What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বিবিধ/অগ্রন্থিত গল্প (হুমায়ুন আহমেদ) (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
অসুস্থতা নাকি অন্য কিছু?


গুলশান এলাকায় মুক্তি নামের একটা ক্লিনিক আছে৷ মানসিক রোগী, ড্রাগ অ্যাডিক্ট ধরনের সমস্যার চিকিৎসা করা হয়৷ মুক্তি ক্লিনিকের একজন চিকিৎসক (ঢাকা মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর) একদিন আমাকে ক্লিনিকে ডেকে পাঠালেন৷ তার কিছু বিশেষ ধরনের রোগীর চিকিৎসায় আমার সাহায্য প্রয়োজন৷

আমি অবাক হয়েই গেলাম৷ ভদ্রলোক অভিযোগের মতো করে বললেন, আপনি এসব কী করছেন? লেখার মাধ্যমে সমাজে অসুস্থতা ছড়াচ্ছেন? হিমু আবার কী?

আমি বিনীত ভঙ্গিতে হিমু কী ব্যাখ্যা করলাম৷ প্রফেসর সাহেব ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হলেন না৷ গলা কঠিন করে বললেন, হিমু উপন্যাসের কোনো চরিত্র না৷ হিমু হলো একটা ব্যাধির নাম৷ তা কি আপনি জানেন?

আমি জানি না৷

হিমু ছোঁয়াচে ধরনের ব্যাধি৷ কনটেজিয়াস ডিজিজ৷ এই ডিজিজ আপনি ছড়াচ্ছেন৷ আপনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছেন৷ অবশ্যই আপনার লেখালেখি বন্ধ করে দেওয়া দরকার৷ লেখকরা সমাজের উপকার করেন৷ আপনি করছেন অপকার৷ ইজ ইট ক্লিয়ার?

এখনো ক্লিয়ার না৷ আপনি ব্যাখ্যা করলে বুঝব৷

ডাক্তার সাহেবের কাছে জানলাম, মুক্তি ক্লিনিকে অনেক বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়েদের চিকিৎসার জন্য পাঠান যারা হিমু নামক অদ্ভুত অসুখে ভুগছে৷ এরা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে৷ গভীর রাতে কাউকে কিছু না বলে হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়৷ কয়েকদিন কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না৷ তারা মনে করে, ঐশ্বরিক কিছু ক্ষমতা তাদের হয়েছে৷ তারা যা বলবে তাই হবে৷

আমি বললাম, এই মুহূর্তে আপনার ক্লিনিকে কি কোনো হিমু আছে যার চিকিৎসা চলছে? ডাক্তার সাহেব দু:খিত গলায় বললেন, তিনজন ছেলে হিমু আছে৷ একটা আছে মেয়ে হিমু৷ মেয়ে হিমুর কী আলাদা নাম আছে?

আমি বললাম, মেয়ে হিমুর আলাদা কোনো নাম নেই৷ মেয়ে হিমুও হিমু৷ যদিও কেউ কেউ বলেন হিমি৷ আমার হিমি পছন্দ না৷

ডাক্তার সাহেব বললেন, যে তিন ছেলে হিমু আছে তার দুটা হিমু হওয়ার পরে ড্রাগ ধরেছে৷ ভয়ঙ্কর একডিলিউশনে ভুগছে৷ আসুন আপনার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেই৷ কী প্রচণ্ড ডিলিউশনে যে এরা ভুগছে দেখে আপনারই খারাপ লাগবে৷

আমি ওদের দেখতে গেলাম৷ সত্যি মনটা খারাপ হলো৷ জীবনের আনন্দে এদের ঝলমল করা উচিত ছিল৷ তা না, স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ক্লিনিকে৷ চোখের দৃষ্টিতে ঘোর৷ জীবন থেকে বিতাড়িত কিছু যুবক৷ আমি তাদেরকে ব্যাখ্যা করলাম যে, হিমু ফিকশন ছাড়া কিছু না৷ হিমুর চিন্তাভাবনা বা হিমুকে নিয়ে লেখকের চিন্তাভাবনা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কিছু নেই৷ যেহেতু হিমুকে নিয়ে বইগুলো আমি লিখেছি, আমি জানি৷

যুবকদের ভেতর একজন চাপা গলায় বলল, হিমুর বিষয়ে আমরা যা জানি আপনি তা জানেন না৷ আমি চমৎকৃত হয়ে বললাম, তোমরা কী জানো?

যুবক গলা আরও নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, প্রতিটা বড় শহরে একজন প্রধান হিমু থাকেন৷ তিনি শহর কন্ট্রোল করেন৷ অনেক রাতে হাঁটাহাঁটি করলে উনার দেখা পাওয়া যায়৷

উনি কী পীর টাইপ কেউ?

উনি পীরের বাবা!

যারা পীরের বাবার দেখা পেয়ে গেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলা অর্থহীন৷ আমি চুপ করে গেলাম৷ একটা বিষয় আমাকে অবাক করল, হিমুর লেখককে নিয়ে তাদের নিস্পৃহতা৷ হিমুর যে জগৎ তারা তৈরি করেছে সেখানে আমার স্থান নেই৷

চিকিৎসাধীন মহিলা হিমুকে দেখতে গেলাম৷

কলেজ পড়া বাচ্চা একটা মেয়ে৷ সে কোনো এক হিমুর বইতে পড়েছে গভীর রাতে নির্জন রাস্তাগুলো সব নদী হয়ে যায়৷ হিমুরা সেই নদী দেখতে পায়৷ কাজেই এই মেয়ে রাস্তার নদী হওয়ার দৃশ্য চাক্ষুষ দেখার জন্য এয়ারপোর্ট চলে গেল৷ অনেক দূর দিয়ে বেড়া ডিঙিয়ে চলে গেল রানওয়েতে৷ গভীর রাতে রানওয়ের মাঝখানে ঘাপটি মেরে বসে রইল৷

কোনো এক বিমানের পাইলট ল্যান্ড করতে এসে এই দৃশ্য দেখে প্রায় ভিরমি খেলেন৷ জানালেন কন্ট্রোল টাওয়ারকে৷ পুলিশ এসে মেয়েটিকে গেপ্তার করল৷ মেয়ের মা উপায় না দেখে তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করলেন৷

মেয়েটি এখন সুস্থ৷ মেয়ের মা মেয়েকে নিয়ে নুহাশ পল্লীতে এসেছিলেন৷ আমি তাকে দিয়ে মিউজিক ভিডিওতে কিছু কাজও করিয়েছি৷ হিমুর এই ব্যাপারে আমি বুঝতে পারছি না৷ কেন কিছু মানুষ হিমুকে সত্যি ভাববে? এদের সাইকি কি আলাদা?

নিউইয়র্কের এক মহিলার কথা বলি৷ বাঙালি মহিলা৷ স্বামীর সঙ্গে বাস করেন৷ স্বামী ট্যাক্সি চালান৷ তিনি নিজেও ইন্ডিয়ান শাড়ির দোকানে সেলস গার্লের চাকরি করেন৷ ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা হচ্ছে৷ এক পর্যায়ে তিনি বললেন, হুমায়ূন ভাই, হিমু নিউইয়র্কে বেড়াতে এসেছে এরকম একটা উপন্যাস লিখুন৷

আমি বললাম, লেখা যেতে পারে৷

ভদ্রমহিলা বললেন, হিমুর আসা-যাওয়ার খরচ আমি দেব৷ সে আমাদের বাসায় থাকবে৷

এবার আমি চমকালাম৷ উপন্যাসের একটি চরিত্রের জন্য আসা-যাওয়ার খরচ দিতে হয় না৷ তার ঘুমুবার জন্য খাট লাগে না৷ আমি বললাম, হিমু আপনার বাড়িতে থাকবে?

তিনি লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন, হ্যাঁ৷ তার সঙ্গে আমার কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে৷ সে যে কদিন আমার সঙ্গে থাকবে আমি কাজ করব না৷ ছুটি নেব৷

আমি বললাম, আপনি একটা ব্যাপার ভুলে যাচ্ছেন হিমু বলে কেউ নেই৷ হিমু আমার কল্পনার একটি চরিত্র৷

ভদ্রমহিলা রাগত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, আপনি তাকে নিউইয়র্কে আনতে রাজি না সেটা সরাসরি বললেই হয়৷ অযুহাত দেওয়া শুরু করেছেন৷

আমি চুপ করে গেলাম৷ কিছুক্ষণের জন্য আমার মধ্যেও বিভ্রম তৈরি হলো৷ আসলেই হিমু বলে কেউ আছে না কি?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top