What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other অথ গান্ধর্বীকথা (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
_প্রখ্যাত সাহিত্যিক নমস্য শ্রী আশুতোষ মুখোপাধ্যায়-এর সুযোগ্যা কন্যা সর্বানী মুখোপাধ্যায় LEKHA ....পড়ে মনে হলো সকলের এটা পড়া উচিত_

*অথ গান্ধর্বীকথা*

১৯৭৭ সাল, শীতের কুয়াশামোড়া এক সকাল, তখনো রোদ ওঠেনি, তিনি এলেন সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রতাপাদিত্য রোডের লালবাড়িতে; সাহিত্যিক- সান্নিধ্যে নয়!এসেছিলেন মারণব্যধিতে ধরা তার একমাত্র ছেলে জয়কে গান শোনাতে; নিয়ে এসেছিলেন আমাদের দুই ভাইবোনের হেমন্তকাকু--হেমন্ত মুখোপাধ্যায়... আগে থেকে কিচ্ছু না জানিয়ে!
তখনও আমি বিছানা ছাড়িনি, জেগে জেগে শুয়ে আরাম করছি। হঠাৎই হেমন্তকাকুর দরাজ গলার হাঁক--"জয়!জয়! কাকে ধরে এনেছি দেখো!"...জয় তখন ঘুমোচ্ছে, আমি লাফ দিয়ে উঠে গিয়ে দেখি, আমার বাবা-মা সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে,আর দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছে হেমন্তকাকু; এবং তার ছ'ফুট লম্বা শরীরের আড়ালে ঢাকা পড়া তার পিছুপিছু কুন্ঠিত পায়ে নতমুখী এক মহিলা--লতা মঙ্গেশকর!
হেমন্তকাকুর সঙ্গেসঙ্গে সোজা বাবা-মায়ের শোওয়ার ঘরে ঢুকে একেবারে বিছানায় বসলেন জয়ের গা ঘেঁষে।জয় তো সবে ঘুমভাঙা চোখ মেলেছে কি মেলেনি, হেমন্তকাকু লতা মঙ্গেশকরকে হুকুম করলেন-"নাও,শুরু করো...." আর লতা মঙ্গেশকর লক্ষ্মী মেয়ের মতো মাথা হেলিয়ে 'আদেশ শিরোধার্য' করে আমার ভাইয়ের মুখের ওপর ঝুঁকে ধরলেন--"জাগো মোহনপ্রীতম জাগো"......
একেবারে খালিগলা যেন রিন্ রিন্ করে বেজে উঠলো। মুহূর্তে গন্ধর্বলোক নেমে এলো ঘরে! ওদিকে সারা বাড়িতে ততোক্ষণে থই থই করছে লোক! বাড়ির সবাই,খবর রটে গিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীরা, সক্কলে এসে জুটেছে ওই ঘরে; কিন্তু টুঁ শব্দটি নেই! নাইটিঙ্গেল-কন্ঠজাদুতে সবাই বিবশ!
গান শেষ করে জয়ের দিকে তাকিয়ে স্মিতমুখে হেসে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ভালো লেগেছে?লতা মঙ্গেশকর ষোলো বছরের এক অসুস্থ ছেলেকে অকৃত্রিম আগ্রহে আর বেদনা-ভরা মমতায় প্রশ্ন করছেন তাঁর গান ওর ভালো লেগেছে কিনা!!...জয় তো একমুখ হেসে জানালো খুব ভালো লেগেছে; শুনে গায়িকার ঠোঁটেও স্মিত হাসি; এরপর খুব নিচু স্বরে হিন্দিতে ওকেই ফিরে প্রশ্ন--"কেন এই গানটা গাইলাম জানো?" জবাব পাওয়ার আগেই তেমনি মৃদুস্বরে মিঠে শব্দে নিজেই উত্তর দিয়ে দিলেন দুইহাতে ওর মুখখানা ধরে--"এই যে আমার মোহন প্রীতম, আমার মোহন প্যেয়ারে,তাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য....."
