What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শ্বাসতন্ত্রের রোগ সম্পর্কে জানুন (1 Viewer)

TnDJM5T.jpg


প্রতিবছর বিশ্বে তিন মিলিয়ন মানুষ মারা যায় সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতকরা ৮ থেকে ২০ ভাগ লোক এ রোগের শিকার। বাংলাদেশের আক্রান্তের হার শতকরা ১২.৫। ফুসফুসের যাবতীয় রোগের জন্য যে আর্থিক খরচ, এ দেশে তার ৫৬ ভাগই ব্যয় হয় সিওপিডির চিকিৎসায়। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ সিওপিডি।

একটু সচেতন হলে আর ধূমপান ত্যাগ, দূষণমুক্ত পরিবেশ, নিয়মমতো টিকা গ্রহণ এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। সিওপিডিকে তাই জানতে হবে। করতে হবে প্রতিরোধ। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজন সুচিকিৎসা।

সিওপিডি কী?

সিওপিডি শ্বাসতন্ত্রের বাধাজনিত দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ, যা দীর্ঘদিন ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে থাকার কারণে একসময় নানাবিধ উপসর্গ নিয়ে হাজির হয়। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগ দেখা দেয়। কিন্তু এর শুরুটা হয় উপসর্গ দেখা দেওয়ার ১৫-২০ বছর আগেই। হয়তো একজন ব্যক্তি ২০ বছর ধরে ধূমপান করছেন, তাঁর উপসর্গ দেখা দিল অনেক দিন পর। মূলত কাশি, কফ, শ্বাসকষ্ট, বুকে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয় এই রোগে।

কারণ জানা জরুরি

কিছু ক্ষেত্রে জিনগত কারণ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানান ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শই সিওপিডির কারণ। তামাক, পোশাকশিল্প কিংবা অন্যান্য শিল্পকারখানার বাতাসে ভেসে থাকা পদার্থ, গাড়ির ধোঁয়া এবং বাতাসের অন্যান্য দূষণকারী উপাদানই সিওপিডির জন্য দায়ী। কাঠ বা গোবরের মতো কোনো জৈব উপাদান পোড়ানোর ধোঁয়া (যেমন রান্নার সময় এসবের ধোঁয়া) আরও একটি কারণ। শৈশবে বারবার ফুসফুসের সংক্রমণ হয়ে থাকলে পরবর্তী সময়ে সিওপিডির ঝুঁকি বাড়ে।

মায়ের অপুষ্টির কারণেও শিশুর ফুসফুস দুর্বল হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে সিওপিডির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাধারণত পুরুষদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলেও নারীরা এসব ক্ষতিকর পদার্থের সংস্পর্শে আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় আসছেন বলে তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন আগের চেয়ে অনেক বেশি। কেবল ধূমপায়ী নন, অধূমপায়ী ব্যক্তিও পরোক্ষভাবে ধূমপায়ী হন বলে তাঁরাও পড়েন ঝুঁকিতে।

তবে ধূমপানই সিওপিডির প্রধানতম কারণ। বাড়িতে ধূমপান করা হলে ঝুঁকিতে পড়েন বাড়ির লোকেরা, জনসাধারণের মধ্যে ধূমপান করলে ঝুঁকিতে পড়েন তাঁরাও। ধূমপায়ীর নিজের ঝুঁকি তো রয়েছেই।

সিওপিডির ভোগান্তি

একজন সিওপিডি রোগীর সারা জীবন বা দীর্ঘ মেয়াদে কষ্টে ভুগতে হয়। কারণ, বছরে বেশ কয়েকবার দেখা দিতে থাকে একই ধরনের উপসর্গ। এ রোগ উপশম করা যায়, কিন্তু নিরাময় করা যায় না। ফুসফুসের ক্ষতির মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি হারিয়ে ফেলতে পারেন দৈনন্দিন কাজকর্ম-চলাফেরার ক্ষমতাও।

