয়ে এই তৃপ্তি পেতাম না। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। খুব খুশি হয়েছি। বলো, কি চাও তুমি। আমার সাধ্যে কুলালে যা চাইবে তা পাবে।
বললাম,আপনি খুশি হয়েছেন এতেই আমি আনন্দিত। কিছু দিতে হবেনা।
--- তা বললে হবে না। আমার নিজের তৃপ্তির জন্য হলেও কিছু চাও।
--- ঠিক আছে। কাল সারাটা দিন আমাকে দিন। সকালে দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হবো। পথে থেমে কোথাও নাস্তা করে নেবো। দুপুরাবধি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে অতিথি পাখী দেখে ওখানকার বিখ্যাত বটতলার হোটেলে লাঞ্চ করবো। তারপরেরটা পরে ভাবা যাবে। যাবেন?
--- যাবোনা মানে? তোমার মাথায় এত সুন্দর পরিকল্পনা কিভাবে এলো তাই ভেবে আমি অবাক। নিশ্চয়ই যাবো। তুমি সবকিছু গুছিয়ে রেখো। কাল হবে শ্যালিকার সাথে চড়ুইভাতি।
আমি মনে মনে বললাম, আমার মাথায় এর চেয়েও ভয়ানক পরিকল্পনা আছে। ধীরে ধীরে সময়মতো আস্তিন থেকে এক এক করে বের করবো। কালকের দিনটি শুধু নয়,এর পরের সবগুলো দিন শুধু আমার।