What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made মুখোশ 🎭🌀🎭🌀🎭🌀🎭🌀🎭🌀 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
- চুপ একদম চুপ , একটু শব্দও যেন এই বাসার বাহিরে না যায়। বলেই আশফাক আমার কুঁকড়ানো শরীরে আবার একটি লাথি মারল।তারপর দড়াম করে দরজা লাগিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। আমার নাক ফেটে গল গল করে রক্ত পড়ছে। আমি অনেক কষ্টে উঠে রুমের লাগোয়া বাথরুমে গিয়ে নাকে মুখে পানি দিতেই ব্যাথাটা অনুভূত হল। আমি বাথরুমের ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আশফাকের সাথে এক বছর আগে পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে হয়েছে।আশফাক একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে খুব ভালো বেতনের চাকরি করে। আমার সাথে বিয়ের দুইবছর আগে আমাদের এলাকায় ওরা বাসা ভাড়া নিয়ে এসেছিল। মাঝে মাঝে রাস্তায় ওর সাথে আমার দেখা হলেও কখনো কথা হয়নি। আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ার সময় একদিন আশফাকদের বাড়িয়ালী আমাদের বাসায় এসে আম্মাকে আমার সাথে আশফাকের বিয়ের প্রস্তাব করে। আম্মা প্রথমে রাজি ছিলনা, বলেছিলেন আমার মেয়ে ছোট থেকে নিজের বাড়িতে থেকেছে, এখন বুঝি বিয়ের পরে ভাড়া বাড়িতে গিয়ে থাকবে! ও মিলির আব্বা তুমি এই বিয়েতে মত দিওনা। আব্বা খোঁজ খবর করে দুইদিন পরে আম্মাকে বললেন মিলির মা, আমি ছেলের ব্যাপারে সব খবর নিয়েছি, ছেলে খুব ভালো গো। এখন নিজেদের বাড়ি নেই কিন্তু যাত্রাবাড়ীর ওইদিকে পাঁচ কাঠা জায়গা আছে । বিয়ের পরেই বাড়ির কাজ ধরবে। সবচেয়ে বড় কথা দুই বছর হল ছেলেটা এই এলাকায় এসেছে কখনো কারো সাথে কোন খারাপ ব্যাবহার করেনি। মসজিদে নামায ও পড়ে দেখি মাঝে মাঝে, দেখা হলেই সালাম দেয়, এই রকম ছেলেতো এই যুগে দেখাই যায়না। আব্বার কথা খুবই সত্যি। আশফাক এই এলাকার সবচেয়ে ভালো মানুষ, কারো বিপদ হলেই সবার আগে ও দৌড়ে যায়, কারো সাথে কোন খারাপ ব্যাবহার করে না, অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস, এর বাহিরে ওর কোন আড্ডা নেই। কিন্তু আমরা বুঝতেও পারিনি কি এক ভয়ানক মুখোশ পরে আশফাক চলা-ফেরা করে।



আমাদের বিয়ের পর পাঁচ মাস আমরা ভালই ছিলাম। হয়তো আরও ভালো থাকতাম যদি আশফাকের কথা মত আমার বাবার বাড়ি থেকে আমার ভাগের সম্পত্তি নিয়ে আসতাম। কিন্তু এই কাজটি করতে আমার বিবেকে বাঁধে । কেন আমি আমার বাবার বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে এসে ওর সাথে থাকবো? আমার বাবা যদি নিজের ইচ্ছায় আমাকে কিছু দেন তাহলে এক কথা। কিন্তু আমি জোর করে নিয়ে আসবো এতটা নিলজ্জ আমি হতে পারবোনা। বিয়ের পাঁচ মাসের সময় ও একদিন আমাকে বলল



-মিলি শুন তুমি তো জানো আমাদের পাঁচ কাঠার একটি জমি আছে, এখন ঐ জায়গায় বিল্ডিং করতে গেলে অনেক খরচ, আর প্রতি মাসের ভাড়ার টাকাটা যদি জমা করতে পারতাম তাহলে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ির কাজটা ধরতে পারতাম। চল আমরা তোমাদের বিল্ডিং এর তিন তলায় উঠে যাই, ডান পাশের ফ্ল্যাটে আমরা থাকবো আর বাম পাশেরটা ভাড়া দিবো। আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম আমার আব্বাতো উনার সম্পত্তি এখনো আমার কোন ভাইবোনকে ভাগ করে দেননি।



- তাতে কি মিলি! তোমার বড় দুই বোনের তো নিজেদের বাড়ি আছে আর তোমার ভাই তো আব্বার সাথেই থাকে। আমরা যখন নিজেদের বাড়ি করবো সে সময় আমরা কি আর এখানে থাকবো?



