বিয়ে
মূল লেখকঃ উমর ফারুক (বইপোকা থেকে সংগৃহীত)
বিয়ে করানোর জন্য বাড়িতে জোর চাপ দিচ্ছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। সেদিন মাকে বললাম— মা, ফাগুনে ফাগুনে বেলা তো অনেক হলো। বয়সও কম না। পাক্কা একুশ!
বিয়ে করাবেন কবে?! মা বললেন— একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত সব ফেলে দিবো?! বয়স হয়েছে, বিয়ে করার?!
আমি বললাম— কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অধিকাংশ কবিতার বই কাদম্বরী দেবীর নামে অর্পণ করেছেন। আমিও টুকটাক কবিতা লিখি৷ কিন্তু অর্পণ করার মানুষ পাই না। তাই ভাবছিলাম বিয়ে করে বউয়ের নামে কবিতা অর্পণ করবো!
আর বউ পাশে না থাকলে লেখালেখিতে গতি আসে না। অনেক বড় বড় কবিসাহিত্যিক তাদের রচিত বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন— সে পাশে না থাকলে হয়তো আমার পক্ষে লিখা সম্ভব হতো না!
ফ্রান্সিস বেকন নামে প্রখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক বলে গেছেন— স্ত্রী হচ্ছে তরুণের কর্ত্রী। মধ্যবয়সী পুরুষের সঙ্গিনী৷ আর বৃদ্ধের সেবিকা।
বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন —অবশ্যই বিয়ে করো। যদি একজন ভালো জীবনসঙ্গিনী পাও, তাহলে তুমি হবে সুখী। আর যদি এর ভিন্ন হয় (মানে বউ দজ্জাল হয়) তাহলে তুমি হবে দার্শনিক!
আমার গুরুগম্ভীর আলোচনা মা শুনলেন কিনা কে জানে! হয়তো শুনেন নি! নিজের মতের বিরুদ্ধে কথা শুনতে মানুষ পছন্দ করে না!
তাই তিনি আবারো বললেন— বড় হ। তারপর বিয়ে করাবো!
তখন আচমকা কে যেনো আমার কানেকানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা " কেও কথা রাখে নি" আবৃত্তি করতে লাগলো— "নাদের আলী, আমি আর কতো বড় হবো? আমার মাথায় এ ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তবে কি আমায় তুমি বিয়ে করাবে?!"
(কবিতায় সামান্য বিকৃতি ঘটেছে)
দিন যায়। রাত আসে৷ গভীর রাত যখন আরো গভীর হয়, প্রকৃতির অদ্ভুত নীরবতায় যখন ছেয়ে যায় চারপাশ, তখন আমার হাপিত্যেশ আরো বাড়ে৷ সেদিন রাত একটা বাজে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। চারিদিকে ভ্যাপসা গরম। তেলাপোকার মতো পিঠ বেয়ে হুড়হুড় করে ঘাম পড়ছে। আমি চিৎকার করে বললাম— আজকে পাশে বউ থাকলে আমার এই করুণ পরিণতি হতো না। মা পাশের রুম থেকে বললেন— কী হইছে তোর?
আমি বললাম— এতো গরম। বাতাস করার লোক নাই৷ বউ থাকলে তো বাতাস করতো! এখন কে বাতাস করবে?!
মা ঘুম থেকে উঠে এসে পাখা হাতে বাতাস করতে লাগলেন। এদিকে আমার মনে হচ্ছে— পাখার বাতাসে কেও আমার শরীরে বিলাই চিমটি লাগিয়ে দিয়েছে! কী অদ্ভুত স্বভাব। নিজে বাতাস করতে রাজী৷ তবুও বিয়ে করাবে না! কী আর করার! ঘুমিয়ে গেলাম।
পরদিন বন্ধু রাফাত পরামর্শ দিলো— এক কাজ কর। বিয়ের গুরুত্ব ও ফজীলত নিয়ে বাংলাদেশের বিখ্যাত যতো হুজুরদের ওয়াজ আছে, সব তোর মার ফোনে ডাউনলোড করে দে! কাজ হতে পারে!
ওয়াজ শুনে ছেলেকে বিয়া করানোর চিন্তা মাথায় আসাটা অস্বাভাবিক নয়!
কিন্তু ঝামেলা হলো অন্য জায়গায়!
সব বক্তরা শুধু বউ কীভাবে শাশুড়ির সেবা করবে— এসব ওয়াজ করে। মা এসব ওয়াজ শুনে কটমট করে বললেন— এখনো দিব্যি হাঁটাচলা করতে পারি। সুস্থও আছি বেশ। তোর বউয়ের সেবা লাগবে না!
