What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বঃ একটি বিষফোঁড়া সংকটের আদ্যোপান্ত (শেষ পর্ব) (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
uUACsGt.png


ফিলিস্তিন অঞ্চলের ইতিহাস বহু পুরনো ও জটিল। এত জায়গা থাকতে ইহুদীরা কেন ফিলিস্তিনকে নিজেদের স্বাধীন দেশ হিসেবে পেতে চাইলো এমন প্রশ্ন আপনাদের মনে উঁকি দিতে পারে।

ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী জেরুজালেম একটি পবিত্র স্থান। হিব্রু বাইবেল মোতাবেক ঈশ্বর হযরত ইব্রাহিম (আ) ও তার বংশধরদের জন্য এক পবিত্র ভূমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই ভূমি কেনান নামে পরিচিত। বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, ইসরাইল, ফিলিস্তিন অঞ্চল মিলিয়ে ছিল কেনানের বিস্তৃতি। প্রাচীনকালে এসিরীয় ব্যাবিলন,পার্সিয়ান আর রোমানদের এই ভূমি নিয়ে সংঘাতের কথা ইতিহাসে রয়েছে। রোমানদের হাত ধরে কেনান অঞ্চলে 'জুডেয়া' নামক একটি প্রদেশের গোড়াপত্তন হয়েছিল। তবে জুডেয়ার ইহুদীরা বেশ কয়েকবার বিদ্রোহ করেছিল।

১৩৫ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট হাড্রিয়ানের আমলে জাতীয়তাবাদী ইহুদী বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। সম্রাট হাড্রিয়ান তা কঠোর ভাবে দমন করেন। এরপর জুডেয়া ও রোমানদের অধীনস্ত আরেক এলাকা সিরিয়াকে সংযুক্ত করে তৈরি হয় একটি নতুন প্রদেশ। যার নাম সিরিয়া প্যালেস্টাইন।

রোমান ও ইহুদীদের এসব যুদ্ধে ইহুদীদের মধ্যে মৃত ও হতাহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকে কেবল। তাদের কেউ কেউ নির্বাসিত হয় আর কাউকে দাস জীবন অবলম্বন করতে হয়।

অষ্টম শতকে ইসলাম ধর্মের উত্থান হলে ফিলিস্তিন এলাকাটি জয় করে নেয় আরবরা। এরপর আবার ইউরোপের ক্রুসেডাররা সেখানে অভিযান চালায়। ১৫ শতক নাগাদ এখানে আবার অটোমান সাম্রাজ্যের আধিপত্য শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই অঞ্চল তাদের অধীনেই ছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের ফলে জায়গাটি ব্রিটিশ আর ফরাসীদের অধীনে চলে যায়। এরপর বেলফোর ঘোষণায় ব্রিটিশরা ইহুদীদের আলাদা বাসভূমি হিসেবে ফিলিস্তিনকে নির্বাচিত করে। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিন ব্রিটিশদের অধীনেই ছিল। এর মাঝে আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার স্বীকার হয় ইহুদীরা। আর তাতেই মূলত ইহুদীদের আলাদা বাসস্থানের ব্যাপারটি নিয়ে তোরজোড় শুরু হয়।

১৯৪৭ সালের ২৯শে নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনকে ভাগ করা নিয়ে এক পরিকল্পনা অনুমোদন করে। তাতে একটি আরব দেশ ও একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জেরুজালেমের জন্য আলাদা পরিকল্পনার কথা বলা হয়। ইসরায়েল উক্ত প্রস্তাব মেনে নিলেও আরবরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু বৃটিশ ও আমেরিকার মদদে জাতিসংঘ ইহুদীদের পক্ষে নিজেদের অবস্থান নেয়।

erdpHoK.jpg


পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত

ফিলিস্তিন অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ আধিপত্য শেষ হওয়ার আগের দিন ইহুদীরা ইসরায়েলের স্বাধিনতা ঘোষণা করে বসে। দিনটি ছিল ১২ই মে ১৯৪৮ সাল। আর পরদিন ইসরায়েল জাতিসংঘের সদস্যপদ হওয়ার আবেদন করে। পরের বছর তা গৃহীত হয়। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৬০টি দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

লক্ষ্য করুণ পাঠক, বর্তমানে ফিলিস্তিনে ইহুদী আর মুসলমানদের ভূমির তারতম্যের কথা কিন্তু জাতিসংসঘের আলোচনায় ছিলনা। ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিশেষ কমিটি সুপারিশ করেছিল আরব রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে 'পশ্চিম গ্যালিলি, সামারিয়া ও জুডেয়া পার্বত্য অঞ্চল। তবে জেরুজালেম নগরী ও মিশর সীমান্ত ইহুদীদের উপকূলীয় সমভূমির মাঝে আসবেনা। কিন্তু আজকের ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের বিভাজন মূলত নির্ধারণ করা হয়েছে আরব-ইসরায়েলের প্রথম যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালের যুদ্ধবিরতির রেখা বরাবর।

পশ্চিম তীর আর গাজা এই গুরুত্বপূর্ণ দুই ভূখণ্ড হচ্ছে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকা। এ কথা প্রায় সবারই জানা জেরুজালেমকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় দেশই তাঁদের রাজধানী বলে দাবি করে। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর বর্তমানে ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে। যার সাথে সরাসরি যুক্ত আছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠন ফাতাহ । অপরদিকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করে জঙ্গী সংগঠন হামাস। হামাস মূলত ইসলামপন্থী দল।