- তাহলে আব্বাকে বলি ডান পাশের ফ্লাটটা আমাদের জন্য খালি করে দিতে?



- শুধু ডান পাশেরটা কেন? বলবে পুরো তিন তলাটাই খালি করে দিতে



- ওকি কথা! এই কথা বলা মানে তো আমি আমার ভাগের সম্পত্তি চাইছি। এই কথা আমি আব্বাকে বলতে পারবোনা। এই কথা শুনেই ও রাগে গজগজ করতে করতে বলল কেন? কেন পারবেনা? এই জায়গায় কি তুমি ভাগ পাবেনা? তুমি কি কোন দয়া চাচ্ছ? তুমি তোমার হক চাইছ।



আমি ওর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম কি বলে এই লোক আমার হক মানে কি! আমি কি এই সব নিজের টাকায় করেছি নাকি?এই কথা বলতেই বলল কেন সব ছেলে-মেয়েরাই বাবার সম্পত্তি পায় এটা তো জানা কথা। নিজের টাকায় করতে হবে কেন হ্যাঁ?



- শুন বাবা বেঁচে থাকতে বাবার সম্পদ শুধু উনারই। উনি কাকে দিবেন না দিবেন সেটা উনার ব্যাপার। আর উনি যদি মারা যাবার আগে কোন উইল করে না যান তাহলে সেটা সন্তানরা পাবে উত্তরাধিকার হিসাবে। এই সব কি তুমি জানো না?



- হুম আমাকে তো এখন তোমার থেকে জ্ঞান নিতে হবে। তাঁর মানে এখন আমাকে তোমার আব্বার মারা যাবার জন্য দোয়া করতে হবে তাই তো? এই কথা শুনে আমি চিৎকার করে বললাম কি বলছ তুমি এই সব? সম্পত্তির জন্য আমার আব্বার মৃত্যু কামনা করবে তুমি ? ছিঃ ছিঃ তোমার মনের ভিতরটা এতো নোংরা আশফাক! এই কথা বলতেই আশফাক উঠে এসে দুই হাতে আমার গলা টিপে ধরে বলল - চুপ, ফাজিল মেয়ে আমার সাথে একদম উঁচু গলায় কথা বলবি না, আমি কিছু চাইতে হবে কেন তোর বাবার কাছে? উনি বুঝে নাঃ আমি কেন উনার চার ফুটি, মোটা মেয়েকে বিয়ে করেছি? আমার মত দেখতে সুন্দর,লম্বা এমন জামাই পেয়েছে তোর অন্য বোনেরা? আর তুই তো তোর অন্য বোনদের মত দেখতে ভালো না।ওরা যদি তোর মত হতো তাহলে ওদের জামাইরাও সব কিছু চাইতো। এই আমি বলে রাখছি তোর বাবাকে গিয়ে বলবি আমি তোদের তিন তলাটা চাই। বলেই ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। আশফাক আমার গায়ে হাত তুলেছে এই ব্যাপারটায় আমি যতোটানা অবাক হয়েছি তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি ওর বলা কথা গুলো শুনে। আশফাক আমাকে সম্পত্তির জন্য বিয়ে করেছে! কিন্তু বিয়ের আগেতো এই ধরনের কোন কথা ওরা বলেনি, আমার শাশুড়ি বারবার বলেছে আমরা শুধু মিলিকে চাই আল্লাহ্‌র রহমতে আমার ছেলে নিজে থেকে সব করে নিতে পারবে। আমি কাঁদতে কাঁদতে আমার শাশুড়ির রুমে গেলাম উনি আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন- কি হয়েছে মিলি! তুমি কাঁদছ কেন?



