What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কানাডা অনেক পরিষ্কার, কিন্তু অনেক ঠান্ডা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,654
Messages
117,056
Credits
1,241,720
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
উত্তর আমেরিকার শীত সাংঘাতিক। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের মানুষদের জন্য। ফলে শীতকালে দেশে ফেরার জন্য মন উচাটন থাকে সব প্রবাসীর। কিন্তু স্কিয়িংয়ের প্রেমে পড়ে এবার আর মন খারাপ হয়নি। বরং পূরণ হয়েছে নতুন অভীষ্ট।

qtHEwRB.jpg


প্রতি শীতকালে আমার বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছা করত। কিন্তু এই শীতে আমি স্কিয়িংয়ের প্রেমে পড়ে গেছি। ২০১৩ সাল থেকে আমার পরিবার ক্যালগেরিতে থাকে। শহরের শীতকাল আর শহরের বাইরে শীতকাল খুবই আলাদা। ২০২০ সালের আগে প্রতি শীতকাল এলেই মনটা খারাপ হয়ে যেত। ক্যালগেরি বড় শহর। শহরে শীতকাল মানেই কিছু সময় বাসে এবং বিল্ডিংয়ের ভেতর, আবার কিছু সময় বাইরে থাকতে হয়। বাইরে খুবই কম থাকা হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, যখনই বাইরে যাই, একটা জ্যাকেট এবং শীতের সব পোশাক হাতে নিয়ে বের হতে হয়।

l1tbJQC.jpg


পরিবারের সঙ্গে আমি ক্যালগেরিতেই থাকতাম, ছবি: উইকিপিডিয়া

আমি এখানকার ছাত্রী। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে আমার একটা ট্রেন এবং দুইটা বাসে চড়তে হয়। বাস টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনে মাঝেমধ্যেই হিটার থাকে। আর বাস ও ট্রেনের ভেতর সব সময় গরম থাকে। কিন্তু যখন বাসস্টপে বাসের জন্য এবং রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি, সেখানে অনেক ঠান্ডা। ফলে সারা শীতকাল হাতে করে একটা জাম্বো জ্যাকেট বয়ে বেড়াতে হয়। আর সারা রাস্তা কাদা কাদা হয়ে থাকে বরফ গলে। প্রতি শীতকালে শুধু ভাবতাম, কখন গ্রীষ্মকাল আসবে।

গত বছর গ্রীষ্মকালে আমি রেভেলস্টোক, ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় বসবাস শুরু করেছি। এখানে একটা স্কি রিসোর্ট আছে, যেখানে আমি কাজ করি। গ্রীষ্মকালে আমাদের এখানে একটা পাইপ কোস্টার আছে, যেটা উত্তর আমেরিকার একটি উল্লেখযোগ্য রোলার কোস্টার। এই শহরের জীবন অন্যান্য শহরের তুলনায় খুবই ব্যতিক্রম। এখানকার মানুষ সাধারণ। তাদের মধ্যে কারও কারও আবার গ্রন্থগত বিদ্যা নেই। শহরটি তৈরি হয়েছিল ১৮৮০ সালে। তখন এ শহর শুধু একটা রেলজংশন ছিল। আমেরিকা থেকে এখনো বিভিন্ন মালপত্র, ফসল, ফসলের বীজ ইত্যাদি আনা–নেওয়া করা হয় এ শহরের মাধ্যমে। শহরের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার।

KG5CMP5.jpg


এখন এই ছোট্ট শহর রেভেলস্টোকেই থাকি, ছবি: শহরের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

বাংলাদেশের মতো একটা দেশ থেকে কানাডায় আসায়, এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ছোট শহর। এর আগে কখনো এ রকম অভিজ্ঞতা হয়নি। আমাদের শহরে একটাও সুউচ্চ ভবন নেই। সবার নিজের বাড়ি। কিছু কিছু বাড়ি অবশ্য পর্যটকদের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় লোকজন একেকটা বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন।

সবচেয়ে ভালো লাগে এখানকার আউটডোর অ্যাকটিভিটি। এখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা সবাই হয় শীতকালে স্কিয়িং অথবা গরমকালে মাউন্টেন বাইকিং করেন। পরিবারের সবাই খুবই অ্যাকটিভ। এসব যাঁদের ভালো লাগে না, তাঁরা এই শহরে থাকতে পারেন না। কারণ, এটা একটা ছোট শহর। এখানে এসব কাজকর্ম ছাড়া আর তেমন কিছু করার নেই।