তার ওপর খরচ তো আছেই। সারা বছর নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। অক্সিজেন, ইনহেলার, নেবুলাইজারের প্রয়োজন হয় প্রায়শই। সমস্যা প্রায়ই বাড়ে আর হাসপাতালে ভর্তি হতেই হয়। ক্ষেত্রবিশেষে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হতে পারে লাইফ সাপোর্ট যন্ত্রেরও। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার পাশাপাশি আর্থিক দিকটাও বিবেচ্য। ব্যক্তি, পরিবার এবং রাষ্ট্রের জন্য এ রোগ এক বিরাট বোঝা।

তাই দরকার প্রতিরোধ

এই ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে বাঁচতে ফুসফুসকে এসব উপাদানের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে হবে অবশ্যই। ধূমপান বর্জনীয় অবশ্যই। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় শিশুকে টিকা দিন। দূষণকারী পদার্থ থেকে বাঁচতে মাস্ক পরতে হবে, পোশাকশিল্প ও অন্যান্য শিল্পকারখানার কর্মীদের মাস্ক পরা আবশ্যক। বাতাসের দূষণকারী উপাদানগুলো কমিয়ে আনতে রাষ্ট্রের উদ্যোগ জরুরি। রান্নার জ্বালানি হিসেবে জৈব উপাদান ব্যবহার না করে শ্রেয়। নারীর জন্য নিরাপদ এবং সুস্থ জীবন নিশ্চিত করুন। কিশোরী এবং গর্ভবতী নারীর পুষ্টি নিশ্চিত করুন।

  • ধূমপানে বিষপান—এ সত্য সবাইকে জানাতে হবে।
  • ধূমপানের সবই নেতিবাচক, কোনো ইতিবাচক দিক নেই। সিওপিডি তো বটেই, ফুসফুসের ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায় ধূমপান।
  • করোনাসহ যেকোনো ফুসফুস সংক্রমণে আক্রান্ত হলে জটিলতার ঝুঁকিও বেশি ধূমপায়ীর।
  • প্রত্যেককে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, নতুন প্রজন্মের জন্য একটা সুস্থ পৃথিবী তৈরিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তাই ধূমপান ছাড়তে হবে।
  • প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এর বদলে পান, জর্দা, গুল বা ই-সিগারেটজাতীয় উপাদানও গ্রহণ করা যাবে না।
  • পাঠ্যবই এবং গণমাধ্যমকে ধূমপানবিরোধী কাজে লাগাতে হবে। শৈশব থেকেই প্রত্যেকে জানুক ধূমপানের মন্দ দিকগুলো।
  • কোনো বিক্রেতা যেন ১৮ বছরের নিচে কোনো শিশু-কিশোরের কাছে বিড়ি-সিগারেট বিক্রয় না করেন, সে আইন করতে হবে।
  • জনসমক্ষে, যানবাহনে ধূমপান যে কারও জন্যই একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এই আইনের প্রয়োগে এগিয়ে আসতে হবে।
  • ধূমপান ছাড়ার সহায়তা মাধ্যম হিসেবে প্রতিটি হাসপাতালে যদি একটি সহায়তাকারী ইউনিট খোলা হয়, তা ধূমপান ছাড়তে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে দেশব্যাপী।

শীত আসছে

শীতে সিওপিডি রোগীর ভোগান্তি বাড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় সিওপিডি রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র, গরম পানি, প্রয়োজনে রুম হিটার ব্যবহার করতে হবে। আবার দিনে ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্যও একটি লক্ষণীয় বিষয়। তাপমাত্রা বুঝে সেইমতো বেছে নিন জীবনধারা। শীতের শুষ্ক বাতাস যদি হয় দূষিত, সেই বাতাসে কম বেরোনোই ভালো সিওপিডি রোগীদের।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার টিকা নিয়ে রাখতে হবে শীতের আগেই (যদি টিকা দেওয়া না থাকে)। ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে হয় প্রতিবছর, নিউমোনিয়ার টিকা পাঁচ বছর অন্তর। করোনাভাইরাসের টিকা না নিয়ে থাকলে সেটির ব্যবস্থাও করে ফেলুন সত্বর।

* অনুলিখন: ডা. রাফিয়া আলম | ডা. মো. জাকির হোসেন সরকার, সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল পালমোনলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ সোসাইটি
 

Users who are viewing this thread

Back
Top