মূলত ২০০৬ সাল থেকে ফিলিস্তিন ফাতাহ ও হামাস হিসেবে দুটো প্রধান অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ফাতাহ এর পক্ষের মানুষই বেশি। ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংকটে এখন পর্যন্ত যে ফিলিস্তিনি সংস্থাটির কথা সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে তা হল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও। ১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় পিএলও। ইয়াসির আরাফাত ১৯৬৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন পিএলওর চেয়ারম্যান। ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর পিএলওর প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু তখন পর্যন্ত কোনো ভূখণ্ড তাদের দখলে ছিলনা।

পিএলও গঠিত হয় ১৯৬৭ সালের সংগঠিত ৬ দিনের যুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে। পিএলও প্রথমবার ইসরায়েলে সংগঠিতভাবে হামলা চালায় জর্ডান থেকে। এরপর লেবানন থেকে পিএলও বাহিনী আবার আক্রমণ করে। পিএলওর অধীনে অসংখ্যবার বহু উপায়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিন। আর ইসরায়েলও পাল্টা আঘাতে হত্যা করে অসংখ্য ফিলিস্তিনিদের।

এভাবেই পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল বহু বছর যাবত। এরপর ১৯৯৩ সালে পিএলও ও ইসরায়েল একটি শান্তি চুক্তি করে। ইতিহাসে একে অসলো শান্তি চুক্তি বলা হয়। এতে পিএলও সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের পথ পরিহার করে ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে এবং শান্তির জন্য অঙ্গীকার করে। কিন্তু ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী দল হামাস এই চুক্তি মেনে নেয়নি।

অসলো চুক্তিতে বলা হয় ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে তাঁদের দখলদারিত্ব ও দমন নিপীড়ন এর শেষ করবে এবং এর থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সেই চুক্তি কেবল চুক্তির কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। এই শান্তি চুক্তির অধীনেই গঠন করা হয়েছিল প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটি যা বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিন সরকার।

srDmnLK.jpg


ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর সম্পর্ক এই ছবির মতোই মধুর; Photo: NBCNews

আর যে কথাটি না বললেই নয় তা হল, জেরুজালেম দুই দেশের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অন্যতম বড় কারণ হলেও অসলো শান্তি চুক্তিতে ছিলনা জেরুজালেম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত। অবশেষে ২০১৫ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অসলো শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করেন এবং জানান ইসরায়েল চুক্তি না মেনেই দমন নিপীড়ন চালিয়েছে।

উপরোক্ত পর্যালোচনা আর যুদ্ধ সংঘাত শেষে মোটাদাগে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যে সংকটগুলো বিদ্যমান সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই চলে আসে জেরুজালেমের কথা। ১৯৬৭ সালের আগেই ইসরায়েল জেরুজালেম দখল করে নেয়। আর জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানি হিসেবে গণ্য করা শুরু করে। যদিও এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি।

এছাড়া আছে সীমান্ত এলাকা নিয়ে বিরোধ। ইসরায়েল-আরব এক একটি যুদ্ধে আরবেরা পরাজিত হয়েছে আর ইসরায়েল অবৈধভাবে নিজেদের সীমানা বাড়িয়ে গেছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের যেসব স্থান দখল করেছে সেগুলোর মধ্যে পশ্চিম তীর আর পূর্ব জেরুজালেমে পাঁচ লাখেরও বেশি ইহুদীর বাস যা আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ। ইসরায়েলের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব আর পশ্চিমাদের সহযোগিতা ইসরায়েলের পায়ের তলার ভিতকে অনেকখানি মজবুত করে দিয়েছে।

হামাস একসময় মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে যোগাযোগ রাখত। কিন্তু মোহাম্মদ মুরসীর ক্ষমতাচ্যুতির পর মিশরের সমর্থন হারিয়েছে হামাস। হামাস এখন কেবল সিরিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর মদদ পেয়ে থাকে।

৮০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই সংকটের সমাধান কিভাবে আসবে? ফিলিস্তিনিদের দিক হিসেব করলে প্রথমেই ইসরায়েলিদের দিক থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিনকে স্বীকার করে নিতে হবে। গাজার ওপর অবরোধ তোলা সহ পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের অবাধে চলাচল করতে দিতে হবে। অপরদিকে ইসরায়েল চায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিক। সীমানা আর ভূমি বিরোধের সাথে শরণার্থীদের সমস্যার সমাধান আর ইহুদী অবৈধ বসতি নিয়ে সুরাহা না হলে আসলে এই সংকট যে আরো দীর্ঘ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

আরব দেশের প্রভাবশালী নেতারা ব্যস্ত তাদের নিজেদের গদি সামলাতে। মাঝে মাঝে ইসরায়েল বিরোধী বক্তব্য ও নিন্দা প্রকাশের মাঝেই তাদের প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ। সম্প্রতি আরব আমিরাত তৃতীয় মুসলিম আরব দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সামনে আরও আরব দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে এমন গুঞ্জন এখন মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে কান পাতলেই শোনা যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর দৃঢ় হস্তক্ষেপ ও আরব দেশগুলোর ঐক্য ফিলিস্তিনের সংকট মেটাতে পারতো। কিন্তু জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপন আর নানান ক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রতি তাদের সহযোগিতাপূর্ণ মনভাবের কথা সবারই জানা।

ধ্বংসস্তুপ, লাশের সারি, রক্তাক্ত শিশুর আর্তনাদ যখন সারা বিশ্বের মানুষকে বিহ্বল করে দিচ্ছে তখনও বিশ্বনেতারা নিশ্চুপই হয়ে আছে। আজ অব্দি কত নিরীহ ফিলিস্তিনিকে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে তা যে লাখের ঘরকে বহু আগেই ছাড়িয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই সংকটের সমাধান করে ফেলা জরুরী। নইলে লাশের বোঝা আরো ভারি হতেই থাকবে হতেই থাকবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top