What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সিদ্ধি বা ভাং (1 Viewer)

Laal

Exclusive Writer
Story Writer
Joined
Mar 4, 2018
Threads
103
Messages
3,574
Credits
23,646
Lollipop
Red Apple
শিশ, চরস, গাঁজা, সজ্জা, সিদ্ধি বা ভাং হচ্ছে একই গাছের রকমারি উৎপাদন, যার বৈজ্ঞানিক নাম Cannabis sativa, এক ধরনের শণ বা hemp গাছ। এই গাছের শুকনাে পাতা হচ্ছে সিদ্ধি, সাধারণত বেটে এমনি বা অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে খাওয়া হয়। উত্তর ভারতে, বিশেষত উত্তর প্রদেশে ভাঙের নেশার ব্যাপক প্রচলন প্রায় স্মরণাতীত কাল থেকে, যেজন্য এর বহু বৈচিত্র্য সম্ভব হয়েছে।
thandai_recipe_for_holi-sixteen_nine.jpg
সিদ্ধি সাধারণ ভােজ্যের সঙ্গে মেশানাে হয় যেমন, সিদ্ধির বরফি, কচুরি, সিঙাড়া, জিলিপি ও কুলপি। এ ছাড়া দই, গােলমরিচ, শসার বিচি ইত্যাদি বকাল' সহযােগে শরবত, যার নাম ঠাণ্ডাই', প্রখর গ্রীষ্মে শরীর সুশীতলকারক সিদ্ধির ধর্মীয় তাৎপর্ষ আছে সকলেই জানেন, শিবের পুজো সিদ্ধি গাঁজা ছাড়া হয় না, বিশেষ করে দ্বিতীয়টি।
শুভ অনুষ্ঠান ভােজবাড়ি ক্রিয়াকর্মের ফর্দে প্রথমেই লেখা হয় "সিদ্ধি এত মূল্যের, বিজয়ার দিন সারা বছর কর্মসিদ্ধি আকাঙ্খা করে এক চুমুক খেতে হয় ইত্যাদি। কিন্তু হিন্দু ধর্মের বিবিধ আখড়ায় এর অনেক গুরুত্ব। বহুকাল থেকে মঠ আখড়া প্রভৃতিতে শরীরচর্চার রেওয়াজ প্রচলিত, প্রভূত ডনবৈঠক কুস্তি তৎসহ ভাঙ। এর সঙ্গে দুধ ঘি মিষ্টির অনুপান পড়ায় বপুত্থান হতে দেখবার মতাে। এই রীতি গােটা উত্তর প্রদেশ, বিহারের নানা আখড়া থেকে পুরীর পাণ্ডাদের মধ্যে এখনও চালু। ভােজনের পরিমাণও দেখবার মতাে।

ভাঙ ক্ষুধাবর্ধক, কিশােরীচাদ মিত্র দ্বারকানাথ ঠাকুরের জীবনীকার, তিনি লিখেছেন ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বারকানাথ উত্তর ভারত ভ্রমণে গিয়ে বৃন্দাবনে ". . দশ হাজার টাকা ব্যয় করে চেীবেদের একটি ভােজ দিলেন। চেীবেরা ছিলেন উচ্চশ্রেণীর ব্রাহ্মণ, বৃন্দাবনের মন্দিরে তারাই পাণ্ডা-পুরােহিত। ... চৌবেরা ভােজনবীর বলে এখনাে বিখ্যাত। তারা নিজেদের লেটা ভরে ভাঙ এনেছিলেন এবং ভােজনের পূর্বে ক্ষুধা বাড়িয়ে নেবার জন্য ভাঙ খেয়েছিলেন প্রচুর, ফলে তারা প্রত্যেকেই তিন-চার সেরের মতাে পুরী ও মেঠাই পরম তৃপ্তিতে গলাধঃকরণ করেছিলেন।" কুস্তিতে দৈহিক ওজনের প্রয়ােজন ও গুরুত্ব যথেষ্ট, পালােয়ানদের মধ্যে ভাঙ খাওয়ার চলও বােধ হয় এর থেকেই।
cannabisshutterstock_354999077.jpg