নিজেরই অজান্তে চোখে জল আসে যখনই অতকাল আগের সেই সকালের কথা মনে পড়ে!.... সেদিন পরেছিলেন ফিকে আলতারঙা জরিপাড়ের ধবধবে সাদা গাদোয়াল শাড়ি,আর গায়ে ছিল সূক্ষ্ম কাশ্মীরি কারুকাজের খুব সুন্দর অফ্-হোয়াইট শাল। কপালে শ্বেত চন্দনের একটা ছোট্ট টান; এছাড়া আর কোনোরকম প্রসাধন বিহীন মুখ; কিন্তু স্বর্ণমঞ্জীর ছিল যুগল চরণে! সোনার নূপুর ছিল পায়ে! যা জীবনে কোনোদিন আর কাউকে দেখিনি! বরাবর জানি সোনা পায়ে ঠ্যাকাতে নেই; দৈবাৎ পা লেগে গেলে কপালে ছুঁইয়ে প্রণাম করতে হয়; আর লতা মঙ্গেশকর কিনা পায়ে পরে আছেন সোনার নূপুর!! বস্তুটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে বাবাকে বললাম মনের কথা; শুনে আমার সাহিত্যিক বাবা বলেছিল--"উনি একাধারে সুরলক্ষ্মী আর সুরসরস্বতী-- উনিই তো পায়ে পরবেন সোনার নূপুর!"......
‌ ওদিকে তখন আরেক কাণ্ড বাধিয়ে বসেছে জয়! মেয়ে একদিকে 'পায়ে কেন সোনার নূপুর' আর ছেলে আরেকদিকে 'সিঁথেয় কেন পরেছে সিঁদুর!' সে এক অভাবনীয় পরিস্থিতি! লতা মঙ্গেশকর সারাক্ষণ ঝুঁকে বসেছিলেন জয়ের দিকে।ছেলে সেই ফাঁকে কখন যেন লক্ষ্য করেছে ওঁনার ঠাসা ঘন চুলের সরু সিঁথির একেবারে গোড়ায় একটুকরো লাল ছোপ!আর সঙ্গে সঙ্গে সোজা তাঁকেই সপাট প্রশ্ন--"তোমার বুঝি এখন বিয়ে হয়েছে?মাথায় সিঁদুর পরেছ যে!"..... ঘরের সক্কলে,বাবা-মা তো বটেই, হেমন্তকাকু পর্যন্ত হকচকিয়ে গিয়েছিল! সামাল দেবার চেষ্টায় কাকুই তড়িঘড়ি বলে উঠেছিল,"আরে এটা পুজোর আবির!ওরা পুজো করে মাথায় দেয়! লতা এইমাত্র পুজো সেরে এলো তো!".... প্রচণ্ড অপ্রস্তুত সকলে; কিন্তু লতা মঙ্গেশকর মুখ টিপে হাসছেন! সব বুঝতে পেরেছেন! হেমন্তকাকুকে থামিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বলেছিলেন--"মুঝে বোলনে দিজিয়ে দাদা, জয় যব্ পুছা তব্ সহি বাত্ বাতানা তো পঢ়েগাই!".... হেমন্তকাকুর অপ্রতিভ মুখ! এদিকে লতা মঙ্গেশকর হিন্দিতেই তখন তাঁর ষোলো বছরের প্রশ্নকারীকে জবাবদিহি করছেন তেমনি অনুচ্চ ধীর মিঠি স্বরে-- 'সিন্দুর'ই হোক বা 'আবির'ই হোক,এটি তাঁর 'নাথ'-এর চিহ্ন, 'স্বামী' পুজোর প্রসাদ; এই 'নাথ' এই 'স্বামী' হলেন ঈশ্বর! ভগবান!.....
আজও কানে স্পষ্ট রিনরিন করে ওঠে সেই কন্ঠ, রণিত হয় প্রতিটি শব্দ, ধ্বনিত হয় প্রতিটি কথা.....
আর সেখানে, আমাদের লালবাড়ির ওই ঘরে তখন হাঁফ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচলো সবাই!এখানে বলি, লতা মঙ্গেশকর কথা বলতেন খুব খুবই নিচু গলায়; প্রায় না শুনতে পাবার মতো! কথা বলছিলেন শুধুমাত্র আমার ভাইয়ের সঙ্গে! ছোট্ট ছোট্ট টুকরো টুকরো কথা; আর বাবা কিছু বললে বা জিজ্ঞেস করলে তার উত্তরও দিচ্ছিলেন প্রায় নিঃশব্দে ঘাড় কাত করে বা 'মোনোসিলেবলে'; হ্যাঁ-না'র এক অক্ষরে! সকলেরই মনে হয়েছিল 'লতা মঙ্গেশকর' বলে কথা! হেমন্তকাকু বলে উঠেছিল--"লতা, একটু জোরে বলো!এত লোক এসেছে কিন্তু কেউ তোমার গলা শুনতে পাচ্ছে না"; নতমুখ তুলে চোখে চোখ রেখে অকুণ্ঠ স্বরে তিনি স্পষ্ট জবাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন--"এত লোকের কাছে তো আমি আসিনি! এমনকি 'মশুর রাইটারের' কাছেও না; আমি এসেছি শুধু জয়ের কাছে, জয়কে গান শোনাতে!" তাঁর অপ্রতিভ দাদা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বাবার সঙ্গে একঝলক অর্থপূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় করে "ঠিক আছে ঠিক আছে" করতে করতে বলেছিল-- "তাহলে এবার গান হোক!"