নিচ তলা থেকে দু'তলায় উঠতে সাধারণত কেউ লিফট ব্যবহার করে না, কিন্তু আমি শুধুমাত্র শুক্রবার অফিসে ঢুকার সময় খুব ব্যস্তভাব নিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি।। লিফট যেনো বেশি দেরি করে আসে, মনে মনে এই কামনা করি।। পরিচিত কেউ আমাকে লিফটের সামনে দাঁড়ানো দেখলে, উনি কিছু জিজ্ঞেস না করলেও বলি- পাঁচতালায় যাবো, আগে এককাপ চা খেয়ে দ্যান নিউজ রুমে ঢুকবো।। অফিসের পাঁচতালায় আমাদের খাবার দাবারের ক্যাফে।। আমি একটা টিভি চ্যানেলে নিউজ এডিটর হিসেবে কর্মরত আছি।। তাই শুক্রবারেও অফিস খোলা, সাপ্তাহিক ছুটি একেক জনের একেক দিন।। আমার ছুটি যেমন শনি রবি দুইদিন!! সারা সপ্তাহ যা তা কাপড় পড়ে অফিসে আসলেও, শুক্রবার আমার সেরা জামা কাপড়গুলো পড়ে রীতিমত সাহেববাবু সেজে অফিসে যাই।।
আসল উদ্দেশ্য, প্রায় প্রতি শুক্রবার আমাদের চ্যানেলে মেয়েদের অডিশন চলে- উপাস্থাপিকা এবং নিউজ প্রেজেন্টার নিয়োগের।। অফিসের রিসিভশনে একঝাঁক সুন্দরী, স্মার্ট তরুণীরা বসে থাকে অডিশনের জন্য।। ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই লিফটের দরজা, তাই সেখানে দাঁড়িয়ে আসলে মেয়েগুলোর দিকে বার বার আড় চোখে তাকাই।। তবে ভাবখানা এমন যে আমি খুব ব্যস্ত মানুষ।। অনেক মেয়ে এগিয়ে এসে, কিছু ব্যাপার জিজ্ঞেস করতে চায়।। তারা ভাবে চ্যানেলে যেহেতু কাজ করি সেহেতু আমার ভান্ডারে নিয়োগের ব্যাপারে তথ্য আছে।। আসলে, নিয়োগের পুরোটাই দেখে মৌসুমী আপু, মনন ভাইয়া আর মাহাবুব ভাই।। উপস্থাপিকা কিংবা নিউজ প্রেজেন্টার নিয়োগে আমার কোন ভূমিকা নেই।।
গত শুক্রবার হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢুকছি, আমার সাথে সাথে রুমি ভাই ঢুকলেন।। উনি আমাদের ইনচার্জ, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো, এখন তো আর লিফটের সামনে দাঁড়ানো যাবে না।। উনার সাথে সিড়ি দিয়ে সোজা দু'তালায় উঠে গেলাম।। নিচে মেয়েগুলোর দিকে একনজর তাকানোর সুযোগও পেলাম না।। মনটা উসখুশ উসখুশ করছে।। অফিসে জয়েন করার পর, এই প্রথম অডিশন দিতে আসা মেয়ে দেখার সুযোগ মিস হয়ে গেলো।। আজ আর কাজে মন বসবে না, মেয়েগুলোর অডিশন হয়তো ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।। এর মধ্যে আর নিচে নামার উপায় নাই।। বিরস বদনে কাজে মন দিলাম।। হঠাৎ দেখি মৌসুমী আপু আমার ডেস্কের কাছে এসে দাঁড়ালো।।
কি রে শোভন, তোর রেফারেন্সে একজন ক্যান্ডিডেট আছে।। আগে কিছু জানালি না যে?
আপুর কথা শুনে চেয়ারে বসে ঘাড় উপর করে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।।
আমি বিষ্মিত গলায় বললাম- মানে কি? আমি তো কাউকে রেফার করি নাই।।
আপু অধিক অবাক হয়ে বললো- অডিশনের সিভিতে দেখলাম তোর রেফার করা একজন।। মেয়েটার নাম সম্ভবত সুরভী তালুকদার!!
আমার বুকের বাম পাশে মুহূর্তেই ধাম ধাম করে ঢোল বেজে উঠলো, সুরভী তো আমার জিএফ এর নাম।। কিন্তু, এটা কিভাবে সম্ভব ওর সাথে তো এই বিষয়ে কোন কথাই হয় নি।।
আমি বার কয়েক ঢোঁক গিলে আপুকে বললাম- আপু সিভিটা একটু দেখি।।
আপু চলে যেতে যেতে বললো- এইচ আরে আয়, ওখানে সিভি জমা আছে।।
আমি আর উঠলাম না, জমে শীতল বরফ হয়ে আছি।। ফোন বের করে সুরভীকে কল দিলাম, সুরভী কল ধরলো-
হ্যালো, অই তুমি কই?
