বর্তমানে আমাদের জীবনের চলার পথে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন। মার্টিন কুপার কর্তৃক সর্বপ্রথম সেলফোন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই মোবাইল-ফোন প্রযুক্তি মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে যাওয়া শুরু করেছে। মোবাইল-ফোন প্রযুক্তির চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মোবাইল-ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান।
এই কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমাগত আপডেটেড ফোন বাজারে নিয়ে আসে। সব মোবাইল ফোন জনপ্রিয়তা না পেলেও কিছু ফোন কোটি কোটি সাধারণ মানুষের হাতে জায়গা করে নিয়েছিল। ইতিহাসের এমন জনপ্রিয় ও সর্বাধিক বিক্রিত কিছু মোবাইল ফোন সম্পর্কে এই লেখায় আপনাদের জানাবো।
Motorola Razr V3- বিক্রয় সংখ্যা: ১৩০ মিলিয়ন+
Motorola Razr V3
মটোরোলা সিরিজের জনপ্রিয় একটি মোবাইল হলো মটোরোলা রেজার ভি৩। অসাধারণ ডিজাইনের এই মোবাইলটি ২০০৪ সালে রিলিজ হয়। এই ফোনটিতে ক্যামেরা, ব্লুটুথ ও ইমেইল ফিচারও বিদ্যমান ছিলো। অত্যন্ত চিকন, হালকা এবং বাহ্যিক ডিজাইনের কারণে ফোনটি রিলিজ হওয়ার পরই মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই ফোনটি বিশ্বজুড়ে ১৩০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে।
Nokia 2600- বিক্রয় সংখ্যা: ১৩৫ মিলিয়ন+
Nokia 2600
মোবাইলের জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড নোকিয়া। ২০০৪ সালে রিলিজ হওয়া নোকিয়ার ২৬০০ মডেলটি অন্যতম সেরা সর্বোচ্চ বিক্রিত ফোন। এতে ছিলো ১.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে। আর এই মোবাইলটিতে ক্যামেরা, ব্লুটুথ ইত্যাদি ফিচারগুলো নেই। কিন্তু এই মোবাইলটির ব্যাটারি অত্যন্ত শক্তিমান এবং মূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থের মধ্যে ছিল। নকিয়া ২৬০০ মডেলের ফোনটি বিশ্বজুড়ে ১৩৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে।
Samsung E1100- বিক্রয় সংখ্যা: ১৫০ মিলিয়ন+
Samsung E1100
স্যামসাংয়ের ই১১০০ মডেলের ফোনটি ইতিহাসের বেস্ট সেলিং ফোনগুলোর একটি। এই মোবাইলটি মূলত শক্তিশালী ব্যাটারির কারণে মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এ মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ ১৩দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতো। এছাড়াও ১.৫২ ইঞ্চি ডিসপ্লে সমৃদ্ধ ফোনটির দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। আর এই ফোনটিতে ১ এমবি ইন্টার্নাল স্টরেজ এবং বিল্ড ইন ফ্লাশলাইটও ছিলো।
Nokia 5230- বিক্রয় সংখ্যা: ১৫০ মিলিয়ন+
Nokia 5230
২০০৯ সালে রিলিজ হওয়া নোকিয়া ৫২৩০ মডলের ফোনটি প্রাথমিক পর্যায়ের একটি স্মার্টফোন। এতে রয়েছে ৩.২ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন, থ্রিজি সংযোগ, জিপিএস চিপ, ২এমপি ক্যামেরা, ১২৮এমবি RAM। কিন্তু এই ডিভাইসটিতে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে সংযোগ নেই। নোকিয়া ব্র্যান্ডের প্রাথমিক পর্যায়ের স্মার্টফোন হওয়ার কারণে এটি মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিশ্বজুড়ে ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়।
Nokia 6600 বিক্রয় সংখ্যা: ১৫০ মিলিয়ন+
Nokia 6600
