করোনার কারণে সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ আত্মীয় ও বন্ধুদের বাসায় না আসার অনুরোধ করেছেন। তবে কিছু মানুষকে না করতে পারেননি এই শিল্পী। তাঁরা এসেছেন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাতে বাসায় কেক কাটা হয়েছে। দিনের শুরুতেই অসংখ্য মানুষের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। তিনি জানান, জন্মদিন এলে নিজেকে তাঁর অপরাধী মনে হয়। কারণ, কাজের চেয়েও মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছেন বহুগুণ বেশি।
শৈশবে জন্মদিন নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল কুমার বিশ্বজিতের। সেই সময় তিনি চাইতেন, এই বিশেষ দিনটি পাঁচ দিন পরপর আসুক। কারণ, এই দিনে তাঁর বায়না থাকত অন্য দিনের চেয়ে আলাদা। উপহার হিসেবে তিনি জামাকাপড় কিংবা কেক চাইতেন না।
করোনার কারণে সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ আত্মীয় ও বন্ধুদের বাসায় না আসার অনুরোধ করেছেন। ছবি: ফেসবুক
জন্মদিনের কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছে বায়না ধরতেন, তাঁকে বাদ্যযন্ত্র উপহার দিতে হবে। শৈশবের সেই দিনগুলোতে উপহার হিসেবে পেয়েছেন ড্রামস, গিটার, বেজ গিটারসহ নানা কিছু। এই উপহারগুলো পেতে তিনি দিনের পর দিন অপেক্ষা করতেন।
জন্মদিনের এই উপহারগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর অনেক স্মৃতি। কিছু উপহার তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। জন্মদিনের সেরা উপহার হিসেবে একবার তিনি একটি টেপ রেকর্ডার পেয়েছিলেন। তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
কুমার বিশ্বজিৎ, ফেসবুক
পরে সেই টেপ রেকর্ডার তাঁর ক্যারিয়ারে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিল। এই গায়ক বলেন, 'টেপ রেকর্ডারের প্রতি আমার সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল। আমি তখন গান শুনতাম আর সুরগুলো রেকর্ড করতাম। অনেক সময় গান গেয়ে নিজের রেকর্ড করা কণ্ঠ শুনতাম। মূল শিল্পীর গায়কির সঙ্গে তুলনা করতাম। তাদের গান শুনে আমি সুর, তাল, লয় শিখতাম। তখন এত প্রযুক্তির অগ্রগতি হয়নি। এই টেপ রেকর্ডারই আমার ভুল ধরার জন্য শিক্ষকের মতো ছিল।'
শৈশবে জন্মদিন উদ্যাপন ভালো লাগলেও এখন সংকোচে কাটে জন্মদিনটি। এই দিন অসংখ্য মানুষ তাঁকে শুভেচ্ছা জানান, ভালোবাসা জানান। এতেই তাঁর সংকোচ। তাঁর কাছে মনে হয়, এই প্রাপ্তির চেয়ে হয়তো তাঁর কাজ অনেক কম।
টেপ রেকর্ডারই আমার ভুল ধরার জন্য শিক্ষকের মতো ছিল, ছবি: ফেসবুক
তিনি বলেন, 'একজীবনে আর কত করা যায়? শৈশব, ঘুম, সংসার, স্ট্রাগলেই অনেক সময় চলে গেছে। তিনটা জীবন হলে হয়তো আরও কিছু করে যাওয়া যেত। এখন আমার বয়স বেড়ে গেছে। আর কত দিন গান করে যেতে পারব জানি না। এই সময়ে চেষ্টা করছি সংগীতের জন্য কিছু করে যেতে। যেটুকু পারিনি, সেটা নতুন প্রজন্মের হাতে ছেড়ে দিতে চাই। এখন যাঁরা সংগীতের সঙ্গে আছেন, তাঁরাই আমাদের সংগীত অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করুক।'
জন্মদিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে তাঁর ছেলে কুমার নিবিড়ের। বাসায় কেক কাটবেন। এ ছাড়া তিনি বাবার কাছে সময় চেয়ে নিয়েছেন। তাঁরা সন্ধ্যায় একসঙ্গে বাইরে বের হবেন। কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, 'এখন নিজের প্রাপ্তির চেয়ে আমাকে নিয়ে অন্যের আগ্রহকে প্রাধান্য দিই। আমাকে নিয়ে আমার ছেলের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। যদিও কিছুই প্রকাশ করছে না। হয়তো কোনো সারপ্রাইজ দেবে।'
নিবিড়ের আদর্শ বাবা কুমার বিশ্বজিৎ, ছবি: ফেসবুক
করোনার কারণে বেশ চিন্তিত এই সংগীতশিল্পী। গত বছর থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশের অনেক গুণী মানুষ মারা গেছেন। সে কারণে গত বছর থেকে কাজে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারেননি। কুমার বিশ্বজিৎ জানান, গত ঈদে গান প্রকাশের কথা থাকলেও দেশের করোনা পরিস্থিতির জন্য গান মুক্তি দেননি। তিনি জানান, ঈদুল আজহায় তিনটি গান প্রকাশ করতে চান। গানগুলোর কাজ নিয়ে জন্মদিনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
করোনার কারণে বেশ চিন্তিত এই সংগীতশিল্পী, ছবি: ফেসবুক