- মা, আপনার ছেলে বলছে আমি যেন আমার বাবার কাছে নিজের ভাগের সম্পত্তি চেয়ে নিয়ে আসি। আমি ভেবেছিলাম আমার শাশুড়ি আমার ব্যাপারটা বুঝবেন কিন্তু আমি বুঝতে পারি নাই আমার জন্য আরও দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে। উনি চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন এই কথা আশফাক কেন বলতে হবে মিলি? তুমি দেখো না আমার ছেলেটা কতো কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে আর সেই টাকার বড় একটা অংশ বাড়ি ভাড়া দিয়ে দিতে হয়। তোমার বাবা তো উনার পুরো বাড়ি দিয়ে দিবে না । শুধু একটি ফ্লোর ইতো দিবে। এটা নিয়ে এতো কান্না-কাটির কি হল আমি তো বুঝি না। আমি বুঝতে পারলাম এই পরিবারের আসল চেহারা আমার পরিবার বুঝতে পারেনি শুধু আমার পরিবার কেন? এই মহল্লার কেউ ভাবতেই পারবেনা আশফাকের ভিতরটা এতো কুৎসিত। আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না। সেই রাত আমি কিছুই খাইনি , সারা রাত শুধু কেঁদেছি । আমাকে খাবার জন্য কেউ বলেওনি একবার ও । আমার শাশুড়ি নিজেরা খেয়ে শুধু আমাকে বলে গেছে শুধু শুয়ে থাকলেই চলবে? বাসার কাজ কে করবে আমি? উঠো উঠে টেবিলের খাবার গুলো গুছিয়ে রেখে দেও।



আমার ভাবতেও কষ্ট হতে লাগলো যে মানুষটাকে আমি আমার সব দিয়ে এই পাঁচ মাসে আপন করে নিয়েছি, সেই মানুষটা আমাকে ভালবেসে না আমার আব্বার টাকাকে ভালবেসে আমাকে বিয়ে করেছে।কিন্তু আমি বা আমার আব্বা কেউ তো ওর চেহারা দেখে ওকে পছন্দ করি নাই। আমরা তো ওর ব্যাবহার দেখে ওকে পছন্দ করেছি। আসলে মানুষ ঠিকই বলে, যে নিজের চোখেও অনেক সময় ভুল দেখা যায়। আমরা শুধু ওর বাহিরের ব্যাবহার দেখেছি কিন্তু ভিতরটা বুঝতে পারনি। আমি ঠিক করলাম টাকার বিনিময়ে নয় নিজের ভালবাসার জোরে আমি আশফাকের সাথে সংসার করবো। আমি ওকে বুঝাব আমাদের যা আছে তা নিয়েই আমরা আস্তে আস্তে সব করবো । আমি আমার ভালবাসা দিয়ে ওকে জয় করবো। কিন্তু হায়, আমি ভুল ছিলাম এই সাত মাসে আমি আশফাক কে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু ওর কথা একটাই, আমি আমার ভাগ না নিলে ওর ভালবাসা কখনো পাবো না, ও আমার সামনে অনেক মেয়েদের সাথে ফোনে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে লাগলো। আমি কিছু বললেই বলত তুমিও বল অন্য ছেলেদের সাথে আমি কি নিষেদ করেছি? ওঃ অবশ্য তোমার সাথে কে কথা বলবে তোমার যা অবস্থা! বলেই হাসতে থাকে। লজ্জায় অপমানে আমি মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করি আর তার বিনিময়ে আমাকে আশফাক এমন করেই মেরে নাক - চোখ ফাটিয়ে দেয়। আর আমার শাশুড়ি বললেন ইসঃ এমন গোঁয়ার মেয়েও দেখিনি বাবা! আমরা হলে অনেক আগেই নিজের স্বামীর জন্য বাবার সব নিয়ে আসতাম। যদি তোর বাবার কম থাকতো তা হলে একটা কথা ছিল তাঁর তো ঢের আছে তারপরেও কি কিপটেমি । আমি নিরবে সব সহ্য করে যাই আর আল্লাহ্‌র কাছে নামায পড়ে আশফাকের হেদায়াত কামনা করি। দিন দিন আমার শরীর ভাঙতে থাকে । আব্বা একদিন আমাকে দেখে বললেন মা'রে- আশফাক কি তোর সাথে ভালো ব্যাবহার করে? আমি বলি হুম আব্বা করে তো। তোমারতো জানো ও কতো ভালো মানুষ। আব্বাও মাথা নাড়েন কিন্তু মুখে চিন্তার রেখা পড়ে।



