©তওহিদ মাহমুদ হোসেন ___
সদ্য ঘুরে এলাম কলকাতা থেকে। এবার নিয়ে আমার ছ'সাতবার যাওয়া হলো এ শহরটায়। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাসের কারণে কলকাতা শহরকে আমার কাছে খুব কাছের মনে হয়। ইতিহাস প্রেমী, ভোজন রসিক বা বা বইপোকা যাই হন না কেনো, কলকাতা সফরে আপনি সবটাই পাবেন। আজ আপনাদের সাথে কলকাতার বিখ্যাত কয়েকটি জায়গা আর কলকাতা ভ্রমণে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলব, যা হয়তো আপনাদের ভ্রমণকেও আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।
যাত্রা পর্ব
কলকাতায় আপনি যেতে পারেন বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে করে। সবচেয়ে সহজ উপায় বিমান যাত্রা, তাই খরচাটাও পড়বে বেশি। তবে এতে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি আগে থেকে ঠিকমত ফ্লাইট নির্বাচন করতে পারলে বাড়তি অন্তত একটা দিন পেয়ে যাবেন, যেটা বাসে বা ট্রেনে গেলে সম্ভব না। তবে কম খরচে সারতে চাইলে আর হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে বাস বা ট্রেন একদম উপযোগী।
কলকাতার রাস্তা
হোটেল ব্যবস্থা
কলকাতা পৌঁছানোর পর থাকার ব্যবস্থা বা হোটেল নির্বাচন নিয়ে সবার উদ্বেগ থাকে। আপনি হয়ত স্বাভাবিকভাবেই মনে করবেন, নিউমার্কেটের আশেপাশে যে হোটেলগুলো আছে, তার একটাতে উঠে পড়ি। প্রথমদিকে আমিও তাই করেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, নিউমার্কেটের আশেপাশে না থেকে একটু ভেতরের দিকে হোটেল নির্বাচন করা। কারণ নিউমার্কেটের আশেপাশে মানে মার্কুইস বা সাদ্দার স্ট্রিট বা এর কাছাকাছি হোটেলগুলোতে অসম্ভব চাপ থাকে সারা বছর৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। আমি দু'বার এই বিপদে পড়েছিলাম। সবকিছু ফোনে ঠিক করার পরেও গিয়ে দেখি রুম নেই, এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় আপনি চাইলেও সহজেই আরেকটা মানসম্মত হোটেল খুঁজে পাবেন না।
তাই আমার মতে, নিউমার্কেটের থেকে কিছুটা দূরে থাকুন। একই পয়সায় অনেক ভাল হোটেল পাবেন। আগোডাতে বা বুকিং ডট কমে একটু খুঁজে দেখতে পারেন৷ অনেক ভাল হোটেল কাছাকাছি দামে পেয়ে যাবেন। সাদ্দার স্ট্রিটে (অনেকে সদর স্ট্রিটও বলেন) 'গোল্ডেন এপেল' কিংবা পার্ক স্ট্রিটের পার্ক হোটেলে থাকতে পারেন। একটি তিন অথবা চার তারকা হোটেলে থাকা আপনার পুরো ভ্রমণটাকে অনেক আরামদায়ক করে দিতে পারে। রাফি আহমেদ কিদওয়ায়ি রোডেও অনেকগুলো ভাল ভাল হোটেল আছে। এইসব এলাকার সুবিধে হচ্ছে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে শান্তিতে থাকতে পারবেন। পার্ক হোটেল থেকে রাসেল স্ট্রিটের মোড়ে হেঁটে যেতে দু'মিনিট। এরপর টানা রিকশা বা অটোতে চেপে যান না আপনার নিউমার্কেট।
যাতায়াত ব্যবস্থা