IypJ78u.jpg


মাউন্ট কারশিয়ের সামনে লেখক

যা হোক, গেল শীতে আমি স্কি হিল খোলা থাকা অবস্থায় মোট ৯৫ দিন স্কি করেছি। এই স্কি হিলের উল্লম্ব উত্তর আমেরিকার মধ্যে সর্বাধিক, আনুমানিক ৮,০৭৫ ফিট। বাংলাদেশে যেহেতু বরফ পড়ে না, তাই আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না স্কিয়িং সম্পর্কে। ছোটবেলায় ক্যান্টনমেন্টে বন্ধুদের সঙ্গে বাইক রেস করতাম। জীবনে এর আগে একবার, ২০১৯ সালে লেক লুইস রিসোর্টে স্কি করেছিলাম একদিন; যেখানে আমার স্কিয়িংয়ের ব্যাপারে প্রথম ধারণা হয়। তার আগে একবার স্কাই ডাইভিং (২০১৫) এবং আইস ক্লাইম্বিং করেছিলাম। এরপর থেকেই আমার আউটডোর সম্পর্কে আরও আগ্রহ জাগে। হতে পারে অবচেতনভাবে এ কারণে আজ আমি এই শহরে থাকি।

যা হোক, স্কি করা শুরু করতে না করতেই আমার স্কিয়িংয়ের নেশা হয়ে গিয়েছিল। তাই ৪ মাসে আমার ৯৫ বার যাওয়া। আর সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যাপার হলো, আমি ওখানকার গেস্ট সার্ভিস এজেন্ট ছিলাম। ওখানে আমার সব কলিগ কাজ করতেন। কারণ, ওখানে কাজ করলে একটা ফ্রি পাস পাওয়া যায়, যেটা মধ্যবিত্ত একজন চাকরিজীবীর সাধ্যের বাইরে। তাই তাঁরা এখানে প্রতি শীতে কাজ করেন এবং বাসা ভাড়া অনেক বেশি হওয়ায় তাঁরা একটা ট্রাভেল ভ্যানে থাকেন। অবশ্য শীতকালে বরফ পড়লে ভ্যান অনেক ঠান্ডা হয়ে যায় বলে বাসা ভাড়া না করে থাকা যায় না।

ASZskCp.jpg


নিজের স্কি ব্লিজ্জার্ড শিভা ১০–এর সঙ্গে লেখক। ভাড়ায় তিনটি আলাদা স্কি ব্যবহারের পর তিনি নিজের স্বপ্নের পাউডার স্কি কিনেছেন।

আমি প্রথমবার স্কি করতে যাওয়ার আগে পরিকল্পনা করলাম কী কী লাগবে। সারা দিন–রাত গুগল, ইউটিউবে স্কিবিষয়ক ভিডিও, আর্টিকেল খোঁজা শুরু করলাম। আমাদের স্থানীয় একটা ফেসবুক পেজ আছে, যেখানে এলাকার সবাই বিভিন্ন ধরনের সাহায্য–সহযোগিতা করে থাকে। আমি দেরি না করে ওই পেজে একটা পোস্ট দিলাম। পোস্টে আমি এলাকার সবার কাছে স্কিয়িং সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এবং উপদেশ চাইলাম। এক লোক এতই খুশি হলেন আমার কৌতূহল আর উদ্দীপনা দেখে যে তিনি তাঁর মেয়ের স্কি আমাকে দিয়ে দিলেন। আমি তো হতবাক হয়ে গেলাম!

