মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন রাজধানী। গতকাল রবিবার সকালে আকাশ অন্ধকার করে আসে, সেই সঙ্গে ছিল প্রবল বাতাস, মুষলধারে বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরীর অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কগুলোতেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার দীর্ঘ সময় পরও পানি পুরোপুরি সরেনি। এ কারণে দুপুরেও ছিল একই চিত্র। এই বৃষ্টি ও জলমগ্নতায় নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল বজ্রপাতে সারা দেশে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। বিমান ও নৌ-চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
গতকাল সকাল থেকে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের বর্ষণে জল জমতে দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়, ফলে ছুটির দিনেও বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয়েছে যানজট।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকায়। পরে সন্ধ্যার দিকে আবারো কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, তীব্র বজ্রমেঘের কারণে গতকাল সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার পর্যন্ত) রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঢাকা, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে ভারি বৃষ্টিও হতে পারে। এসব জেলার ওপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বা আরো বেশি গতির কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টির শঙ্কাও রয়েছে। গতকাল ময়মনসিংহে দেশের সর্বোচ্চ ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
এ দিকে গতকাল সকালে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল সোয়া ৬টা থেকে সোয়া ৮টা পর্যন্ত (২ ঘণ্টা) ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ছিল। ফলে আন্তর্জাতিক রুটের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটও দেরিতে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের ফ্লাইট ইনকোয়ারি বিভাগে কর্মরত জয়নাল আবেদিন জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কলকাতা থেকে জেট এয়ারওয়েজের ৯ডব্লিউ-২৭৪ শাহজালাল বিমানবন্দরে ৯টা ৫ মিনিটের পরিবর্তে ৯টা ৩৪ মিনিটে অবতরণ করে। এ ছাড়া জেট এয়ারওয়েজের মুম্বাই থেকে আসা অপর ফ্লাইট ৯ ডব্লিউ-২৭৬ বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের পরিবর্তে ১২টা ১৮ মিনিটে অবতরণ করে।
রাজধানীতে সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল সকালে মাত্র ঘণ্টাখানেকের ভারি বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব এলাকার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ধানমন্ডিস্থ রাপা প্লাজা, ধানমন্ডি-৮/এ স্টাফ কোয়ার্টার মোড়, কাঁঠাল বাগান, কলাবাগান ডলফিন গলি, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, ধোলাইখাল, আজিমপুর, হাজারীবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, সেগুনবাগিচা, পল্টন, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, সার্কিট হাউস রোড, রাজারবাগ, শান্তিবাগ, আরামবাগ, মতিঝিল, দিলকুশা, বঙ্গভবন এলাকা, কমলাপুর, মানিক নগর, বাসাবো, মুগদা, নিউমার্কেট পশ্চিম-দক্ষিণ পাশের বটতলা, বিজিবি-৩ ও ৪ নং গেট, নাজিমুদ্দিন রোড, হোসেনি দালান, চকবাজার, লালবাগ, বংশাল, জুরাইন, পোস্তগোলা, শ্যামপুর, কদমতলা, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, দনিয়া, দয়াগঞ্জ রেল ব্রিজ অন্যতম। এসব এলাকার অধিকাংশে বেলা দেড়টার পরেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। তবে সিটি করপোরেশনের দাবি, বৃষ্টি শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে গেছে। যদিও তাদের এমন দাবির কোরো সত্যতা পাননি নগরবাসী।