... 'মশুর রাইটার'ও তাড়াতাড়ি তাতে সায় দিল; বাকি সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে রাশভারী অতি মৃদুভাষী মহিলার প্রচ্ছন্ন দাপটে। কিন্তু এরপরই শুরু হল ম্যাজিক! জয় আর হেমন্তকাকুর ফরমাশ মতো স্রোতস্বিনী নদীর ধারায় বইতে লাগলো রিনরিন জলতরঙ্গ কন্ঠে গানের পর গান--'অ্যায় মেরে বতন কি লোগোঁ', 'যা-রে যারে উড়ে যা রে পাখি';
মধ্যে মধ্যে ওঁনার নিজের বাছাই করা পছন্দের লিরিক্সের এককলি-দু'কলি বা তিনচার ছত্রের স্তবস্তোত্র। তারপর টানা চললো বাবার বাংলা সিনেমা 'সাত পাকে বাঁধা'র হিন্দি 'কোরা কাগজ্'-এর 'রুঠে রুঠে পিয়া', 'চলাচল'-এর হিন্দি 'সফর'-এর 'হম্ থে যিনকে সহারে/উও হুয়ে না হমারে', 'দীপ জ্বেলে যাই'-এর বিখ্যাত রোমান্টিক গান 'এই রাত তোমার আমার'-এর সুরে 'কোহরা'য় হেমন্তকন্ঠে গাওয়া 'ইয়ে নয়ন ডরে ডরে' ইত্যাদি আশুতোষ-কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ছায়াছবির গান। হঠাৎই, একেবারে আচমকা,জয়ের ফরমাশ হল--"এবার আমার বাবার বাংলা সিনেমার গান শোনাও! ওই যে 'কাল,তুমি আলেয়া'র ওই মেয়েদের গলার গানদুটো!-'পাতা কেটে চুল বেঁধেছে' আর 'একটু বেশি রাতে'!....."
শুনে আমাদের তো মাথায় হাত!ওই দুটি গান তো আশা ভোঁসলের!জয় তো বাবার সমস্ত সিনেমার নাড়িনক্ষত্রের খবর রাখে!এটা কী করে বললো!?লতা মঙ্গেশকরও খুব আস্তে করে সেই কথাই বললেন--"এ'দুটো গান আমার নয়, আমার বোন আশার; দাদা যখন ওকে নিয়ে আসবেন তোমার কাছে, তখন ওর মুখে শুনো"....এই শুনে তো অভিমানে ছেলের মুখ টসটসে, চোখে জোয়ার আসা টাপুরটুপুর বান! মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে উঠলো--"গানের আবার 'আমার-তোমার' আছে নাকি! যে গাইতে জানে,গান তার! তুমি তো এতো ভালো গান করো,একটু শোনাতে পারছ না?যেমন হেমন্তকাকু, বাবার ওই সিনেমায় নিজে গেয়েও কিছুতেই আমাকে ওই 'যাই চলে যাই' গানটা শোনায় না হাজার বললেও!আমি বুঝি বুঝি না,কেন!"....ঘরে তখন কবরের থমথমে নীরবতা! একটা ছুঁচ পড়লেও শোনা যেত! হেমন্তকাকু তার বুজে আসা রুদ্ধকন্ঠ খাঁকারি দিয়ে ঝেড়ে কিছু বলতে গেলে তাকে ইশারা করে, অভিমানী ছেলের মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে, মাথায়-গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে 'পাতা কেটে চুল বেঁধেছে' কথা ছাড়া শুধু সুরে গুনগুনিয়ে উঠলেন লতা মঙ্গেশকর! বেদনাহত মুখে ছলছলে চোখে দু'কলি গেয়ে জোর করে ঠোঁটে কান্নাভেজা হাসি ফোটালেন--"কথা তো জানি না বেটা! ইয়াদ নহীঁ ; এরপর যেদিন তোমার কাছে আসবো, আশার থেকে শিখে নিয়ে এসে তোমাকে শোনাবো...."

আর এলো না সেইদিন, আর হয়নি তাঁর আসা; কারণ যার কাছে আসবেন, যাকে গান শোনাবেন, সে-ই এর মাত্র ক'মাসের মধ্যেই বরাবরের মতোঠ পাড়ি দিল চিরঘুমের দেশে।।
🙏

সর্বাণী মুখোপাধ্যায়

সারস্বত গান্ধর্বী
 

Users who are viewing this thread

Back
Top