অনেকেই একটা সমস্যার কথা বলেন কলকাতায়। সেটা হলো অত্যধিক ট্যাক্সি ভাড়া। আর অপরদিকে ট্রাম বা বাসের রুট আমাদের জানা নেই। এজন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হচ্ছে উবার। এখানকার উবার চালকেরা কাজের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়। চাইলেই পাওয়া যায় যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়। এসি উবারের ভাড়া হলুদ নন-এসি এম্বাসেডরের থেকেও কম। এছাড়া কলকাতার মেট্রো দারুণ একটা জিনিস। অনেক দূরে যেতে পারবেন স্বল্প খরচ আর অল্প সময়ে।
নতুন ভ্রমণকারীরা কারেন্সি ভাঙ্গানোর জন্য অনেক সময় বিপাকে পড়ে যায়। অনেক জায়গা আছে, তবে সাদ্দার স্ট্রিটের দোকানগুলোই সম্ভবত সবচেয়ে ভাল রেট দেয়। ডলার এবং বাংলাদেশি টাকা- দুটোই ভাঙ্গাতে পারবেন।
কলেজ স্ট্রিট
ভ্রমণ পর্ব
দু'শ বছরের পুরনো জব চার্নকের শহরের প্রতিটা অলিতেগলিতে ইতিহাস আক্ষরিক অর্থেই লেপটে আছে। আর এখানেই কোলকাতার মূল আকর্ষণ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এমন কয়েকটা জায়গায় যেতে পারেন। যেমন- মার্বেল প্যালেস, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, পার্ক স্ট্রিটে কুইন্স ম্যানসন, কলেজস্ট্রিট, কফি হাউজ, হাওড়া ব্রিজ, এসপ্ল্যানেড। আমি বেলুড়, দীঘা, ডায়মন্ড হার্বার, শান্তিনিকেতন- এসব জায়গায় যাইনি। কালীঘাটেও নয়। তবে ইচ্ছে আছে সামনের দিনগুলোতে যাব।
এছাড়া আরও আছে অসংখ্য রোড, স্ট্রিট আর লেনের ছড়াছড়ি।
ইতিহাস আর গল্প সাহিত্যের অসংখ্য চরিত্রের স্মৃতিচারণ করা যায় কলকাতা শহরের অলিতে গলিতে। হ্যারিসন রোডে ব্যোমকেশ আর অজিত থাকত। মট লেনে তারানাথ তান্ত্রিক। রজনী সেন রোডে কে থাকত বলুন তো? ঠিক। ফেলুদা আর তোপসে। কিরীটী রায়ের আলিশান বাড়ি টালিগঞ্জে। আর বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনে থাকতেন আমাদের প্রিয় 'ঘনাদা'। কলেজস্ট্রিট তো শিক্ষার তীর্থ। কী নেই এখানে? প্রেসিডেন্সি কলেজ, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত কলেজ, হিন্দু কলেজ, কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, হেয়ার স্কুল। এই এক জায়গাতেই আপনি সবই পাবেন। যখন হেঁটে যাবেন দু'ধারে বইয়ের দোকানগুলোকে রেখে, মনে হবে আপনি ইতিহাসে অধ্যায় পেরুচ্ছেন। আরও আছে বড়বাজার, বউবাজার, ইত্যাদি।
এছাড়া আছে বিখ্যাত পার্ক স্ট্রিট, যার সরকারী নাম 'মাদার টেরিজা সরণি'। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট নামেই এর বেশি পরিচয়। পার্ক স্ট্রিট সেমিট্রি হলো বিশ্বের প্রাচীনতম নন-চার্চ সেমিট্রিগুলির একটি। ঊন-বিংশ শতাব্দীতে সম্ভবত এটিই ছিল ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম খ্রিস্টান কবরখানা। তখন এর নাম ছিল 'বেরিয়াল গ্রাউন্ড রোড'। পরে নাম দেয়া হয় পার্ক স্ট্রিট। এই পার্ক স্ট্রিট নামটা এসেছে সতের শতকের ইংরেজ চীফ জাস্টিস স্যার এলিজাহ'র ডিয়ার পার্ক ছিল এখানে। সেখান থেকেই পার্ক স্ট্রিট।
বাচ্চাদের ঘুরাঘুরির জন্য সবচেয়ে মোক্ষম জায়গা হচ্ছে সাইন্স সিটি। সারাদিন না হোক, তিন-চার ঘণ্টা তো অনায়াসেই কেটে যাবে। কেবল কারে চড়ে একটার পর একটা বিল্ডিং ঘুরে দেখানো যায় বাচ্চাদের। এছাড়া যেতে পারেন বিড়লা প্ল্যানেটরেইয়ামে।
