What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review অতীতকে অনুপ্রেরণায় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
PYih1WT.jpg


চল যাই

ধরণঃ কামিং-অফ-এজ প্যাট্রিয়টিক ড্রামা
গল্প ও চিত্রনাট্যঃ খালিদ মাহবুব তুর্য
পরিচালনাঃ মাসুমা রহমান তানি
প্রযোজনাঃ ইনিশিয়েটিভ মাল্টিমিডিয়া লি.
অভিনয়ঃ আনিসুর রহমান মিলন (আগন্তুক), নাবিদ মুন্তাসির, হৃতিকা ইসলাম, সাব্বির হাসান লিখন (শায়ান), তাসনুভা তিশা, লুসি তৃপ্তি গোমেজ, জাহাঙ্গীর হোসেন, খালিদ মাহবুব তুর্য, হুমায়রা হিমু (জাহানারা), শরীফুল প্রমুখ।
শুভমুক্তিঃ ৬ মার্চ, ২০২০

নামকরণঃ গল্পটিকে অনেকটা রোড ড্রামার আদলে সাজানো হয়েছে, যেখানে একদল তরুণ-তরুণী নিজেদের অতীত খুজেঁ বেড়াতে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেখান থেকেই মূলত এই "চল যাই" নামকরণটি করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের মূলবিষয়বস্তু অনুসারে নামকরণটি আমার কাছে ততটা যথাযথ মনে না হলেও, যথেষ্ট সুন্দর মনে হয়েছে।

কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপঃ "চল যাই" চলচ্চিত্রের তিনটি ডিপার্টমেন্টই সামলিয়েছেন খালিদ মাহবুব তুর্য। এছবিটি মূলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিখ্যাত উক্তি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা। এখন সেটা কোন উক্তি, এটা বলে দিলে স্পয়লার হয়ে যাবে। তাই সিনেমাহলে গিয়ে দেখাই ভালো।

সমাজে যখন এক প্রজন্মের প্রস্থানের পর নতুন আরেকটি প্রজন্মের আগমন ঘটে, তখন পূর্বের প্রজন্মে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলৗ আর ঘটনা হয়ে থাকে না; তা এক ধরনের তথ্য ও ইতিহাস হয়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের বাচন সৃষ্টি হয়। আর আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ তো শুধু একটি ঘটনা নয়, এর পেছনে রয়েছে বিশাল মহাকব্যিক ব্যঞ্জনা! সমস্যাটি হলো এই বিভিন্ন ধরনের বাচনভঙ্গির কারণে আমরা যারা তরুণ আছি তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ততটা জোরালোভাবে পৌছাচ্ছে না। যেভাবে পৌছাচ্ছে কিংবা যতটুকু পৌছাচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সামনে আমাদের দেশপ্রেম গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। আমাদের এই দেশে হাজারটা সমস্যা, আর এই হাজারটা সমস্যা চোখের সামনে দেখে আমরা ধীরেধীরে পরিণত হয়েছি। তাই আমাদের মনে হরহামেশাই এই প্রশ্ন জাগে, দেশ স্বাধীন করে আদতে কি লাভ হলো?

প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে "চল যাই" ছবিতে। যেখানে একটি গল্পের আদলে মুক্তিযুদ্ধকালীন অবস্থা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্টোরি ন্যারেশনে কিছু গন্ডগোল রয়েছে মনে হয়েছে। কিছু কিছু চরিত্র কেন দেখানো হলো এবং কীভাবে এগুলো গল্পের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা গেলো, এবিষয়ে যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক হতে পারে।

ErpYi7P.jpg


ছবির চিত্রনাট্যকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়; একটি বর্তমান কাল এবং অন্যটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল। দুইটি সময়ের চিত্রায়নই ভালো, তবে একটু অগোছালো ঘরানার মনে হয়েছে। এছাড়াও ছবির প্রথমার্ধে গল্পকে খুবই দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে করে শুরুর দিকে গল্পের সাথে মানিয়ে নিতে বেশ খানিকটা অসুবিধা হতে পারে। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের অংশে গিয়ে গল্প কিছুটা ধীরস্থির হয় এবং এই সময় টায় চলচ্চিত্রটি দর্শকদের অধিক আকর্ষণ করে।

শেষের ১০-১৫ মিনিটে আনিসুর রহমান মিলনের মুখে এক ধরনের বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায়, যেটা এছবির অন্যতম সেরা অংশ মনে হয়েছে। ঐ অংশে লেখা সংলাপগুলো বেশ ভালো ছিল। অপরদিকে ছবিতে এমন কিছু ছোটবড় সংলাপ খুজেঁ পাওয়া যেতে যেগুলো খানিকটা উস্কানিমূলক মনে হতে পারে। সকল মানুষের একরকম নীতি না-ই থাকতে হবে, কিন্তু বাংলাদেশের সকল ধর্মের, সকল দলের এবং সকল শ্রেণির মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে; পূর্বেও করেছিল, ভবিষ্যতেও আশাকরি করবে। তারা তাকে শ্রদ্ধার নজরে দেখে, সেক্ষেত্রে যতই কোনো মানুষের আদর্শগত সমস্যা থাকুক।

