What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হার না মানা এক একাকী মায়ের সংগ্রাম (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by akash22001199 to join our community. Please click here to register.
আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার, মা দিবস। এই বিশেষ দিনে পড়ুন এক সংগ্রামী মায়ের গল্প।

iV1gn3R.jpg


বাঁ থেকে প্রকৌশলী সুজন আলী, মা রোকেয়া বেগম ও ছোট ভাই আবু রায়হান, ছবি: সংগৃহীত

ছেলে বলে, 'মা, তুমি খাবে না?' মা বলেন, 'তুমি খেয়ে নাও বাবা, আমি পরে খাব।' ছেলে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মা এক গ্লাস পানি পান করেন। এভাবে দিনের পর দিন যায়। কোনো দিন মায়ের রাতে খাওয়া হয়, কোনো দিন হয় না। তবু মা হাল ছাড়েন না। ছেলেকে বুঝতে দেন না। সেই ছেলে এখন প্রকৌশলী। গত বছর ঈদের সময় করোনাভাইরাসের প্রকোপ তখন প্রবল। গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ। মা বললেন, 'বাবা, তোকে যে আসতেই হবে। তা ছাড়া আমার ঈদ হবে না। বিমান কি চলছে না? তুই বিমানে চড়ে আয়।' ছেলে তাই করেন। বাড়ি এসে মাকে জড়িয়ে ধরেন। তবেই মায়ের ঈদ হয়। ছেলে এখন বলেন, 'আমি আমার মাকেও বিমানে চড়াতে চাই।'

মা-ছেলের এই গল্প রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার গোটিয়া গ্রামের। দুই ছেলে সুজন আলী ও আবু রায়হানকে নিয়ে মা রোকেয়া বেগমের জীবনসংগ্রাম চলছে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দুই সন্তানকে নিয়ে পথে নেমেছিলেন। ছেলেদের মুখে খাওয়া তুলে দিতে মাঠে কাজ করেছেন। কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেও রোজগার করতে হয়েছে। মা রোকেয়া বেগম ছেলেদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর ছেলেরা লেখাপড়া শিখে বড় হবে। তাঁর বঞ্চনার জবাব দেবে।

জীবনজুড়ে গল্প

রোকেয়া বেগমদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। প্রতিদিন কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে দুই ভাই পড়তে বসত। সেই কেরোসিন দোকান থেকে বোতলে করে নিয়ে আসা হতো। বড় ভাই সুজন আলী বোতল না পেয়ে একদিন দোকান থেকে একটি পুরোনো পেপসির বোতলে করে কেরোসিন নিয়ে আসে।

এদিকে বাড়িতে পেপসির বোতল দেখে ছোট ভাই আবু রায়হানের চোখ জ্বলজ্বল করে। বড়লোকের ছেলেদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পেপসি পান করতে সে দেখেছে। আজ সেই পেপসির বোতল তার বাড়িতে! সেদিন সবার অলক্ষ্যে পেপসি মনে করে কেরোসিন খেয়ে ফেলেছিল আবু রায়হান। এমনিতেই প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করা মায়ের কাছে যুদ্ধ মনে হতো। এরই মধ্যে আবু রায়হানকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে দৌড়াতে হলো। কী সব দিন গেছে তাঁদের!

যেভাবে দিন বদল

২০০৭ সালে সবাইকে তাক লাগিয়ে সুজন আলী এসএসসি পরীক্ষায় পুঠিয়ার ধোপাপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পায়। তার এই সাফল্যের পর শিক্ষকেরা সবাই বলতে থাকেন, এই ছেলেকে শহরের কলেজে পড়াতে হবে। এবার সুজনের মা কাঁদতে শুরু করেন। এত দিন প্রয়োজনে নিজে না খেয়ে দুই সন্তানকে বাড়িতে রেখে মানুষ করেছেন। এবার তিনি কী করবেন? এমনিতেই ছেলেকে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ানোর মতো সামর্থ্য তাঁর নেই। তার ওপর বিজ্ঞান বিভাগ, খরচ আরও বেশি। আর শহরের কথা তো তিনি ভাবতেই পারেন না।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সোহরাব খোকনের বাড়ি সুজনের পাশের গ্রাম—ধোপাপাড়ায়। তিনি ঝুঁকি নিয়ে সুজনকে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। সে সময় প্রথম আলো থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হতো। ২০০৭ সালের ৪ আগস্ট রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খোকনই মা–ছেলেকে নিয়ে আসেন।

সেদিন সুজন আলী ও তাঁর মাকে মঞ্চে ওঠানো হয়েছিল। তাঁদের গল্প শুনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। পরদিন এ খবর ছাপা হয় প্রথম আলোতে। সবকিছু জেনে নিউ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক সাইফুর রহমান চৌধুরী নিজের মেসে রেখে সুজনকে বিনে পয়সায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এগিয়ে আসেন রাজশাহীর সপুরা সিল্ক মিলসের স্বত্বাধিকারী প্রয়াত সদর আলী। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সুজন আলী রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশলে পড়ালেখা শেষ করে চাকরিতে যোগ দেন।

অতঃপর তাঁরা...

চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর সুজন আলী মাকে তাঁর কর্মস্থলে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু নিজ গ্রাম ছেড়ে থাকতে মায়ের ভালো লাগে না। তা ছাড়া গ্রামে নিজের কোনো বাড়ি নেই। এ নিয়ে মায়ের মনে কষ্ট ছিল। বুঝতে পেরে ছেলে সুজন আলী গোটিয়া গ্রামের বাজারের পাশে এক খণ্ড জমি কিনে মাকে সুন্দর একটি বাড়ি করে দিয়েছেন।

৬ মে সে বাড়িতে গিয়ে মা ও ছোট ভাই আবু রায়হানকে পাওয়া যায়। বড় ছেলে সুজন আলী এখন চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানের উপ প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে আবু রায়হান পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ছেন। দুই ছেলেই মায়ের চোখের মণি। ছেলেরাও মা ছাড়া কিছু বোঝেন না। রোকেয়া বেগম বলেন, 'আমার ছেলেদের জন্য দোয়া করবেন।' মুঠোফোনে সুজন আলী বলেন, 'মায়ের ওপরে আমাদের কোনো কথা নেই। মা যা বলবেন সেটাই শিরোধার্য। মাকে আমি বিমানে করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসবই। মা বিমানে চড়তে ভয় পান বলে দেরি হচ্ছে।'
 

Users who are viewing this thread

Back
Top