অনেকটা ডিমের আকৃতির এই ফোনটি ২০০৩ সালে রিলিজ হয়। এতে রয়েছে ২.১ইঞ্চি ডিসপ্লে, সাধরণ ক্যামেরা ও ৮৫০ অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি। ধারণা করা হয় এই মোবাইল ডিভাইসটি বিশ্বজুড়ে ১৫০ মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়।
Nokia 1200- বিক্রয় সংখ্যা: ১৫০ মিলিয়ন+
Nokia 1200
একসময় নোকিয়া ১২০০ মডেলের ফোনটি বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। এই মোবাইলটির ব্যাটারি অত্যন্ত শক্তিশালী। পরিপূর্ণ চার্জে ৭ ঘন্টা কথা বলা যেতো এবং ৩৯০ ঘন্টা পর্যন্ত চার্জ স্থায়ী হতো। যদিও মোবাইলটিতে ক্যামেরা, মিউজিক প্লেয়ার, ওয়েব ব্রাউজার ইত্যাদি ছিলো না, কিন্তু কথা বলা ও টেক্সট করার জন্য এই ফোনটির ফিচার ব্যবহার অত্যন্ত সহজ ছিল। এছাড়াও এ ফোনটিতে ফ্লাশলাইট ছিল এবং দামও ছিল সাধ্যের মধ্যে।
Nokia 3210- বিক্রয় সংখ্যা: ১৫০ মিলিয়ন+
Nokia 3210
নোকিয়া ৩২১০ মডেলটি ১৯৯৯ সালে বাজারে আসে। তখনকার সময়ে সাধারণত কথা বলা এবং টেক্সট করার জন্যই ফোন ব্যবহার করা হতো। এই ফোনটিতে তিনটি গেমস ছিলো; তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাপ খেলা, যা সাধারণ মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় মোবাইল গেম হিসেবে পরিচিত হয়েছিলো। এছাড়াও এ ফোনটির কভার পরিবর্তন করা যেতো এবং রিংটোন কাস্টমাইজ করা সম্ভব ছিলো। আবার ফোনটি লক করেও রাখা যেতো। সেই সময়ে এমন ফিচার বিশিষ্ট মোবাইল মানুষের কাছে জনপ্রিয় হবে এমনটাই স্বাভাবিক।
iPhone 6 ও 6 Plus- বিক্রয় সংখ্যা: ২২০ মিলিয়ন+
iPhone 6
মোবাইল ফোনের জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হচ্ছে অ্যাপেল কোম্পানির আইফোন। আইফোন ব্যান্ডের বেশ কয়েকটি মডেলের মধ্যে আইফোন ৬ ও ৬ প্লাস ফোন দুটি মোবাইলের বাজারে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলো। ২০১৪ সালে রিলিজ হওয়া ডিভাইস দুটি প্রথম তিন দিনেই ১০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছিলো। এই সাফল্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ফোনটির অসাধারণ ডিসপ্লে। আইফোন ৬–এর ডিসপ্লে ছিলো ৪.৭ ইঞ্চি ও ৬ প্লাসের ডিসপ্লে ছিলো ৫.৫ ইঞ্চি; যেখানে পূর্বে রিলিজ হওয়া আইফোন ৫–এর ডিসপ্লে ছিলো মাত্র ৪ ইঞ্চি।
Nokia 1110- বিক্রয় সংখ্যা: ২৫০ মিলিয়ন+
Nokia 1110
নোকিয়া ব্রান্ডের ১১১০ মডেলের ফোনটি ২০০৫ সালে রিলিজ হয়। কথা বলা ও টেক্সট করা জন্য এই ফোনটির অসাধারণ ফিচার ডিজাইন করা হয়েছিলো। আর সেই সময় অধিকাংশ মানুষই শুধুমাত্র কথা বলার জন্যই ফোন ব্যবহার করতো। ফলে যে ফোন দ্বারা কথা বলা সহজ ও সাবলীল ছিল, সেই ফোনই মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতো। নোকিয়া ১১১০ মডেলের ফোনটি ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছিলো।
Nokia 1100 – বিক্রয় সংখ্যা: ২৫০ মিলিয়ন+
Nokia 1100
পরিসংখ্যানগত তথ্য অনুযায়ী নোকিয়া ১১০০ মডেলের ফোনটি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত মোবাইল।এই মডেলটি ২০০৩ সালে রিলিজ হয়। উন্নয়নশীল বিশ্বের মানুষদের কাছে এই ফোনটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই মোবাইলটিতে ক্যামেরা, মিউজিক প্লেয়ার কিংবা ওয়েব ব্রাউজার কিছুই ছিলো না। তবে ফ্লাশলাইট ও স্নেক গেমস ছিলো। আর এই ফোনটির ফিচার ব্যবহার করাও অত্যন্ত সহজ ছিলো। আর পরিষ্কার স্বরে কথা শোনার জন্য এই মোবাইলের জুড়ি ছিলো না। এই ফোনটি বিশ্বব্যাপী ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়।