What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বরফ ঢাকা পাহাড়ে (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
mU26DE7.jpg


১.

কোথায় যাবে, বলো? উটি নাকি কেরালা?
সঙ্গীর প্রশ্ন শুনে ঠোঁটে কামড় দিয়ে মুঠোফোনটা নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। গুগলে দেখছি, এই নভেম্বরে কোনো জায়গাটা সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত হতে পারে। উটি, কেরালাকে ছাড়িয়ে আমার আঙুল চলে গেল গুগল ম্যাপে জ্বলজ্বল করতে থাকা ভারতের হিমাচল প্রদেশে। চট করে ফোনে তাকে কিছু ছবি দেখালাম। পাছে উটি, কেরালা তার মনে পোক্ত না হয়ে যায়! হাতে ধরে রাখা পর্দায় দেখা যাচ্ছে, চারদিকে বরফ আর বরফ। মাঝে গুটি গুটি পাইনগাছের সারি।
—যাবে? ভ্রু নাচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।
ছবি দেখায় মগ্ন সঙ্গী কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই 'হ্যাঁ' বলে উঠলেন। ব্যস! কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিমানের টিকিট কেটে আমরা প্রস্তুত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরের দিন ভোরে বেরিয়ে পড়লাম। সারা দিন বেঙ্গালুরু শহর ঘুরে বিমানবন্দরে চলে এলাম। বুকের মধ্যে কেমন জানি ঢিপঢিপ করছে। যে সময়ে যাচ্ছি, সে সময় বরফ দেখতে পাব কি না, জানি না। কিন্তু পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারব, এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। নানা কিছু ভাবতে ভাবতে একসময় নিজেকে বিমানের ভেতর আবিষ্কার করলাম। শুরু হলো ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি হয়ে হিমাচল প্রদেশের শহর মানালি অভিমুখে যাত্রা।

jmY9jUz.jpg


ঘড়িতে রাত তিনটা বাজছে। ঘুম ভাঙতেই বাইরে তাকিয়ে দেখি, নিচে আলো ঝিকমিক করছে। বুঝলাম, দিল্লি এসে পড়েছি। বিমান থেকে নেমে কাঁধের ব্যাগটা নেড়েচেড়ে ঠিক করে নিলাম। সামনে আরও বহুদূর যেতে হবে। মানসিকভাবে সেই প্রস্তুতি নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরের ভেতর দেখতে দেখতে হাঁটছি। আশপাশ দেখে মনে হলো যাত্রী বলতে আমরা যারা একসঙ্গে এসেছি তারাই। কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে ভাবলাম, বেশ হয়েছে। ভিড়ভাট্টা কম। আরামসে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে বেরিয়ে যেতে পারব। হাঁটছি আর হাঁটছি। পথ আর ফুরায় না। অবস্থা এমন যে একটু বসতে পারলে বাঁচি। সঙ্গীকে বললাম, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার আগে কিছুক্ষণ না বসলে আমার চলবে না। সঙ্গীও তাতে সায় দিতেই হাঁপ ছাড়লাম।

বেশ ফুরফুরে ভাব নিয়ে বসার জায়গায় আসতেই চক্ষু চড়কগাছ! একি! আগের বিমানগুলোর অনেক যাত্রী বসে তো আছেনই, অনেকে মেঝেতে ব্যাগের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়েও পড়েছেন। ফলে বসা তো দূর, আমাদের পা ফেলার মতো জায়গা নেই! হতাশ হয়ে এদিক-ওদিক তাকাতেই এক ভদ্রলোক আসন ছেড়ে উঠে বসার অনুরোধ জানালেন। তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে মানা করার পরও তিনি দেখি দাঁড়িয়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করেছেন। বিদেশবিভুঁইয়ে এমন সাহায্য পেয়ে মনটা কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠল। ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা দুজন চেপেচুপে বসে পড়লাম। এখন শুধু ভোর হওয়ার অপেক্ষা।

এদিকে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর আমার সঙ্গী উসখুস শুরু করলেন। কাঁধ দিয়ে আলতো ধাক্কা দিতেই ঘাড় নাড়িয়ে বললেন, চল বেরিয়ে পড়ি। ঘড়িতে দেখলাম, সাড়ে তিনটা বাজে। চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করলাম, এখন? ভোরের আলো একটু ফুটুক, তারপর বের হব—এই চিন্তা তখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাবছিলাম, এক দিন ধরে শুধু ইন্টারনেটে পড়ে পড়ে আত্মস্থ করেছি মানালিতে কীভাবে যাব। আসল সফর তো এবার শুরু হবে। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম, আমার সঙ্গী বেশ অ্যাডভেঞ্চারাস। একপ্রকার টানতে টানতেই আমাকে বিমানবন্দরের বাইরে নিয়ে এলেন।

অটোতে চড়ে চলে এলাম নিউ দিল্লির ইন্টার স্টেট বাস টার্মিনালে। এখান থেকে মানালিতে যাওয়ার বাসে উঠে পড়ব। ঠিক করেছিলাম, হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (এইচটিআরসি) বাসে উঠে পড়ব। তাতে ভিড়ভাট্টা কম হবে। প্রায় ১৪ ঘণ্টার পথ তো আর কম নয়! স্টেশনে নানা দিক ঘুরে, জিজ্ঞাসা করেও আমরা ওই সময় এইচটিআরসির বাস পেলাম না। সেটা পেতে হলে রাত ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উপায়ান্তর না পেয়ে একটা লোকাল বাসে উঠে পড়লাম। কান-মাথা মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়েছি। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর টের পেয়েছি, দিল্লিতে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই বাস ছেড়ে দিল।

BYQd2PX.jpg


২.