উনিশ শতকে কলকাতায় যে সব পড়ে, দুবে, চৌবে, তেওয়ারিরা আসতাে ধনীগৃহের দ্বারপাল নচেৎ পুলিসে চাকরির আশায়, কুন্তি আর ভাঙ তাদের নিত্যকার ব্যাপার। সিদ্ধি বাটা সময় ও পরিশ্রম সাপেক্ষ, উত্তর ভারতের অনেক বনেদি হিন্দু বাড়িতে সিন্ধি বাটার পৃথক বৃহদাকার শিল থাকে, চাকরও। হামানদিস্তাতেও অনেক জায়গায় কোটা হয়। বাটার মান সম্পর্কে প্রচলিত কহাবৎ আছে বাটতে বাটতে যখন এত চিটচিটে আঠা হয়ে যাবে যে নােড়া ধরে টানলে শিল উঠে আসবে, তখন বােঝা যাবে ঠিক পেষাই হয়েছে। উত্তর ভারতের বেশ কিছু ব্রাহ্মণ বাড়িতে একই কাজের জন্য বিশালাকার খল-নুড়ি ব্যবহার হয়ে থাকে। বাঙলায় বাটা' বললেও হিন্দিতে ভাঙ সর্বত্র 'ধূটনা'- পিষনা' নয়। ঘুটনা' শব্দটার ইঙ্গিতই যথেষ্ট যে তৈরির আদি প্রথা শিলনােড়ায় না হয়ে খল-নুড়ি বা হামানদিস্তা দ্বারা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সিদ্ধির দ্বিতীয় বৈচিত্র 'মাজম' বা মাম', যার উল্লেখ বাবুর ফর্পে আছে। শব্দটি এসেছে আরবি 'মা'জুন থেকে, আক্ষরিক অর্থ চটকে মাখা পদার্থ।
Process_of_making_bhang_in_Punjab%2C_India.jpg

মূল উপাদান ভাং, তার সঙ্গে দুধ, ঘি, সুগন্ধি মশলা আর চিনি দিয়ে বানানাে এক প্রকার মাদক মিঠাই। কলকাতার বড়বাজারে সিদ্ধির শরবতের দোকানে এখনও বিক্রি হয়। সেকালের খবর অনুযায়ী দাক্ষিণাতেও এর চলন ছিল। সিদ্ধির তৃতীয় বৈচিত্র 'চুল'। মাসুম যেমন চটচটে সন্দেশাকুতি, চুরণ হচ্ছে গুড়াে মশলার মতাে। শুকননা সিদ্ধি পাতা, সুগন্ধি মশলা, চিনি সহ হামানদিস্তায় গুড়াে করে শেষে ঘি মেশানাে হয়।
বিলাসী ধনীদের জন্য তৈরি হয় জাফরান মিশ্রিত চুরণ, চিমটিভের মুখে দিলেই নাকি শীত পালায়। চুরণের খদ্দের সীমাবদ্ধ, তারা খানদানী শৌখিন রঈস, একতাল গােবরের মতাে সিদ্ধি-বাটা-খেকোদের কিঞ্চিৎ নিচু চোখে দেখে থাকেন। সিদ্ধির নেশা অপেক্ষাকৃত পাতলা হয় বলে এর সঙ্গে বিবিধ বস্তু মেশাবার প্রথা আছে। সবচাইতে মারাত্মক ধুতরাের বীজ, মাত্রার হেরফের উম্মত্ব থেকে মৃত্যু, সবই ঘটতে পারে।
দীনবন্ধু মিত্রের যমালয়ে জীবন্ত মানুষ'-এ আছে শিব একদিন সিদ্ধি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, নন্দী নূতন বাজারে গাঁজা কিনিতে আসিয়া শুনিয়াছিলেন, ক্লান্তীতে নেসা না হইলে মরফিয়া মিশাইয়া দিতে হয় এবং সিদ্ধিতে নেসা না হইলে ঝুল মিশাইয়া দিতে হয়।
বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এর নাম 'সিনারজিস্টিক এফেক্ট', চট করে নেশা হওয়ার জন্য আরও মেশানাে হয় তামার পয়সা ঘষে রুপার অক্সাইড, নারকেল গাছের শিকড় বাটা, তাড়ির গাদ প্রভৃতি। সিদ্ধির অনুপান মিষ্টি। সিন্ধি খাওয়ার পর মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করে, খেলে নেশাটাও বেশ জমে। নেশার অনুপান বা চাট অতিশয় গুরুতর বিষয়, এদিক ওদিক হলেই নেশাটি মাটি। পুনরায় দীনবন্ধু। সধবার একাদশীতে মাতাল নিমাকে ধরে পেটাচ্ছে রামধন, রেগে বলছে 'এখন তােমাকে সন্দেশ কিনে দিই'। নিমাদের হাজির জবাব, 'কেন বাবা জিনিসগুলাে নষ্ট করবে? —মদের মুখে কোন শালা সন্দেশ খেতে পারে না।' হক কথা!

holi-getty-6.jpg

মদের চাট হিসাবে প্রশস্ত হচ্ছে পেয়াজ-রসূনলঙ্ক যুক্ত আমিষ, নিদেন নােনতা ভাজাভুজি। মিষ্টি হার্গিশ না। সিদ্ধি ঠিক উলটো, মিষ্টি তৎসহ সাত্তিক শাকাহারী ভােজন। পেঁয়াজ-রসুন কি আমিষের গন্ধ নাকে গেলেই বমি আসবে। সব নেশারই নিজস্ব মেজাজ আছে, কোনােটা উদ্দীপিত করে, কোনােটা ঝিমিয়ে দেয়, যেমন মদ ক্রোধ ও হিংসাত্মক প্রবণতা বাড়ায় অনুপানের চরিত্রের সঙ্গে এই মেজাজের। সাদৃশ্য চোখে পড়ার মতাে। সিদ্ধি সেবনে মানসিক আনন্দ, সময় ও স্থানজ্ঞান লােপের সঙ্গে আসে কথা বলার প্রবণতা, বিশেষত অতীন্দ্রিয়, আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে কথা বলার। এমন নেশার অনুপান সাত্ত্বিক ভােজ্য ছাড়া আর কি হতে পারে?