সুরভী স্বাভাবিক গলায় বললো- বাসায়, কেন?
আমি ভিমরি খেলাম আবার, উত্তেজিত হয়ে বললাম- বাসায় কেন, মানে বাসায় তুমি?
সুরভী অবাক কন্ঠে বললো- বাসায় কি, কেন মানে কি? কি হইছে শোভন, তুমি কই? অফিসে যাও নাই!!
আমি দ্বিধান্বিত হয়ে বললাম- আমি অফিসে, আচ্ছা একটু পরে কল দিচ্ছি।।
বলে ফোন কেটে দিলাম।।
ইনচার্জ রুমি ভাইকে শুধু বললাম- ভাই আমি একটু এইচ আর থেকে আসি।। বলেই সিড়ি দিয়েই চারতালার দিকে দৌড় লাগালাম।।
হাঁফাতে হাঁফাতে চারতলায় গিয়ে দেখি, অডিশন রুম লক করা।। ওখানে আমাদের জেনারেল আইডি কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকা যায় না, শুধু এইচ আরের লোকদের আইডি কার্ডে এক্সেস দেয়া।। আমি মৌসুমী আপুকে কল দিলাম, আপু কল কেটে দিলো!! আপু হয়তো এখন অডিশন নিতে ব্যস্ত।। এদিকে আমার নিচে অনেক কাজ জমে আছে।। নিউজের একগাদা স্ক্রিপ্ট লেখা বাকী, অডিশন রুমের বাইরে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাও বোকামী।। সাতপাঁচ ভেবে আবার ডেস্কে ফিরে এলাম।। সাথে সাথে বস্তা বস্তা কাজ এসে গেলো, আপাতত ঘন্টা খানেক দম ফেলার ফুসরত নেই।। মাথা থেকে আপাতত সুরভীর চিন্তা সরিয়ে ফেললাম।।
মৌসুমী আপু কল ব্যাক দিলো বেশ পরে।। আপু আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করে।। জবের শুরু থেকেই আমাকে তুই বলে সম্বোধন করে।। একদম আপন বড় বোনের মত উনার আচরণ।।
আমি আপুর ফোন ধরেই বললাম- আপু কই আপনি?
এই তো ক্যাফেতে, চা খাই, আসবি উপরে?
আমি চাপা গলায় বললাম- কাজের হিউজ চাপ, নিচে আসবেন একটু, কথা আছে।।
আপু বললো- আচ্ছা, একটু দেরি হবে।।
আমি ফোন রেখে কাজে মন দিলাম।।
লাঞ্চ করার টাইম হয়ে গেলো, মৌসুমী আপু এখনো আমার সাথে দেখা করতে আসে নাই।। আমি আবার আপুকে কল দিলাম- আপু বললো সে বাসায় চলে গেছে।। আপু আফসোস করে বললো, ইস শোভন তোর কথা বেমালুম ভুলে গেছিলাম রে!! কোন সমস্যা কিছু বলবি, আর হ্যাঁ তোকে তো বলাই হয় নাই।। ওই তোর রেফার করা, সুরভী মেয়েটাকে আমরা আপাতত সিলেক্ট করেছি, তিনমাস ইন্টার্নশিপের জন্যে।।
আমি নির্বাক হয়ে গেলাম, কে এই সুরভী, কাকেই সিলেক্ট করলো, আমি কিভাবে রেফার করলাম।। অথচ, আমার কাউকে রেফার করার মত এখতিয়ার আছে, তাই জানতাম না।। অফিসে আর শোভন নামে কেউ তো নেই।। তাহলে কি দিয়ে কি হচ্ছে, মাথাটা ঝিম ঝিম করছে-
.........
