তারবিহীন চার্জার প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?
আমরা যখন থেকে বিদ্যুতের কথা ভেবেছি, তখনই তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহের কথা এসেছে। প্রযুক্তির নিত্য নতুন উন্নয়ন আর সংযোজনের ফলে এখন তার বিহীন বিদ্যুৎ প্রবাহের পদ্ধতি জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।
ওয়্যারলেস চার্জিং এর পুরো বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে খুবই বিস্ময়কর। আপনার হাতের স্মার্টফোনটি শুধুমাত্র বিশেষ একটি প্লাটফরমের উপরে রাখছেন, আর এতেই চার্জ হচ্ছে ব্যাটারি!
অনেকে তো কাজের টেবিলটাই এমনভাবে তৈরী করে নেয়; যেন টেবিলের নির্দিষ্ট জায়গায় ফোন রাখলেই চার্জিং শুরু হয়ে যায়। নেই কোন তারের টানাটানি কিংবা প্লাগ-ইন প্লাগ-আউটের ঝামেলা।
যাইহোক, অন্য সব প্রযুক্তির মতো ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তিকে প্রথম দর্শনে জাদুকরি মনে হলেও, এখানে জাদুকরি কোন ব্যাপার নেই।
ইন্ডাকটিভ চার্জিং কৌশলের আধুনিক এবং উন্নত সংস্করণই হচ্ছে আজকের ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি। উনবিংশ শতকের শেষভাগে বিজ্ঞানীরা মূলত ইন্ডাকটিভ চার্জিং কৌশল আবিষ্কার করেন। তবে, ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি সফল ও বাণিজ্যিকভাবে মানুষের হাতে পৌঁছে গেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
তড়িৎ পদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম সূত্র হচ্ছে, ওয়েরস্টেড 'ল। ইন্ডাক্টিভ চার্জিং মূলত এই সূত্রের উপর ভিত্তি করেই কাজ করে থাকে।
কোন পদার্থ কিংবা তারের মধ্য দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তখন এর চারপাশে একটি চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। এখন আপনি যদি এই বৈদ্যুতিক তার সোজা ভাবে না রেখে কুন্ডলী অর্থাৎ গোল করে পেচিয়ে কয়েল তৈরী করেন, তাহলে আরও শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র তৈরী হবে।
এরকম কয়েলেরই ছোট একটা সংস্করণ ব্যবহৃত হয় ওয়ারলেস চার্জিং প্যাডের ভেতরে। যেটা বিদ্যুৎ প্রবাহ বা সহজ বাংলায় কারেন্টকে তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রে রূপান্তরিত করে ফেলে। এবং কোনকিছুর জন্য অপেক্ষা করে যা এই শক্তিটাকে শুষে নিবে।
তবে, এই তড়িৎচৌম্বকীয় উপরে যে কোন ব্যাটারি রাখলেই তা চার্জ হবে এমনটা নয়। এজন্য বিশেষ ধরণের রিসিভার প্রয়োজন যেটা তড়িচৌম্বকীয় ক্ষেত্র থেকে শক্তি শুষে নিয়ে সেটা পুনরায় তড়িৎ প্রবাহে অর্থাৎ কারেন্টে রূপান্তরিত করতে পারে। আর রিসিভার ডিভাইসেও রূপান্তরের এই কাজটি করে থাকে একটি কয়েল।
তারবিহীন বাতাস কিংবা শূন্য মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আপনি যদি কারেন্ট ট্রান্সফার করতে চান; তাহলে প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে একটি ইন্ডাকশন কয়েল। এরপর সেই কয়েলের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করতে হবে। ওয়েরস্টেড সূত্র অনুযায়ী ইন্ডাকশন কয়েল তখন এই তড়িৎ প্রবাহ বা কারেন্টকে তড়িৎচৌম্বকীয় চৌম্বকীয় তরঙ্গে রূপান্তরিত করে ফেলে।
এর ফলে ইন্ডাকশন কয়েলের আশেপাশে খুবই অল্প জায়গা জুড়ে তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এখন আরেকটি রিসিভার কয়েল যদি আপনি এই তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রে রাখেন; তাহলে সেই রিসিভার কয়েলটি ক্ষেত্র থেকে তড়িৎ চৌম্বকীয় শক্তি সংগ্রহ করে সেটাকে পুনরায় তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করবে।
এবার আপনি সেই তড়িৎ প্রবাহকে যে কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। সেটা ফোন চার্জিং হোক বা অন্যকিছু। প্লেটের ট্রান্সমিটার কয়েল এবং ফোনে থাকা কয়েলটি খুব কাছাকাছি থাকতে হয়। এটি ৪৫ মিলি মিটার পর্যন্ত দূরত্বে কাজ করবে। ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের জন্য ফোনে এই কয়েলটি লাগানো দরকার।