ভারতের এ সফরে দেখলাম, প্রতি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পরপর বাসগুলো ধাবায় (রাস্তার ধারের রেস্তোরাঁ) যাত্রাবিরতি দেয়। কেউ চা খায়, কেউ ফ্রেশ হয়। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে হাঁটাহাঁটি করে। বেশ লাগছিল। বিশেষ করে প্রতিটি ধাবার পরিষ্কার বাথরুম দেখে আসলেই অবাক হয়েছি। পথে সকাল পেরিয়ে বিকেল হতে হতে আম্বলা, চণ্ডীগড়, বিলাসপুর পার হয়ে গেছি। যাত্রী উঠে পুরো বাস মুড়ির টিন হয়ে গেছে। তাতেও আপত্তি ছিল না। কিন্তু বিপত্তি বাধল মানন্ডি জেলায় আসার পর। বাস কন্ডাক্টর ঘোষণা দিলেন, মানন্ডির পর বাস আর যাবে না। কিছু যাত্রী হইহই করে উঠলেন। কারণ, আমাদের মতো তাদেরও বলা হয়েছিল, এ বাস মানালি পর্যন্ত যাবে।

একফাঁকে এক যাত্রীর কাছে জানতে পারলাম, মানন্ডি থেকে মানালি যেতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে এবং যেখানে এ বাস থামবে, সে এলাকায় কোনো বাসস্ট্যান্ড নেই। লও ঠেলা! সঙ্গী আর আমি—দুজনেই বুঝতে পারলাম, আসল ঝামেলায় এবার পড়ে গেছি।

রাত আটটা, পাহাড়ি এলাকার ঘুটঘুটে অন্ধকার, আশপাশে কিছুই নেই—এমন এক জায়গায় আমরা দুজনসহ চারজন নেমে পড়লাম। এর মধ্যে যাত্রীদের একজন জানিয়েছেন, এখানে নামলে লোকাল কোনো বাস পাওয়া যেতে পারে। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে অপেক্ষা করছি। গায়ে শীতের ভারী পোশাক থাকলেও হাতে গ্লাভস নেই।

শীতের মোজা তাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর পরামর্শদাতা যাত্রী আমাদের নিয়ে একটি প্রায় খালি থাকা বাসে উঠে পড়লেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, দূরে পাহাড়ে মিটিমিটি করে অনেক আলো জ্বলছে। ঠিক যেন ঝিকমিকে তারা! তবে উপভোগ করতে করতে ঠান্ডা বাতাস ততক্ষণে আমাদের বেশ কাবু করে ফেলেছে।

রাত ১০টা নাগাদ মানালির মল রোডে বাস নামিয়ে দিয়ে গেল। ঠান্ডায় জমে যাওয়ার জোগাড়। যদিও চারপাশে বরফের 'ব'টিরও দেখা নেই। মল রোডে একটা হোটেল ঠিক করে বেরিয়ে পড়লাম পেট ঠান্ডা করতে। কিন্তু হাতের কবজি যে অসার হয়ে আছে, খাব কী করে! দ্রুত গ্লাভস কিনে, হাতে পরে তবেই খানিকটা শান্তি মিলল। বিপত্তি ঘটল আরেক জায়গায়। ছোট একটা খাবার হোটেলে ঢুকে ভাজা ট্রাউট মাছ (এর আগে কাশ্মীরে খেয়েছিলাম। খুবই সুস্বাদু!) আর রুটির অর্ডার দিয়েছি। গ্লাভস খুলে খেলে হাত জমে যাচ্ছে, আর গ্লাভস পরে খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না! সেই সঙ্গে পানির তাপমাত্রার কথা নাই–বা বললাম।

পরদিন ভোরে হোটেলের রুমের পর্দা সরিয়ে দেখি, দূরের এক পাহাড়ের চূড়ায় বরফ জমে আছে। আর যায় কই! পড়িমরি করে সঙ্গীসহ বেরিয়ে পড়লাম। মল রোড থেকে সারা দিনের জন্য একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে তাতে চড়ে বসলাম। চালক প্রথমে আমাদের নিয়ে গেলেন গুলাবায়। পাহাড়ের মাঝামাঝিতে বরফ ছড়িয়ে আছে। আমাদের মতো আরও অনেক দর্শনার্থী সেখানে এসেছেন। একজন স্থানীয় আলোকচিত্রীর সহায়তায় আমরা পাহাড় বেয়ে কিছুদূর উঠে এসে বরফে রীতিমতো দুজন তখন হুটোপুটি শুরু করে দিয়েছি। চারদিকের পাহাড়গুলো শ্বেতশুভ্র হয়ে আছে। সে সৌন্দর্য দেখলেই কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসে!