সন্ধ্যা বেলায় সুরভীকে কল দিলাম।। অফিসে এইচ আরের আর কারো সাথে তেমন সুসম্পর্ক নেই, তাই মৌসুমী আপুকে ছাড়া ওই সিভি দেখার সুযোগ পাবো না।।
সুরভীর সাথে স্বাভাবিক কথা বললাম, ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে নিলাম।। কিন্তু, আমার মাথায় ওই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে, অথচ জিজ্ঞেস করার উপায় পাচ্ছি না।। আরো খারাপ ব্যাপার হলো- আগামীকাল শনি রবি দুইদিন অফিস বন্ধ।। আর মৌসুমী আপুর রবি সোম বন্ধ।। তাই মঙ্গলবারের আগে কিছুই জানার উপায় নেই।। অফিসের কেউ আমার জিএফ এর ব্যাপারটা জানে না, সবাই জানে আমি সিঙ্গেল।। এমনকি, মৌসুমী আপু আমাকে আগে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে, আমি না করে দিয়েছি।। কারণ, সুরভীর সাথে আমার সম্পর্কের বয়স মাত্র আড়াই মাস।। তাই, ওভাবে কাউকে জানানো হয় নি, আর আমি রিলেশনের ব্যাপারে একটু লাজুক প্রকৃতির।। আপু মাঝে মাঝে অফিসের জেরিন, আইরিন, নিশিতাকে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে মজা করে কথা বলে, আমি শুধু লজ্জা পেয়ে হাসি।।
মঙ্গলবার অফিসে ঢুকেই মৌসুমী আপুকে কল দিলাম।। আপু বললো- এইচ আরেই আছি, উপরে আয়।। আমি উপরে গিয়ে আপুর মুখোমুখি চেয়ারে গিয়ে বসলাম।।
আপু বললো- কি রে, কি খবর?
আমি ভূমিকা না করে সোজা বললাম- আপু সুরভী তালুকদারের সিভিটা একটু দেন তো?
আপু ভ্রু কুঁচকে তাকালো, মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো- মেয়েটা সুন্দর আছে, ট্যালেন্টেড মেয়ে।। তোর কি হয়, পরিচয় কিভাবে?
আমি আসলে দ্বিধান্তিত, কি জবাব দিবো, শুধু বললাম- আগে সিভিটা দেখি, পরে বলছি সব।।
আপু হতাশ কণ্ঠে বললো- তুই রেফার করলি, তুই আবার সিভি দেখতে চাস, ব্যাপারটা খুলে বল তো শোভন।। আর হ্যাঁ সব সিভি এখন মাহাবুব ভাইয়ের কাছে, উনার কাছে এখন চাওয়া যাবে না।। কারণ উনি গতকাল সিঙ্গাপুর গেছেন।। এইচ আরের হেড হলে যা হয়, ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ এই দেশ তো ওই দেশ!!
আমি প্রচন্ড আশাহত, এ কেমন কাকতলীয় ব্যাপার , বার বার কি হচ্ছে আমার সাথে!!
আমি আপুকে বললাম- মাহাবুব ভাই কবে আসবেন, আর ইন্টার্ন ফ্রেশাররা অফিসে জয়েন করবে কবে?
আপু খানিক ভেবে বললো- মাহাবুব ভাই নেক্সট উইকে আসবেন মে বি, আর ইন্টার্ন শুরু আগামী মাস থেকে।।
আমি হিসাব করে দেখলাম, নতুন মাস আসতে আরো দশ দিনের মত বাকি।। হায় রে অভাগা কপাল!!
...........
আজ মাসের এক তারিখ।। এর মধ্যে সুরভীকে ইনিয়ে বিনিয়ে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি, প্রতিবার সুরভী আকাশ থেকে পড়ে বলে- আজিব, তোমার অফিসে আমি সিভি দিবো কেন? তাও তোমাকে না জানিয়ে, তোমার কি মাথা ঠিক আছে।।আর এইসব মিডিয়ার চাকরি আমি লাইক করি না, আমার ফ্যামেলির কেউও করে না।।
সুরভীর এমন কড়া উত্তরের পর, আমি হিসাব মিলাতে ব্যর্থ!!
এদিকে মৌসুমী আপুকেও আর ঘাঁটি নাই, কারণ মাহাবুব ভাই এখনো দেশে ফিরেন নাই।। তাই ঘেঁটে লাভ নাই, আপুকে যদিও এক আধবার জিজ্ঞেস করেছিলাম- সুরভী তালুকদারের বাবার নাম মনে আছে কিনা, কই থেকে পড়াশোনা করছে এসব।।
আপু রেগে গিয়ে, জবাবে বলেছে- ওরে গাধা এইগুলো কেউ মনে রাখে, শত শত ক্যান্ডিডেট সামলাই।। আর তুই রেফার করে, তুই জানিস না কেন, বল তো!! আমি জবাব দিতে পারি নাই, শুধু বোবা হয়ে চেয়ে ছিলাম আপুর দিকে।।
অফিসে ঢুকেই মন উতলা আজ, নতুন জয়েন করা ইন্টার্ন মেয়েগুলোকে কখন দেখবো।। এবার মোট বারো জন চান্স পাইছে ইন্টার্নশিপ করার জন্যে।। এর মধ্যে তিনজন ছেলে, বাকি নয়জন মেয়ে।।
হঠাৎ মৌসুমী আপু আর মনন ভাই, ইন্টার্নীতে জয়েন করা নতুনদের সাথে নিয়ে নিউজরুমে ঢুকলেন।। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, গুণে গুণে দেখলাম এগারোজন ছেলে মেয়ে আছে।। একটা মেয়ে কম আছে। এমন তো না, সুরভী তালুকদার নামের মেয়েটা শুধু মাত্র অনুপস্থিত!!
আমার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, খানিক বাদে সিওর হলাম এখানে সুরভী নামে কেউ নেই।। আমি মৌসুমী আপুকে একা পাবার আশায় আছি, অনেক প্রশ্ন জমে আছে মনে।। কিন্তু আপু নিউজ রুম থেকে ওদের নিয়ে প্রোডাকশন হাউজের দিকে চলে গেলেন।। আমি সবার চলে যাওয়ার পথে একরাশ কৌতুহল নিয়ে চেয়ে রইলাম।।
ঘন্টাখানেক পর আপুকে কল দিলাম।। আপু বললো আমি ক্যাফেতে যাচ্ছি, ক্যাফেতে আয়।৷ আমি ইনচার্জকে বলে ক্যাফেতে গিয়ে দেখি আপু বসে আছে।।
আপুকে দেখেই বললাম- আজ সুরভী আসে নাই আপু?
আপু মৃদ্যু হেসে বললো- আসছে তো, তোর পিছনে দেখ!!
আমি ঘুরে পিছনে থাকতেই ভিমরি খেলাম, সত্যি পিছনে সুরভী বসে আছে।। কি অদ্ভুত এখানে আমার সুরভী এলো কিভাবে?
মৌসুমী আপু আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললো- গার্লফ্রেন্ড লুকানোর শাস্তি কেমন দিলাম।। তুই চমকের গল্প লিখিস তাই না, আমরা কেমন চমক দিলাম তাই বল!!
আমি আপুর কথা শুনে আরো এলেমেলো হয়ে গেলাম।। আমার হিসাব মিলে না, এক কোটি প্রশ্ন মনে, সব মিলাতে হবে।।
সুরভী পিছন থেকে উঠে আমাদের গোল টেবিলে এসে, আমার পাশের চেয়ারে বসলো।।
আপু বলে চললো- সুরভীর সাথে আরো মাস খানেক আগে আমার ফেসবুকে কথা হয়।। তোর আমার কমেন্টের সূত্র ধরে সে আমাকে নক করে, আর তুইও সুরভীকে প্রায় আমার কথা বলতি।। আবার, বেচারিকে অফিসে সুন্দর সুন্দর মেয়ের গল্প শুনাতি।। সুরভীর নাকি সহ্য হতো না, তোর কথা শুনে মেয়েটা নীরবে কষ্ট পেতো।। কিন্তু তোকে তো আর বলতে পারে না কারণ সে একপ্রকার জোর করেই নাকি তোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।। ব্যাস, দুইজনে মিলে বুদ্ধি করলাম, তোকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়।। সুরভী খুব ভালো মেয়ে ওর কোন দোষ নেই, সব আমার বুদ্ধি।। আর হ্যাঁ সুরভী যেহেতু মার্কেটিং এর ছাত্রী এখানে তিনমাস ইন্টার্নী করলে ওর জব ক্যারিয়ার বরং ভালো হবে।। একটা এক্সটা সার্টিফিকেট পাবে।। উপরন্তু, তোর মত দুষ্ট বিএফকেও চোখে চোখে রাখতে পারবে।।
আমি শুধু বললাম- তো সব তো আর আপনাদের প্লান না, মাহাবুব ভাই বিদেশ গেলো প্লাস ওইদিন কি সুরভী অডিশন দিতে আসছিলো।। আবার আপনি সিভি দেখতে উপরেও আসতে বলেছিলেন।। এগুলোর ব্যাখ্যা কি?
আপু বললো- বাহ তুই তো বহুত চালাক।। সব মনে রেখেছিস।। শুন, সুরভীর সাথে আমার বাইরে মিট হয়, ওই দিন সিভি নিয়ে নেই।। ওই শুক্রবারে অডিশনের দিন সুরভী ছিলোই না।। আর ওর সিভি আমার কাছেই আছে, ওইদিন তোকে উপরে আসতে বলে আমিই অডিশন রুমে ঢুকে যাই, দেখলি না গাধা তোকে সিভির কথা বলেই দৌড় দিলাম উপরে।।
আমি বোকার মত মাথা নাড়ালাম।। হিসাব মিলে গেছে, নিজেকে আমি চালাক ভাবি কোন আক্কেলে, আমি হইলাম গাধারামের সর্দার।।
সুরভী মুগ্ধ হয়ে আমাদের দুইজনের আলাপচারিতা শুনে যাচ্ছে।।
নীরবতা ভেঙে মেয়েটা নিচু গলায় বলে উঠলো- তুমি চাইলে আমি ইন্টার্ন করবো না এখানে, তবু রাগ কইরো না শোভন প্লিজ।।
আমি কষ্ট চাপা দিয়ে সাতরঙা অদ্ভুত এক হাসি দিয়ে বললাম- ধুর কি যে বলো না, একসাথে এক অফিসে থাকার মজাই আলাদা।। আমি তো অনেক খুশি হইছি আর অবাকও হইছি।।
মৌসুমী আপু আমার দিকে করুনার দৃষ্টিতে তাকালেন, সে মনে হয় আমার ভিতরের চিৎকারগুলো শুনতে পাচ্ছে।।
গেলো রে গেলো, সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখা বন্ধ হয়ে গেলো!!
