চার বন্ধু
অপু, দীপু, ছোটম আর পাখি। এই মুহুর্তে এই চার বন্ধুর সম্পর্ক সব থেকে গভীর। যতো যাই হউক, দিনে একবার এই চারজন মিলতে না পারলে যেনো তাদের চলেই না। করোনার কল্যাণে অনির্দিস্ট সময়ের জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের অভিবাবকরাও পড়া-লেখার ব্যাপারে তাদের কোনো চাপ না দেয়াতে তাদের বেয়াড়া পনা দিন দিন বেড়েই চলছিলো। এখন সারাদিনে একবার না, বরং একবারে সারাদিন আড্ডা মেরে তারা কাটিয়ে দিচ্ছে। আড্ডা বাজির ফাঁকেই দীপু প্রস্তাব দিলো, চার বন্ধুতে মিলে একসাথে কিছু একটা করলে কেমন হয় ? বসে বসে আড্ডা দেয়াও হলো আবার পাশাপাশি কিছু রোজগারের ব্যবস্থাও করা গেলো। প্রস্তাবটা সাথে সাথেই অন্য তিনজন লুফে নিলো। কিন্তু কি করা যায়...
ভেবেচিন্তে পাখি প্রস্তাব দিলো,
পাখিঃ দোস্ত, এক কাজ করি চল। আমাদের পুরান কাঠের বাড়িতে একটা পেট্রোল পাম্পের ব্যবসা দেই।
পাখির কথা কথা শেষ হতে না হতেই অপু পাখির কথায় সমর্থন দিয়ে দিলো..
অপুঃ মন্দ হয় না। পাম্পের ব্যবসা বেশ ভালোই জমাতে পারবো আমরা। সেই সাথে আমাদের আড্ডাবাজিও চলবে জোরেশোরে...
এই প্রস্তাবে আর কারো দ্বিমত না থাকাতে পরদিন থেকেই তারা পেট্রল পাম্পের ব্যবসা শুরু করে দিলো। ইতিমধ্যে মাস পেরিয়ে গেলো...
কিন্তু হায় ! ব্যবসা দেয়া পর্যন্তই সার। একটা খদ্দেরের দেখাও তারা পেলো না। এমন তো হবার কথা ছিলো না। কি কারনে কোনো খদ্দের পাচ্ছে না সেটা নিয়ে মাস খানেক পর তারা আলোচনায় বসলো। আলোচনায় বেরিয়ে আসলো তাদের এই পেট্রোল পাম্পটা দোতলায় দেয়াতে কোনো খদ্দের পাচ্ছে না। কারন কাঠের দোতলায় গাড়ি উঠার তো প্রশ্নই আসে না।
এবার তারা সেই পেট্রোল পাম্পে একটা রেস্টুরেন্ট দিল।
কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলো কোনো কাস্টমারের দেখা তারা পেলো না।
এবারের কারন কি ?
অনুসন্ধান করে দেখা গেলো, পেট্রোল পাম্পের আগের সেই সাইনবোর্ডটাই তারা খুলেনি। আর যাই হউক, পেট্রোল পাম্পে তো আর কেউ খেতে আসবে না।
এবার অনেক ভেবে তারা একটা ট্যাক্সি কিনলো। ভাড়ায় খাটাবে। বেশ রোজগার হবে...
কিন্তূ একি ! সারা মাসে তারা একটা প্যাসেঞ্জারও পেলো না।
কারন কি ?
কারন সেই একটাই আড্ডাবাজি। চার বন্ধুর দুজন ট্যাক্সির সামনের সীটে আর বাকি দুজন ট্যাক্সির পিছনের সীটে বসে ট্যাক্সি চালালে কি প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাবে ?
তারা চারজনেই তো পুরো ট্যাক্সী দখল করে রেখেছে...
এভাবে কিছুদিন যেতেই তাদের সেই ট্যাক্সী একদিন রাস্তায় বিকল হয়ে গেলো। সবাই নেমে সিদ্ধান্ত নিলো ধাক্কা ছাড়া এই ট্যাক্সী আর চালানো যাবে না। চারজনে ধাক্কা দেয়া শুরু করলো। ধাক্কা দিতে দিতে একেকজন ঘেমে গোসল করে উঠলো, কিন্তু ট্যাক্সি এক ইঞ্চিও নড়াতে পারলো না।
কারন কি ?
কারন দীপু আর অপু ধাক্কাচ্ছিলো ট্যাক্সির পিছন দিক থেকে আর পাখি আর ছোটম ধাক্কাচ্ছিলো ট্যাক্সির সামনের দিক থেকে। ট্যাক্সি বেচারা তাদের দুই দিকের ধাক্কায় কোনোদিকেই আর এগোতে পারছিলো না।
এবার সব শেষ ছোটমের বুদ্ধিতে একটা ছোট বাচ্চাকে তারা কিডন্যাপ করলো। কিডন্যাপের পর বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, বাড়ি যা। বাড়ি গিয়ে তোর বড় ভাইকে বল আমাদের এক লাখ টাকা দিতে। না হলে তোকে মেরে ফেলা হবে। বাচ্চাটা বাড়িতে গিয়ে এই ঘটনা বলার পর বাচ্চার বড় ভাই তাদেরকে এক লাখ টাকা দিয়ে দিলো... !!
কিন্তু কেনো ? বাচ্চাটাকে ছেড়ে দেয়ার পরেও কেনো কিডন্যাপারদের এক লাখ টাকা দিলো ?
কারন, বাচ্চাটার বড় ভাই যে কিডন্যাপার চারজনের একজন ছিলো...
এই চারজনের কারো সাথে যদি আপনাদের কারোর দেখা হয়ে যায়, তবে যেনো ভুলেও বলেন না যে তারা বোকা ছিলো। বললে কিন্তু অন্য কেউ কিছু না করলেও দীপু ঠুয়া দিতে পারে...