আমি ফ্রিজ থেকে বরফ আনতে রুম থেকে বের হয়েই থমকে দাঁড়াই, দেখি আব্বা আমাদের ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছেন। আব্বা আমাকে দেখেই ভূত দেখার মত চমকে উঠেন। দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে ধরে বললেন কি হয়েছে মা; কি হয়েছে তোর? আমি আর আব্বার কাছে কিছু লুকাতে পারি নাই । আমি আব্বাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বলি।



আমার শাশুড়ি আমাদের পিছনেই দাঁড়ানো ছিল কিন্তু উনার চেহারায় কোন ভাবান্তর দেখলাম না। আশফাকও ততোক্ষণে ফিরে এসেছে , আব্বা সব কথা শুনে বললেন মিলি তুই কি চাস? তুই যদি চাস তাহলে শুধু তিন তলা কেন? আমার জমানো সব টাকাও আমি তোকে দিয়ে দিবো। কিন্তু মা রে টাকা দিয়ে কি সুখ কিনা যায়! বলেই আব্বা চোখের পানি মুছতে লাগলেন। আমি আব্বার হাত ধরে বললাম আব্বা এই জন্যইতো আমি এতো দিন তোমাদের কিছু বলিনি । আমার শাশুড়ি বলে উঠলেন বেয়াই আপনি এক কাজ করুন ফ্ল্যাট দেয়া লাগবেনা কিছু টাকা ক্যাশ দিয়ে দিন, বাড়ির কাজটা ধরুক আশফাক, আর আশফাক কে দিলেতো তা আপনার মেয়েরই থাকবে । আশফাক মিলির সাথে আর কোন খারাপ ব্যাবহার করবেনা। আমি কথা দিলাম। আব্বা আশফাকের দিকে তাকিয়ে বললেন তোমার মা যেটা বললেন তোমার ওকি এই মত?



- আশফাক মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আব্বা বললেন যদি দিতেই হয় তাহলে আমার মেয়েকে দিবো। আর মেয়েকে যদি সব আমি করে দিতে হয় তাহলে আশফাকের মত জানয়ারের কি কাজ?



-কি বলেন বেয়াই সাহেব! মেয়ে বিয়ে দিলে এইরকম দিতে হয়। আপনি ও দেখি আপনার মেয়ের মত কথা বলেন। সেই সম্পত্তি তো দিবেনই কিন্তু স্বামী না থাকলে হবে?আমার আশফাক ছেলে মানুষ ও দুই তিনটা বিয়ে করলেও দোষ হবে না। কিন্তু আপনার মেয়েরই কিন্তু বদনাম হবে।



আব্বা আমার শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য স্বামী কিনতে হবে এই কথা আগে জানলে আমি কখনো আমার মেয়েকে বিয়েই দিতাম না। আর বদনামের কথা বলছেন, আপনার ছেলের যদি বদনাম না হয় আমার মেয়ের ও হবে না । আর বাকি থাকলো দুই- তিনটা বিয়ে করানো তো? সেই শখ আপনার পূরণ হবে না। আমি এখনি আমার মেয়েকে নিয়ে থানায় যাবো তারপরে আপনার ছেলেকে পাকাপাকি ভাবে জেলে থাকার ব্যাবস্থা করবো। বলেই আব্বা আমাকে নিয়ে সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে আসলেন। পিছন থেকে আশফাক হুম্বি-তম্বি করতে লাগলো যদি থানায় যাই তাহলে ও এই করবে, সেই করবে। কিন্তু আমার আব্বা আমাকে নিয়ে সোজা থানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আমি শক্ত করে আমার আব্বার হাত ধরে রাখলাম ।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top