ভুত-প্রেত দেখার কথা অনেকের মুখেই শোনা যায়। আমাদের চোখের সামনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যায় যার ব্যাখ্যা দেওয়া সত্যই মুশকিল। কিন্তু বিজ্ঞান সবসময় এই সমস্ত রহস্যময় ও ভুতুড়ে ঘটনার কারণ খুঁজে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আবিষ্কৃত হয়ে নানান চমকপ্রদ তথ্য। আপনি কি জানেন যে অনেক বিষাক্ত গ্যাস আছে যার কারনে মানুষ চোখের সামনে ভুত কিংবা অশরীরী আত্মার দেখা পায়? ঠিক তেমনই এক বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড এর গল্প শোনাব আজ।
ইতিহাসের বিখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডঃ উইলিয়াম ভিলমার ১৯২১ সালে আমেরিকান জার্নাল অব অফথালমোলজিতে একটা আজব ধরণের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। সেই গবেষণায় তিনি একটা পরিবারের ভেতরে ঘটে যাওয়া ভুতুড়ে ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন। ঘটনাটি শুনুন…
বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড এর ভুতুড়ে ঘটনা
আমেরিকার কোন এক রাজ্যের একটি নির্জন এলাকায় একটা দোতালা কাঠের বাড়ি ছিল। সেই বাড়িতে বাস করতো একটি পরিবার। তাদের সেই বাড়িটি কিভাবে যেন ভূত-প্রেতের আড্ডাখানা হয়ে গিয়েছিলো। অদ্ভুত সব কান্ড ঘটতো সেখানে। বাড়ির দরজা-জানালা কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ ধড়াম ধড়াম শব্দ করে বন্ধ হয়ে যেত। রুমগুলোর ভেতরের আসবাবপত্রগুলো নিজ থেকেই নড়াচড়া করতো। আর সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হলো- বাড়ির খালি কক্ষগুলোতে কারো হাঁটাচলার এবং দৌড়াদৌড়ির শব্দ পাওয়া যেত। ঐ পরিবারের এক শিশু একবার স্পষ্ট অনুভব করেছিলো তার কোলের উপর কে যেন বসে আছে। আরেকবার এক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য দেখলেন অপরিচিত কে যেন তাকে মারতে তেড়ে আসছে! এক রাতে ঐ বাড়িরই এক মহিলা সদস্য দেখলেন তার বিছানার পাশে একজন পুরুষ এবং আরেকজন মহিলা যুগলবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু খানিকবাদেই তারা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
ঘটনাগুলোর কারনে সেই পরিবারের দিন কাটছিলো ভয় ও আতংকে। কিন্তু থাকার কোন যায়গা ছিলো না বলে তারা এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতেও পারছিলো না। ঠিক এমন সময় তাদের হতাশাগ্রস্ত জীবনে আলো হয়ে এলো একটা ছোট্ট আবিষ্কার। পরিবারের একজন দেখলো তাদের বাড়ির ফার্নেসটাতে মারাত্মক ত্রুটি আছে। ফার্নেসটার কাজ ছিলো বাড়ির ভেতরের সব বিষাক্ত গ্যাসকে চিমনি দিয়ে বাইরে বের করে দেয়া। কিন্তু এর বদলে সে গ্যাসকে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো সারা বাড়ি। ফলে পুরো পরিবার কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার শিকার! এই ফার্নেসটি মেরামত করে দেওয়ার পর থেকে ভুতের উপদ্রব বন্ধ হয়ে গেলো। এরপর থেকে আর কখনও বাড়ির লোকেরা ভুত দেখেনি।
কার্বন মনোক্সাইড কি?
কার্বন মনোক্সাইড হচ্ছে গন্ধবিহীণ, বর্ণবিহীন বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থ। মানবশরীরের রক্ত কার্বন মনোক্সাইড সহজে শোষণ করতে পারে না। এর ফলে দেখা দেয় শারিরীক দূর্বলতা, বমি বমি ভাব, দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা সেটা হলো- এই বিষক্রিয়া আপনার ভেতরে হ্যালুসিনেশানের মাত্রা বাড়ায়। আর এই হ্যালুসিনেশনের কারণেই সেই পরিবারটি চোখের সামনে উলটাপালটা জিনিস দেখতে পেত। কিন্তু বাস্তবে বাড়িতে আসলে ভুত প্রেত বলতে কিছুই ছিলো না।
কার্বন মনোক্সাইড নিয়ে আরো একটি ঘটনা –
২০০৫ সালে কানাডার অটোয়াতে বাস করা একজন মহিলা ৯১১ তে ফোন দিয়ে বললেন তার বাথরুমে নাকি তিনি ভূত দেখতে পাচ্ছেন। মহিলার চিৎকার চেচামেচি শুনে পুলিশের লোকেরা বাড়িতে আসে। এসে তারা ভুত প্রেত কিছুর দেখা পেল না। কিন্তু পরে খুঁজে দেখা গেলো যে বাথরুমের ওয়াটার হিটারে লিক আছে যেটার মাধ্যমে পুরো ঘর কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে ভরে যাচ্ছিলো। এর ফলে মহিলা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং হ্যালুসিনেশনে ভুগে ভুত জাতীয় কিছু চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলেন। অতএব বুঝতেই পারছেন, ভুত-প্রেত বলতে আমরা যা বুঝি বাস্তবে সেটা নাও থাকতে পারে!
সুতরাং এরপরে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কিংবা কোন খালি বাড়িতে কৌতূহলবশত উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে যদি অদ্ভুত কিছু দেখতে পান তাহলে সাথে সাথে ভয় পেয়ে যাবেন না। যদি সাদা কাপড় পড়া কাউকে তেড়ে আসতে দেখেন, তাহলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার আগে সেখানে কার্বন মনোক্সাইড জাতীয় বিষাক্ত গ্যাসের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন। মনে রাখবেন- অতিরিক্ত ধুমপানের ফলেও এই ধরণের হ্যালুসিনেশন ঘটতে পারে!
আজকের মতো এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন সবাই।