চাকরি আর ছুটি
এ যেন সোনার হরিণ। তাকে ছোঁয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ধরা মোটেও সহজ সাধ্য নয়। আবার এ হরিণের ছোঁয়া পেয়ে সব কিছু ভুলে যান অনেকেই। হয়ে উঠেন বিপ্লবী। কেউ বা প্রতিবাদী। কেউ নিজেই বনে যান সেলিব্রেটি। আবার কেউ কেউ হরিণ ধরার গল্পটা এক্কেবারেই মনে রাখতে নারাজ। মেমোরি থেকে ঝেড়ে ফেলতে চান অতিত ইতিহাস। কখনও মেমোরি শুদ্দ ধুয়ে মুছে ফেলতে চান। চাকরি কথাটা শুনলেই চাকুরিজীবীদের চোখে জল আসে৷ কারো আসে হাসি। কেউ কেউ তো মহাসুখী।
চাকরি করতে যাওয়া লোকেদের বস প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কিছুতেই ছুটি দিতে চান না। তবে এটা একেবারেই ঠিক নয়। ছুটি নেয়ার প্রয়োজন অনেক ক্ষেত্রেই পড়ে। যেখানে চাকুরী সেখানেইতো ছুটি। কিন্তু অহেতুক আত্মীয় সাজিয়ে, বন্ধু বানিয়ে কখনও ভাই সাজিয়েও ফাঁকিবাজি করার অভিজ্ঞতা কারো অজানা নয়। তবে কখনও কখনও বসের মুখভারের কারণে চাকুরিজীবীদের অকারণে মিথ্যা কথা বলতে হয়। কিন্তু সব মিথ্যেই যে তালগোল পাকিয়ে এক হয়ে যায়। সেটা কিন্তু জানা থাকেনা। এখানে এমন সব কিছু বলা আছে যা কর্পোরেট দুনিয়ায় হরহামেশাই ঘটছে। এখানে অনেক বিষয় অন্যায়ভাবে প্রাকটিস করা হয়।
চাকরি জীবনে ছূটি নেয়ার জন্য পেট খারাপের বাহানা অনেক করেছেন। এবার এ বিষয়ে একটু সিরিয়াস হোন। বসকে কেও কেও বলেন, সারাদিন আমি ঘর আর বাথরুম করে চলেছি। একথা আপনার বসও অস্বীকার করতে পারবেন না যে, মুঘল সম্রাট থেকে শুরু করে অনকেরই এ সমস্যা ছিল। তাইতো এ কারণকে অনেকে অফিসের ছুটির কাজে লাগিয়ে থাকেন।
ধরুন, সকাল থেকে অফিস করে হাঁফিয়ে উঠেছেন। বিকেলটা ছুটি চাইঃ আর দেরী না করে মা, বাবা নইলে বউকে অসুস্থ করে তুলেন কেউ কেউ। বসকে গিয়ে বলতে থাকেন হঠাৎ শরীর খারাপের কথা। সঙ্গে বলতে ভুলবেন না যে আপনি না গেলেই নয়। তবে কায়দা করে মায়ের কথা যদি বলতে পারেন তবে আপনাকে আর পায় কে।
তিন দিনের ছুটি নিবেন যেভাবেঃ প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবীর বিয়ের উপলক্ষ্যেও ছুটি নিতে পারেন। বসকে একটু বাড়িয়েই বলুন যে, বন্ধু আমার কত দিনের পুরোনো। এর সঙ্গে কতকি না করেছি। সঙ্গে ভুয়ো বন্ধু সাজিয়ে এনে বসের সামনে দাঁড় করিয়ে দিন। ব্যস দেখবেন আপনার অন্তত তিন দিনের ছুটি পাকা হয়ে যাবে।
দুদিন ছুটি নেয়ার ফন্দিঃ সাবধানতা অবলম্বন না করলেই দুর্ঘটনা। যে কোনো মুহুর্তে কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে আপনার জীবনে। যদি সত্যিকারে নাও ঘটে, বানিয়ে বলতে দোষ কোথায়? বস কে ফোন করে বলে ফেলুন ছোট্ট একটি মিথ্যে কথা। তারপর দুদিন মনের আনন্দে ছুটি কাটিয়ে মাথায় একটা ব্যান্ডেজ আর হাতে বা পায়ে ক্রপ মুড়ে চলে যান অফিসে। দেখবেন সকলেরই সহানুভূতি আপনার সঙ্গে রয়েছে।
একদিনের ছুটিঃ অফিসে এমন কোন কাজের বাহানা দিয়ে দিন যার সঙ্গে সরকার, কোর্ট বা পুলিশের সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশ, কোর্ট-কাচারীর কথায় সকলেই একটু ভয় পান। হাজিরা বা ব্যাংকের নোটিশের কথা শুনে পৃথিবীর এমন কোন বস নেই যে আপনাকে আটকাবে। আইনি ব্যবস্থা পালনে অফিসের বসদেরও অনেক বড় যোগান রয়েছে।
বিয়ের কথা বলে একদিন ছুটিঃ অফিসের মহিলা কর্মচারীদের জন্যেতো আলাদা বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। বস কে বলুন, আজ আপনার হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে আপনাকে দেখতে আসছে। যদিও বিবাহিতরা এবিষয়ে একটি মার খেতে পারেন। তবে কুচ পরোয়া নেহি, ভাই বা বোনের শ্বশুরবাড়ির লোক আসছে বলে আপনি একদিন ছুটির মজা নিতেই পারেন৷
আরও তিন দিন ছুটি নিবেন যেভাবেঃ ছুটি পেতে চাইলে অফিসে জানিয়ে দিন আপনাকে ছাড়া আপনার বাড়ির লোকেরা অচল। ডাক্তার ও কবিরাজ সবকিছু আপনাকেই সামলাতে হয়। কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে বা কোন আত্মীয়কে ট্রেনে তুলে দিতে হবে বলেও ছুটি নেয়া যেতে পারে। বাচ্চার স্কুলে অনুষ্ঠান বা বউকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এই সব বললে আপনাকে নেহাতই ঘরোয়া জীব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যে বসের নিজের পরিবার রয়েছে তিনি আপনার এই বাহানা গুলিকে কষ্ট হিসেবে দেখবেন আর আপনাকে ছুটি দেবেনই। বসের উপর যদি একবার ইমোশনাল অত্যাচার করতে পারেন তবে তো কথাই নেই। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়া মারা গেছেন বলেও কাজ চালাতে পারেন। বসকে বলুন তিনি আপনার মায়ের খুব কাছের লোক ছিলেন। মাকে সঙ্গে নিয়ে আপনাকে সেখানে যেতেই হবে। কিন্তু বার বার একই আত্মীয়াকে মেরে ফেলবেন না যেন।