তবে ব্যতিক্রম আছে এবং ইতিহাসে তার প্রমাণও পাওয়া যায়। মধ্যযুগ থেকেই ভারতীয় সৈনারা বিশেষত উত্তর ভারতীয়রা ভাং ও আফিম খেতাে। যুদ্ধের সময় তার পরিমাণ বাড়তাে। আফিমের প্রচলন ছিল বিশেষ করে রাজস্থান ও সন্নিহিত অঞ্চলে, কাঁচা আফিম জলে গুলে বানানাে পানীয়, যার নাম 'ইমল' বা 'ইমলি'। প্রতি সন্ধ্যায় আসর বসতো, গ্রামের মােড়ল প্রত্যেক পুরুষ গ্রামবাসীকে তার 'ডােজ' অনুযায়ী ইমল বেঁটে দেওয়ার সম্মানিত দায়িত্ব পালন করতেন। প্রাপ্তবয়স্ক হলেই তার জন্য হতে শুরুয়া অনুষ্ঠান।
রামকৃষ্ণ পরমহংস ধর্মীয় আলােচনা প্রসঙ্গে একটি প্রবাদ বলেছেন, গৃহী হােকে বাতায় জ্ঞান, ইমলি পিকে করে ধ্যান/যােগী হােকে ঠোকে ভগ, এ তিন আদমী কলি কা ঠগ। অর্থাৎ সংসারী, গৃহী হয়ে যে ব্যাক্তি ধর্ম-সাধনা তথা বৈরাগের উপদেশ দেয়, যে আফিম খেয়ে বুদ হয়ে ধ্যান করার ভান করে ও যে যােগী হয়ে নারী সংসর্গ করে, এই তিন ব্যক্তি কলিকালের ঠক বা প্রতারক।

সেই ইমলি! মুঘল যুগের বহু যুদ্ধের বিবরণে আছে পর্যদস্ত যােদ্ধারা মরিয়া লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ার আগে সকলে রণক্ষেত্রেই ইমলির শেষ চুমুক খেয়ে নিচ্ছে। সৈন্যদের যুদ্ধে উদ্দীপ্ত করানাের জন্য নেশার প্রচলন সেই কবে থেকেই। ভারতে তা ছিল রকমারি যথা মদ, আফিম ও ভাঙ।
ব্রিটিশরা ভারতীয় বাহিনীতে সেই প্রথা পালটে মদের মনােপলির সৃষ্টি করে। নিম্নবর্গের সৈনাদের মধ্যে দেশীয়সের জন্য আরক ও শ্বেতাঙ্গদের জন্য রাম'। প্রথা পালটানাে সহজ নয়, অন্তত বেশ কিছু দিন সময় লাগে। কতদিন পর্যন্ত ব্রিটিশ-ভারতীয় বাহিনীতে আফিম ভাঙের চলন ছিল তার কতকগুলি পরােক্ষ প্রমাণ আছে। আফিম কেন খায়, সেই প্রশ্নের উত্তরে ব্রিটিশ ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সদস্য দীন মুহম্মদ (১৭৫৯-১৮৫১ খ্রি.) জানাচ্ছেন, হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত শ্রেণীর লােক আফিমের নেশা করে। তাদের মধ্যে নিম্নবর্গের লােকেরা করে কঠিন, বিপজ্জনক কাজ করার সময়, বিপদ সম্পর্কে বােধশূন্য হওয়ার জন্য, উচ্চবর্গের লােকেরা করে বাসনা চরিতার্থ করতে, বিলাসিতার জন্য।
১৮৫৭ খ্রি. ব্যারাকপুরের সেনাছাউনিতে সিপাহি মঙ্গল পাণ্ডে দেশীয় সিপাহিদের ইংরাজের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে বলে, এক ইংরেজ অফিসারকে জখম করে দেশব্যাপী সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা করে। কোর্ট মার্শালের সময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আর এক সিপাহীকে বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, পাণ্ডেকে নিবৃত্ত করলে না কেন? সে উত্তরে বলে, মঙ্গল ভাঙ থেয়ে উন্মত্ত হয়েছিল, তাকে ঠেকানাে যেত না!

(সূত্র: চিত্রিত পদ্মে - অরুণ নাগ)​
 

Users who are viewing this thread

Back
Top