সারাদিনের জন্য আরেকটা অপশন হলো নিক্কো পার্ক। সল্টলেক এলাকায় এই এমিউজমেন্ট পার্কটায় অসংখ্য রাইড পাবেন। বাচ্চাদের পছন্দ হবেই। তবে টিকিটের দাম একটু বেশিই মনে হয়েছে। সাউথ সিটি মলের টপ ফ্লোরে বাচ্চাদের আরেকটা খেলার জায়গা আছে। পাঁচশ টাকার টিকিটে অনেকগুলো খেলা খেলতে পারবে ওরা। আর বাচ্চারা বই পড়ুয়া হলে, 'অক্সফোর্ড' নামের বইয়ের দোকানটায় ঢুকিয়ে দিন। বই পড়বে, খাবে, কিনবে। আমার মতে বাচ্চাদের জন্য আদর্শ একটা জায়গা এই বুকস্টোরটা।
আপনি যদি বইপোকা হন, তাহলে কলেজস্ট্রিট আপনার কাশী-মক্কা-বেথেলহ্যাম। বই আরে বই, দু'র্যাকের মাঝখানে সরু সরু আইল। আর দু'ধারে কাতারে কাতারে বই। একতলা, দু'তলা মিলিয়ে যে কত বই, তা হিসেবের বাহিরে। মোটামুটি ঢাকার থেকে অর্ধেক দামে আপনি আসল বই পাবেন।
বিকেলে চলে যেতে পারেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। ওটার বিস্তৃত লনে গাছের ছায়ায় বসে থাকতে পারেন। উত্তর ফটক থেকে ভবন পর্যন্ত চওড়া রাস্তার দু-দিকে দুই প্রকাণ্ড জলাধার একাধারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মনোরম শোভা বর্ধন করে। যে দৃশ্য চাক্ষুষ করে অথবা লেন্স বন্দি করে সব বয়সের প্রেমিকপ্রেমিকা-ই রীতিমতো নস্টালজিক হয়ে যায়!
সন্ধ্যার আগেই একটা ট্যাক্সি ডেকে চলে যেতে পারেন মিলেনিয়াম পার্ক। গঙার ধারে এই জায়গাটা থেকে আপনি হাওড়া ব্রিজ দেখতে পাবেন। এত সুন্দর একটা জায়গা, যা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। এরপর আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামবে।
সদ্য ঘুরে এলাম কলকাতা থেকে। এবার নিয়ে আমার ছ'সাতবার যাওয়া হলো এ শহরটায়। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাসের কারণে কলকাতা শহরকে আমার কাছে খুব কাছের মনে হয়। ইতিহাস প্রেমী, ভোজন রসিক বা বা বইপোকা যাই হন না কেনো, কলকাতা সফরে আপনি সবটাই পাবেন। আজ আপনাদের সাথে কলকাতার বিখ্যাত কয়েকটি জায়গা আর কলকাতা ভ্রমণে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলব, যা হয়তো আপনাদের ভ্রমণকেও আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।
যাত্রা পর্ব
কলকাতায় আপনি যেতে পারেন বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে করে। সবচেয়ে সহজ উপায় বিমান যাত্রা, তাই খরচাটাও পড়বে বেশি। তবে এতে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি আগে থেকে ঠিকমত ফ্লাইট নির্বাচন করতে পারলে বাড়তি অন্তত একটা দিন পেয়ে যাবেন, যেটা বাসে বা ট্রেনে গেলে সম্ভব না। তবে কম খরচে সারতে চাইলে আর হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে বাস বা ট্রেন একদম উপযোগী।
কলকাতার রাস্তা
হোটেল ব্যবস্থা