স্কি কিনতে ভালোই টাকা লাগে। একজন আমাকে এভাবে দিয়ে দিলেন! তাঁর মেয়ের স্কি আমাকে দেওয়ার কারণ হলো, আমার আর মেয়েটির ওজন ও উচ্চতা কাছাকাছি। এসব আমি কিছুই জানতাম না। কত লম্বা স্কি, কত ভারী, কত বাঁকা মুখ, কত ধারালো প্রান্ত—এসব মাথায় রেখে বিভিন্ন স্কিয়ার বিভিন্ন স্কি কিনে থাকেন। এই শহর স্কি হিলের জন্য প্রসিদ্ধ। দেশ–বিদেশ থেকে নামীদামি স্কিয়ার এই শহরে আসেন কেবল এখানকার বরফের জন্য। এখানকার বরফকে বলে পাউডার। এ ধরনের বরফ খুবই বিরল। স্কিয়াররা এই বরফে স্কি করতে দেশ–বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে এখানে আসেন।

qlHwcX0.jpg


স্কিয়িংয়ে লেখক

আমিও এখন এই বরফের প্রেমে পড়ে গেছি। যখন পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে নামতে শুরু করি, স্কির নিচে বরফ মাখনের মতো মনে হয়। মনে হয় আমি উড়ছি। এখন আমি বুঝতে পারি কেন মানুষ এত টাকা খরচ করে এসব গিয়ার আর স্কি পাস কেনেন। আমি এখন এই শহরে আটকে গেছি। প্রতিদিন স্কি করতে গিয়ে আমার প্রায় সব লোকাল স্কিয়ারকে চেনা হয়ে গেছে। সবাই খুবই ভালো। কখনো কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা স্কিয়িং সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে সবাই খুব আনন্দ ও আগ্রহের সঙ্গে উত্তর দেন এবং সহযোগিতা করেন।

এই কঠিন সময়ে এই স্কি হিল হলো সবার স্বর্গ। তাই সবাই হাসিখুশি থাকে। আমার অধিকাংশ গিয়ারের পেছনে এলাকার লোকজনের অনেক বড় অবদান। এমনকি কোভিডের জন্য স্কি হিল অগ্রিম বন্ধ হাওয়ার কারণে আমার ১০০ দিন স্কি করা হয়নি, সে বিষয়ে এই এলাকার স্থানীয় পত্রিকায় লেখা এসেছে। এসব কারণেই আমি আরও কয়েক বছর এই শহরে থাকতে চাই। আর যেহেতু আমার পার্টনার ওখানকার স্থানীয়, তাই আমি অন্যান্য স্থানীয় লোকজনকে বেশ ভালো করেই চিনি।

kqwxiAl.jpg


স্কি বোর্ড হাতে লেখক

এই গ্রীষ্মে আমি একটা হার্ডটেল মাউন্টেন বাইক কিনেছি। স্থানীয় শিশুরা, যারা কোথাও শেখেনি এখনো, তারা পাহাড় থেকে পোল ছাড়াই লাফ দিয়ে নামে। তাদের মায়েরাও থেমে নেই এসব বিষয়ে। শিশুসহ মা–বাবা সবাই শীতে স্কিয়িং আর গরমকালে মাউন্টেন বাইকিং করে। বাইকিংয়ের অনেক সুন্দর ট্রেলস আছে সারা শহর ঘিরে। আশপাশে চারদিক বিভিন্ন পাহাড় দিয়ে ঘেরা। শহর থেকে পাহাড়ের ভেতর উঁচু–নিচু রাস্তাগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মন ভালো হয়ে যায়, যা আমার মানসিক রোগের জন্য অনেক ভালো। ২০১৭ সাল থেকে এখনো আমি একটা ট্রমা বহন করি, যার কারণে এখন মানসিক স্বাস্থ্য আমার প্রথম অগ্রাধিকার।

স্কিয়িং আমার এতই ভালো লেগেছে যে আমি ফেসবুকে Bangladeshi Skiers' Association নামে একটি পেজ খুলেছি, যার মাধ্যমে আমি কানাডার আরও কিছু বাংলাদেশি স্কিয়ারের সন্ধান পেয়েছি। তার মধ্যে দুজন নারী আর বাকি সবাই পুরুষ। আজ আমি ইতিহাসের প্রথম বাংলাদেশি নারী স্কিয়ার, যে উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পাহাড়ে ডাউন-হিল স্কিয়িং অথবা আল্পাইন-স্কিয়িং সক্ষমভাবে সম্পন্ন করেছে, তা–ও আবার ৯৫ দিনে!

UOPowCc.jpg


জে পিসহ পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপনে লেখক (বাঁয়ে)

আমি বিশ্বাস করি, মন আর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে জীবনে সবকিছুই করা সম্ভব। শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।

* লেখক: রুশদা রুবাইয়া
 

Users who are viewing this thread

Back
Top