আসল উদ্দেশ্য, প্রায় প্রতি শুক্রবার আমাদের চ্যানেলে মেয়েদের অডিশন চলে- উপাস্থাপিকা এবং নিউজ প্রেজেন্টার নিয়োগের।। অফিসের রিসিভশনে একঝাঁক সুন্দরী, স্মার্ট তরুণীরা বসে থাকে অডিশনের জন্য।। ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই লিফটের দরজা, তাই সেখানে দাঁড়িয়ে আসলে মেয়েগুলোর দিকে বার বার আড় চোখে তাকাই।। তবে ভাবখানা এমন যে আমি খুব ব্যস্ত মানুষ।। অনেক মেয়ে এগিয়ে এসে, কিছু ব্যাপার জিজ্ঞেস করতে চায়।। তারা ভাবে চ্যানেলে যেহেতু কাজ করি সেহেতু আমার ভান্ডারে নিয়োগের ব্যাপারে তথ্য আছে।। আসলে, নিয়োগের পুরোটাই দেখে মৌসুমী আপু, মনন ভাইয়া আর মাহাবুব ভাই।। উপস্থাপিকা কিংবা নিউজ প্রেজেন্টার নিয়োগে আমার কোন ভূমিকা নেই।।
গত শুক্রবার হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢুকছি, আমার সাথে সাথে রুমি ভাই ঢুকলেন।। উনি আমাদের ইনচার্জ, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো, এখন তো আর লিফটের সামনে দাঁড়ানো যাবে না।। উনার সাথে সিড়ি দিয়ে সোজা দু'তালায় উঠে গেলাম।। নিচে মেয়েগুলোর দিকে একনজর তাকানোর সুযোগও পেলাম না।। মনটা উসখুশ উসখুশ করছে।। অফিসে জয়েন করার পর, এই প্রথম অডিশন দিতে আসা মেয়ে দেখার সুযোগ মিস হয়ে গেলো।। আজ আর কাজে মন বসবে না, মেয়েগুলোর অডিশন হয়তো ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।। এর মধ্যে আর নিচে নামার উপায় নাই।। বিরস বদনে কাজে মন দিলাম।। হঠাৎ দেখি মৌসুমী আপু আমার ডেস্কের কাছে এসে দাঁড়ালো।।
কি রে শোভন, তোর রেফারেন্সে একজন ক্যান্ডিডেট আছে।। আগে কিছু জানালি না যে?
আপুর কথা শুনে চেয়ারে বসে ঘাড় উপর করে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।।
আমি বিষ্মিত গলায় বললাম- মানে কি? আমি তো কাউকে রেফার করি নাই।।
আপু অধিক অবাক হয়ে বললো- অডিশনের সিভিতে দেখলাম তোর রেফার করা একজন।। মেয়েটার নাম সম্ভবত সুরভী তালুকদার!!
আমার বুকের বাম পাশে মুহূর্তেই ধাম ধাম করে ঢোল বেজে উঠলো, সুরভী তো আমার জিএফ এর নাম।। কিন্তু, এটা কিভাবে সম্ভব ওর সাথে তো এই বিষয়ে কোন কথাই হয় নি।।
আমি বার কয়েক ঢোঁক গিলে আপুকে বললাম- আপু সিভিটা একটু দেখি।।
আপু চলে যেতে যেতে বললো- এইচ আরে আয়, ওখানে সিভি জমা আছে।।
আমি আর উঠলাম না, জমে শীতল বরফ হয়ে আছি।। ফোন বের করে সুরভীকে কল দিলাম, সুরভী কল ধরলো-
হ্যালো, অই তুমি কই?
সুরভী স্বাভাবিক গলায় বললো- বাসায়, কেন?
আমি ভিমরি খেলাম আবার, উত্তেজিত হয়ে বললাম- বাসায় কেন, মানে বাসায় তুমি?
সুরভী অবাক কন্ঠে বললো- বাসায় কি, কেন মানে কি? কি হইছে শোভন, তুমি কই? অফিসে যাও নাই!!