কলকাতা পৌঁছানোর পর থাকার ব্যবস্থা বা হোটেল নির্বাচন নিয়ে সবার উদ্বেগ থাকে। আপনি হয়ত স্বাভাবিকভাবেই মনে করবেন, নিউমার্কেটের আশেপাশে যে হোটেলগুলো আছে, তার একটাতে উঠে পড়ি। প্রথমদিকে আমিও তাই করেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, নিউমার্কেটের আশেপাশে না থেকে একটু ভেতরের দিকে হোটেল নির্বাচন করা। কারণ নিউমার্কেটের আশেপাশে মানে মার্কুইস বা সাদ্দার স্ট্রিট বা এর কাছাকাছি হোটেলগুলোতে অসম্ভব চাপ থাকে সারা বছর৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। আমি দু'বার এই বিপদে পড়েছিলাম। সবকিছু ফোনে ঠিক করার পরেও গিয়ে দেখি রুম নেই, এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় আপনি চাইলেও সহজেই আরেকটা মানসম্মত হোটেল খুঁজে পাবেন না।
তাই আমার মতে, নিউমার্কেটের থেকে কিছুটা দূরে থাকুন। একই পয়সায় অনেক ভাল হোটেল পাবেন। আগোডাতে বা বুকিং ডট কমে একটু খুঁজে দেখতে পারেন৷ অনেক ভাল হোটেল কাছাকাছি দামে পেয়ে যাবেন। সাদ্দার স্ট্রিটে (অনেকে সদর স্ট্রিটও বলেন) 'গোল্ডেন এপেল' কিংবা পার্ক স্ট্রিটের পার্ক হোটেলে থাকতে পারেন। একটি তিন অথবা চার তারকা হোটেলে থাকা আপনার পুরো ভ্রমণটাকে অনেক আরামদায়ক করে দিতে পারে। রাফি আহমেদ কিদওয়ায়ি রোডেও অনেকগুলো ভাল ভাল হোটেল আছে। এইসব এলাকার সুবিধে হচ্ছে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে শান্তিতে থাকতে পারবেন। পার্ক হোটেল থেকে রাসেল স্ট্রিটের মোড়ে হেঁটে যেতে দু'মিনিট। এরপর টানা রিকশা বা অটোতে চেপে যান না আপনার নিউমার্কেট।
যাতায়াত ব্যবস্থা
অনেকেই একটা সমস্যার কথা বলেন কলকাতায়। সেটা হলো অত্যধিক ট্যাক্সি ভাড়া। আর অপরদিকে ট্রাম বা বাসের রুট আমাদের জানা নেই। এজন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হচ্ছে উবার। এখানকার উবার চালকেরা কাজের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়। চাইলেই পাওয়া যায় যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়। এসি উবারের ভাড়া হলুদ নন-এসি এম্বাসেডরের থেকেও কম। এছাড়া কলকাতার মেট্রো দারুণ একটা জিনিস। অনেক দূরে যেতে পারবেন স্বল্প খরচ আর অল্প সময়ে।
নতুন ভ্রমণকারীরা কারেন্সি ভাঙ্গানোর জন্য অনেক সময় বিপাকে পড়ে যায়। অনেক জায়গা আছে, তবে সাদ্দার স্ট্রিটের দোকানগুলোই সম্ভবত সবচেয়ে ভাল রেট দেয়। ডলার এবং বাংলাদেশি টাকা- দুটোই ভাঙ্গাতে পারবেন।
কলেজ স্ট্রিট
ভ্রমণ পর্ব
দু'শ বছরের পুরনো জব চার্নকের শহরের প্রতিটা অলিতেগলিতে ইতিহাস আক্ষরিক অর্থেই লেপটে আছে। আর এখানেই কোলকাতার মূল আকর্ষণ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এমন কয়েকটা জায়গায় যেতে পারেন। যেমন- মার্বেল প্যালেস, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, পার্ক স্ট্রিটে কুইন্স ম্যানসন, কলেজস্ট্রিট, কফি হাউজ, হাওড়া ব্রিজ, এসপ্ল্যানেড। আমি বেলুড়, দীঘা, ডায়মন্ড হার্বার, শান্তিনিকেতন- এসব জায়গায় যাইনি। কালীঘাটেও নয়। তবে ইচ্ছে আছে সামনের দিনগুলোতে যাব।
এছাড়া আরও আছে অসংখ্য রোড, স্ট্রিট আর লেনের ছড়াছড়ি।
ইতিহাস আর গল্প সাহিত্যের অসংখ্য চরিত্রের স্মৃতিচারণ করা যায় কলকাতা শহরের অলিতে গলিতে। হ্যারিসন রোডে ব্যোমকেশ আর অজিত থাকত। মট লেনে তারানাথ তান্ত্রিক। রজনী সেন রোডে কে থাকত বলুন তো? ঠিক। ফেলুদা আর তোপসে। কিরীটী রায়ের আলিশান বাড়ি টালিগঞ্জে। আর বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনে থাকতেন আমাদের প্রিয় 'ঘনাদা'। কলেজস্ট্রিট তো শিক্ষার তীর্থ। কী নেই এখানে? প্রেসিডেন্সি কলেজ, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত কলেজ, হিন্দু কলেজ, কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, হেয়ার স্কুল। এই এক জায়গাতেই আপনি সবই পাবেন। যখন হেঁটে যাবেন দু'ধারে বইয়ের দোকানগুলোকে রেখে, মনে হবে আপনি ইতিহাসে অধ্যায় পেরুচ্ছেন। আরও আছে বড়বাজার, বউবাজার, ইত্যাদি।
এছাড়া আছে বিখ্যাত পার্ক স্ট্রিট, যার সরকারী নাম 'মাদার টেরিজা সরণি'। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট নামেই এর বেশি পরিচয়। পার্ক স্ট্রিট সেমিট্রি হলো বিশ্বের প্রাচীনতম নন-চার্চ সেমিট্রিগুলির একটি। ঊন-বিংশ শতাব্দীতে সম্ভবত এটিই ছিল ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম খ্রিস্টান কবরখানা। তখন এর নাম ছিল 'বেরিয়াল গ্রাউন্ড রোড'। পরে নাম দেয়া হয় পার্ক স্ট্রিট। এই পার্ক স্ট্রিট নামটা এসেছে সতের শতকের ইংরেজ চীফ জাস্টিস স্যার এলিজাহ'র ডিয়ার পার্ক ছিল এখানে। সেখান থেকেই পার্ক স্ট্রিট।
বাচ্চাদের ঘুরাঘুরির জন্য সবচেয়ে মোক্ষম জায়গা হচ্ছে সাইন্স সিটি। সারাদিন না হোক, তিন-চার ঘণ্টা তো অনায়াসেই কেটে যাবে। কেবল কারে চড়ে একটার পর একটা বিল্ডিং ঘুরে দেখানো যায় বাচ্চাদের। এছাড়া যেতে পারেন বিড়লা প্ল্যানেটরেইয়ামে।
সারাদিনের জন্য আরেকটা অপশন হলো নিক্কো পার্ক। সল্টলেক এলাকায় এই এমিউজমেন্ট পার্কটায় অসংখ্য রাইড পাবেন। বাচ্চাদের পছন্দ হবেই। তবে টিকিটের দাম একটু বেশিই মনে হয়েছে। সাউথ সিটি মলের টপ ফ্লোরে বাচ্চাদের আরেকটা খেলার জায়গা আছে। পাঁচশ টাকার টিকিটে অনেকগুলো খেলা খেলতে পারবে ওরা। আর বাচ্চারা বই পড়ুয়া হলে, 'অক্সফোর্ড' নামের বইয়ের দোকানটায় ঢুকিয়ে দিন। বই পড়বে, খাবে, কিনবে। আমার মতে বাচ্চাদের জন্য আদর্শ একটা জায়গা এই বুকস্টোরটা।
আপনি যদি বইপোকা হন, তাহলে কলেজস্ট্রিট আপনার কাশী-মক্কা-বেথেলহ্যাম। বই আরে বই, দু'র্যাকের মাঝখানে সরু সরু আইল। আর দু'ধারে কাতারে কাতারে বই। একতলা, দু'তলা মিলিয়ে যে কত বই, তা হিসেবের বাহিরে। মোটামুটি ঢাকার থেকে অর্ধেক দামে আপনি আসল বই পাবেন।
বিকেলে চলে যেতে পারেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। ওটার বিস্তৃত লনে গাছের ছায়ায় বসে থাকতে পারেন। উত্তর ফটক থেকে ভবন পর্যন্ত চওড়া রাস্তার দু-দিকে দুই প্রকাণ্ড জলাধার একাধারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মনোরম শোভা বর্ধন করে। যে দৃশ্য চাক্ষুষ করে অথবা লেন্স বন্দি করে সব বয়সের প্রেমিকপ্রেমিকা-ই রীতিমতো নস্টালজিক হয়ে যায়!
সন্ধ্যার আগেই একটা ট্যাক্সি ডেকে চলে যেতে পারেন মিলেনিয়াম পার্ক। গঙার ধারে এই জায়গাটা থেকে আপনি হাওড়া ব্রিজ দেখতে পাবেন। এত সুন্দর একটা জায়গা, যা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। এরপর আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামবে।