বর্তমানে বাংলাদেশের যেকোন সুপারশপের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পন্যের মধ্যে একটি হচ্ছে শিশু দুগ্ধ সামগ্রী বা ফরমুলা মিল্ক। এর মূল কারন খুজতে হলে যেতে হবে একটু পেছনে।
সরকারী বিভিন্ন প্রচারনা ও অ্যাডের কারনে যে কেউ অন্তত এটা জানেন যে একটি শিশুকে তার জন্মের পর অন্তত ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়, এমনকি পানি পর্যন্ত না খাইয়ে। ৬ মাসের পর থেকে ২-২.৫ বছর পর্যন্ত, আলাদা সলিড খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়।
কিন্তু, বর্তমান যুগের প্রায় সব মায়েদের সবচেয়ে বড় যে কমপ্লেন ডাক্তারদের কাছে আসে যে, তার বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, অর্থাৎ মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ তৈরী হচ্ছে না। সেজন্য বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য আমরা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়াতে বলি। আধুনিক সব মায়েদেরই আসলে কেন হচ্ছে এ সমস্যা? এর কয়েকটি কারন এবং তার প্রতিকার নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করবো।
প্রথমেই আমরা জেনে নিই একটি মায়ের দেহে দুধ কিভাবে তৈরী হয়। মূলত, কোন মা গর্ভবতী হলে তার এমন কিছু হরমোন অনেক বেড়ে যায়, যেগুলো তার দেহকে দুধ উৎপাদনের জন্য তৈরী করে তোলে। তারপর যে মুহূর্তে বাচ্চাটির যখন জন্ম হয় তখনো সেই হরমোনগুলা বাড়তি অবস্থাতেই থাকে। সে সময় বাচ্চা যখন মায়ের স্তনে মুখ দিয়ে চোষা শুরু করে, তখন স্তনকে মায়ের ব্রেইন সিগনাল দেয় দুধ উৎপাদনের জন্য। আর এই চোষা যতটা ভালোমত (Quality) এবং ঘনঘন (Quantity) করবে বাচ্চা, সে মায়ের ব্রেন তত বেশী সিগনাল পাবে বেশি বেশি দুধ উৎপাদনের জন্য।
আর একটি বাচ্চা জন্মের ঠিক পরপরই একটি সহজাত ইনসটিঙ্কট নিয়ে জন্মায় স্তন চোষার। সেজন্য জন্মের ঠিক সাথে সাথেই বাচ্চাটিকে মায়ের কাছে দেওয়া হলে, বাচ্চাটি সবচেয়ে ভালোভাবে মায়ের স্তন চুষতে পারে, এবং ফলশ্রুতিতে মায়ের সঠিক পরিমানে দুগ্ধ উৎপাদন হয়। কিন্তু জন্মের ঠিক পরপরই যদি বাচ্চাটিকে মায়ের কাছে না দেওয়া যায় তবে বাচ্চাটির চোষার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়, ফলশ্রুতিতে তার মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনও হয় কম। এখন নিম্নের তিনটি কারনে বাচ্চাকে সময়মত মায়ের কাছে দেওয়া যায় না এবং বাচ্চাটির স্তন চোষায় পারদর্শিতা কমে যায়ঃ
১. সিজারিয়ান সেকশনঃ সাধারনত নরমাল ডেলিভারী হলে বাচ্চাকে সাথে সাথেই মায়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়, এবং সে পারদর্শিতার সাথে স্তন চোষা শুরু করে, ফলে প্রথমে শাল দুধ এবং পড়ে সাধারন দুধ উৎপাদন সুন্দভাবে শুরু হয়। কিন্তু সিজারিয়ান সেকশন হলে, বাচ্চা বের করার পর মায়ের পেট সেলাই করতে হয় এবং একটু স্টেবল হওয়ার জন্য সময় দিতে হয়। সেজন্য বাচ্চা সাথে সাথে মায়ের বুকে দিতে দেরী হয়।
ভালো হাসপাতালগুলোতে সুযোগ সুবিধা সব থাকলে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যেই বাচ্চাকে মায়ের বুকে দেওয়া যায়, যেটি মোটামুটিভাবে আদর্শ সময়, ফলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু আমাদের দেশের বেশীরভাগ হাসপাতালেই পর্যাপ্ত স্টাফ ও সুবিধার অভাবে, ডাক্তারের ইচ্ছা থাকলেও এই সময়ের মধ্যে মায়ের কোলে বাচ্চাকে তুলে দেওয়া যায় না। সেকারনে বাচ্চার স্তন চোষার পারদর্শীতা কমে যায় এবং সেই সাথে দুধ উৎপাদনও।