এ অংশ পাবে ৭০% মার্ক।

পরিচালনাঃ পরিচালক মাসুমা রহমান তানির প্রথম পরিচালনা হলো এটি। নবীনা পরিচালক হিসেবে তার কাজ আমার কাছে মোটামুটি মনে হয়েছে। চেষ্টা করেছেন সহজভাবে গল্পকে বড়পর্দায় উপস্থাপন করার, যেনো ছেলে থেকে বুড়ো অব্দি সবাই বুঝতে পারে। গল্পে কিছুটা ডিটেলিং এর অভাব ছিল, আরো গভীরভাবে বিষয়গুলো ফুটিয়ে তুলতে পারলে তার পরিচালিত ছবি দর্শকমনে গভীর দাগ কাটতে সম্ভব হতো। একজন নিয়মিত দর্শক হিসেবে তার প্রতি আমার এক‌টি ছোট্ট পরামর্শ রইলো, নির্মাণের সময় গল্পের প্রতি সততা বজায় রাখা।

অভিনয়ঃ বহুদিন পর আনিসুর রহমান মিলনকে এমন একটি চরিত্রে দেখতে পেলাম, যেখানে তিনি তার সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পেরেছেন। খুবই ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছেন তিনি। পূর্বের অংশে এছবির শেষ ১০-১৫ মিনিটের প্রশংসা করেছি, প্রশংসনীয় এই সিকোয়েন্সটির ক্রেডিট অনেকখানি তার ওপরই বর্তায়। এরকম ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তার ফিল্মগ্রাফিতে আরো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

আনিসুর রহমান মিলনের পর অভিজ্ঞ হিসেবে হুমায়রা হিমুকে এছবিতে পাওয়া যায়, যিনি প্রায় ছয় বছর পর বড়পর্দায় কামব্যাক করলেন। যদিও তার চরিত্রটির ব্যাপ্তি ছোট, তবে খুবই ইফেক্টিভ পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যে স্ক্রিণপ্রেজেন্স দেখিয়েছেন তা ভিন্নতার সাক্ষর রাখে।

এছাড়া লুসি তৃপ্তি গোমেজ বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে তার আরেকটু বাস্তবতার সাথে মিল রেখে মেকআপ রাখলে ভালো হতো।

এরা ব্যতীত ছবিতে বাকি যারা আছেন তারা সবাই প্রথমবারের মতো বড়পর্দায় কাজ করলেন। স্বাভাবিকভাবেই কিছু জড়তা প্রতীয়মান ছিল। তবে এর মধ্যেও জাহাঙ্গীর হোসেন বেশ ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। তরুণদের মধ্যে সাব্বির হাসান লিখন বেশ সাবলীল অভিনয় দেখিয়েছেন। তার সতীর্থদের পারফরমেন্স কিছুটা খাপছাড়া এবং অবাস্তব মনে হয়েছে, তাদের চরিত্রের ব্যপ্তি অনেক বেশি থাকায় তাদের অভিনয়ধরণ নিয়ে অনেকের মনে বিরক্তির সঞ্চার হতে পারে। তবে আশাকরি ভবিষ্যৎ এ অভিনয়ে নিয়মিত হলে তারা এটা ওভারকাম করে নিতে পারবে। শিশুশিল্পী শরিফুল কে অল্প সময়ের জন্য এছবিতে খুজেঁ পাওয়া গেছে।

এ অংশ পাবে ৫০% মার্ক।

কারিগরিঃ "ন ডরাই" এর পর সিনেমাটোগ্রাফার সুমন সরকারকে পুনরায় এছবির ক্যামেরার দায়িত্বে খুজেঁ পাওয়া গেলো। এবারও তিনি বেশ ভালোই করেছেন, তবে "ন ডরাই" এ যেভাবে তিনি অদ্ভুত সুন্দর ক্যামেরার কাজ দেখিয়েছেন তাতে আরেকটু ভালো আশা করেছিলাম। সম্পাদনার কাজে বেশ দূর্বলতা রয়েছে, সজীবুজ্জামান দীপু এই অংশের দায়িত্ব সামলিয়েছেন।

কস্টিউম ও মেকআপ এও কিছুটা দূর্বলতার ছাপ খুজেঁ পাওয়া যায়। বর্তমান অংশের শ্যুটিংয়ে যে লোকেশনগুলো ব্যবহৃত রয়েছে তা বেশ ভালো ছিল। রাত্রিবেলা ফেরির ভেতরে শ্যুট করা হয়েছে, যেটা বেশ সাহসী প্রচেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে যে লোকেশন গুলো দেখানো হয়েছে সেক্ষেত্রে আরেকটু নতুনত্ব আনা যেতো।

ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ মোটামুটি, তবে ততটা মনে রাখার মতো না। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণের কিছু আসল ফুটেজ ব্যবহৃত হয়েছে। যুদ্ধে বিজয়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস করছে এমন কিছু আসল ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে, তবে মনে হলো এচলচ্চিত্রে ঠিকঠাকভাবে ব্যবহার করা যায়নি। আসল ফুটেজ যেহেতু ব্যবহৃত হচ্ছে, এর সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন ছিল।

এ অংশ পাবে ৫০% মার্ক।

বিনোদন ও সামাজিক বার্তাঃ ছবিতে মোট ছয়টি গান রয়েছে। সবগুলো গানই সুন্দর। তবে আমার কাছে "নিয়ন আলো" গানটি সবথেকে বেশি ভালোলেগেছে। গানটি গেয়েছেন রিয়েল খান, গীতিকার ও সুরকার হলেন খালিদ মাহবুব তুর্য এবং শুভেন্দু। এছাড়া "চল যাই" এর টাইটেল ট্র্যাক টি বেশ ভালো ছিল। একঝাঁক তরুণদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এছবির মিউজিক ডিপার্টমেন্টে। কাজ দেখে মনে হচ্ছে এরা যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।

qMhfVA8.png


"স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন", ছোটবেলায় এরকম ভাবসম্প্রসারণ আমরা সকলেই পড়েছি। আমাদের দেশেও যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর লম্বা সময় ধরে এরকম এক‌টি অবস্থা বিরাজমান ছিল। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে ঠিক, তবে তারা এদেশকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে, মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠন করেছে। সেই মা বোনেরা মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজের কাছ থেকে যথাযথ সম্মান পায়নি। কয়েক হাজার যুদ্ধশিশু র জন্ম হয়েছে, যাদের না আমরা প্রত্যাখ্যান করে দিতে পেরেছি, না আপন করে নিতে পেরেছি। এগুলো যারা সেসময় দেখেছে তারাই ভালো উপলব্ধি করতে পারেন। কিন্তু আমাদের মতো ১৫-৩৫ বছর বয়সী মানুষদের এগুলো বুঝতে হলে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এছবি চেষ্টা করেছে সেই অতীত ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেওয়ার, যে ক্ষত এখনো সারেনি।

তবে ছবিটি দেখে যে বিষয়টি উপলব্ধি করা গেছে, তাতে মনে হয়েছে এখানে তরুণদের প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ণ সঠিকভাবে উঠে আসেনি। আমাদের দেশে নারীরা রাতে নিরাপদ না, এখনো যত্রতত্র ইভটিজিং এর প্রচলন আছে। রাস্তাঘাটের দূর্বিসহ ভোগান্তি দেখে এবং সহ্য করতে করতে একটা জেনারেশন বড় হয়েছে। এর কারণও কি মুক্তিযুদ্ধ? প্রকৃত উত্তর খুজঁতে গেলে বিশদ আলোচনা করে ফেলা যায়, তবে এছবিতে দায়ী করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা, যে উত্তর অনেকের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হতে পারে, আবার অনেকের কাছে বেঠিক মনে হতে পারে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটা অংশে বাঙালির ইতিহাস ২৩ বছরের না ৪০০ বছরের, এরকম এক অদ্ভুত প্রশ্ন রেখে দেওয়া হয়েছে। এর কোনো সঠিক উত্তর এ চলচ্চিত্রে দেওয়া হয়নি।

এ অংশ পাবে ৬০% মার্ক।

ব্যক্তিগতঃ ছবিটি নিয়ে আমার তেমন প্রত্যাশা ছিল না, একদম প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই এছবি মুক্তি পেয়েছে। এরপর আবার ছবিটি দেখতে গিয়ে হলো এক বাজে অভিজ্ঞতা, যার কথা বলার থেকে হয়তো না বলা-ই ভালো।

সবমিলিয়ে "চল যাই" ছবিটির মূলবিষয়বস্তু আমার কাছে ভালো লেগেছে। অভিনয়ে কিছুটা দূর্বলতা আছে। আর যেভাবে বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি কিছুটা কনফিউজিং, অনেকের কাছে যথাপযুক্ত মনে হতে পারে, আবার অনেকের কাছে খারাপও লাগতে পারে।

রেটিংঃ ৬/১০

ছবিটি কেন দেখবেনঃ "চল যাই" তরুণদের ছবি। একদল তরুণেরা সম্পূর্ণ চলচ্চিত্রজুড়ে বিচরণ করেছে। তাই এছবি তরুণদেরই সবথেকে বেশি ভালো লাগবে আশাকরি। দেখে আসুন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top