What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হাজারে একজনের হওয়া রোগগুলো (1 Viewer)

orEDFe0.jpg


আজ বিরল ব্যাধি দিবস। পাঁচ থেকে আট হাজার ধরনের বিরল ব্যাধির অস্তিত্ব আছে আমাদের দুনিয়ায়। পৃথিবীর প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ এমন সব ব্যাধিতে আক্রান্ত।

'লাখে একজন' বা 'হাজারে একজন'—এমন বাগ্‌ধারা হামেশাই ব্যবহার করি আমরা। বিরল বোঝাতে এসব ব্যবহার করা হয়। মানুষ কখনো কখনো এমন কিছু রোগে আক্রান্ত হয় যেগুলো হাজারে একজনেরই হয়। সেগুলো 'বিরল ব্যাধি' হিসেবে পরিচিত। এ সব রোগ আমাদের দেশেও যেমন আছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংজ্ঞা হচ্ছে, যেসব রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি ২ হাজারে ১ জন, সেসব রোগকে বিরল আখ্যা দেওয়া যাবে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১ হাজার ৫০০ জনে ১ জন এবং জাপানে প্রতি ২ হাজার ৫০০ জনে ১ জন এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তাকে বিরল ব্যাধি বলা হয়।

এমন ব্যাধির সংখ্যা মোটেই কম নয়, পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার ধরনের বিরল ব্যাধির অস্তিত্ব আছে আমাদের দুনিয়ায়। পৃথিবীর প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ এমন সব ব্যাধিতে আক্রান্ত। এটি পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ—সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। আর এর মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগের জন্য দায়ভার চাপানো যায় জিনগত ত্রুটির ওপর।

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন (২৮ তারিখ। লিপ ইয়ার হলে ২৯ তারিখ) 'বিরল ব্যাধি' দিবস পালন করা হয়। জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য এই বিশেষ দিনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

'বিরল ব্যাধি' দিবস উপলক্ষে বিশেষ কয়েকটি বিরল ব্যাধির উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রোজেরিয়া বা বৃদ্ধশিশু রোগ

KtzUTvV.png


বিরল প্রোজেরিয়া রোগে আক্রান্ত বায়েজিদ মায়ের কোলে

বিজ্ঞানীরা বলেন, বার্ধক্য একটি রোগ। তবে তা স্বাভাবিক। তবে যেটা মোটেও স্বাভাবিক নয়, তা হলো খুব অল্প বয়েসেই ফুটফুটে শিশুর কোমল অবয়বে এবং সমস্ত শরীরে রুক্ষ ও বার্ধক্যের ছাপ চেপে বসা। শিশু বয়সেই বার্ধক্যের করুন শিকার হতে হয় এতে। প্রোজেরিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় আট গুণ দ্রুত বুড়িয়ে যেতে থাকে। আরও নির্মম যে আক্রান্ত শিশুরা ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সের বেশি জীবিত থাকে না। এই রোগের আরেকটি নাম হলো 'হাতিনসন গিলফোর্ড প্রোজেরিয়া সিনড্রোম', এটি বিরল জেনেটিক অসংগতি। এক কোটি থেকে দুই কোটি শিশুর মধ্যে একটি শিশুর এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দেড় শর কাছাকাছি।

আমাদের দেশে মাগুরার শিশু বায়েজিদের নাম অনেকের মনে থাকতে পারে। ২০১২ সালের ১৪ মে দুর্ভাগা এই শিশু জন্মেছিল। তখন প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বায়েজিদের খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই রোগের কারণ উদ্‌ঘাটন করতে সমর্থ হলেও এ পর্যন্ত এমন বিরল ও ঘাতক রোগ নিরাময়ের কার্যকরণের কোনো পন্থা খুঁজে পাননি।

বৃক্ষমানব

yqS4hJM.jpg


বৃক্ষমানব আবুল বাজানদার, ছবি: উকিপিডিয়া

খুলনার বাসিন্দা আবুল বাজানদারকে নাম দেওয়া হয়েছিল 'বৃক্ষমানব'। কারণ, তাঁর দুই হাত, পা ও শরীরের অন্যান্য স্থানে প্রথমে আঁচিলের মতো গুটি হয়। পরে তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে গাছের শুকনো এবং শক্ত বাকলের মতো হয়ে অনেকটাই বৃক্ষের মতো রূপ ধারণ করে। এমন উদ্ভট রোগের কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ২০১৬ সালে খবর হয়েছিলেন আবুল বাজানদার। শাহানা খাতুন নামের আরেকজন বাংলাদেশিও এমন বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে খবর পাওয়া যায়।

এটি জিনগত ত্রুটিজনিত খুবই বিরল, অস্বস্তিকর ও দুরারোগ্য একটি ব্যাধি। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ রোগের নাম 'ভেরুসিফরমিস এপিডারমোডিসপ্লাসিয়া'। এ রোগের সঙ্গে পেপিলোমাভাইরাস নামে একটি ভাইরাস সংক্রমণের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে গবেষকেরা মনে করেন।