২. সঠিক পজিশন ও অ্যাটাচমেন্টে দুধ খাওয়াতে না পারাঃ বাচ্চাকে ঠিকমত দুধ খাওয়াতে হলে বাচ্চাকে সঠিক উপায়ে কোলে নিতে হবে এবং বাচ্চার মুখ স্তনে সঠিক ভাবে লাগতে হবে; নাহলে বাচ্চা ভালোমত চুষতে পারবে না।
সঠিক পজিশনে কোলে নিতে হলেঃ
- বাচ্চার শরীর ভালোমত সাপোর্ট দিয়ে ধরতে হবে।
- বাচ্চার দেহ মায়ের দেহের সাথে লেগে থাকবে
- বাচ্চার মাথা ও শরীর সোজা এক লাইনে থাকবে
- বাচ্চার মুখ স্তনের দিকে ঘোরানো থাকবে, নিপলের লেভেলে থাকবে।
বাচ্চার মুখ স্তনে যেভাবে থাকতে হবেঃ
- বাচ্চার থুতনী স্তনে লেগে থাকবে
- বাচ্চার মুখ পুরোপুরি খোলা থাকবে
- বাচ্চার নিচের ঠোট বাইরের দিকে ঘুরে থাকবে
- বোটার চারপাশের অংশে (অ্যারিওলা) বাচ্চার নিচের ঠোট দিয়ে সম্পূর্ন ঢেকে থাকবে।
৩. ইচ্ছের অভাবঃ সাধারনত বাচ্চা জন্মের প্রথম ১-২ মাস ওর অনেক পুস্টির প্রয়োজন হয়। সে কারনে দেখা যায় প্রায় ২-৩ ঘন্টা পরপরই বাচ্চার দুধ লাগে। আর প্রাথমিক সময়ে এত ঘনঘন বাচ্চা দুধ খাওয়ার কারনে ব্রেনে পর্যাপ্ত সিগনাল যায় দুধ উৎপাদনের,পরবর্তীতে তাই আর দুধের অভাব হয় না।
কিন্তু এভাবে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে গেলে মায়ের সারাদিনতো ব্যস্ত কাটেই, উপরন্তু রাতেও অন্তত ২-৩ বার ঘুম ভেঙ্গে উঠতে হয়। অনেক আধুনিকা মায়েরাই আজকাল এই কষ্টটা করতে চান না (সবাই নয়)। সেই কারনেও বুকে কম দুধ উৎপাদন হয়। সেজন্য বাচ্চাকে অবশ্যই অন্তত প্রথম মাসটিতে এভাবে ঘনঘন স্তন্যপান করাতে হবে।
আজ এ পর্যন্তই। এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে যে কেউ করতে পারেন। আমি সাধ্যমত জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো।
সরকারী বিভিন্ন প্রচারনা ও অ্যাডের কারনে যে কেউ অন্তত এটা জানেন যে একটি শিশুকে তার জন্মের পর অন্তত ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়, এমনকি পানি পর্যন্ত না খাইয়ে। ৬ মাসের পর থেকে ২-২.৫ বছর পর্যন্ত, আলাদা সলিড খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হয়।
কিন্তু, বর্তমান যুগের প্রায় সব মায়েদের সবচেয়ে বড় যে কমপ্লেন ডাক্তারদের কাছে আসে যে, তার বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, অর্থাৎ মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ তৈরী হচ্ছে না। সেজন্য বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য আমরা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়াতে বলি। আধুনিক সব মায়েদেরই আসলে কেন হচ্ছে এ সমস্যা? এর কয়েকটি কারন এবং তার প্রতিকার নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করবো।
প্রথমেই আমরা জেনে নিই একটি মায়ের দেহে দুধ কিভাবে তৈরী হয়। মূলত, কোন মা গর্ভবতী হলে তার এমন কিছু হরমোন অনেক বেড়ে যায়, যেগুলো তার দেহকে দুধ উৎপাদনের জন্য তৈরী করে তোলে। তারপর যে মুহূর্তে বাচ্চাটির যখন জন্ম হয় তখনো সেই হরমোনগুলা বাড়তি অবস্থাতেই থাকে। সে সময় বাচ্চা যখন মায়ের স্তনে মুখ দিয়ে চোষা শুরু করে, তখন স্তনকে মায়ের ব্রেইন সিগনাল দেয় দুধ উৎপাদনের জন্য। আর এই চোষা যতটা ভালোমত (Quality) এবং ঘনঘন (Quantity) করবে বাচ্চা, সে মায়ের ব্রেন তত বেশী সিগনাল পাবে বেশি বেশি দুধ উৎপাদনের জন্য।