আমি দ্বিধান্বিত হয়ে বললাম- আমি অফিসে, আচ্ছা একটু পরে কল দিচ্ছি।।
বলে ফোন কেটে দিলাম।।
ইনচার্জ রুমি ভাইকে শুধু বললাম- ভাই আমি একটু এইচ আর থেকে আসি।। বলেই সিড়ি দিয়েই চারতালার দিকে দৌড় লাগালাম।।
হাঁফাতে হাঁফাতে চারতলায় গিয়ে দেখি, অডিশন রুম লক করা।। ওখানে আমাদের জেনারেল আইডি কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকা যায় না, শুধু এইচ আরের লোকদের আইডি কার্ডে এক্সেস দেয়া।। আমি মৌসুমী আপুকে কল দিলাম, আপু কল কেটে দিলো!! আপু হয়তো এখন অডিশন নিতে ব্যস্ত।। এদিকে আমার নিচে অনেক কাজ জমে আছে।। নিউজের একগাদা স্ক্রিপ্ট লেখা বাকী, অডিশন রুমের বাইরে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাও বোকামী।। সাতপাঁচ ভেবে আবার ডেস্কে ফিরে এলাম।। সাথে সাথে বস্তা বস্তা কাজ এসে গেলো, আপাতত ঘন্টা খানেক দম ফেলার ফুসরত নেই।। মাথা থেকে আপাতত সুরভীর চিন্তা সরিয়ে ফেললাম।।
মৌসুমী আপু কল ব্যাক দিলো বেশ পরে।। আপু আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করে।। জবের শুরু থেকেই আমাকে তুই বলে সম্বোধন করে।। একদম আপন বড় বোনের মত উনার আচরণ।।
আমি আপুর ফোন ধরেই বললাম- আপু কই আপনি?
এই তো ক্যাফেতে, চা খাই, আসবি উপরে?
আমি চাপা গলায় বললাম- কাজের হিউজ চাপ, নিচে আসবেন একটু, কথা আছে।।
আপু বললো- আচ্ছা, একটু দেরি হবে।।
আমি ফোন রেখে কাজে মন দিলাম।।
লাঞ্চ করার টাইম হয়ে গেলো, মৌসুমী আপু এখনো আমার সাথে দেখা করতে আসে নাই।। আমি আবার আপুকে কল দিলাম- আপু বললো সে বাসায় চলে গেছে।। আপু আফসোস করে বললো, ইস শোভন তোর কথা বেমালুম ভুলে গেছিলাম রে!! কোন সমস্যা কিছু বলবি, আর হ্যাঁ তোকে তো বলাই হয় নাই।। ওই তোর রেফার করা, সুরভী মেয়েটাকে আমরা আপাতত সিলেক্ট করেছি, তিনমাস ইন্টার্নশিপের জন্যে।।
আমি নির্বাক হয়ে গেলাম, কে এই সুরভী, কাকেই সিলেক্ট করলো, আমি কিভাবে রেফার করলাম।। অথচ, আমার কাউকে রেফার করার মত এখতিয়ার আছে, তাই জানতাম না।। অফিসে আর শোভন নামে কেউ তো নেই।। তাহলে কি দিয়ে কি হচ্ছে, মাথাটা ঝিম ঝিম করছে-
.........
সন্ধ্যা বেলায় সুরভীকে কল দিলাম।। অফিসে এইচ আরের আর কারো সাথে তেমন সুসম্পর্ক নেই, তাই মৌসুমী আপুকে ছাড়া ওই সিভি দেখার সুযোগ পাবো না।।
সুরভীর সাথে স্বাভাবিক কথা বললাম, ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে নিলাম।। কিন্তু, আমার মাথায় ওই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে, অথচ জিজ্ঞেস করার উপায় পাচ্ছি না।। আরো খারাপ ব্যাপার হলো- আগামীকাল শনি রবি দুইদিন অফিস বন্ধ।। আর মৌসুমী আপুর রবি সোম বন্ধ।। তাই মঙ্গলবারের আগে কিছুই জানার উপায় নেই।। অফিসের কেউ আমার জিএফ এর ব্যাপারটা জানে না, সবাই জানে আমি সিঙ্গেল।। এমনকি, মৌসুমী আপু আমাকে আগে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে, আমি না করে দিয়েছি।। কারণ, সুরভীর সাথে আমার সম্পর্কের বয়স মাত্র আড়াই মাস।। তাই, ওভাবে কাউকে জানানো হয় নি, আর আমি রিলেশনের ব্যাপারে একটু লাজুক প্রকৃতির।। আপু মাঝে মাঝে অফিসের জেরিন, আইরিন, নিশিতাকে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে মজা করে কথা বলে, আমি শুধু লজ্জা পেয়ে হাসি।।
মঙ্গলবার অফিসে ঢুকেই মৌসুমী আপুকে কল দিলাম।। আপু বললো- এইচ আরেই আছি, উপরে আয়।। আমি উপরে গিয়ে আপুর মুখোমুখি চেয়ারে গিয়ে বসলাম।।
আপু বললো- কি রে, কি খবর?