পাথরমানব

3NZJBTa.jpg


পাথরমানব, ছবি: উইকিপিডিয়া

জিনগত ত্রুটির কারণে এ রোগ হয়ে থাকে এবং এমন রোগে আক্রান্ত প্রতি ২০ লাখে একজন পাওয়া যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাংসপেশি, শিরা-উপশিরা, লিগামেন্ট ইত্যাদি নরম অংশ ধীরে ধীরে শক্ত হতে শুরু করে এবং হাড়ে পরিণত হয়। ফলে পর্যায়ক্রমে নড়াচড়া, এমনকি কথা বলতেও খুব কষ্ট হয়। বর্তমানে এর কোনো চিকিৎসা জানা নেই।

খাই খাই রোগ: পিকা সিনড্রোম

HKRaAp2.jpg


খাই খাই রোগ বা পিকা সিনড্রোম, যা পায় তা–ই খায় এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা

একজন জাপানি, বয়স ৫১ বছর। অনেক দিন থেকে খাই খাই রোগে ভুগছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই পুষ্টিহীনতা, ক্ষুধাহীনতা আর দুর্বলতা হয়েছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। এই ব্যক্তির পাকস্থলীতে অস্ত্রোপচার করে ডাক্তার আট কেজি ওজনের ১ হাজার ৮৯৪টি ধাতব মুদ্রা বের করেছেন। যার অর্থমূল্য হচ্ছে ১৩০ ইউরোর সমান। এই রোগ খুবই বিরল, নাম পিকা রোগ।

এই খাই খাই রোগ হচ্ছে একধরনের মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যা হাতের সামনে পায়, তা–ই গলাধঃকরণ করে, যেমন মুদ্রা, কাগজ, চুল, কাচ, মাটি-কাদা, কাপড়, সাবান ইত্যাদি! অনেক সময় তারা নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশ খেয়ে ফেলে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এ ব্যাধি নিরাময়ে ভূমিকা রাখতে পারেন।

ক্লেপটোম্যানিয়া বা চুরি রোগ

wpusJGr.jpg


ক্লেপটোম্যানিয়া বা চুরি করা রোগ একটি মানসিক ব্যাধি

কেউ কেউ কদাচিৎ চুরি করে। তবে সমস্যা হয় তখনই, যখন চুরি করা স্বভাব হয়ে যায়। কিছু একটা চুরি না করলে কিছুতেই স্বস্তি হয় না। এ চোরেরা অভাবের কারণে চুরি করে না। আবার চুরি করার পরপরই অনেক সময় আত্মগ্লানিতে ভোগে এ রোগের শিকার মানুষ। চিকিৎসাশাস্ত্রে এই মানসিক রোগের নাম হলো ক্লেপটোম্যানিয়া বা চুরি রোগ। এটি একটি বিরল কিন্তু গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যব্যাধি।

আজব দেশে এলিস সিনড্রোম

znZFldc.png


লুইস ক্যারল রচিত 'আজব দেশে এলিস' গ্রন্থে জন টেনিয়েলের চিত্রকর্ম, ছবি: উইকিপিডিয়া

প্রখ্যাত ইংরেজ শিশু সাহিত্যিক লুইস ক্যারলের অমর সৃষ্টি 'আজব দেশে এলিস' শিশুতোষ গ্রন্থটি বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। আজব একটি দেশে এলিসের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার চমৎকার বর্ণনা ছিল এ গ্রন্থের মূল উপজীব্য। তবে যে রোগ বোঝাতে এই গ্রন্থের নাম নেওয়া হয়েছে, সেটি অতটা আনন্দের কিছু নয়।

স্নায়বিক বৈকল্য হচ্ছে এমন বিরল ব্যাধির কারণ। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রধানত দৃষ্টি ও শ্রবণবিভ্রমে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়ে। যেমন স্বাভাবিক আকারের কোনো কিছুকে আসল আকারের তুলনায় ছোট বা বড় দেখে অথবা দূরের জিনিসকে কাছে বা কাছের জিনিসকে দূরে দেখে। অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর, শব্দ ইত্যাদি শুনতে পায়। মোটকথা, এমন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পঞ্চ ইন্দ্রিয় যেসব বার্তা মস্তিষ্কে পাঠায়, মস্তিষ্ক তা ঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে না। এ কারণে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এমন বিভ্রম খুব অল্প সময় স্থায়ী হয়। তবে এ রোগ বেশ কয়েক বছর কিংবা সারা জীবনের জন্য হতে পারে।

বিরল রোগ সম্পর্কে জানা এবং নিরাময়ে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে (১) অপ্রতুল গবেষণা, (২) রোগীর স্বল্পতা, (৩) চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অভাব, (৪) ওষুধের চাহিদা কম থাকায় গবেষণা কর্মে অর্থ লগ্নিতে উৎসাহ হীনতা।

তবে আর্থিক লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা না করে, বিরল ব্যাধি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এগিয়ে এলে বিস্ময়কর কিছু উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করে ফেলতে সক্ষম হবেন, যা পক্ষান্তরে বিশ্বমানবতার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top