আমি বললাম— আসলে এখন আধুনিক যুগ চলছে। সবকিছুতেই আধুনিকতা এবং প্রগতির ছোঁয়া লেগেছে। রান্নাবান্না-সহ সবকিছু আধুনিক হওয়া দরকার। কিন্তু আপনার রান্নার রেসিপি পুরনো। রান্নায় আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। তাই আমার বউ দরকার। বউ আধুনিক রান্না করবে।
মা বললেন— তোর বউ কি বাবুর্চি হবে নাকি? আধুনিক রান্না শিখবে কই?
আমি বললাম — ইউটিউবে রান্নার ভালো রেসিপি পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে মর্ডান মেয়েরা রান্না শিখে।
—তাহলে আমাকেও রান্নার রেসিপি দেখা।
আমি ইউটিউবে গিয়ে সার্চ অপশনে " কীভাবে মুরগির গোশত রান্না করতে হয়" লিখে সার্চ করলাম। অনেকগুলো ভিডিও আসলো। একটা ওপেন করে মাকে দেখতে দিয়ে আমি চলে গেলাম।
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেখি মা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখে রাগে থতমত খেয়ে বললেন— এই তোর আধুনিক রান্নার রেসিপি?! বদমাশ! আয়! তোকে আধুনিক রান্না খাওয়াই! এই বলে রান্না করা মুরগির গোশত আমার দিকে ঠেলে দিলেন। গোশত মুখে দিয়ে আমি ওয়াক ওয়াক করতে করতে টিউবওয়েলে দৌড়ে গেলাম।তরকারিটা যেমন ঝাল, তেমন নোনতা, তেমনি বিশ্রী!
মাকে বললাম— কীভাবে রান্না করেছেন?
মা বললো— ভিডিওতে মহিলা মরিচ মশলা সবকিছু এক টেবিল চামচ করে দিতে বলছিলো। আমি টেবিলে রাখা চামচ দিয়া সব এক চামচ কইরা দিছি। ভাবলাম আধুনিক রান্না হয়তো এমনই হয়!
এইটা শুইনা আমি জ্ঞান হারালাম। কারণ টেবিলে ঐটা ভাতের চামচ রাখা ছিলো!
এরপর থেকে আর কোনোদিন বিয়ের নাম নিতে সাহস পাই না!
মূল লেখকঃ উমর ফারুক (বইপোকা থেকে সংগৃহীত)
বিয়ে করানোর জন্য বাড়িতে জোর চাপ দিচ্ছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। সেদিন মাকে বললাম— মা, ফাগুনে ফাগুনে বেলা তো অনেক হলো। বয়সও কম না। পাক্কা একুশ!
বিয়ে করাবেন কবে?! মা বললেন— একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত সব ফেলে দিবো?! বয়স হয়েছে, বিয়ে করার?!
আমি বললাম— কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অধিকাংশ কবিতার বই কাদম্বরী দেবীর নামে অর্পণ করেছেন। আমিও টুকটাক কবিতা লিখি৷ কিন্তু অর্পণ করার মানুষ পাই না। তাই ভাবছিলাম বিয়ে করে বউয়ের নামে কবিতা অর্পণ করবো!
আর বউ পাশে না থাকলে লেখালেখিতে গতি আসে না। অনেক বড় বড় কবিসাহিত্যিক তাদের রচিত বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন— সে পাশে না থাকলে হয়তো আমার পক্ষে লিখা সম্ভব হতো না!
ফ্রান্সিস বেকন নামে প্রখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক বলে গেছেন— স্ত্রী হচ্ছে তরুণের কর্ত্রী। মধ্যবয়সী পুরুষের সঙ্গিনী৷ আর বৃদ্ধের সেবিকা।
বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন —অবশ্যই বিয়ে করো। যদি একজন ভালো জীবনসঙ্গিনী পাও, তাহলে তুমি হবে সুখী। আর যদি এর ভিন্ন হয় (মানে বউ দজ্জাল হয়) তাহলে তুমি হবে দার্শনিক!
আমার গুরুগম্ভীর আলোচনা মা শুনলেন কিনা কে জানে! হয়তো শুনেন নি! নিজের মতের বিরুদ্ধে কথা শুনতে মানুষ পছন্দ করে না!
তাই তিনি আবারো বললেন— বড় হ। তারপর বিয়ে করাবো!
তখন আচমকা কে যেনো আমার কানেকানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা " কেও কথা রাখে নি" আবৃত্তি করতে লাগলো— "নাদের আলী, আমি আর কতো বড় হবো? আমার মাথায় এ ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তবে কি আমায় তুমি বিয়ে করাবে?!"
(কবিতায় সামান্য বিকৃতি ঘটেছে)
দিন যায়। রাত আসে৷ গভীর রাত যখন আরো গভীর হয়, প্রকৃতির অদ্ভুত নীরবতায় যখন ছেয়ে যায় চারপাশ, তখন আমার হাপিত্যেশ আরো বাড়ে৷ সেদিন রাত একটা বাজে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। চারিদিকে ভ্যাপসা গরম। তেলাপোকার মতো পিঠ বেয়ে হুড়হুড় করে ঘাম পড়ছে। আমি চিৎকার করে বললাম— আজকে পাশে বউ থাকলে আমার এই করুণ পরিণতি হতো না। মা পাশের রুম থেকে বললেন— কী হইছে তোর?
আমি বললাম— এতো গরম। বাতাস করার লোক নাই৷ বউ থাকলে তো বাতাস করতো! এখন কে বাতাস করবে?!
মা ঘুম থেকে উঠে এসে পাখা হাতে বাতাস করতে লাগলেন। এদিকে আমার মনে হচ্ছে— পাখার বাতাসে কেও আমার শরীরে বিলাই চিমটি লাগিয়ে দিয়েছে! কী অদ্ভুত স্বভাব। নিজে বাতাস করতে রাজী৷ তবুও বিয়ে করাবে না! কী আর করার! ঘুমিয়ে গেলাম।
পরদিন বন্ধু রাফাত পরামর্শ দিলো— এক কাজ কর। বিয়ের গুরুত্ব ও ফজীলত নিয়ে বাংলাদেশের বিখ্যাত যতো হুজুরদের ওয়াজ আছে, সব তোর মার ফোনে ডাউনলোড করে দে! কাজ হতে পারে!
ওয়াজ শুনে ছেলেকে বিয়া করানোর চিন্তা মাথায় আসাটা অস্বাভাবিক নয়!
কিন্তু ঝামেলা হলো অন্য জায়গায়!
সব বক্তরা শুধু বউ কীভাবে শাশুড়ির সেবা করবে— এসব ওয়াজ করে। মা এসব ওয়াজ শুনে কটমট করে বললেন— এখনো দিব্যি হাঁটাচলা করতে পারি। সুস্থও আছি বেশ। তোর বউয়ের সেবা লাগবে না!
আমি বললাম— আসলে এখন আধুনিক যুগ চলছে। সবকিছুতেই আধুনিকতা এবং প্রগতির ছোঁয়া লেগেছে। রান্নাবান্না-সহ সবকিছু আধুনিক হওয়া দরকার। কিন্তু আপনার রান্নার রেসিপি পুরনো। রান্নায় আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। তাই আমার বউ দরকার। বউ আধুনিক রান্না করবে।
মা বললেন— তোর বউ কি বাবুর্চি হবে নাকি? আধুনিক রান্না শিখবে কই?
আমি বললাম — ইউটিউবে রান্নার ভালো রেসিপি পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে মর্ডান মেয়েরা রান্না শিখে।
—তাহলে আমাকেও রান্নার রেসিপি দেখা।
আমি ইউটিউবে গিয়ে সার্চ অপশনে " কীভাবে মুরগির গোশত রান্না করতে হয়" লিখে সার্চ করলাম। অনেকগুলো ভিডিও আসলো। একটা ওপেন করে মাকে দেখতে দিয়ে আমি চলে গেলাম।
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেখি মা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখে রাগে থতমত খেয়ে বললেন— এই তোর আধুনিক রান্নার রেসিপি?! বদমাশ! আয়! তোকে আধুনিক রান্না খাওয়াই! এই বলে রান্না করা মুরগির গোশত আমার দিকে ঠেলে দিলেন। গোশত মুখে দিয়ে আমি ওয়াক ওয়াক করতে করতে টিউবওয়েলে দৌড়ে গেলাম।তরকারিটা যেমন ঝাল, তেমন নোনতা, তেমনি বিশ্রী!
মাকে বললাম— কীভাবে রান্না করেছেন?
মা বললো— ভিডিওতে মহিলা মরিচ মশলা সবকিছু এক টেবিল চামচ করে দিতে বলছিলো। আমি টেবিলে রাখা চামচ দিয়া সব এক চামচ কইরা দিছি। ভাবলাম আধুনিক রান্না হয়তো এমনই হয়!
এইটা শুইনা আমি জ্ঞান হারালাম। কারণ টেবিলে ঐটা ভাতের চামচ রাখা ছিলো!
এরপর থেকে আর কোনোদিন বিয়ের নাম নিতে সাহস পাই না!