আমি ভূমিকা না করে সোজা বললাম- আপু সুরভী তালুকদারের সিভিটা একটু দেন তো?
আপু ভ্রু কুঁচকে তাকালো, মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো- মেয়েটা সুন্দর আছে, ট্যালেন্টেড মেয়ে।। তোর কি হয়, পরিচয় কিভাবে?
আমি আসলে দ্বিধান্তিত, কি জবাব দিবো, শুধু বললাম- আগে সিভিটা দেখি, পরে বলছি সব।।
আপু হতাশ কণ্ঠে বললো- তুই রেফার করলি, তুই আবার সিভি দেখতে চাস, ব্যাপারটা খুলে বল তো শোভন।। আর হ্যাঁ সব সিভি এখন মাহাবুব ভাইয়ের কাছে, উনার কাছে এখন চাওয়া যাবে না।। কারণ উনি গতকাল সিঙ্গাপুর গেছেন।। এইচ আরের হেড হলে যা হয়, ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ এই দেশ তো ওই দেশ!!
আমি প্রচন্ড আশাহত, এ কেমন কাকতলীয় ব্যাপার , বার বার কি হচ্ছে আমার সাথে!!
আমি আপুকে বললাম- মাহাবুব ভাই কবে আসবেন, আর ইন্টার্ন ফ্রেশাররা অফিসে জয়েন করবে কবে?
আপু খানিক ভেবে বললো- মাহাবুব ভাই নেক্সট উইকে আসবেন মে বি, আর ইন্টার্ন শুরু আগামী মাস থেকে।।
আমি হিসাব করে দেখলাম, নতুন মাস আসতে আরো দশ দিনের মত বাকি।। হায় রে অভাগা কপাল!!
...........
আজ মাসের এক তারিখ।। এর মধ্যে সুরভীকে ইনিয়ে বিনিয়ে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি, প্রতিবার সুরভী আকাশ থেকে পড়ে বলে- আজিব, তোমার অফিসে আমি সিভি দিবো কেন? তাও তোমাকে না জানিয়ে, তোমার কি মাথা ঠিক আছে।।আর এইসব মিডিয়ার চাকরি আমি লাইক করি না, আমার ফ্যামেলির কেউও করে না।।
সুরভীর এমন কড়া উত্তরের পর, আমি হিসাব মিলাতে ব্যর্থ!!
এদিকে মৌসুমী আপুকেও আর ঘাঁটি নাই, কারণ মাহাবুব ভাই এখনো দেশে ফিরেন নাই।। তাই ঘেঁটে লাভ নাই, আপুকে যদিও এক আধবার জিজ্ঞেস করেছিলাম- সুরভী তালুকদারের বাবার নাম মনে আছে কিনা, কই থেকে পড়াশোনা করছে এসব।।
আপু রেগে গিয়ে, জবাবে বলেছে- ওরে গাধা এইগুলো কেউ মনে রাখে, শত শত ক্যান্ডিডেট সামলাই।। আর তুই রেফার করে, তুই জানিস না কেন, বল তো!! আমি জবাব দিতে পারি নাই, শুধু বোবা হয়ে চেয়ে ছিলাম আপুর দিকে।।
অফিসে ঢুকেই মন উতলা আজ, নতুন জয়েন করা ইন্টার্ন মেয়েগুলোকে কখন দেখবো।। এবার মোট বারো জন চান্স পাইছে ইন্টার্নশিপ করার জন্যে।। এর মধ্যে তিনজন ছেলে, বাকি নয়জন মেয়ে।।
হঠাৎ মৌসুমী আপু আর মনন ভাই, ইন্টার্নীতে জয়েন করা নতুনদের সাথে নিয়ে নিউজরুমে ঢুকলেন।। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, গুণে গুণে দেখলাম এগারোজন ছেলে মেয়ে আছে।। একটা মেয়ে কম আছে। এমন তো না, সুরভী তালুকদার নামের মেয়েটা শুধু মাত্র অনুপস্থিত!!
আমার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, খানিক বাদে সিওর হলাম এখানে সুরভী নামে কেউ নেই।। আমি মৌসুমী আপুকে একা পাবার আশায় আছি, অনেক প্রশ্ন জমে আছে মনে।। কিন্তু আপু নিউজ রুম থেকে ওদের নিয়ে প্রোডাকশন হাউজের দিকে চলে গেলেন।। আমি সবার চলে যাওয়ার পথে একরাশ কৌতুহল নিয়ে চেয়ে রইলাম।।
ঘন্টাখানেক পর আপুকে কল দিলাম।। আপু বললো আমি ক্যাফেতে যাচ্ছি, ক্যাফেতে আয়।৷ আমি ইনচার্জকে বলে ক্যাফেতে গিয়ে দেখি আপু বসে আছে।।
আপুকে দেখেই বললাম- আজ সুরভী আসে নাই আপু?
