মায়ের দুধ শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ খাদ্য। তবে বেশির ভাগ নতুন মায়ের অভিযোগ, নবজাতক যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে না। আসলে দুধ পান করানোর কিছু নিয়মনীতি আছে, যা না জানার কারণে শিশু ভালো করে দুধ পায় না আর খিদেয় কান্নাকাটি করে। প্রত্যেক নতুন মায়ের উচিত কীভাবে ব্রেস্ট ফিডিং করাতে হয়, সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়া।
নিয়মকানুন
১. প্রথমে শিথিলভাবে চেয়ারে বসুন। নবজাতককে কোলে নিন। ওর মাথাটা কনুইয়ের মধ্যে নিন। তার মুখ আপনার দিকে ফিরে থাকবে। পা দুটো থাকবে ঢালু করে নিচের দিকে। নিজের হাত দিয়ে ওকে বেড় দিয়ে ধরে রাখুন।
২. অন্য হাত দিয়ে স্তনের নিচে আঙুল দিয়ে সাপোর্ট দিন। বোঁটাটি আলতো করে ওর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিন। সে যেন বোঁটার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের কালো অংশটুকুও মুখের ভেতর ঢুকিয়ে নেয় ও একটি নলের মতো তৈরি করে দুধ টানতে থাকে।
৩. এক পাশের স্তন পুরোপুরি খালি করার পর অন্য পাশের স্তনে ধরুন।
৪. পরেরবার যখন দুধ খাওয়াবেন, তখন শেষের স্তনটি দিয়ে শুরু করুন।
৫. কতক্ষণ দুধ খাওয়াবেন, এটা একটা প্রশ্ন। উত্তর হলো, যতক্ষণ টানবে, ততক্ষণ।
৬. কতক্ষণ পরপর খাওয়াবেন? এরও কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। যখনই ও দুধ খেতে চাইবে, তখনই দিতে হবে।
৭. জন্মের প্রথম দু-তিন দিন কষের মতো পাতলা তরল আসে, একে শালদুধ বলে। খুবই পুষ্টিসম্পন্ন এই শালদুধ। এটা কখনোই ফেলে দেবেন না। এটি শিশুর জন্য খুবই দরকার। তারপর শিশু যত নিপল চুষবে, তত মায়ের ব্রেস্টে দুধ নামবে।
৮. দুধ খাওয়ানোর পর শিশুর পেটের বাতাস বের করুন। কাঁধে নিয়ে করতে পারেন বা কনুইয়ের মধ্যে ওর দেহ নিয়ে কোলের মধ্যে বসিয়ে রাখলেও চলবে।
৯. কী করে বুঝবেন ও যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে? দিনে-রাতে যদি ছয়বার প্রস্রাব করে, তাহলে বুঝবেন ও যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে। এর সঙ্গে সে হাসিখুশি, উচ্ছল ও সক্রিয় থাকবে।
১০. যে মা ব্রেস্ট ফিডিং করেন, তিনি তিনবারের জায়গায় দিনে চার-ছয়বার খাবার খাবেন। তরল খাদ্য বাড়িয়ে দিন। প্রচুর দুধ ও পানি পান করুন। আমিষ গ্রহণ করুন। নিশ্চিন্ত থাকুন। মনে রাখবেন, নির্ঘুমতা, অতি উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা দুধের গতিকে কমিয়ে দিতে পারে। পরিবারের অন্যরা আপনাকে মানসিক সাহচর্য দেবে।
১১. পুরোপুরি ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাইয়ে শিশু পালনের মনোবৃত্তি তৈরি করুন। এ জন্য পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা দরকার। প্রয়োজনে শিশুরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: ডা. এটিএম রফিক উজ্জ্বল, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, মগবাজার মোড়, ঢাকা