iPV6Icp.jpg


অল্প কিছু ছবি তুলেই রওনা দিলান সোলাং ভ্যালির দিকে। পৌঁছে একটু হতাশই লাগল। কারণ, সেখানে তখনো বরফ পড়েনি। এদিক-ওদিক ঘুরে একটা কেব্‌ল কারে চড়ে পাহাড়ের মাথায় উঠে এলাম। আশপাশেও তেমন বরফ দেখা গেল না। আবার কেব্‌ল কারে চড়ে নিচে নেমে এলাম বাকি জায়গা ঘুরে দেখব বলে। কয়েকজন পর্যটক প্যারাগ্লাইডিং করে ততক্ষণে নিচে নামছেন। কেউ কেউ দেখলাম, বিড়ালের চেয়েও বড় আকারের খরগোশের সঙ্গে ছবি তুলছেন। হালকা চালে আমরা গাড়ির দিকে চলে আসতেই নাকের ওপর কী জানি পড়ল। ওপরে তাকাতেই এবার পড়ল চোখে।

মহামুশকিল! কী মনে করে ঘাড়ের দিকে তাকাতেই দেখি, তুলার মতো সাদা কিছু জ্যাকেটের ওপর পড়ে আছে। তুষার! দেখতে না দেখতেই হালকা বৃষ্টির মতো তুষার ঝরতে শুরু করল। খুশিতে আমার সঙ্গীর তখন বত্রিশ দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। এই না হলে মানালি ঘোরা! ষোলোকলা পূর্ণ হলো বলে।

এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে শহর ঘোরা শুরু হলো। সরু সরু রাস্তার দুই পাশে ঘরবাড়ি, দোকানপাট। শীতের পোশাক, ঐতিহ্যবাহী গয়নার দোকানই বেশি চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে পাশ দিয়ে বলে চলছে খরস্রোতা নদী। পাহাড়ের ধাপে ধাপে সাধারণ বাড়িঘর, কিন্তু কেমন মায়াঘেরা। ধীরে ধীরে হিড়িম্বা দেবীর মন্দির, মনুমন্দির, ভাসির গোসলখানা, নিঙ্গাম্পা বৌদ্ধমন্দির ঘুরে ঘুরে হোটেলে ফিরে এলাম। এরপর সন্ধ্যায় হালকা নাশতা সেরে মল রোডে হাঁটাহাঁটি করতে করতে রাতের খাবারের সময় হয়ে গেল। মল রোড সব সময় জমজমাট। আড্ডা দেওয়া, রেস্তোরাঁ কিংবা রাস্তার খাবার (স্ট্রিট ফুড) খাওয়া, হাঁটার জন্য আদর্শ। তাই খাবার বেলায় খুঁতখুঁতে আমার সঙ্গীটি রাস্তার দুই দোকান থেকে দুই বাটি মিষ্টি কিনে নির্দ্বিধায় পেটে চালান করে দিল।

পরের দিন ভোরে আবারও দুজন বেড়িয়ে পড়লাম। গত দিনের চালক আজও আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি বললেন, বরফ পড়ায় গুলাবা বন্ধ হয়ে গেছে। বরফের মজা বোঝাতে তাই উনি আমাদের নিয়ে সোলাং ভ্যালির দিকে ছুটলেন। আধা রাস্তা আসতেই মুষলধারে তুষারপাত শুরু হলো। মুহূর্তে চারপাশ সাদা হয়ে যাচ্ছে। খুশিতে পারলে আমি গাড়ির দরজা খুলে তখনই বেরিয়ে পড়ি, এমন অবস্থা! ভ্যালিতে এসে গাড়ি থেকে নামতেই দেখলাম, পুরো এলাকা পর্যটকে যেমন ছেয়ে গেছে, তেমনি তুষারে সব ঢাকা পড়েছে। হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি শুরু করলাম। শীতকালের প্রতি চরম বিরক্ত এই আমি তখন একদৃষ্টে চারপাশের পাহাড়গুলোকে দেখছি। পলক পড়লেই যেন সব হারিয়ে যাবে।
মাত্র দুদিনে মন ভরল না। কিন্তু ফিরতে তো হবেই। বেলা ১১টায় এইচআরটিসির বাসে উঠে পড়লাম। বড় বড় পাথুরে পাহাড়, খরস্রোতা নদী আর পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে বাস দিল্লির দিকে এগিয়ে চলল। মানালির সৌন্দর্য এতটাই মুগ্ধ করেছে যে মনে মনে ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছি, এখানে আবার ফিরে আসতে হবে। এদিকে দিল্লি নেমেই আমরা চলে যাব আগ্রায়। শ্বেতপাথরের সৌন্দর্য তখন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সে গল্প কোনো একদিন বলা যাবে।

লেখক: সারা মনামী হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
 

Users who are viewing this thread

Back
Top