What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আমার ইংরেজি ভীতি (1 Viewer)

রাস্তাঘাটে কেউ ইংরাজি বলছে দেখলে আমি খুব ভয় পেয়ে যেতাম। ছোটোবেলা থেকেই ইংরাজি বোঝা বা বলার প্রতি আমার এত আতংক কাজ করতো যে ইংরাজি পরীক্ষার দিন সকাল থেকে আমার হাঁটু কেপে যেতো। একবার ইংরাজি পরীক্ষায় প্রশ্ন এলো, 'দুটো বন্ধুর মধ্যে ইংরাজিতে কাল্পনিক সংলাপ লেখো, বিষয়: যুদ্ধ ও শান্তি', তো আমি বাংলা সিরিয়ালে ইংরেজ বা নীলকর সাহেবরা যেভাবে কথা বলতো, সেভাবে সংলাপ লিখেছিলাম:

বন্ধু ১: হে টুমি কোথায় যাইটেছো?
বন্ধু ২: হামি বাজার করিটে যাইটেছি।
বন্ধু ১: ওহ, টোমার কি মনে হয় যুড্ড ভালো না ছান্তি ভালো?
বন্ধু ২: হামার যুড্ড চাই।
বন্ধু ১: শাট আপ নেটিভ, যুড্ড চাই আবার ক্ষী কঠা, বলো ছান্তি চাই
বন্ধু ২: ইউ শাট আপ সন অফ আ ফ্রগ্!
বন্ধু ১: গেট আউট ইউ আর ভেরি পুওর নেটিভ!

এইসব দেখে বড়রা আমাকে উপদেশ দিলো ইংরাজি গল্পের বই পড়তে, তাতে নাকি আমার পড়ার আগ্রহ বাড়বে, আবার ভোকাবুলারিও তৈরি হবে। তো আমি ফেলুদার একটা গল্প বাংলা আর ইংরাজি দুটো ভাষাতেই পাশাপাশি রেখে পড়া শুরু করি। তারপর পড়তে গিয়ে আমার এত গুলিয়ে যায়, যে একই গল্প দুটো ভাষায় শেষ করে দেখি ইংরাজি ভার্সন আর বাংলা ভার্সনে দুটো আলাদা আলাদা খুনী বেরিয়ে গেছে, ইংরাজি গল্পে ভিলেন একজন, বাংলা ভার্সনে আলাদা ভিলেন। তো তারপর থেকে আমি ইংরাজি গল্প পড়া বন্ধ করে দিলাম। বন্ধুরা বললো- ফোনের কাস্টোমার কেয়ারে ফোন করে ইংরাজি প্র্যাকটিস করতে, কারন কাস্টোমার কেয়ারে কেউ জাজ করার নেই।

কিন্তু কাস্টোমার কেয়ারে কথা বলতে গিয়েও আমার ভিতর থেকে নীলকর সাহেবের ভূত বেরিয়ে আসে,

- স্যার হাউ ক্যান উই হেল্প ইউ স্যার?
- ঠোমরা আমার অল মানি কাট করে নিয়েছো, ইমিডিয়েট মাই মানি হামাকে রিটার্ন করো, নহিলে হেবি টরচার করিবো!

এইসব শুনে কোম্পানি থেকেই আমার ফোনের লাইন কেটে দেয়। কিন্তু ইংরাজি বলার আতংক আর ইনফিরিওরিটি কিছুতেই বিদেয় হয় না।

কলেজে যখন পড়ি, একটি মেয়েকে পছন্দ হয়, যার কিনা ইংলিশ মিডিয়াম ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো, আর সব সময় সে ইংরিজিতে কিসব ফটর ফটর করতো। মনের কথা বলতে গেলে ইংরাজিতে না বললে কোনো প্রেস্টিজ থাকবে না, এই ভেবে আমি খুব চিন্তায় পড়ে যাই। তখন বন্ধুরা আমাকে বোঝায় একমাত্র মদ খেলেই নাকি মানুষ আপনা হতেই ইংরাজি শিখে যায়, আমার উচিত সামান্য মদ্যপান করে মেয়েটিকে ইংরাজিতে আমার মনের কথা খুলে বলা। কিন্তু এই করতে গিয়ে আমি অনেকটাই মদ্যপান করে ফেলি, আর তারপর রাস্তার মোড়ে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু দূর থেকে দেখি মেয়েটি অন্য একটি ছেলের হাত ধরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, এটা দেখে মদ্যপান করা অবস্থায় ছিলাম বলে নাকি মনে মনে আঘাত পেয়েছিলাম বলে কিনা জানিনা, কিন্তু আমার মাথা বিগড়ে যায়। আমি রাস্তার ওপর একটা গাছের ডাল পড়েছিলো, সেটা নিয়ে মেয়েটার সাথে থাকা ছেলেটিকে তাড়া করি আর বলতে থাকি- 'গো ব্যাক সাইমন, ব্লাডি ইংরেজ, গিভ মী ব্যাক মাই মাদারল্যান্ড, গিভ মী ব্যাক মাই লাভ!' মেয়েটা তো ঘাবড়ে যায়ই, ছেলেটিও আচমকা কী হলো বুঝতে না পেড়ে দৌড়াতে গিয়ে একটা নর্দমার মধ্যে পড়ে যায়। ছেলেটা নর্দমায় হাবুডুব খাচ্ছে, আর আমি নর্দমার পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে যাচ্ছি- "গিভ মী ব্যাক মাই মাদারল্যান্ড, গিভ মী ব্যাক মাই লাভ!"

তারপর মেয়েটি পিছন থেকে এসে আমাকেও ধাক্কা দিয়ে নর্দমায় ফেলে দিয়েছিলো।

তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। অনেকদিন পর, অবশেষে কিছু শুভাকাঙ্খীদের উপদেশে আমি একটা স্পোকেন ইংলিশ ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে ক্লাস টাস করে ইংরাজির একটু হলেও উন্নতি হয়েছিলো।

শুধু যেদিন সার্টিফিকেট দেবার জন্য স্টেজে ডেকেছিলো, উত্তেজনায় আর আনন্দে আমি মাতোয়ারা হয়ে যাই, যে স্যার আমার হাতে শংসাপত্র তুলে দেয়, আমি মঞ্চের ওপরই মাইক হাতে তাঁকে বলে ফেলি- "হে পুওর নেটিভ, টোমাকে অনেক অনেক ঢন্যবাড!"
 

Users who are viewing this thread

Back
Top