আপু মৃদ্যু হেসে বললো- আসছে তো, তোর পিছনে দেখ!!
আমি ঘুরে পিছনে থাকতেই ভিমরি খেলাম, সত্যি পিছনে সুরভী বসে আছে।। কি অদ্ভুত এখানে আমার সুরভী এলো কিভাবে?
মৌসুমী আপু আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললো- গার্লফ্রেন্ড লুকানোর শাস্তি কেমন দিলাম।। তুই চমকের গল্প লিখিস তাই না, আমরা কেমন চমক দিলাম তাই বল!!
আমি আপুর কথা শুনে আরো এলেমেলো হয়ে গেলাম।। আমার হিসাব মিলে না, এক কোটি প্রশ্ন মনে, সব মিলাতে হবে।।
সুরভী পিছন থেকে উঠে আমাদের গোল টেবিলে এসে, আমার পাশের চেয়ারে বসলো।।
আপু বলে চললো- সুরভীর সাথে আরো মাস খানেক আগে আমার ফেসবুকে কথা হয়।। তোর আমার কমেন্টের সূত্র ধরে সে আমাকে নক করে, আর তুইও সুরভীকে প্রায় আমার কথা বলতি।। আবার, বেচারিকে অফিসে সুন্দর সুন্দর মেয়ের গল্প শুনাতি।। সুরভীর নাকি সহ্য হতো না, তোর কথা শুনে মেয়েটা নীরবে কষ্ট পেতো।। কিন্তু তোকে তো আর বলতে পারে না কারণ সে একপ্রকার জোর করেই নাকি তোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।। ব্যাস, দুইজনে মিলে বুদ্ধি করলাম, তোকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়।। সুরভী খুব ভালো মেয়ে ওর কোন দোষ নেই, সব আমার বুদ্ধি।। আর হ্যাঁ সুরভী যেহেতু মার্কেটিং এর ছাত্রী এখানে তিনমাস ইন্টার্নী করলে ওর জব ক্যারিয়ার বরং ভালো হবে।। একটা এক্সটা সার্টিফিকেট পাবে।। উপরন্তু, তোর মত দুষ্ট বিএফকেও চোখে চোখে রাখতে পারবে।।
আমি শুধু বললাম- তো সব তো আর আপনাদের প্লান না, মাহাবুব ভাই বিদেশ গেলো প্লাস ওইদিন কি সুরভী অডিশন দিতে আসছিলো।। আবার আপনি সিভি দেখতে উপরেও আসতে বলেছিলেন।। এগুলোর ব্যাখ্যা কি?
আপু বললো- বাহ তুই তো বহুত চালাক।। সব মনে রেখেছিস।। শুন, সুরভীর সাথে আমার বাইরে মিট হয়, ওই দিন সিভি নিয়ে নেই।। ওই শুক্রবারে অডিশনের দিন সুরভী ছিলোই না।। আর ওর সিভি আমার কাছেই আছে, ওইদিন তোকে উপরে আসতে বলে আমিই অডিশন রুমে ঢুকে যাই, দেখলি না গাধা তোকে সিভির কথা বলেই দৌড় দিলাম উপরে।।
আমি বোকার মত মাথা নাড়ালাম।। হিসাব মিলে গেছে, নিজেকে আমি চালাক ভাবি কোন আক্কেলে, আমি হইলাম গাধারামের সর্দার।।
সুরভী মুগ্ধ হয়ে আমাদের দুইজনের আলাপচারিতা শুনে যাচ্ছে।।
নীরবতা ভেঙে মেয়েটা নিচু গলায় বলে উঠলো- তুমি চাইলে আমি ইন্টার্ন করবো না এখানে, তবু রাগ কইরো না শোভন প্লিজ।।
আমি কষ্ট চাপা দিয়ে সাতরঙা অদ্ভুত এক হাসি দিয়ে বললাম- ধুর কি যে বলো না, একসাথে এক অফিসে থাকার মজাই আলাদা।। আমি তো অনেক খুশি হইছি আর অবাকও হইছি।।
মৌসুমী আপু আমার দিকে করুনার দৃষ্টিতে তাকালেন, সে মনে হয় আমার ভিতরের চিৎকারগুলো শুনতে পাচ্ছে।।
গেলো রে গেলো, সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখা বন্ধ হয়ে গেলো!!