আর একটি বাচ্চা জন্মের ঠিক পরপরই একটি সহজাত ইনসটিঙ্কট নিয়ে জন্মায় স্তন চোষার। সেজন্য জন্মের ঠিক সাথে সাথেই বাচ্চাটিকে মায়ের কাছে দেওয়া হলে, বাচ্চাটি সবচেয়ে ভালোভাবে মায়ের স্তন চুষতে পারে, এবং ফলশ্রুতিতে মায়ের সঠিক পরিমানে দুগ্ধ উৎপাদন হয়। কিন্তু জন্মের ঠিক পরপরই যদি বাচ্চাটিকে মায়ের কাছে না দেওয়া যায় তবে বাচ্চাটির চোষার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়, ফলশ্রুতিতে তার মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনও হয় কম। এখন নিম্নের তিনটি কারনে বাচ্চাকে সময়মত মায়ের কাছে দেওয়া যায় না এবং বাচ্চাটির স্তন চোষায় পারদর্শিতা কমে যায়ঃ
১. সিজারিয়ান সেকশনঃ সাধারনত নরমাল ডেলিভারী হলে বাচ্চাকে সাথে সাথেই মায়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়, এবং সে পারদর্শিতার সাথে স্তন চোষা শুরু করে, ফলে প্রথমে শাল দুধ এবং পড়ে সাধারন দুধ উৎপাদন সুন্দভাবে শুরু হয়। কিন্তু সিজারিয়ান সেকশন হলে, বাচ্চা বের করার পর মায়ের পেট সেলাই করতে হয় এবং একটু স্টেবল হওয়ার জন্য সময় দিতে হয়। সেজন্য বাচ্চা সাথে সাথে মায়ের বুকে দিতে দেরী হয়।
ভালো হাসপাতালগুলোতে সুযোগ সুবিধা সব থাকলে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যেই বাচ্চাকে মায়ের বুকে দেওয়া যায়, যেটি মোটামুটিভাবে আদর্শ সময়, ফলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু আমাদের দেশের বেশীরভাগ হাসপাতালেই পর্যাপ্ত স্টাফ ও সুবিধার অভাবে, ডাক্তারের ইচ্ছা থাকলেও এই সময়ের মধ্যে মায়ের কোলে বাচ্চাকে তুলে দেওয়া যায় না। সেকারনে বাচ্চার স্তন চোষার পারদর্শীতা কমে যায় এবং সেই সাথে দুধ উৎপাদনও।
২. সঠিক পজিশন ও অ্যাটাচমেন্টে দুধ খাওয়াতে না পারাঃ বাচ্চাকে ঠিকমত দুধ খাওয়াতে হলে বাচ্চাকে সঠিক উপায়ে কোলে নিতে হবে এবং বাচ্চার মুখ স্তনে সঠিক ভাবে লাগতে হবে; নাহলে বাচ্চা ভালোমত চুষতে পারবে না।
সঠিক পজিশনে কোলে নিতে হলেঃ
- বাচ্চার শরীর ভালোমত সাপোর্ট দিয়ে ধরতে হবে।
- বাচ্চার দেহ মায়ের দেহের সাথে লেগে থাকবে
- বাচ্চার মাথা ও শরীর সোজা এক লাইনে থাকবে
- বাচ্চার মুখ স্তনের দিকে ঘোরানো থাকবে, নিপলের লেভেলে থাকবে।
বাচ্চার মুখ স্তনে যেভাবে থাকতে হবেঃ
- বাচ্চার থুতনী স্তনে লেগে থাকবে
- বাচ্চার মুখ পুরোপুরি খোলা থাকবে
- বাচ্চার নিচের ঠোট বাইরের দিকে ঘুরে থাকবে
- বোটার চারপাশের অংশে (অ্যারিওলা) বাচ্চার নিচের ঠোট দিয়ে সম্পূর্ন ঢেকে থাকবে।
৩. ইচ্ছের অভাবঃ সাধারনত বাচ্চা জন্মের প্রথম ১-২ মাস ওর অনেক পুস্টির প্রয়োজন হয়। সে কারনে দেখা যায় প্রায় ২-৩ ঘন্টা পরপরই বাচ্চার দুধ লাগে। আর প্রাথমিক সময়ে এত ঘনঘন বাচ্চা দুধ খাওয়ার কারনে ব্রেনে পর্যাপ্ত সিগনাল যায় দুধ উৎপাদনের,পরবর্তীতে তাই আর দুধের অভাব হয় না।
কিন্তু এভাবে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে গেলে মায়ের সারাদিনতো ব্যস্ত কাটেই, উপরন্তু রাতেও অন্তত ২-৩ বার ঘুম ভেঙ্গে উঠতে হয়। অনেক আধুনিকা মায়েরাই আজকাল এই কষ্টটা করতে চান না (সবাই নয়)। সেই কারনেও বুকে কম দুধ উৎপাদন হয়। সেজন্য বাচ্চাকে অবশ্যই অন্তত প্রথম মাসটিতে এভাবে ঘনঘন স্তন্যপান করাতে হবে।
আজ এ পর্যন্তই। এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে যে কেউ করতে পারেন। আমি সাধ্যমত জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো।